somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাইকর
অনেক বড় মাপের একজন মানুষ হতে চাই। কারণ- ভালোবাসার মানুষটির নাম ছোট্ট কোন মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাইনা, ভালবাসার মানুষটির নাম বড় কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাই।আই লাভ ইউ (মা)

বেহুঁশ ড্রাইভার। ( ছোট গল্প)

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গল্পঃ সড়ক ব্যবস্থা।

আমাদের দুজনের চুমু খাওয়া দেখে নগরী সমস্ত মানুষজন সন্ধ্যা নামতেই হাতে হারিকেন নিয়ে হাটে!! আশ্চর্য নগরীর সব আশ্চর্য মানুষ। চুমোই তো খেয়েছি। তাছাড়া তার ঠোঁটের কোণে সদ্য ওঠা বাদামী রঙের তিলটা দেখে শহরের যে কোন লাল গাড়িওয়ালা কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। আমি তো কেবল শুধুই মানুষ! আমার দোষ কীসে।

দাড়িমোচ কাটিনা মাস তিনেক হবে। স্নান করি মাঝেসাজে। যদি চুমু খাবার সময় সেজুঁতি বমি করে দেয় তাহলে বুঝি গা দিয়ে তীব্র গন্ধ। তখন বাজার থেকে কসকো সাবান কিনে নিয়ে এসে আচ্ছামতো গায়ে মাখি। এমন বাউন্ডুলকে এত ভালবাসে কেন সে! মাঝে মধ্যে নিজের উপরেই হিংসে হয়। আবার ভয় হয়। বোকা শহর কে বিশ্বাস করতে ভয় করে! নগরীর গণতন্ত্র খুবই ভয়ংকর!!

সেজুঁতি দামী ঘরের মেয়ে। হাসিটা শেষ বিকেলের গোধূলি লগ্নের মতো। হাসলে গালে টোল পড়ে। প্রথম বেঞ্চের ছাত্রী সে। প্রথম পরিচয় হয় নীলক্ষেতে। সে বই কিনতে এসেছিল। সাহিত্য খুব ভালোবাসে।আমি ছোটখাটো এক কবি ও গল্পকার। আমার লেখার প্রেমে পড়েই আমার প্রথম সন্তান(উপন্যাস) কিনতে এসেছিল। তার মুখে নিজের প্রশংসা শুনে মনখুশিতে সুনীলের একটা কবিতা আবৃতি করে শুনিয়েছিলাম। তাতেই সে আমার লেখা ফেলে আমার প্রেমে পড়ে গেল! এক দাড়িমোচ না কামানো ও স্নান না করা অভ্যেস পুরুষকে না বুঝেই ভালোবেসে ফেলল। তখন আমার কলম, খাতার পাশাপাশি ছোট্ট একটা প্রেম খুব দরকার ছিল। এই যুগে জেনেবুঝে বাউন্ডুলকে ভালবাসতে যাবে কোন মেয়ে। দুজনেই সাহিত্যপ্রেমী। ভালোবাসা হলো মন গহীনের এক অলৌকিক অনুভূতি। ভাললাগার শেষ নেই, ভালোবাসার শেষ আছে।

এখন কলম,খাতায় দম দেবার সাহস পাই, অনুপ্রেরণা পাই। এখন আমার সেঁজুতি আছে। যে কিনা বাবার চার চাকাওয়ালা সবুজ গাড়ি ফেলে রেখে পায়ে হেঁটে আসে আমার কাছে। একটুখানি আমার মুখে কবিতা আবৃতি শুনবে বলে। আবৃতি খুব বেশি ভাল লাগলে, নগরীর সমস্ত কিছুকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে পা উঁচু করে আমাকে চুমু খায়। মিনিট দুয়েক পরে আবার সবকিছু নিজের গতিতে চলতে শুরু করে। আমি প্রতিদিন কায়দা করে একটা করে কবিতা শিখে আসি তার চুমু পাবার আশায়।

শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি তিরিক চাঁদের আলো গায়ে মেখে দুজন সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আচমকা আকাশটা তোর জোর করে আওয়াজ তোলা শুরু করে। সবাইকে ফাকি দিয়ে বৃষ্টির প্রথম ফোটা এসে পড়ে সেঁজুতির কপালের মাঝ বরাবর। আমি তার কোমরে হাত রেখে বুড়ো আঙুল দিয়ে কপালের পানি মুছতেই সেজুঁতি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমাকে। যেনো এক আকাশ হারানোর ভয়। কায়দা করে মেঘ বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দেয় আমাদের। সে আমার পায়ে পা রেখে, নাকে নাক রেখে আমার বুকের মধ্যে ঢুকে যেতে চায়। পাশ দিয়ে যাওয়া পথচারীরা ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে দুজন সাহিত্যপ্রেমীর প্রেম। যাকে বলা যায় সাহিত্যিক প্রেম।

তাকে লাল বেনারসি শাড়ি পড়ে আসতে বলেছি দেখে, সে আমাকে পরপর তিনটে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করিয়ে শোনাবার আবদার করে। তাতেও আমি রাজি হই। সন্দেশের মত দেখতে সুন্দরীকে লাল বেনারসি শাড়িতে না জানি কত ভালো লাগবে! এমনিতেও বাঙালি নারীদের শাড়িতে বেশি ভালো লাগে।

আমি রবীন্দ্রনাথের মনকে খুব সুন্দর করে পাঠ করছি গুনগুন করে বকুলতলার নিচে বসে। আবৃতি খারাপ হলে নাকি নাক টেনে দিবে। চেনা এক গন্ধ আশেপাশে ভিড় জমিয়েছে বুঝতে পেরে সামনে তাকাতেই দেখি, লাল বেনারসি শাড়িতে দেবী পূর্ণিমা মতো দেখতে এক মানবী রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। শাড়িতে তাকে ভাল লাগবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন যা দেখছি তা অস্বাভাবিক।

তাকে দেখে শহরের যে কোনো প্রতিষ্ঠিত টোকাই দাঁড়িয়ে যাবে। আমি অজগর সাপের মতো 'হা' করে তাকিয়ে রয়েছি তার দিকে। সমস্ত নগরীতে যেন দিনের বেলায় চাঁদের আলো উপচে পড়ছে! নগরীর সমস্ত ধূলিকণা থেকে শুরু করে বাসের হেলপার অব্দি নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

তার কায়দা করে শাড়ি পরা আর নূপুরের শব্দে বাসের ড্রাইভার বেহুঁশ হয়ে খুব সহজেই তার উপর দিয়ে চলে যায়। চোখের সামনে একজন লেখকের প্রাণকে মেরে দিয়ে যায়। নগরীর অসচেতন ড্রাইভার আর কত মানুষের পাওয়া স্বপ্নকে চার চাকার তলে ফেলে মিশিয়ে দিবে কালো ইট-পাথরের মাঝপথে। শহরের আট-দশটা ছোটখাটো ভুলের মধ্যে আমার ভালবাসাও একটি ছোট্ট দুর্ঘটনা। পুলিশ এসে নিয়ে যায়। পরদিন পত্রিকার ভিতরে না দেখা পৃষ্টার ছোট কলামে ছোট আকারে প্রকাশ করে এক বাউন্ডুলের সাজানো গোছানো ভালোবাসার মানুষটির নাম।

"এটি সড়ক দুর্ঘটনা নয়, আমাদের সড়ক ব্যবস্থা।" নগরীর গণতন্ত্র খুব বেশী ভয়ংকর।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×