somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিকশা

২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিকশা
-----------------------
"ও ছকিনা গেছোস কিনা
ভুইলা আমারে--
আমি ওহন রিকশা চালাই ঢাকা শহরে।
আরে ও ছকিনা--"
প্রিয়জনকে উদ্দেশ্য করে এমন অভিব্যক্তি থেকে শুরু করে শহুরে জীবনের সাথে নানাভাবে জড়িয়ে গেছে রিকশা নামটি।কখনো মধ্যবিত্ত প্রেমিক জুটির ভ্রমনের স্বাদ মেটাতে হুড তুলে দিয়ে খুনসুটি আর এ গলি হয়ে ও গলি বা কয়েক মাইল রাস্তা পাড়ি দিতে দিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা।কখনো ঘন্টা হিসেবে ভাড়া চুক্তি আবার কখনো দূরত্ব হিসেবে ভাড়া নির্ধারন করে চলে রিকশার চাকা।আবার টুকটাক কেনাকাটা থেকে নিত্য বাজার সদাই, ছুটির দিনে পুরো পরিবার একসাথে ঘুরাঘুরি সবখানেই রিকশার সেকি দাপুটে প্রভাব।ওদিকে ভাড়া নির্ধারন নিয়ে প্রায়ই যাত্রী চালকের মধ্যে তুমুল তক্কাতক্কি না থাকলে রিকশা জীবনটাই যেন স্বাদহীন বলে মনে হয়।এতো গেলো রিকশার ব্যাবহারিক দিক।
অন্যদিকে রিকশা শব্দ গঠন পঠনেও আছে নানা জটিলতা।কেউ লেখে রিক্সা,কেউ বা রিকসা, আবার কেউ ইসকা, আবার কারো মুখে শোভা পায় রিকশা।
রিকশা যে নামেই শোভা পাক না কেন, তবে যে কোন চাকুরির নিয়োগ বা অন্যকোন ভর্তি পরিক্ষায় ধ্বনি বিপর্যয় অংশে জাপানী শব্দ রিকসা থেকে বাংলা রিসকা একটি অত্যন্ত কমন প্রশ্ন বলা যায়।কি সব তাজ্জ্বব ব্যাপার স্যাপার বলুনতো!
এই রিকশা নিয়ে যতো কথা।আমরা তিন চাকার এই বাহনের নাম দিয়েছি রিকশা অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রিকশার ডাক নামেও রয়েছে ভিন্নতা।এই যেমন ধরুন চীনে গিয়ে রিকশা নাম পালটিয়ে হয়েছে সানলুঞ্জে, কম্বোডিয়ায় গিয়ে আকিকা ছাড়াই নাম নিয়েছে সীক্লো, আবার মালেশিয়ায় গিয়ে বেকে বসে আছে বেকা নামে।ওদিকে ফ্রান্স বাসী শখ করে নাম দিয়েছে সাইক্লো, আর ইউরোপ একধাপ এগিয়ে একটু আধুনিক ঢঙ্গে নাম ধরে ডাকছে পেডিক্যাব বলে।তবে যে দেশে গিয়ে যে নামেই পরিচিত হোক না কেন রিকশা গঠন কাঠামোতে প্রায় একই রূপ ধরে বসে আছে। শুধু কলকাতা শহরে তিন চাকার এক চাকা সিকেয় তুলে দুই চাকা নিয়ে জীবন পার করতে হচ্ছে এই যা!
কলকাতা শহর আধুনিক হলেও রিকশা তার পুরনো কাঠামোর ঐতিহ্য নিয়ে এক চাকার ভার মানুষের কাধে দিয়ে গো ধরে বসে আছে।সে কিছুতেই আধুনিক হতে চাইছে না এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও।অথচ ১৮৬৮ সালে জাপানে যখন সে ভুমিষ্ট হয় তখন কি সে জানতো তার আদি রূপ কাঠামোতে এতো পরিবর্তন আসবে? ওসব চিন্তা ভাবনা আগে মাথায় থাকলে বোধহয় রিকশা অন্য দেশ ভ্রমনে কখনোই রাজি হতো না।
কিন্তু সেই বা কি করবে। তার কদর আর জনপ্রিয়তা যখন জাপান ছাপিয়ে দেশে দেশে তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও তো দেশ আর মানুষের রুচি ভেদে তাকেও নানা রূপে আসতে হয়েছে।আর হবেই না কেন, প্রাচীন ঘোড়ার গাড়ির চাইতে এমন সহজলভ্য তিন/দুই চাকার মানুষ চালিত যান স্বল্প মূল্য পাওয়া বেশ কষ্ট।যেখানে ঘোড়ার চড়া মূল্যর বিপরীতে ছিলো মনুষ্য শ্রমের সহজলভ্যতা।আর সে জন্যই তো ঘোড়ার গাড়ির বিলাসিতা ছুড়ে ফেলে উনবিংশ শতাব্দীতে অভিজাতরা বেছে নিয়েছিলো এই তিন/দুই চাকার রিকশা কে।সেই থেকেই আমাদের রিকশার সাথে এতো গভীর সম্পর্ক, এতো ভালোবাসা, এতো খাতির আর নাড়ির সখ্যতা।খাতির আর ভালোবাসার সম্পর্ক এতোটাই গভীরে পৌছেছে যে বিশ্বের কাছে ঢাকা শহর কে রিকশার রাজধানীর মর্যাদার আসনে বসাতে পেরেছি আমরা।
রিকশার গঠনেও আছে নানা বৈচিত্র্যতা। বাশ দিয়ে তৈরি ফ্রেমের হুড আর তিন চাকার সাথে নারকেল ছোবা দিয়ে বানানো গদিতেই যাত্রীর যতো প্রশান্তি।হুডে রংবেরঙের রঙ্গিন প্লাস্টিকের কাগজ, ফিতার নানা ডিজাইন শরীরে জড়িয়ে হাওয়ার বেগে চলতে থাকে রিকশা।চালকের আসনের সামনে থাকে আয়না,নানা ধরনের ঝাড়বাতি,ফিতা,আরো কতো কিছু দিয়ে সাজানো।সাথে শরীরের নানা অংশে তো লাল,নীল,হলুদ রঙের সাজ রয়েছেই।ঠিক যেন নতুন বউ।যতো খুশি, যেমন করে সাজাও, যতো সাজগোজ ততো বেশি কদর।আর তাইতো চালক তার ইচ্ছা মতো সাজিয়ে হাওয়াই ফতুয়া,লুঙ্গি আর গলায় গামছা ঝুলিয়ে মনের সুখে সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ে রিকশা নিয়ে।যতো সাজ ততো কদর। রিকশায় অবশ্য দু-জন বসাই আরামের।সময় সময় আবার পাচ/ছয় জনের বন্ধুর দল একসাথেই রিকশায় উঠে ঘুরতে দেখা যায়।কেউ বসে হুডে,কেউ সাইটে,কেউ নীচে পায়ের কাছে আবার কেউ আরেকজনের কোলে।এতে রিকশা চালকের যেমন অবস্থাই হোক না কেন তাতে রিকশা যাত্রায় কোন বাধা হয় না। মামা কিন্তু রিকশার ভাড়া পাচ/ছয় জন হিসেব করেই মিটিয়ে নেয়।

চালকের রুচির সাথে মিলিয়ে রিকশার যাত্রী ছিটের ঠিক পেছনে “মা-বাবার আশির্বাদ” কিংবা কোন বিখ্যাত নায়ক-নায়িকার মুখাবয় বা বিখ্যাত কোন বাংলা সিনেমার পোষ্টারের “ফোক আর্ট বা পপ আর্ট” রিকশার সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিতো।যেন নতুন বধুর সাজে সাজানো হয় রিকশাকে।
কিন্তু আজকাল যুগের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে রিকশাও তার পুরনো কাঠামো কে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে হয়েছে আধুনিক।লাল ফিতে ,নীল ফিতে আর গয়না-গাটি ছুড়ে ফেলে সেও তার রনে ভঙ্গ দিয়েছে।“ফোক আর্ট বা পপ আর্ট” এর জায়গাতে এখন যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর কিংবা ফেইসবুক আইডি শোভা পায়।পায়ের প্যাডোল জাদুঘরে দিয়ে সেও লাগিয়েছে চার্জার ইঞ্জিল,আর বাড়িয়েছে নিজের গতি।জগতে সকলেই যখন কিনা আধুনিকতার লেবাস জড়াতে ব্যতিব্যস্ত তখন রিকশাই বা কেন পড়ে থাকবে সেকেলে হয়ে।কার না মন চায় আধুনিক হতে?
রিকশার ও তো একটা শখ আহ্লাদ বলে কিছু আছে। তাইতো সে পুরনো মোড়ক ছুড়ে ফেলে গায়ে জড়িয়েছে নতুন পদবী ।পদবীটাও পেয়েছে যেমন একেবারে খাসা, তেমনি কপাল খুলেছেও বটে । আধুনিক নলনাদের মতো সোনার গয়নাকে বিদেয় দিয়ে সেও গায়ে ইমিটেশনের গয়না জড়িয়ে রিকশা নামের আগে “অটো” পদবী লাগিয়ে হয়ে গেছে “অটো রিকশা”। তাতে সুবিধেও হয়েছে বেশ।পদবীর সাথে সাথে যেমন তার শক্তি সামর্থ বেড়েছে ঠিক তেমনি আয় রোজগারও হয় আগের চাইতে ঢেঁড় বেশি। এখন মাইলের পর মাইল দৌড়াতেও আর কোন অসুবিধে হয় না।চালকের মুখেও ফিরেছে হাসি।আয় রোজগার ভালো হলে ওসব গয়না আর সাজগোজের কি দরকার বলুন? কপাল গুনে রিকশার আর জিরনোর ফুসরোত নেই আর তাইতো প্রেমিকের মুখে এখন-
“এক পলকেই চলে গেলো,
আহ কি যে তার মুখখানা-
রিক্সা কেন আস্তে চলে না ?
রিক্সা কেন আস্তে চলে না?
রিক্সা যাচ্ছে হাওয়ায় উড়ে,
আমার হৃদয় তুচ্ছ করে-
হায় পরমা মুখ ফিরিয়ে একটা কিছু বলো না”।


এম এম মেহেরুল ইসলাম
লেখক ও চেয়ারম্যান,আলোর প্রদীপ।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×