somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসাধারন হৃদয় ছোঁয়া একটি ঘটনা।যার কাছে হার মানবে কোন মিষ্টি ভালোবাসার গল্প।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পান্থপথ মোড়ে জ্যামে আটকে আছি। সিএনজির অবিরাম ঘড় ঘড় শব্দে মাথা ধরে গেছে । আমি আবার বেশি শব্দ সইতে পারি না । মিটারের দিকে তাকিয়ে দেখি ৫৬ টাকা উঠে গেছে!! সেন্ট্রাল রোড থেকে এইটুকু আসতেই এত টাকা উঠলো কীভাবে ?! মিটারে নিশ্চয়ই কারচুপি করা হয়েছে । ও তাইতো বলি , মিটারে যেতে বললাম আর এত সহজেই কেন রাজি হয়ে গেল সিএনজিওয়ালা !! ব্যাটাকে কিছু একটা বলতে নিচ্ছি এমন সময় ছোট্ট একটি ছেলে এগিয়ে আসলো আমার দিকে । উদোম গা ,ময়লা ছেঁড়া প্যান্টটাতে ধুলোর এমন মোটা আস্তরণ পড়েছে যে আসল রংটাই চাপা পড়ে গেছে । ছেলেটা সিএনজির কপাটকে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আংগুল ঢুকিয়ে দু'হাতে আঁকড়ে ধরলো ।

"স্যার কয়ডা ট্যাহা দিবেন? ভাত খামু....."

ছেলেটার কথায় অস্বাভাবিক নির্লিপ্ততা । চোখের মণিটা ধকধক করছে । যেন সেখানে আগুন জ্বলছে ,ক্ষুধার আগুন । পকেটে হাত গেল । একরাশ আশা নিয়ে হাড্ডিসার ছেলেটা মলিন মুখে আমার দিকে চেয়ে আছে। মানিব্যাগটা বের করে আনবো এমন সময় ট্রাফিকের তীব্র হুইসেল । সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে সব গাড়ি ছুট দিল ।

ছেলেটা দৌঁড়াচ্ছে । সিএনজির পাশাপাশি ভীষণ জোরে দৌঁড়াচ্ছে । অনাহারী দূর্বল শরীর নিয়ে এত জোরে তাকে দৌঁড়াতে দেখে ভারী অবাক হচ্ছি ! ছেলেটা এক হাতে এখনো গ্রিলটা আঁকড়ে ধরে আছে ।

পরক্ষণেই যান্ত্রিক গতিশক্তির কাছে হার মানে সে ....ছেড়ে দেয় গ্রিলটা । মনটা এমনিতেই খারাপ ছিলো , এই ঘটনার পর আরো খারাপ হয়ে গেল । বেচারাকে চারটে ভাতের জন্যে না জানি কত সংগ্রাম করতে হবে!!

সিএনজিওয়ালার উপর ভীষণ মেজাজ খারাপ হচ্ছে । ব্যাটা তখন সিএনজিটাকে একটু সাইড করতে হতো না ?!
"ঐ মিয়া , তখন সিএনজিটা সাইড করলে না ক্যানো ? দেখলে না ছেলেটা ভিক্ষা চাইতে এলো?" আমার অকস্মাত্‍ ধমকে থতমত খায় সিএনজিওয়ালা ।
"স্যার তহন য্যামনে হুড়মুড়াইয়া গাড়িগুলান টান দিসে না!! সাইড করতাম ক্যামনে আপনেই কন !"

তার কথায় যুক্তি আছে । ওপেন বড় সিগনালগুলোতে গাড়ির এত লোড থাকে যে ঐসময় কোন গাড়িরই থামার কিংবা সাইড করতে পারার কথা না ।

"কিন্তু তোমার মিটারে টাকা এত বেশি উঠে ক্যানো ? মিটার বাড়িয়ে রেখেছো না?!"

"জ্বে না স্যার...অহনকা মিটারের দাম বাইড়া গেছেগা অনেক!"-সিএনজিওয়ালার সোজাসাপটা জবাব ।

মোটেও তর্ক করতে ইচ্ছে করছে না । এরা বহুত চাপাবাজি করতে জানে । তাছাড়া চলন্ত অবস্থায় চালকের সাথে কথা বলা ঠিক না । আর এরা তো গরিব , দুটো পয়সা বেশি খাক না হয় !

" জলদি চালাও " এই একটা কথা বলেই আমি চুপ গিয়েছি । "এই তো স্যার কারওয়ানবাজার তো প্রায় পৌঁছায় গেছিগা"


আমি যাচ্ছি কারওয়ানবাজার, লক্ষ্য— বারিস্তা....

বারিস্তায় যখন প্রথম এসেছিলাম তখন রিমি আমার সাথে ছিলো । দিনটা ছিলো ১৪ ফেব্রুয়ারী , ভালবাসা দিবস ....

জীবনে প্রথমবারের মত প্রেমিকার হাতে হাত ধরে ভালবাসা দিবস পালন- ভেতরে ভেতরে উত্তাপটা ভালই টের পাচ্ছিলাম । দিনটা বেশ রোমাঞ্চময় কেটেছিলো আমাদের দুজনার । দিনময় রিক্সায় ঘুরে বেড়িয়েছিলাম । শেষ বিকেলের দিকে রিক্সাওয়ালা কারওয়ানবাজার পর্যন্ত এসে আর যেতে রাজি হলো না । সেখানেই নেমে গেলাম আমরা । রিমির পছন্দ মোতাবেক বারিস্তায় খেতে ঢুকলাম ।


বারিস্তা থেকে বের হয়ে রিমি একটা কাণ্ড করে বসলো । আমরা রিক্সা ঠিক করছিলাম । এমন সময় কোত্থেকে একটা বাচ্চা মেয়ে দৌঁড়ে আসলো । এসেই সোজা রিমির কাছে হাত পেতে বসলো । মুখে তাচ্ছিল্যবোধক কিছু শব্দ করে মেয়েটাকে ভাগানোর চেষ্টা করলো রিমি । কিন্তু মেয়েটা নাছোড়বান্দা ,যাবেই না ,যেন রিমির কাছ থেকে ভিক্ষে আদায় করেই ছাড়বে ! সে মুখে কিছু বলছিলো না তবে তার চোখের ভাষাই তার ক্ষুধানলের কথা জানান দিচ্ছিলো । রিমি সে ভাষাটা পড়তে না পারলেও আমি ঠিকই পড়তে পেরেছিলাম ।

মেয়েটা রিমির পিছু ছাড়ছেই না ! একপর্যায়ে সে রিমির শাড়ির আঁচলের কোণা টেনে ধরে মিনতি করতে লাগলো । সাথে সাথে রিমির প্রকান্ড এক চড় নেমে আসলো ।
ঠা স স স স....
কাঁদতে কাঁদতে পালিয়ে গেলো বেচারি । আমি হা হা করে উঠলাম, "ধুরো ! তুমি কি করলে এটা ! ভিক্ষে দেবেনা ভাল কথা ,তাই বলে মারলে কেন ?"
"বেশ করেছি , আমার শাড়িটাই নোংরা করে দিলো বজ্জাত ফকিন্নীটা!"
"এক কোণায় একটুখানি ধরেছে কি ধরেনি , তাতেই নোংরা হয়ে যাবে নাকি !"
"তা নয় তো কি ! এখন তাড়াতাড়ি রিক্সা ঠিক করো , ভাল্লাগছে না " ,রিমির
চোখেমুখে ভীষণ বিরক্তি ।

রিমির সেদিনের এই আচরণটা আমার একদমই ভালো লাগেনি । সেদিনের পর থেকেই দিনকে দিন তার বিভিন্ন আচরণ আমার বিবেকের সামনে প্রশ্নবোধক এবং বিস্ময়বোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়াতে লাগলো । তাকে বিভিন্ন বিষয়ে মানা করলে কথা শুনতে চাইতো না । রিমি প্রকান্ড বড়লোক ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র মেয়ে ছিলো । সব ব্যাপারেই সে ছিলো মাত্রাতিরিক্ত আহ্লাদী । সে সবার সাথে খুব বেশি
দাম্ভিকতা দেখাতো , কখনো কখনো এমনকি আমার সাথেও !! আস্তে আস্তে দেখলাম রিমি আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ...

এইতো ক'দিন আগে হঠাত্‍ ফোন করে বললো, "রিলেশনটা আমার পক্ষে আর রাখা সম্ভব না.........."
তারপর হয়তবা নানা মেকি অজুহাত দেখাতে শুরু করেছিল, সেগুলো অবশ্য
আমাকে শুনতে হয়নি , তার আগেই আমার কাঁপা কাঁপা হাত থেকে মোবাইলটা নিচে পড়ে ভেঙে গেল....

ভাবতে ভাবতে কখন যে সিএনজিটা বারিস্তার সামনে এসে থেমেছে টেরই পেলাম না
। ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লাম যান্ত্রিক খাঁচা থেকে । ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রথমে চোখ পড়লো সেই কোণার টেবিলে , আমরা সবসময় যেখানটায় বসতাম । যাক ,খালিই পড়ে আছে ওটা । বেশ গমগমে একটা পরিবেশ । অধিকাংশ টেবিলই যুগলদের দখলে । কেউ হাতে হাত রেখে চুপচাপ বসে আছে । কেউ বা হাসতে হাসতে একে অপরের গায়ে গড়িয়ে পড়ছে । আমি ধীর পায়ে কোণার টেবিলটায় এসে বসেছি । সেই পুরনো ওয়েটারটা , যে আমাদের সার্ভ করতো ,অন্যদিনের মত যথারীতি হাসিমুখে এগিয়ে এসেছে মেন্যুকার্ড হাতে । আমি আনমনে বেশ কয়েকটা মেন্যু অর্ডার দিয়ে ফেলেছি ।
মুখোমুখি রিমির চেয়ারটা ফাঁকা । সেখানে জোর করে ওর একটা কাল্পনিক মূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না । কল্পনাগুলোও কেমন যেন মিইয়ে
যাচ্ছে দিনদিন ।

খাবারের সুঘ্রাণে সম্বিত ফিরে পেলাম , ওয়েটার খাবার নিয়ে এসেছে । বেশ গরম খাবার । ধোঁয়া উঠছে । মুখে দিলেই জিভ পুড়ে যাবে । এত আইটেম দেখে আমার মনে পড়লো মানুষ তো মাত্র একজন , আমি একা , তার ওপর ওয়েটার ডবল খাবার দিয়েছে !

"সেকি !ডবল খাবার দিয়েছো কেনো!!"
"স্যার ,আপনি তো সবসময়ই ডবল অর্ডার করতেন !"
"আচ্ছা তুমি যাও এখন"

প্রথমদিনটার পর থেকে আমরা এখানে বহুবার এসেছি । রিমি দেরি করে আসতো । আমি আগে এসেই ডবল আইটেম অর্ডার দিতাম । বেচারা ওয়েটারের কি দোষ ! সে তো আর জানে না যে রিমি আমার সাথে আর কখনও বারিস্তায় আসবেনা । এই কোণার টেবিলে খালি চেয়ারটায় সে কখনো বসবে না ।

এত খাবার দেখেই কিনা খেতে ইচ্ছে করছে না একদম । আমি এখন রিমির মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত । মোটামুটি দাঁড় করিয়ে ফেলেছি মূর্তিটা । এইতো , অবিকল সেই চোখ , সেই খোলা ঘন কালো চুল , অবিকল সেই হাসি ফুটে উঠছে ধীরে ধীরে ।

" কই নাও ! শুরু করো" , ফিসফিসিয়ে বল্লাম মূর্তিটাকে । কিন্তু সেটা কোন জবাব
না দিয়ে বিশাল শূণ্যতাভরা চোখে ম্লান হাসিতে চেয়ে আছে আমার দিকে । আশ্চর্য ! চোখের পাতাদুটো একটুও কাঁপছে না ।

মোবাইল ফোনের রিংগারের শব্দে কল্পনায় ছেদ পড়লো । মা কল করেছে । কলটা ধরতে ইচ্ছে করছে না । মাকে না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম , এখন কল ধরলেই হাজারটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে শুরু করবে । কলটা কেটে দিয়ে সাইলেন্ট মুড অন করে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম মোবাইলটা ।

আরেকদফা চেষ্টা করছি রিমিমূর্তি গড়ার । কিন্তু এবার কিছুতেই কিছু হচ্ছে না । রিমির চোখ দুটো ঠিকমত ধরা দিতে চাচ্ছে না । হাসিটাও উধাও হয়ে গেছে । আস্তে আস্তে গোটা মূর্তিটা ভোজবাজির মত মিলিয়ে যাচ্ছে আমার সামনে থেকে । এখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে , নাহ ...এখানে আর এক মুহূর্তও নয় !

বিরাট অংকের বিল মিটিয়ে চেয়ারটা ঠেলে উঠে দাঁড়িয়েছি । এক্সিটের দিকে হাঁটা শুরু করবো ঠিক এমন সময় কি মনে করে পেছন ফিরে তাকালাম । টেবিলভর্তি খাবার । এত গুলো খাবার ফেলে যাবো ? ধুর গেলাম না হয় ! আমার আবার খাবার প্যাক করে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বিরক্তিকর লাগে । আচ্ছা ওরা কি করবে এই খাবার দিয়ে ? আমি একটা আইটেমও স্পর্শ করিনি । আমি যাওয়ার পর এগুলো নিশ্চিত ভেতরে নিয়ে যাওয়া হবে । এরপর খাবারটা প্রসেস করে অন্য কাউকে সার্ভ করা হবে । আমি এখনো ঠিক বুঝতে পারছি না খাবার প্যাক করে নিয়ে যাবো কিনা.... হঠাত্‍ লক্ষ্য করলাম আমার পায়ের কাছে একটা মূর্তি ভেসে উঠছে । ছোট্ট একটা ছেলে, উদোম গা ,ধূলাস্তীর্ণ প্যান্ট । আকুল চোখে চেয়ে রয়েছে টেবিলভর্তি খাবারের দিকে । চিনতে একটুও কষ্ট হয়না । আরে !এ তো সেই ছেলেটা ! যে ট্রাফিক সিগনালে আমার সিএনজির পাশাপাশি ছুট দিয়েছিলো !

ছেলেটার ঠিক পাশেই আরেকটা মূর্তি ভেসে উঠেছে । একটা জীর্ণশীর্ণ মেয়ে । নোংরা কাপড় পরা । মুখটা ভারী অস্পষ্ট দেখাচ্ছে । যেন বহু দিনের ব্যবধানে অযত্নে রাখা দারুণ কোন তেলরঙ ঘোলাটে হয়ে গেছে । এই মূর্তিটাকে চিনতে না পারলেও আমি ধরেই নিয়েছি , এটা এক বছর আগে রিমির কাছে চড় খাওয়া সেই মেয়েটারই মূর্তি ! মূর্তি দুটো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে । দুজোড়া ধকধক করে জ্বলতে থাকা চোখের মণিতে ক্ষুধার আগুন । চোখের এই প্রতীকী ভাষাটা যেন হাজার শব্দ হয়ে তাদের তীব্র নিরবতার সাফাই গাইছিলো ....


"ওয়েটার..."বেশ জোরে হাঁক দিলাম । আশেপাশের সবাই চমকে আমার দিকে তাকিয়েছে । আমি ভ্রুক্ষেপ করি না । ওয়েটার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে,"জ্বী স্যার বলুন "
"খাবার প্যাক করে দাও",
"ok স্যার"....

এক্সিট দিয়ে বের হওয়ামাত্রই দেখি গুটি কয়েক পথশিশু বাইরে ঘুরঘুর করছে । অদূরে রাস্তার ওপারে জটলার মত কয়েকজন বসে রয়েছে । আমাকে বেরুতে দেখেই দুটো ছেলে কাছে এগিয়ে এসেছে । ওদের চেহারায় অনেক মিল । ভাই ভাই হবে হয়ত ! নাকি এটা তাদের ছন্নছাড়া জীবনের ছাঁচে গড়া অতি সাধারণ মুখচ্ছবির মিলবিন্যাস !? আমার হাতে গরম খাবারের অনেকগুলো প্যাকেট, সুঘ্রাণে ম ম করছে । সোজা জটলার দিকে এগিয়ে গেলাম । যে দুটো ছেলে আমাকে দেখে এগিয়ে এসেছিলো ওরা আমার পিছু নিয়েছে । সুঘ্রাণে ওরা টের পেয়ে গেছে আমার হাতে খাবারের প্যাকেট । জটলার প্রত্যেকটি শিশুই ভয়ানক ক্ষুধার্ত তাতে কোন সন্দেহ নেই । আমি জানি ওরা এখনি হাত পাতবে আমার কাছে । ওদের সেই সুযোগটা আর দেই নি । তার আগেই প্যাকেটগুলো ওদের হাতে দিয়ে দিয়েছি । বিশাল ব্যস্ত রাজপথে ওরা রাজভোজন করছে । ওদের চোখেমুখে অদ্ভূত তৃপ্তি আর বিস্ময় । আমি জটলার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করছি ।

জটলার মধ্য থেকে সবচেয়ে ছোট যে ছেলেটা সে উঠে এসেছে আমার কাছে । বয়স ৪ এরও নিচে হবে হয়তবা । ছেলেটা দারুণ বিস্ময় নিয়ে হাঁ করে আমার চোখাচোখি তাকিয়ে আছে । হাবভাব দেখে মনে হলো সে কিছু একটা বলতে চায় । শেষপর্যন্ত বলেই ফেললো ,"স্যার ,আপনে কানদেন ক্যান??"

চোখে হাত গেলো । একি ! চোখে পানি !? আমি যে কখন কাঁদতে শুরু করেছি তা নিজেও বলতে পারবো না । সাথে সাথে হেসে দিলাম । একটা মানুষ কান্নার পাশাপাশি কি করে হাসে তা হয়ত ছেলেটির জানা ছিলো না । তাই সে দ্বিগুণ বিস্ময়ে আমার দিকে চেয়ে আছে ।

"না কিছু না এমনিই ,যাও ,তুমি ওদের সাথে গিয়ে খাও", ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম ।

ছেলেটা জটলায় ফিরে গেছে । ঠিক আগে যেখানে বসে ছিলো ঠিক সেখানেই গিয়ে বসেছে । অন্যেরাও জায়গাটা খালি রেখেছে । খানিকটা অদ্ভূত ব্যাপার বটে ! আমি যা ভেবেছিলাম তার উল্টো ।

আরেকটা অদ্ভূত ব্যাপার খেয়াল করছি আমি । জটলার মাঝে সবাই গোল হয়ে বসেছে । মিলেমিশে খাচ্ছে সবাই । আশ্চর্য!! ওদের মাঝে একটুও বিভেদ নেই !!


পরিশিষ্ট—

আমরা কারণে অকারণে প্রতিদিন অনেক খাবার অপচয় করি । আমাদের অভাব নেই , অথচ আমাদের চারপাশে তাকালেই ক্ষুধার অভাব নেই , ক্ষুধিতের অভাব নেই !! কেন এই বৈষম্য ?পথের ধারে ছোট্ট শিশুটি যখন খেতে না পেয়ে দিনের পর দিন ভিক্ষের জন্য হন্যে হয়ে ছুটে বেড়ায় ,কুকুরের মত লাথি-গুঁতো-তাড়া খায় ,ক্ষুধা সইতে না পেরে ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট অর্ধনষ্ট খাবার গলাধঃকরণ করে তখন আমাদের মরচ পড়া বিবেক কি একটুও নড়েচড়ে ওঠে না ??
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:০৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×