আমার আগের পোষ্ট (এখন পরিবর্তনের সময়) এ মন্তব্য করতে গিয়ে অনেকেই সামনে আগানোর জন্য যদ্ধাপরাধীদের বিচার এর কথা বলেছেন এবং তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশের অন্যান্য প্রধান সমস্যা নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া প্রয়েজন এতে কোন সন্দেহ নাই, সকল সভ্য দেশেই সেটি হয়েছে। সবাই বলছেন বিচার করবেন, কিন্ত করবেন কিভাবে? সে ব্যাপারে কি নির্দিষ্ট প্ল্যান আছে?
এখানে একটি ব্যাপার পরিস্কার করে নেই। জামাত-শিবিরের মতাদর্শধারী আর যুদ্ধাপরাধী কিন্ত এক জিনিস নয়। ৭১ এ যারা হত্যা ধর্ষণ এর মত যুদ্ধাপরাধ করেছিল তারাই যুদ্ধাপরাধী। বর্তমানে তাদের সিংহভাগই জামাতের ছত্রছায়ায় রয়েছে, কিন্তু এ ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলেও এদের অবস্থান আছে।
আমরা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে পারিনি শুধু এ ব্যাপার নিয়ে রাজনীতি করা ছাড়া। রাজনীতির খেলায় যুদ্ধাপরাধীরা দলবদল করে মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় সেবক সেজে গিয়েছে কিন্ত রাজনৈতিক স্বার্থে আমরা সেটি নিয়ে উচ্চবাচ্য করিনি।
সমাজে পরিবর্তন না আসলে দেশ উন্নত না হলে নিকট ভবিষ্যতেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে তার কোন সম্ভাবনা দেখিনা। তবে এ ব্যাপার নিয়ে বিস্তর রাজনীতি হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
এখন আমার প্রশ্ন হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলে দেশের সমস্যা নিয়ে ভাবা যাবেনা এটা কেমন কথা হলো। দেশটা যদি পিছিয়েই থাকলো তাহলেতো ওই রাজাকার আল-বদর তথা যুদ্ধাপরাধীদরেই তো প্রকারান্তরে জয় হলো। যুদ্ধ করে একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি, তার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখাও কিন্ত আরেকটা যুদ্ধ।
দেশটাকে যদি আমরা আমাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনার মাধ্যমে আমাদের নানা সমস্যা (এখন পরিবর্তনের সময় পড়ুন) সমাধান করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে দেখবেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে আরো বেশী জনমত তৈরী হবে যেটি ইউরোপে হয়েছে।
আর যদি এই একটি ব্যাপারেই মগ্ন থেকে দেশের সমস্যার দিকে না তাকাই তাহলে হয়ত আর কখনই এইসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব হবে না। অনুন্নত দেশ ও সমাজে মানুষের ভিতর জনমত সৃষ্টি করা কঠিন এবং মানুষ তার জীবন ও জীবিকার কথা চিন্তা করতে গিয়ে ন্যায় - অন্যায়ের বোধ হারিয়ে ফেলে।
একটু গভীর ভাবে ভাবুন। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম চলবে কিন্ত সেটিকে এক ডাইমেনশনাল না করে দেশের স্বার্থে সেটিকে মাল্টি ডাইমেনশনাল করুন। উন্নত সমাজ, উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে মানুষের মনের কূপমন্ডুকতাও দুর হবে।
তখন আমরাই বাধ্য করতে পারব জামাত সহ সকল রাজনৈতিক দলকে যুদ্ধাপারাধীদের বহিস্কার করতে এবং বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে।
আর যদি শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই বলে সারাক্ষন গালাগালির তুবড়ি ছুটাই আর কে ঘোষক, কে পাঠক এই নিয়ে মগ্ন থেকে দেশের সমস্যার দিকে উদাসীন থাকি, তাহলে ওই যুদ্ধাপরাধীরাই আমাদের অক্ষমতা দেখে দুকান বিস্তৃত হাসি দিবে এবং এখনো দিচ্ছে।
গালাগালি ছাড়া বাদবাকী সবকিছুই স্বাগতম।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



