আমি একটা সিস্টেমকে দায়ি করেছিলাম, ইনডিভুজুয়াল কাউকে নয়।
....................................................................................................
আর এখন শুরুতেই আপনাদের হতাশ করে দিয়ে বলে দিচ্ছি যে, এ লেখাটা যেরকম করে লেখবো বলেছিলাম তা আর করছি না। কারন, তার আর প্রয়োজন নাই। ঝামেলা শেষ, আর আমারও ভালই অভিজ্ঞতা হলো যে কোন যায়গায় যেয়ে গলা চেপে ধরতে হবে যেনো এরকম দুঃর্ঘটনা আর না ঘটে।
যাই হোক এখানে আমার সাথে মিরপুরের KFC'র যে অবৈধ(!) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তার কিছু সংক্ষিপ্ত বর্ননা দিচ্ছি।
....................................................................................................
মিরপুরে KFC'র বয়স আজ প্রায় ২ বছর আর আমার লগে এর সম্পর্কের লেন্থও ওই একই। যেহেতু আপনারা ইতিমধ্যে যানেন যে আমি স্থানিয় ভালো রেস্টুরেন্ট গুলোতে আড্ডা মারতে পছন্দ করি আর তাই KFC-ও আমার কাছে হয়ে ওঠে আড্ডা মারার অন্যতম প্লেইস। আর অন্যান্ন রেস্টুরেন্টের থেকে এখানে আমার যাতায়াত একটু বেশি হওয়ার কারন এদের চেইনড সার্ভিং সিস্টেম। এর মধ্যে পেয়েছি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, মুখে মুখে তর্ক না করে ভদ্র ভাবে উত্তর দেয়া এমপ্লই। আর ছোট-খাট যেকোনো অভিযোগের সাথে সাথে ইম্পলিমেন্ট।
যেমন আপনি যাই বলেন, আমি অনেক কস্টলি ফাস্টফুড শপ বা রেষ্টুরেন্টে গিয়ে দেখেছি তারা সর্বোচ্চ ঘন্টায় একবার ফ্লোর পরিষ্কার করে থাকে। আর KFC-তে আপনি ঢুকার সময়েও পায়ের যে ধুলা টুকুও তারা সাথে সাথে ক্লিন করে ফেলে।
আবার খাবারের যেকোন প্রব্লেমই বলেন না কেনো, বলার সাথে সাথে তারা খাবার চেইঞ্জ করে দিবে। এটা কয়জায়গায় পেলাম আর বলেন। উপরন্তু অনেক স্থানে খাবারে গন্ধ আসলেও ক্যাচ ক্যাচ করতে হয় আধা ঘন্টা ওটা চেইঞ্জের জন্য। সাথে সাথে অন্য কোথাও আপনাকে মুখের উপর দু'চার কথা শুনিয়ে দিতেও দিধা করবে না।
আর তাছাড়া KFC'র সবচেয়ে প্রধান যে বিষয়টি আমার কাছে ভালো লেগেছে তা হলো, ডিফেন্স-টাইপড্ সার্ভিং সিস্টেম।
এখানে কাস্টমারদের লেভেলটা কে এমন করে সাজানো হয়েছে যেমন, আপনি একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে কাস্টমারের সামনে/সাথে কোন এমপ্লয়িই টেবিলে বসে না। এমনকি আপনি যদি তাদের ডেকে ডিফেন্স স্টাইলে বদারিং করতে থাকেন, তাতেও তারা মনে হয় অনেক অভ্যস্ত। (আমি আগে অনেক করতাম তো তাই)
কাস্টমারদের রেস্টুরেন্ট-এর প্রবেশ-পথ দিয়ে তারা নরমালি প্রবেশ করে না।
তাছাড়া, তারা কাস্টমারদের "কাস্টমার" বলে সম্বধন না করে গেষ্ট বলে থাকে। এটা আমিও নিজে থেকে চিন্তা করেছি যে কেউ যখন আমাকে বলে আমি তার "কাস্টমার" তখন নেতিবাচক মনই আমাকে খাটো করে বলে আমি তার থেকে নগন্য। কারন এই বিশাল বিজনেসের সে মালিক আর আমি তার কাস্টমার। এরকম সিলি চিন্তা আসাটা অস্বাভাবিক হলেও তারা, আইমিন KFC এর ফাক রাখে নি।
যেটা একজন কাস্টমারকে এর প্রতি আসক্তি তৈরি করে। আর এটা আপনারাও জানেন যে মানুষের টাকার চেয়ে নরমালি সম্মানের প্রতি বেশি নজর।
এভাবে তাদের গেষ্ট-সার্ভিং সিস্টেম টা এমন ভাবে সাজানো রয়েছে যা নির্দিষ্ট কোন একজন কর্মকর্তার উপর নয় বরং স্টেপ বাই স্টেপ প্রত্যেকেরই রেস্পন্সেবিলিটি থাকে বাই দেয়ার রুলস্।
আর এর বাইরে একজন গেলে পানিশমেন্ট ওই একজন নয়, খাবে পুরো টিম এবং এই টিমের টিচিং-এ যে গভর্নিং বডি আছে তারাও রেহাই পাবে না। ঠিক যেমনি দেখা যায় ডিফেন্সের সিস্টেমে।
এরকম রুলস্ কঠোরভাবে মেইন্টেইন করে বলেই এর প্রতিষ্টাতা "কর্নেল" উপাধি পেয়েছিলেন।
এখানকার খাবার নিয়ে অনেকের মত-পার্থক্য থাকতে পারে বাট, আমার কাছে তার থেকে সার্ভিসটাই মেইন। ধরুন, আপনাকে কেউ খাইয়ে খোটা দিলে, সে যতো ভালো আপ্যায়নই করাক তা আপনার কাছে বিষের মতো মনে হবে। (অবশ্য যাদের গন্ডারের চামড়া, তাদের কথা ভিন্ন)।
আর এজন্যই অর্থাৎ এই সার্ভিসের জন্যই আমি KFC'র দৈনন্দিনের গেষ্ট।
আর আমার সাথে তাদের সম্পর্কও নিবিড়। তয় মাথা গরম করলে খবর আছে কিন্তু!
তাই প্রায় প্রতিদিনই এখানে যাওয়া হয়।
একা অথবা,
ফেন্ডস দের সাথে।
আবার যাই নিজের পরিবারকে নিয়ে
পকেট ফাকা হইলে এমতে মুখে কালো মেঘ লইয়া বইসা থাকি।
আর এই গরমে প্রত্যেক দিন মিনিমাম একবার হলেও এখানে মাউন্টেন ডিউ অথবা
চকোলাশ খিলাইতে যাই।
আর জানেন তো্, আমার আবার একটাতে হয় না।
তবে আজীবন মিস করবো KFC'র কিছু জিনিয়াস (ফ্রম দেয়ার বিহেইভিয়ার) দের। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর অন্তরের ভালোবাসা দিয়ে কাজ করে মিরপুরের KFC-কে একটা গুড প্ল্যাট ফর্মে দাড় করিয়েছেন।
মি. বিদ্যুত। KFC'র প্রাক্তন ম্যানেজার। আর আমার কাছে মিরপুর KFC'র বট-বৃক্ষ। উনার ইভার পজিটিভ এটিটুড এই ব্র্যাঞ্চের অনেক ক্ষুত বের করা গেষ্টদের শিতল করতো বিদ্যুৎ বেগেই।
তবে উনি এখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে ইতালিতে আছেন। মিস করি অনেক।
ইমরান রাশিদ। প্রাক্তন ম্যানেজার, মিরপুর KFC।
মি.নবিন(মাঝে)। এনার সম্বন্ধে আগেই জেনেছেন নিশ্চই।
এদের আন্তরিকতার কারনে আমি এই KFC-কে অনেক সময় আমার সেকেন্ড হোম বলে থাকি। যদিও অনেক ভালো ভালো রেস্টুরেন্টই আন্তরিক তাদের কাষ্টমারদের প্রতি, তবে কয়জন তা ধরে রাখতে পারে তাই হলো কথা। আর এদিক থেকে KFC-ই বস্।
....................................................................................................
এলোমেলো করে লেখলাম। সাজিয়ে পড়তে পারলে পড়েন, নইলে আমাদের দুষ দিয়েন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৩৮