আজ যারা তনুর ধর্ষণ নিয়ে সোচ্চার, তাদের একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। আজকাল তরুণ আম ফেসবুকারদের তখনো জন্মই হয় নি, হলেও খুবই বয়স অল্প। ফেসবুকের আইডিয়াও স্বয়ং জুকারবার্গের মাথায় আসে নি হয়ত। সেই সময় এইরকম কীবোর্ডের যুদ্ধ হত না, সরাসরি প্রকাশ্যে প্রতিবাদ হত।
ইয়াসমিন বেরিয়েছিল মাকে না জানিয়ে দিনাজপুরের উদ্দেশ্য। মাকে দেখে না প্রায় তিন বছর। ২৩ আগস্ট ১৯৯৫ এ বেরিয়ে ২৪ তারিখ ভোরে দিনাজপুরের দশ মাইলে পৌছায়। এমন সময় পেট্রোল পুলিশ উপস্থিত হয়। বাড়ি পৌঁছে দেবার আশ্বাসে পিক আপে তুলে নেয় তৎকালীন এএসআই মইনুল হক, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও চালক অমৃতলাল। ধর্ষণ শেষে রাস্তায় ফেলে দেয়। ধামাচাপা দিতে পুলিশই আঞ্জুমানে মফিদুল মারফত দাফন করে। এমনকি পতিতা ডেকে পতিতা প্রমাণের চেষ্টা করে। দুইদিন পরে ইয়াসমিনের মা শরীফা বেগম জানতে পারেন এক মেয়েকে পুলিশ ধর্ষণ শেষে হত্যা করে ফেলে রেখেছে , বিক্ষুব্ধ হচ্ছে জনতা। জানতে পারলেন যে মেয়েকে তিন বছর দেখেন না, সেই হতভাগ্য মেয়েই তাঁর মেয়ে, সেই মেয়ের মৃত মুখ দেখলেন উনি। ফুঁসে উঠে জনতা। ২৭ মার্চ বিচার চাওয়া উত্তেজিত জনতার উপরে গুলি চালায় পুলিশ। মারা যায় ৭ জন।
প্রকৃত ধর্ষক জানার পরেও তাদের ফাঁসি হয় ২০০৪ সালে ১ সেপ্টেম্বর। প্রায় নয় বছর। আরো করুণ কথা হল, সেই সাত জনকে হত্যা সংশ্লিষ্ট মামলার কিন্তু আজো বিচার হয় নি।
২০০১ সালে ক্লাস এইটে পড়ুয়া পূর্নিমা রানী শীলের কথা অনেকেই হয়ত ভুলে গেছে। মাত্র ক্লাস এইট। কতটুকুই বা বয়স। অক্টোবরের এক রাত্রে ২২ দুর্বৃত্ত চড়াও হয় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার শীলদের বাড়িতে। তাদের মনোবৃত্তি জেনেই পূর্নিমার মা তাদের পা ধরে বলেছিল -" বাবারা তোমরা একজন একজন করে যাও, আমার মেয়েটা অনেক ছোট"
শুধু সেই ঐ বাড়িতেই না, বাড়ির উৎসব শেষে তুলে নিয়ে দূরের পাটক্ষেতে আবার উৎসব হয়। পূর্নিমা বেঁচে আছে, বিচার হয়েছে, বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয়। রায় হল কত সালে জানেন? ১০ বছর পর ২০১১ এ। মামলার বাদী পূর্নিমার বাবা মারাই গেছেন রায় না দেখেই। মামলার বর্তমান বাদী পূর্নিমা নিজে
এইগুলা কেবল "চাঞ্চল্যকর"। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের নির্যাতন করা হচ্ছে অহরহ। আদিবাসীরা যেন সেইখানে বাঙ্গালীদের ভোগ্যপণ্য , ঠিক যেমন ৭১ এ পাকিরা আমাদের সাথে করেছে। আমরা কিন্তু খুবই "কিউট" জাতি
আর সমতলে তো ভিন্ন চিত্র। মিডিয়ায় এলে অন্য ফ্লেভার। না হলে গ্রাম্য সালিশ। কিছু দেন দরবারে আর টাকার বিনিময়ে মামলা খতম। সামান্য ২০ -৩০ হাজার টাকায় একটা মেয়ের সম্মান। ভালই তো।
চক্ষুলজ্জার ভয়ে অনেক কিছু প্রকাশ্যেই আসে না। ধামাচাপা পড়ে যায়।
তনুর ঘটনায় হয়ত মামলা হবে। সেই মামলা চলবে অনন্তকাল জূড়ে। গোল্ডফিস মেমোরির বাঙ্গালী ভুলে যাবে খুব তাড়াতাড়িই। তারপরে একদিন অনাদরে টিভি স্ক্রলে আসবে "তনু ধর্ষণ মামলার রায় প্রদান ... "
মানুষ বাঁচেই ৬০-৭০ বছর। পূর্ণাঙ্গ বিচার পেতেই লাগে ১৫-২০ বছর। বিচার প্রার্থীর কথা কি কেউ মনে রাখে?
তনুরা ধর্ষিত হবেই। কারণ এই সমাজ কাঠামোই জন্মের পরে ছেলেদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মেয়েরা ভোগের বস্তু, আর মেয়েদের শিখানো হয় তোমরা পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্যই এসেছ। তাই তো আসে তেঁতুল তত্ত্ব, আসে পোষাক তত্ত্ব।
সমাজ দাঁড়ায় ধর্ষকদের পক্ষেই। তারপরে পত্রিকার কোণায় আসে - "ধর্ষণের শিকার হলেন ...... "
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:০৬