somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুক্তমনা ব্লগার
কেহ বিশ্বাস করে, কেহ করে না। যে বিশ্বাস করে সেও সত্য-মিথ্যা যাচাই করে না, যে অবিশ্বাস করে সেও না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নটা নির্ভর করে মানুষের খুশির উপর। ধর্মান্ধতা নিপাত যাক, মুক্তচিন্তা মুক্তি পাক।

জহির রায়হানের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবকে অবজ্ঞার অভিযোগ করে লেখা সেই চিঠি

১৬ ই মে, ২০১৮ রাত ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জহির রায়হান (১৯ আগস্ট ১৯৩৫ – ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২) একজন বাংলাদেশি উপন্যাসিক, লেখক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নির্মিত প্রামণ্যচিত্র “স্টপ জেনোসাইড” নির্মানের কারণেই তিনি সম্ভবত সর্বাধিক পরিচিত। জহির রায়হান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তার মাঝে এত গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল যে তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতা নির্ভর করে “জীবন থেকে নেয়া” কিংবদন্তীতুল্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর “স্টপ জেনোসাইড” নামের একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক এবং পরে নিহত জহির রায়হানের আপন ভাই বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক শহিদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে জহির রায়হান রহস্যজনকভাবে নিজেই নিখোঁজ হয়ে যান ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি। পরে অবশ্য প্রমাণ মেলে কিছু সশস্ত্র বিহারী চক্রান্তকারী এবং ছদ্মবেশি পাকিস্তানি সৈনিক জহির রায়হানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।



১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ফজলুল হক নামের একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং প্রযোজক জহির রায়হানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে রাষ্ট্রপতি মুজিবের কাছে একটা চিঠি লেখে। ফজলুল হক অভিযোগ করে জহির রায়হান তার “স্টপ জেনোসাইড” প্রামাণ্যচিত্রে শেখ মুজিব, আওয়ামীলীগ এবং ছয় দফা দাবীকে অবজ্ঞা করেছেন। ফজলুল হক আরও অভিযোগ করে জহির রায়হান তার প্রামাণ্যচিত্রে ভ্লাদিমির ইলিচ ইলিয়ানোভ লেনিনের ছবি ব্যবহার করেছেন। ফজলুল হক মুজিবনগর সরকারকে জহির রায়হানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করে। কিন্তু ফলাফল ঘটে ঠিক উল্টো, ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ জহির রায়হানের প্রামাণ্যচিত্রের উচ্ছসিত প্রশংসা করেন। স্টপ জেনোসাইড ১৯৭২ সালে তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে পুরষ্কার জিতে নেয়। প্রামাণ্যচিত্রটি ১৯৭৫ সালে দিল্লির চলচ্চিত্র উৎসবে SIDLOC পুরষ্কার লাভ করে। জহির রায়হানের বিরুদ্ধে চিঠিটি ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিল’ সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে যার তথ্যসূত্র নিচে দেয়া হলোঃ Memo No. PS/SEC/III/110, Dated 10th Sept., 1971



বরাবর

প্রধানমন্ত্রী,

বাংলাদেশ সরকার



বিষয়ঃ জনাব ফজলুল হকের চিঠি, জহির রায়হান নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী প্রসঙ্গে।



এখানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক ফজলুল হকের চিঠির সংযুক্তি সন্বিবেশিত হয়েছে। চিঠিটি নিজেই এই চিঠি লেখার প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করছে। আমি আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি জনাব ফজলুল হক যেসব অভিযোগ দায়ের করেছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হোক এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে দেশের সর্বোচ্চ স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করা হইল।



এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রটির প্রদর্শনী বাতিল করে আমাকে জানানো হোক।



(সৈয়দ নজরুল ইসলাম)

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি

সংযুক্তিঃ চিঠির একটা অনুলিপি।



স্যার,

যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, বিষয়টা গভীর উদ্বেগের এবং আমার জানামতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ। জহির রায়হানের পরিচালনায় আমরা একটা প্রামাণ্যচিত্রের “স্টপ জেনোসাইড” প্রদর্শনী দেখলাম আজ কলকাতার এক ঘরোয়া আয়োজনে।

প্রামাণ্যচিত্রটির নির্মানে আর্থের যোগান দিয়েছে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার এসোসিয়েশন এবং প্রযোজিত হয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলী সমিতি এবং বাংলাদেশ লিবারেশন কাউন্সিল অফ ইন্টেলিজেনশিয়ালের যৌথ উদ্যোগে। প্রামাণ্যচিত্রটি ভারত সরকারের কাছে বিক্রি হতে পারে যাতে ভারত তার নিজ দেশে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে পারে।

প্রামাণ্যচিত্রটি শুরু হয়েছে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের একটা ছবি এবং তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যেখানে ইন্ডিয়াতে বাংলাদেশের উদ্বাস্তু এবং আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প নিয়ে তেমন কিছুই প্রদর্শিত হয় নি। আমার ধারণা এই প্রামাণ্যচিত্রের গুরুতর সমস্যা হলো এখানে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য বা তার কোন ছবি নেই বা আওয়ামীলীগ সম্পর্কে একটি শব্দও উল্লেখ করা হয়নি বা আমাদের ছয়দফা দাবী নিয়েও কিছু বলা হয়নি।

আমি মনে করি যদি এই প্রামাণ্যচিত্র ভারতে বা বহির্বিশ্বে প্রচার হয় তাহলে দর্শকের মনে হতে পারে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে অন্যকোন উদ্দেশ্যে যেটা আমরা নিজেরাও বিশ্বাস করি না। যদি এই প্রামাণ্যচিত্রটি ভারতের কোন পরিচালক নির্মাণ করতেন তাহলে হয়ত আমরা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে পারতাম কিন্তু যেহেতু এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন আমাদের বাংলাদেশের একজন পরিচালক সেহেতু আমরা চুপচাপ বসে থাকতে পারি না। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এই প্রামাণ্যচিত্রের বিরোধীতা করছি এবং আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ ভারতীয় সরকারের মাধ্যমে জনসাধারণ দেখে ফেলার আগেই প্রামাণ্যচিত্রটি বন্ধে অতিসত্ত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

তা যদি না করা হয় তাহলে আমি একাই প্রামাণ্যচিত্রটি প্রচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করব।



গভীর বিনয়াবনত,

ফজলুল হক

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক

প্রযত্নে, জনাব বিনয় রায়, ১১৪/এ পার্ক স্ট্রিট

কলকাতা-১৭

রাষ্ট্রপতি

বাংলাদেশ সরকার

মুজিবনগর

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৮ রাত ২:৪৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×