বুধবার প্রথম আলোর নারীমঞ্চের লেখাটা সকালে চোখে পড়েনি। কিন্তু ফেসবুকে এমটিবি ব্যাংকের কর্মকর্তা নাইয়ার ফাতেমার স্ট্যাটাসে প্রথম শ্রাবণীর কথা জানতে পারি। নাইয়ারের স্ট্যাটাসে লেখা ছিল ওর দেওয়াল দেখার অনুরোধ। সেখানে দেখলাম ধ্রুব ও তার স্ত্রী শ্রাবণীর কথা। রাতে বাসায় ফিরে প্রথম আলোর লেখাটিও পড়েছি। সেটি শ্রাবণীর মা লিখেছেন। ফেসবুক পাতা ও প্রথম আলোর লেখা থেকে জেনেছি শ্রাবনীর অসুখের কথা। শ্রাবনীর অস্থিমজ্জা রক্ত তৈরি করতে পারছে না। ফলে, ও দিন দিন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। রক্তের ব্যাপারটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোষে কেষে অক্সিজেন পৌছে দেওয়ার কাজটা সেই করে। প্রতিটি কোষের ভেতর যেখানে শক্তি কারখানা রয়েছে সেখানে অক্সিজেন পৌছে দেওয়া তারপর উৎপন্ন কার্বনদ্বিঅম্লজকে পরিশোধনের জন্য ফুসফসে নিয়ে যাওয়া এগুলো না হলে বেঁচে থাকা যায় না। শ্রাবণীর অসুখটার একটি কঠিন নাম রয়েছে। তবে, সেটি ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যতোটা গুরুত্বপূর্ণ এ তথ্যটা যে, এ অসুখের চিকিৎসা আছে। শ্রাবণীর মা লিখেছেন - “এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা অস্থিমজ্জার পুনঃস্থাপন (বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন)। আর যেহেতু বাংলাদেশে এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তাই ডাক্তার দেরি না করে সিঙ্গাপুর কিংবা ভারতে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। কালবিলম্ব না করে ওকে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ভেলোর শহরে অবস্থিত ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাই। মনে একটা আশা ছিল। কিন্তু ভারতের চিকিৎসকও তিনবার বোন ম্যারো পরীক্ষা করলেন এবং ফলাফল সেই একই।” তার মানে হলো বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন করলে শ্রাবণী সুস্থ হবেন। সেটিও সম্ভব। বিভিন্ন দেশেই এ কাজটি করা যায়, তবে “সারা পৃথিবীতে ভারতেই বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশনের খরচ সবচেয়ে কম। তবুও তা বাংলাদেশি টাকায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ।”
সহজ কথা হলো ৪০ লাখ টাকা যোগাড় করা গেলে শ্রাবণীকে সুস্থ করে তোলা যাবে।
শ্রাবণীর মায়ের লেখা থেকে তাদের পরিবারের কথা আমরা জেনেছি। ফেসবুক পাতা থেকে আমরা শ্রাবণীর স্বামী ধ্রুবর কথা জেনেছি। ধ্রুব খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পাশ করে এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। ধ্রুবর বাবা ছিলেন শিক্ষক। কাজে দুই পরিবারের পক্ষে এত টাকা যোগাড় করাটা কঠিন হবে যদি আমরা পাশে না দাড়াই।
ডিজিটাল প্রযুক্তি এখন আমাদের নানান সুযোগ দিয়েছে নিজেদের আগের দিনের চেয়ে বেশি মানবিক হওয়ার। আমার মনে পড়ে, কয়েকবছর আগে বুয়েট ছাত্র হৃদয়ের জন্য ক্যাম্পেইনের কথা। মাস কয়েকে মধ্যে তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ (এককোটির কাছাকাছি!!) সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল। আমি জানি এবারও হবে। সে সময় অর্থের একটি অংশ সংগৃহীত হয়েছিল দেশের বাইরে থেকে। সেটি কম ছিল না। দেশের মধ্য থেকে হৃদয়ের বন্ধু-সহপাঠি আর বুয়েট এলামনাইরা সে সংগ্রহের বিরাট দায়িত্ব পালন করেছে। ই-মেইল আর মোবাইল সে সময় তাদের শক্তিমত্তা প্রমাণ করেছে। এখন তো আমাদের ফেসবুক আছে, ব্লগ সাইটগুলো আছে। কেবল ফেসবুকে বাংলাদেশের ব্যবহারকারী আছে ১১ লক্ষ। ৫০ লক্ষের বেশি মানুষের ইন্টারনেট সংযোগ আছে, সাড়ে ৬ কোটির মোবাইল। কাছে, চেষ্টা করাটা কঠিন নয়।
শুরুর আগে কয়েকটা বিষয় ভেবে নেওয়া যায়। ৪০ লক্ষ আসলে কতো টাকা?
প্রত্যেকে ১ টাকা করে দিলে মাত্র ৪০ লক্ষ জন লাগে। ৪০ লক্ষ মানে আমাদের জনসংখ্যার ২.৫ শতাংশ। দেশের বাইরে আমাদের প্রায় ৭০ লক্ষ প্রবাসী বাঙ্গালি আছেন!
১০ টাকা করে দিলে সেটি নেমে আসে ৪ লক্ষে! আর ১০০ টাকা করে দিলে সেটি হয় ৪০ হাজার!
এটিই আমাদের টার্গেট হোক।
১০০ টাকার কথা বলছি কারণ আমাদের দৈনিক গড় আয় ১২০ টাকার মতো। তার মানে আমাদের ৪০ হাজার লোক গড়ে ১০০ টাকা করে দিলেই আমরা শ্রাবণীর চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে পারবো।
প্রশ্ন হচ্ছে আপনি আমি কীভাবে এতে শরীক হতে পারি। কাজটা সোজা। ২০০৫ সালের তুলনায় খুবই সোজা। ২০০৫ সালে অনলাইন ব্যাংক, পেপল এসব ছিল না। নগদ টাকাই যোগাড় করতে হয়েছে বেশি। এখন দেশের/বিদেশের যে কোন জায়গা থেকে আপনি শ্রাবণীর পাশে দাড়াতে পারবেন।
ফেসবুক পাতায় কোন কোন দেশ থেকে কীভাবে টাকা পাঠাতে হবে সেটি বলা আছে।
আগে আমি অনেককে দেখেছি নিজের কন্ট্রিবিউশন কম হবে বলে সেটি নিয়ে কুন্ঠিত থাকেন। অনেকে ভাবেন -এতো টাকা লাগবে, আর আমার সামান্য ক’টি টাকা। দয়া করে এমনটি ভাববেন না। সম্মিলিতের শক্তিই আমাদের শক্তি। সেটিই আমাদের জোর, আসল জোর। আমাদের মানুষই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
একটু খোঁজ নিলে দেখবেন আপনার আশেপাশে আরো কয়েকজন আছেন যারা ঠিক আপনার মতো ভাবছেন। তাদের কাজ থেকে সংগ্রহ করে একত্রে ব্যাংকে জমা দিয়ে দিন। তাতেই হবে।
হিসাবটা দেখুন, ১০০ টাকা আমরা যোগাড় করতে চাই ৪০ হাজার জনের কাছ থেকে।
আমি জানি অনেকে এর চেয়ে অনেক বেশি দেবেন, অনেকেই চেষ্টা করবেন তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ম্যাচিং ফান্ড বের করতে। সেজন্য তাদের ম্যালা হ্যাপা পোহাতে হবে, অনেক ই-মেইল, চিঠি লিখতে হবে, দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। এবং আমি জানি তারা সেটা করবেন।
এরই মধ্যে অনেকে সাড়া দিতে শুরু করেছেন। গতকাল পর্যন্ত মোট ৩ লক্ষ টাকা সংগৃহীত হয়েছে।
শ্রাবণীর জন্য মাত্র ৪০ লক্ষ টাকা তুলতে হবে। আমরা কী সেটা পারবো না?
সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।