পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখণ্ডে বিভিন্ন জাতি ধর্মের মধ্যে যুগে যুগে নিজস্ব অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রাম নতুন কিছু নয় ! আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মত বাঙালীর মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার লড়াইটাও ছিল অনুরূপ ! অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যারা আত্মহুতি দেন, জাতি হিসেবে আমরা সেই সকল শহীদের প্রতি চিরকাল ঋণী !
হোকনা তাদের জন্য দু-একটি ফুলের বিনিময় শ্রদ্ধা নিবেদন ? কিন্তু তা নিয়েও হয় তর্ক-বিতর্ক, ওজন হয় ধর্মের বাটখারা নিক্তিতে !
দেখুন বহুল প্রচলিত সেই তর্ক-বিতর্কটি কিরূপঃ
হুজুর, মৃত কারো সম্মানে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন কিংবা পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে আপনারা নিষেধ করেন কেন?
-কারো আদেশ নিষেধ বাদ দাও, নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করো এটা কতটুকু মানবিক এবং যুক্তিযুক্ত।
-এক মিনিট নিরবতা পালন করে বা ফুল দিয়ে যদি মৃত কাউকে শ্রদ্ধা করা হয়, সেটাতে অমানবিকতা কিংবা অযৌক্তিকতা আসবে কেন?
-আচ্ছা, তোমার বাবা, দাদা কিংবা নিকটাত্মীয় কেউ মারা যাওয়ার পর তুমি কি কখনো নিরবতা পালন বা ক’টি ফুল দিয়ে এসেছিলে?
-জী না, করিনি।
-কেনো করোনি? তারা কি তোমার শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন না?
-কী যে বলেন, তাঁদের চেয়ে অধিক শ্রদ্ধার কেউ আমার ছিল! কিন্তু তাদের ব্যাপারে নিরবতা পালন বা পুষ্পাঞ্জলি দেয়ার চিন্তা করিনি।
-করবেও না কখনো। কারণ, এরা তোমার আপনজন। আর কেউই আপনজনের সাথে ঢং করতে চায় না। মৃত কারো জন্য দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন ঢং বৈ কিছু নয়। খুঁজে দেখো, পৃথিবীর কোনো মুসলিম নেই, যে তার মৃত আপনজনের জন্য দাঁড়িয়ে এভাবে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করে।
- মানলাম কিন্তু এই দাঁড়িয়ে নিরবতাটা এল কোত্থেকে?
-এটার জন্ম দিয়েছে পরকালে অবিশ্বাসীরা। একজন মানুষ মরে যাওয়ার পর তাদের মতে আর কিছুই নেই, এখন তাকে স্মরণ হলে কী করবে? খুঁজে বের করেছে, নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকবে। এরপর অন্যান্য অজ্ঞ ধর্মালম্বীদের মতো মুসলমানদের অনেকেও না বুঝেই তাদেরটা কপি করছে, আবার অনেকে জাস্ট রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে ইস্তেমাল করছে।
☆ শুনো বৎস। এক মিনিট কেন, একক জীবন "নীরবতা পালন" করলেও একজন মৃতের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। একগুচ্ছ ফুল কেন, এক পৃথিবী ফুল জমায়েত করলেও একজন মৃতের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।
যদি সত্যিই কাউকে ভালবাসো কিংবা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাও, দাঁড়িয়ে হোক আর বসে, কয়েকটা সুরা পড়ে তার জন্য মাগফিরাত চাও। খামাখা মৃতদের নিয়ে ফাজলামি করো না।
আচ্ছা আমি যদি মৃত্যু ব্যক্তির কবরে/বেদিতে ছালাম দিয়ে একটা/একগুচ্ছ ফুল দিয়ে নীরবতার সহিত কিছুক্ষন দাড়িয়ে স্রষ্টার কাছে বাংলা/ইংরেজি/আরবি/ফার্সি যেকোনো ভাষায় বলি- "হে নিখিলের স্রষ্টা ও পালনকর্তা তুমি একে বা এদেরকে যেখানেই রাখো, আমার কামনা এবং প্রার্থনা ভালো রেখো"; এমন কিছু প্রার্থনামুলক বাক্য কি বলাটা অন্যায় হবে ?? রুহের মাগফেরাত দোয়া-কালাম, সূরা ইত্যাদি আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় করলে হবে না অথবা নিষিদ্ধ এমন ছাগলামী হাদিস কোথায় পেয়েছেন ?? প্রচারণামূলক আপনার ব্রেন ওয়াশমূলক গল্পের যুক্তি দেখে মনে হলো এভাবেই তো জঙ্গি তৈরী করেন আপনারা ! ওহ ! আপনি কবর/কবরস্থান দেখে ছালাম করেন কেন, ওখানে কি মৃত্যু ব্যক্তির আত্মা বসে থাকে ?
শোনো বৎস- ফুল ভালোবাসা এবং পবিত্রতার প্রতীক ! মৃতদের উদ্দেশ্যে পবিত্র ভালোবাসার পাশাপাশি বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় ! কয়জনেই বা নিজের গাছের ফুল উৎসর্গ করতে পারে, অধিকাংশেই ক্রয় করে উৎসর্গ করে এই অর্থে যে, যাদের নিঃস্বার্থ জীবন ত্যাগের বিনিময় একটা চিরন্তন মায়ের ভাষা কিংবা একটা স্বাধীন ভূখণ্ড পেলাম আর ভোগ করলাম অথচ তাদের কি দিলাম ?
বিঃ দ্রঃ লেখাটির প্রথমাংশ হুবাহুব কপি করা !
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫৪