somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর বিখ্যাত কোহিনূর হীরা সম্পর্কে জানুন !!

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কোহিনূর হীরা
কোহিনূর বা আলোর পর্বত নামে খ্যাত হীরার ইতিহাস অতি দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য। এর ইতিহাসের সূচনা ১৩০৪ সালে। প্রাচীনকালের সুন্দরী কুমারীর মতো এটিও বিভিন্ন রাজা বাদশাহ ও শাসকের হাত ঘুরে এখন স্থান পেয়েছে টাওয়ার অফ লন্ডনে।ষোড়শ শতাব্দীতে কোহিনূর মালওয়ার রাজাদের অধিকারে ছিল এবং পরবর্তীকালে তা মোগল সম্রাটদের হাতে আসে এবং সম্রাট শাহজাহান নির্মিত ময়ূর সিংহাসনের শোভা বর্ধন করে। মোগল সাম্রাজ্য যখন বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন নাদির শাহকে আমন্ত্রণ জানানো হয় মুসলিম শাসনের গৌরবোজ্জ্বল দিন ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে। কিন্তু তাকে প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়। কৌশলে তিনি মোগলদের কাছ থেকে কোহিনূর উদ্ধার করে নিয়ে যান ইরানে। কোহিনূর নামটিও নাদির শাহের দেয়া। নাদির শাহ নিহত হবার পর কোহিনূর আসে আফগানিস্তান সম্রাট হুমায়ুনের পুত্রের কাছে।পঞ্জাবের মহারাজা রঞ্জিত সিংহ আফগান শাসকের থেকে কোহিনুর হিরে পেয়েছিলেন। তিনি তা উইল করে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে দিয়ে কোহিনূর বা আলোর পর্বত নামে খ্যাত হীরার ইতিহাস অতি দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য। এর ইতিহাসের সূচনা ১৩০৪ সালে। প্রাচীনকালের সুন্দরী কুমারীর মতো এটিও বিভিন্ন রাজা বাদশাহ ও শাসকের হাত ঘুরে এখন স্থান পেয়েছে টাওয়ার অফ লন্ডনে।

দ্বিতীয় ব্রিটিশ-শিখ যুদ্ধের পর শিখদের হারিয়ে ব্রিটিশরা শিখ সাম্রাজ্য দখল করে। তার জন্য লর্ড ডালহৌসি লাহৌরের শেষ চুক্তি তৈরি করেন। সেই চুক্তিতেই কোহিনুর-সহ মহারাজার যাবতীয় সম্পত্তি ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়াকে সমর্পণের কথা বলা হয়েছিল।উত্তরসূরি দলীপ সিংহ ১৮৫০-এ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে এ’টি তুলে দেন। শেষ পর্যন্ত সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৫০ সালে তুলে দেন রাণী ভিক্টোরিয়ার হাতে। ১০৮.৯৩ ক্যারট ওজনবিশিষ্ট কোহিনূর প্রথমে রাণী ভিক্টোরিয়া ব্যবহার করতেন তার হাতে। এরপর সেটি স্থান পায় বৃটিশ মুকূটে। উপমহাদেশের এক সময়ের অহংকার এখন বৃটেনে।১৮৫০-এ দলীপ সিংহ ছিলেন নাবালক। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, নাবালক রাজাকে চাপ দিয়ে কোহিনুর নেওয়া হয় । এবং সেই যুক্তিতেই ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার সময় এবং তার পরে ১৯৫৩ সালেও বর্তমান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের সময় কোহিনুর ফেরানোর দাবি তুলেছে ভারত। কিন্তু চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে তা খারিজ করে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।কোহিনূরের মালিকানা নিয়ে আশির দশকেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ইরান, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, এমনকি বাংলাদেশ পর্যন্ত এর সত্ত্ব দাবি করেছিল। তবে বৃটিশ সরকার সব দাবিই প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এসকল দাবী অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে।


দরিয়া-ই-নূর
দরিয়া-ই-নূর আলোর নদী বা আলোর সাগর বিশ্বের অন্যতম বড় হীরকখন্ড, যার ওজন প্রায় ১৮২ ক্যারেট ৩৬ গ্রাম। এটির রঙ গোলাপি আভাযুক্ত, এ বৈশিষ্ট্য হীরার মধ্যে খুবই দূর্লভ। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের সোনালি ব্যাংকে রয়েছে যা ঢাকায় অবস্থিত।কোহিনূর হীরার মত দরিয়া-ই-নূর হীরাটিও গোলকোন্দা খনি, আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায় ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের পরিতলা-কোল্লুর খনি থেকে পাওয়া যায়। খুঁজে পাওয়ার পরেই হীরাটি মুঘল সম্রাটের দখলে যায়।১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে প্রারস্যের শাসক নাদির শাহ ভারতের উত্তরাঞ্চল আক্রমণ করে দিল্লী দখল করে নেয় এবং বহু দিল্লীবাসীকে হত্যা করে। মূঘল সম্রাট মোহাম্মদের কাছে রাজশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে নাদির শাহ কোহিনূর হীরা, ময়ূর সিংহাসনের সাথে দরিয়া-ই-নূর সহ মুঘল সম্রাটের সম্পূর্ণ বিপুল ধন-রত্নে পরিপূর্ণ কোষগার দখল করে নেয়। নাদির শাহ এ সমস্ত ধনরত্ন তার সাথে করে ইরান নিয়ে যান এবং দারিয়া-ই-নূর সেই থেকে সেখানেই রয়েছে।নাদের শাহের মৃত্যুর পরে তার দৌহিত্র শাহরুখ মির্জা উত্তরাধিকার সূত্রে দরিয়া-ই-নূরের মালিক হন। এরপর এটি আলম খান খোজেইমেহের দখলে আসে এবং পরে পারস্যের ঝান্ড সম্রাজ্যের সদস্য লুতফ্‌ আলি খান ঝান্ডের দখলে আসে। কাজার সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা আগা মোহাম্মদ খান ঝান্ডদের যুদ্ধে পরাজিত করলে দরিয়া-ই-নূরও কাজারদের দখলে চলে আসে। ফাতেহ আলি শাহ কাজার তার নাম হীরা এক পিঠে খোদাই করান। পরবর্তীতে নাসের-আল-দীন শাহ কাজার এটি প্রায়ই তার বাহুবন্ধনীতে পড়তেন। তিনি বিশ্বাস করতে এটি হীরা সাইরাস রাজমুকুটকেও সুশোভিত করেছিল। যখন রাজকীয় রীতিতে বাহুবন্ধনীর রেওয়াজ কমে আসে তখন তিনি এটি তার পোষাকে পিনের সাথে পরিধান করতেন। বিভিন্ন সময়ে এই রত্ন সম্মানের প্রতীক হিসেবে রাজ্যের সম্মানী ব্যাক্তিদের কাছে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। ১৯০২ সালে ইউরোপ ভ্রমণের সময় শাসক মোজাম্মর আল-দীন শাহ কাজার এ হীরাটি তার হ্যাটের অলঙ্কার হিসেবে পরিধানের আগ পর্যন্ত এটি গুলিস্তান প্রাসাদের কোষগারে লুকায়িত ছিল। পাহলভি সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রেজা শাহ ১৯২৬ সালে তার রাজ্যভিষেকের সময় এই হীরাটি তার সামরিক টুপিতে অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করেন, এবং ১৯৬৭ সালেও মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভির রাজ্যভিষেক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়।১৯৬৫ সালে কানাডীয় এক গবেষক দলের প্ররস্যের রাজমুকুটের রত্ন সম্পর্কিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছিল, দরিয়া-ই-নূর একোটি বড় গোলাপি হীরার অংশ ছিল এবং তা মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সিংহাসনে খচিত ছিল। ফরাসি জহোরি জিন-বাপ্টিস্ট তাভেরনিয়ের ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দের এক জার্নালে এ সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে, যিনি একে Diamanta Grande Table নামে ডেকেছেন। হীরাটি হয়তো দুই ভাগে কাটা হয়েছে বড় ভাগটি দরিয়া-ই-নূর অর্থাৎ আলোর সাগর, ছোট অংশটি নূর-উল-আইন হীরা যার ওজন মনে করা হয় ৬০ ক্যারেট ১২ গ্রাম, যা বর্তমানে ইরানের ইম্পেরিয়াল কালেশনে একটি টায়রায় খচিত রয়েছে।


নূর-উল-আইন
নূর-উল-আইন আলোর চোখ ইরানের সম্রাজ্ঞী ফারাহ পাহলভির জন্য তৈরি টায়রায় খচিত প্রধান হীরক খন্ড। টায়রাটি ১৯৫৮ সালে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির বিয়ের সময় তৈরি করা হয়েছিল। মনে করা হয় এটি ভারতের গোলকোন্দা খনি থেকে উত্তোলন করা হয়েছিল এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে নাদির শাহ আফসার ভারত জয় করে ইরানের ইম্পেরিয়াল কালেকশনে নিয়ে আসেন।এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গোলাপি হীরক খন্ড এবং মনে করা হয় তা আরও বড় একটি গোলাপি হীরক খন্ডের অংশ ছিল। ঐ বড় হীরক খন্ডটি দুই ভাগ করা হয় যার একটি অংশের নাম হয় নূর-উল-আইন এবং অন্যটি হয় দরিয়া-ই-নূর হীরা। দুটো অংশই এখন ইরানের মুকুটের রত্নের অংশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×