চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচিত্র "My Bicycle"। একটি সাইকেলকে ঘিরে এক যুবকের জীবন । যুবকের জন্ম এমনি এক গ্রামে , যেখানে একটি সাইকেলই অনেক কিছু । ঐ যুবকের একমাত্র সম্বলও ছিল একটা সাইকেল । কাজ না পেয়ে শহর থেকে ফিরে সেই সাইকেলের উপর নির্ভর করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছিল সে । কিন্তু ক্ষমতাবান কিছু লোকের নজরে পড়ে যায় তার সাইকেলটা । ঐ লোকদের হাত থেকে সাইকেল বাঁচাবার প্রাণপণ চেষ্টার এক পর্যায়ে সাইকেলটা ভেঙে এক ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রাখে সে । আর এই সাইকেলের সাথে সাথে সে-ও ভেঙে পড়ে । তখন আবার সে কর্মের সন্ধানে শহর অভিমুখে পা বাড়ায় ।
এই সিনেমার মাধ্যমে দর্শক পরিচিত হতে পারতো আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের বিচিত্র জীবন-ব্যবস্থার সাথে । অজানা অনেক কিছুই চলে আসতে পারতো আমাদের জানার পরিসীমার ভেতরে । কিন্তু তা আর হচ্ছে না। কেননা শুধুমাত্র ভাষাগত অসঙ্গতির দায়ে আটকে দেয়া বয়েছে এই সিনেমাটিকে ।
ভাষা নিয়ে বাঙালি জাতির অভিজ্ঞতা ব্যপক । আমাদের বাংলা অর্জিত হয়েছে রক্তের বিনিময়ে । কেন আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে তা কারোই অজানা নয় । আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলবার অধিকার হরণ করার চেষ্টার প্রতিবাদে আমরা মাঠে নেমেছিলাম , আন্দোলন করেছিলাম । পাকিস্তান মোটেই ভালো করেনি উর্দুকে আমাদের উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করে, একথার সাথে দ্বিমত পোষণ করার মত কাউকে পাওয়া যাবেনা । কিন্তু আমরা এখন যা করছি তা কি ভালো হচ্ছে ? ভাষাগত অসঙ্গতি কে কারণ হিসেবে দায়ের করে একটা সিনেমাকে আটকে দেয়াটা কতটা সঠিক ? বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন আমাদেরকে করতে হয়েছে কেন ? কারণ ক্ষমতার বলে আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলতে বাঁধার সৃষ্টি করছিল পাকিস্তান । আমরা কি এই সিনেমাটিকে আটকিয়ে সেই একই কাজটাই করছিনা , যেটা পাকিস্তান করেছিল আমাদের সাথে ? আমরা কি তাদের মাতৃভাষায় কিছু প্রকাশের উপর বাঁধা আরোপ করছিনা ? তাছাড়া আমাদের কাছে যদি হিন্দি , চাইনিজ , জাপানিজ , তামিল ইত্যাদি ভাষার সিনেমা গ্রহণযোগ্যতা পায় , তবে এটা কি দোষ করলো ?
বাংলাদেশের সিনেমার অবস্থা ক্রমশ ভালোর দিকে যাচ্ছে তা সবাই জানি এবং মানি । তবে যে নীতিমালায় সিনেমা ভাষাগত বৈষম্যের শিকার হয় , সে নীতিমালায় অগ্রগতি প্রকৃতপক্ষে কতটা সম্ভব -এই প্রশ্নটা থেকেই যায় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৬