অরাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবি করা হলেও পুরোপুরি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে মূলত চট্টগ্রামভিত্তিক হেফাজতে ইসলাম। আর এই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগবিরোধী সব শক্তি। হেফাজতের আন্দোলনে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের তরুণদের। এই তরুণ প্রজন্মের সবাইকে গড়ে 'নাস্তিক' ঘোষণা করে মানুষের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগাতে মরিয়া এখন হেফাজতে ইসলাম। কারণ এই তরুণরাই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ১৮ দলীয় জোটের ধর্মভিত্তিক দলের নেতারা। আর হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন জারি রাখতে সিংহভাগ টাকা ঢালছে জামায়াতে ইসলামী। আর কিছু অর্থ আসছে কওমি মাদ্রাসা থেকে।
জামায়াতের সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক নেই দাবি করা হলেও হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে
জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম নগর শাখার নেতাদের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতার নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে, হচ্ছে টাকার লেনদেনও। হেফাজতের সমাবেশে স্লোগান উঠছে সাঈদীর মুক্তির দাবিতে।
পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা, হেফাজতে ইসলাম এবং ১৮ দলীয় জোটের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ২০১০ সালে সরকারের নারীনীতির প্রতিবাদ জানাতেই মূলত হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী অধ্যক্ষ আল্লামা শাহ আহমদ শফি। এখন তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারেই ১৮ দলীয় জোট ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধের নামে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমেছে।
নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট
হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে নেতৃত্বে আছেন ১৮ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামী দলের নেতারা। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শফির পরই অন্য নেতাদের অবস্থান। তাঁদের কেউ নায়েবে আমির, কেউ যুগ্ম মহাসচিব বা অন্য পদে আছেন। অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির পদে আছেন নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপি সমর্থিত জাতীয় ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল মান্নান, ঢাকার তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং জামায়াতে ইসলামীর রুকন জয়নাল আবেদীন, সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ সংগ্রাম পরিষদের সেক্রেটারি, ইসলামী দলগুলোর সমন্বয়কারী এবং চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর রুকন অধ্যক্ষ মাওলানা মিয়া মুহাম্মদ হোসাইন শরীফ এবং চট্টগ্রামের লিয়াজোঁ কমিটির আহ্বায়ক ও নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, '১৮ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামী দলগুলোর নেতারা হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে আছেন।' এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা অরাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবে না, এমন কোনো কথা নেই।' তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগও অনেক অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে।' সারা দেশের কমিটি গঠন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আল্লামা শফির ভক্ত নেই, এমন কোনো উপজেলা বাংলাদেশে নেই। সেখানে তাঁরাই কমিটি করছেন।' তিনি দাবি করেন, 'জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্ক নেই।' হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী লাভবান হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের আন্দোলনে কোনো মুসলমান লাভবান হলে আমাদের আপত্তি নেই।' হেফাজতের বিক্ষোভ মিছিলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত ও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবি জানানো প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, 'ছাত্রলীগের ছেলেরাই কৌশলে আমাদের মিছিলে ঢুকে এ ধরনের কাজ করেছে।'
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিলে যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে প্ল্যাকার্ড বহনের ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
জামায়াতে ইসলামীর টাকা আসছে
গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে টাকা ঢালছে জামায়াত। জামায়াতের টাকা দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, 'হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামীর চারজন নেতা আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত বলে জেনেছি। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খুব শিগগির বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।' রাষ্ট্রীয় অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন মাঠ কর্মকর্তা বলেছেন, 'হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন চাঙ্গা রাখতে জামায়াতে ইসলামী টাকা দিচ্ছে বলে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।' এ নিয়ে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দীন রুহি, নেজামে ইসলাম পার্টির চট্টগ্রাম নগর সভাপতি আবদুর রহমান এবং জামায়াতের রুকন মাওলানা মিয়া মুহাম্মদ হোসাইন শরীফের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের কেউই এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তবে নাম প্রকাশ করা হবে না এই শর্তে ১৮ দলীয় জোটের একজন নেতা বলেন, 'জামায়াতে ইসলামী আন্দোলনের জন্য টাকা দিচ্ছে, তবে সেই টাকার অঙ্ক কত জানি না।' তিনি বলেন, 'বাকি টাকা কওমি মাদ্রাসা এবং শিক্ষকরা চাঁদা হিসেবে দিচ্ছেন।' জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা বলেন, 'টাকার লেনদেন হচ্ছে, তবে পরিমাণ জানি না।' অন্যদিকে টাকা লেনদেনের কথা অস্বীকার করে নগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, 'লেনদেনের মতো কোনো ফান্ড জামায়াতে ইসলামীর নেই। আপনারা ভুল তথ্য পেয়েছেন।' অবশ্য মহিউদ্দিন রুহি নিজেও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগ এবং আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
চট্টগ্রামের পর বরিশালেও 'নাস্তিক' ঠেকাও
চট্টগ্রামে গত ১৩ মার্চ মহাসমাবেশ ঠেকাতে সক্ষম হওয়ার পর এবার বরিশালের গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিহত করার পরিকল্পনা করছে হেফাজতে ইসলাম। এ জন্য বরিশালে ইতিমধ্যে ১৮ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামী দলের নেতাদের নিয়ে হেফাজতে ইসলামের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর সঙ্গে চরমোনাই পীর এবং তাঁর অনুসারীরা যুক্ত আছেন। বরিশালে গণজাগরণ মহাসমাবেশও ঠেকানো হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের একজন নেতা। একই বিষয়ে মুফতি ইজাহারুল ইসলাম বলেছেন, 'সারা দেশেই আল্লামা আহমদ শফির অনুসারীরা গণজাগরণ সমাবেশের নামে নাস্তিক সমাবেশ ঠেকাবে।'
উল্লেখ্য, ঢাকার আশুলিয়াতেও গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। তবে সেদিন এই সংগঠনের কাউকে সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গণজাগরণ মঞ্চ সেখানে নির্বিঘ্নে বিশাল সমাবেশ করে।
এটা একটা কপি/পেস্ট পোস্ট। মূল লেখা এখানে : Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




