somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জানি না এমন পবিত্র ভালোবাসা আর আছে কিনা।তবে কল্পনা করতে খুব ইচ্ছে হয় এমন ভালোবাসার অস্তিত্ব

২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টুং টুং শব্দে এগিয়ে চলছে রিকশা।বাহিরে শো শো শব্দে বইছে বাতাস।খুব ভাল লাগছে কনার।অনেক দিন পর বাহিরে বের হলো সে।চুলগুলো অবাধ্যের মত উড়ছে তার।কনার চুলগুলো প্রায় মুখে এসে পড়ছে আহাদের।এক অদ্ভুত ভাললাগা কাজ করছে তার মনে।খুব সুন্দর লাগছে আজ তার হবু বউ কনাকে।কপালে লাল টিপ,লাল পেড়ে সবুজ শাড়ি আর হাতভর্তি লাল কাঁচের চুড়িতে অপরূপ দেখাচ্ছে।আহাদের খুব ইচ্ছে করছে কনার হাত টা ধরতে,কনার মাথাটা নিজের কাধে রাখতে।কিন্তু কিছুই বলতে পারল না সে।কনার সাথে তার পরিচয় মাত্র ৩ দিন।এরেঞ্জ ম্যারেজ হচ্ছে তাদের।বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে দুইজন দুইজনের ছবি পর্যন্ত দেখে নি।সব ওদের বাবা মা রাই ঠিক করেছে।মাত্র ৩ দিন হলো দুইজন দুইজনের সাথে কথা বলছে।দুইজন একসাথে বিয়ের শপিং করছে।আজকেও শপিং করতে বের হয়েছিল তারা।সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে।আহাদ বারবার আড়চোখে চাইছে কনার দিকে।প্রেমে পড়েছে সে মেয়েটার।তার মনে হচ্ছে ৩ দিন নয় কনার সাথে তার পরিচয় ৩ বছরের।আচ্ছা কনাকে নিজের মনের কথাটা বলে ফেল্লে কেমন হয়? নিজের মনকেই প্রশ্ন করে সে।পরক্ষনেই বাতিল করে দেয় চিন্তাটা।কনার সাথে তার কথাবার্তা এখনো আপনি লেভেলে আছে।এখনি ভালবাসি বলে ফেললে বা হাত ধরলে কিছু মনে করে বসতে পারে।আহাদ শুনেছে কনা খুব জেদী প্রকৃতির মেয়ে।তাই ভুল বুঝে যদি বিয়েটা ভেঙ্গে দেয় তাহলে তার মরে যাওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা থাকবে না।কোন মতেই সে হারাতে চায় না কনাকে।


কনা আর আহাদের রিকশাটা একটা নির্জন গলিতে ঢুকলো।এই রাস্তাটাতে সন্ধ্যার দিকে খুব ছিনতাই হয়।একটু টেনশন অনুভুত হল আহাদের।কিন্তু তার নিজের জন্য নয় তার ভালবাসার মানুষটির জন্য।

অপরদিকে কনা ভাবছে সম্পুর্ন উল্টো কথা।সে বুঝতে পারছে আহাদ তার দিকে বারবার ড্যাব ড্যাব করে তাকাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না।প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার।এমন ভীতু আর লাজুক ছেলে জন্মেও দেখেনি সে।কনার স্বপ্ন ছিল তার খুব ছটফটে চঞ্চল আর প্রানবন্ত ছেলের সাথে বিয়ে হবে।যে তাকে সোজাসোজি এসে হাতে হাত রেখে,চোখে চোখ রেখে বলবে ভালবাসি।কথা আর উচ্ছলতা দিয়ে তার মন জয় করে নিবে।কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।আহাদ খুব গম্ভীর প্রকৃতির ছেলে।মনে মনে ভালবাসলেও কখনো সামনা সামনি ভালবাসি বলার সাহস হয়ত তার নেই।এই কথা ভেবে নিজের মনেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল কনা।হঠাৎ রিকশার আচমকা ব্রেকে বাস্তবে ফিরে এল সে।দেখল তাদের রিকশা থামিয়েছে ষন্ডামার্কা দুইটা ছেলে।তাদের হাতে ছুরি।
"এই যে আপনাদের দুইজনের যা আছে দিয়ে দিন।বেশি ঝামেলা করবেন না।" বলল ছেলে দুইটি।আহাদ বলে উঠল, "ঠিক আছে ভাই আমরা সব দিয়ে দিচ্ছি।কিন্তু আপনারা প্লিজ আমাদের যেতে দিন।" কনা ছেলে দুইটাকে কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু আহাদের এই কথায় থেমে গেল সে।বেশ মন খারাপ হল তার।আহাদ ছেলেটা আসলেই ভীতু।সামান্য ২ টা খারাপ ছেলেকেই এত ভয়।একটা ধমক দিয়ে দেখতে পারত ছেলেগুলো ভয় পায় কিনা নিজের মনেই ভাবল সে।বেশ রাগ করেই গলার সোনার হার, মোবাইল এইসব দিয়ে দিতে থাকল ছিনতাইকারী ছেলেগুলোকে।সব দেওয়া শেষ হলে ছেলে দুটো চেয়ে বসল কনার আঙুলে শোভা পাওয়া এঙেজমেন্ট এর আংটিটা।কনা এবার রাগের বশে ছেলে দুইটোর একজনকে একটা চড় মেরে বসল।চড় খেয়ে ছেলে দুটো রাগে অন্ধ হয়ে গেল।তারা ছুরি উচিয়ে মারতে উদ্যত হলো কনাকে।কনা চোখ বন্ধ করে ফেলল।ঠিক সেই সময় সিনেমার নায়কদের মত ছুরি উচিয়ে ধরা ছেলেটার হাত টা খপ করে ধরে ফেলল আহাদ।তারপর চোয়ালে একটা মোক্ষম ঘুষি বসিয়ে দিল ছেলেটার।কনা এইসব দেখে সাহায্যের জন্য চিৎকার শুরু করে দিল।তার চিৎকার শুনে কিছু লোক এগিয়ে আসতেই মাস্তান গুলো ওদের ছেড়ে পড়িমড়ি করে পালিয়ে গেল।কনা দৌড় দিয়ে আহাদের কাছে আসল।দেখল তাকে বাচানোর জন্য ছুরি উচিয়ে রাখা ছেলেটাকে ধরতে যেয়ে ছুরির ফলা লেগে হাতের বেশ খানিকটা অংশ কেটে গিয়েছে আহাদের।কনা তড়িঘড়ি করে একটা ক্লিনিকে নিয়ে গেল আহাদকে।হাতটা ড্রেসিং করে দিয়ে ডাক্তার চলে যেতেই আহাদকে বকতে শুরু করল কনা।
---আপনি কি পাগল নাকি? এভাবে কেউ মারামারি করে? যদি ওই মাস্তানটা ছুরি দিয়ে আপনাকে আঘাত করত তখন কি হতো?জীবনের মায়া নেই আপনার?
---হ্যা আছে তো।এই জন্যই তো মারামারি করলাম।
---মানে?
---মানে আমার জীবন তো তুমি কনা।তোমার কিছু হয়ে গেলে যে আমার জীবন টাও আমি রাখব না।
এই কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল কনা।বিস্ময়ে কোন কথাই আর বলতে পারল না।

ক্লিনিক থেকে বের হয়ে আবার রিকশায় চড়ে বসেছে আহাদ আর কনা।আহাদের খুব চিন্তা হচ্ছে।সে ভাবছে তার ওই কথাটা শুনে নিশ্চয় খুব রাগ করেছে।এবার নির্ঘাত বিয়েটা ভেঙ্গে দিবে।নিজের উপর নিজেরি রাগ হল তার।খুব কস্ট হচ্ছে বুকের ভিতরটায়।হঠাৎ আহাদকে অবাক করে দিয়ে তার হাতটা আলতো করে ধরল কনা।তারপর বলে উঠল,
"খুব ভালবাস আমায় তাই না? কেন ভালবাস এত?"
এই কথা শুনে কনার চোখে চোখ রেখে আহাদ বলল,"জানি না কেন এত ভালবাসি।শুধু এইটুকু জানি খুব খুব খুব বেশী করে ভালবাসতে ইচ্ছে হয় তোমায়।"

আহাদের কাঁধে মাথা দিয়ে রেখেছে কনা।আহাদের মুখে এইভাবে ভালবাসি শুনে চোখে পানি এসে গিয়েছে তার।খুব সাবধানে চোখের পানিটা মুছে নিল সে।এই চোখের পানি দেখলে তার হবু পাগল বরটা আবার কি পাগলামী করে বসে ঠিক নেই।
(সন্ধ্যার নীলারোণ্য)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:২৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×