somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই আলোচনা: এ্যান হ্যান্ডলের "Everybody writes"

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এভরিবডি রাইটস বইটিতে মার্কেটিং জগতের অন্যতম প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব এ্যান হ্যান্ডলে কী বলতে চেয়েছেন? সাদা কথায়, তার উদ্দেশ্য ছিলো লেখক তৈরি করা। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, লেখালেখির মত একটি সৃজনকার্য কি বই পড়ে শেখা যায়? কবিতার পঙক্তির মাঝে যে বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা, অনুভব এবং নিগূঢ় অর্থ বিদ্যমান তা কি হাজারটা বই পড়েও ব্যাখ্যা করা সম্ভব? অথবা হাজারটা বই পড়েও কি জীবনানন্দ দাসের সেই বিখ্যাত দুর্বোধ্য লাইন, "মহীনের ঘোড়াগুলি ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে" এমন করে লেখা যায়? উত্তরটা হলো, একই সাথে হ্যাঁ, এবং না। লেখালেখি, তা যে কোন ধরণের হোক না কেন, গল্প, কবিতা, বিজ্ঞাপন;ভালোভাবে রপ্ত করতে হলে প্রচুর পড়ার বিকল্প নেই। হ্যাঁ, প্রচুর বই পড়া, লেখালেখি সম্পর্কে পরামর্শ নেয়া ইত্যাদি অবশ্যই একজন লেখককে সাহায্য করতে পারে, তবে ৪ বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে যেমন একটা বিএসসি সার্টিফিকেট অর্জন করা যায়, লেখালেখির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা মোটেও তেমন না। বছরের পর বছর লেগে থাকলেও অনেকের নির্বাণ লাভ সম্পন্ন হয় না, আবার কেউ ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভায় ভাস্বর হয়ে সমৃদ্ধ করেন সাহিত্যকে। এ্যান হ্যান্ডলের বইটি লেখার উদ্দেশ্য অতটা উচ্চাভিলাষী নয়। তার বই পড়ে লেখক বনে গিয়ে একেকজন বেস্টসেলার বই লিখে ফেলবেন, জুতোয় লাল কার্পেটের মখমল স্পর্শ অনুভব করে সদম্ভে পু্রষ্কার নিতে বিচারকদের কাছে যাবেন, এমনটি তিনি আশা করেন না। তার তত্বটা সহজ। আমরা সবাই প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখছি। বাজারের লিস্ট থেকে শুরু করে ফেসবুক স্ট্যাটাস, ই-মেইল অথবা অফিসের কাজে কোন রাইটিং সফটওয়্যারে লিখছিই। সুতরাং, আমরা সবাই লেখক। এই অতি ব্যস্ত, প্রযুক্তিময় নাগরিক জীবনে লেখালেখির গুরুত্ব কিন্তু কমে নি মোটেই, বড়ং তা বেড়েই চলেছে। ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার; মোদ্দাকথা এই অনলাইন পৃথিবীর নেটিজেনরা লিখেই চলেছেন কিছু না কিছু প্রতিদিন। আর যেহেতু আমরা সবাই লিখছি, তাহলে লেখাগুলোকে প্রোপার চ্যানেলের মাধ্যমে মডিফাইড করে একটা অর্থকরী কাজে পরিণত করলে মন্দ হয় না নিশ্চয়ই। এই বইয়ে এ্যান হ্যান্ডলে মূলত মার্কেটিং পেশায় জড়িতদের “কনটেন্ট রাইটিং” এর দক্ষতা কীভাবে বাড়ানো যায় তার ওপরেই আলোকপাত করেছেন।
কনটেন্ট রাইটিং মানে যে কেবল ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বা অনলাইনে বিজ্ঞাপনের জন্যে লেখা, তা নয়। এর গভীরতা এবং পরিসর আরো ব্যাপক। একজন কন্টেন্ট রাইটারকে আরো নানা জায়গায় বিচরণ করতে হয়। ফেসবুক এবং টুইটারের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও লিংকেডিন, ব্লগ, ই-মেইল ইত্যাদি রয়েছে। কোন ওয়েবসাইটের হোমপেজ কীভাবে সাজাতে হবে, কীভাবে সার্থক ইন্টারভিউ নেয়া যেতে পারে, এ্যানুয়াল রিপোর্ট লেখার ক্ষেত্রে কীসব ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে এসবও বেশ বিস্তৃতভাবে বলা হয়েছে। সুতরাং, বলা যায় যে বইটি মূলত কন্টেন্ট রাইটারদের জন্যে হলেও শুধুই তাদের জন্যে না। বইটি আধুনিক কর্পোরেট নাগরিকদের জন্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লিখন সহায়িকা।
লেখালেখির ক্ষেত্রে এ্যান হ্যান্ডলের মনোভাব বেশ চাছাছোলা। আবারও উল্লেখ করা দরকার, এটা বানিজ্যিক লেখালেখির ক্ষেত্রে; সাহিত্যে নয়। তার কথা হচ্ছে, লেখাটা যাদের পেশা তারা প্রতিদিন লিখতে বাধ্য। “রাইটারস ব্লক” একটা বাজে কথা। কেন, কোন ট্রাক ড্রাইভারের তো “ড্রাইভিং ব্লক” হয় না। লেখালেখির ক্ষেত্রে তাহলে কেন এমন হবে? তিনি মনে করেন, কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম এবং পরামর্শ মেনে চললে সাচ্ছ্যন্দে লেখালেখি করা সম্ভব। এটা যতটা না শিল্প তার চেয়ে বেশি বিজ্ঞান। আর এই বিজ্ঞানটি আত্মস্থ করার জন্যে প্রয়োজন চর্চার। যেন এটি একটি অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। তবে তার মানে এই না যে প্রতিদিন কাজের বাইরে মানবিহীন জগাখিচুড়ি লেখা লিখে পৃষ্ঠা ভরাতে হবে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, “Don’t write a lot, but write often”.
বইটিতে কন্টেন্ট রাইটিংয়ের জন্যে প্রচুর পরামর্শ এবং বিখ্যাতদের উক্তি আছে। এতসব কিছুর মধ্যে নিউক্লিয়াস হলো একটি পরামর্শ, বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়েই যা বিবৃত আছে। তা হলো, “Brevity and clarity matter more than ever”.
লেখাকে হতে হবে সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট। অল্প কথায় যদি মূলভাবটি প্রকাশ করা যায়, তাহলে বেশি বকে লাভ কী! এমন তো না যে বেশি শব্দের জন্যে আপনি বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন! তাহলে কী দরকার খামোখা কষ্ট করার? অবশ্য ছোট করে লেখাটা যে খুব আয়াসসাধ্য তা নয়। বরঙ এটিই বেশি কঠিন এবং উচ্চদক্ষতার ব্যাপার। কেন লেখার দৈর্ঘ্য কমানোর কথা বলেছেন তিনি? উত্তরটা খুব ছোট্ট এবং সহজ। বড় লেখা কাস্টমারকে ধৈর্য্যচ্যূত করতে পারে, তিনি বিরক্ত হতে পারেন। ফলে, যত্ন নিয়ে লেখা কনটেন্টটি একদম জলে যাবে। এ তো গেলো Brevity’র ব্যাপারটা। এবার আসা যাক clarity’র প্রসঙ্গে।
একজন কন্টেন্ট রাইটারকে জাত সন্দেহবাদী হতে হবে। নিজেকে অনবরত প্রশ্ন করে যেতে হবে। কেন আমি এটা লিখলাম? কাদের জন্যে লিখলাম? তারা কী পড়বে? পড়ার পর কি/কী ভাববে? তাদের মনে কী কী প্রশ্ন জাগতে পারে? উত্তরগুলো কি লেখাতে আছে? লেখায় ভোক্তার জন্যে কী আছে? নিশ্চিত হতে হবে যে এসব প্রশ্নের যথাযথ এবং স্পষ্ট উত্তর লেখায় আছে। তবেই না একটা সার্থক কন্টেন্ট রাইটিংয়ের উদাহরণ হতে পারে তা! লেখার দক্ষতা বাড়ানোর জন্যে আরো একটি চমৎকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ঐ অধ্যায়েই। “What matters now isn’t storytelling; what matters is telling a true story well.”

মার্ক টোয়েন একটি চমৎকার কথা বলেছেন লেখালেখি প্রসঙ্গে। সেটি এই বইটিতেও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবৃত হয়েছে। “Writing is easy, all you have to do is cross out the wrong words.” কত পুরোনো অথচ কী ভীষণ অর্থপূর্ণ একটি কথা! মার্ক টোয়েন মূলধারার সাহিত্যের লেখক ছিলেন। কন্টেন্ট রাইটার ছিলেন না। অথচ তার এই উক্তিটি এ্যান হ্যান্ডলের কর্পোরেট শাসিত লেখালেখির বইয়ের জন্যেও সমান গুরুত্ববাহী। অপ্রয়োজনীয় শব্দগুলো ছেটে ফেলে দিলে লেখার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় নিঃসন্দেহে। হয়তো বা সাধারণ পাঠকদের কাছে তা সেভাবে চোখেও পড়বে না, তবে এটি এবং এরকম আরো অনেক ছোটখাটো ব্যাপারের সমন্বয়েই একটি ভালো স্ক্রিপ্ট সৃষ্টি হয়, এবং পাঠক অথবা ভোক্তা তাতে আকৃষ্ট হন। কন্টেন্ট রাইটিং এর মূল ধারাটাই হলো ছোট বাক্যের ম্যাজিক তৈরি। ১০০ পৃষ্ঠার কাব্যনাট্য অথবা দশ লাইনের আধুনিক গদ্যকবিতার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নয়, তবে কনটেন্ট রাইটিংয়ের জগতে এটা নিঃসন্দেহে একটা অসাধারণ সূত্র।

এর আগে উল্লেখ করা হয়েছে লেখালেখির ক্ষেত্রে ‘ব্লক’ বলে কিছু নেই বা থাকা উচিত না। বোশেখ মাসের ঝড়-বিজলী নিয়ে লিখতে হলে একজন কবির হয়তো বা খোলা ছাদ আর মেঘের প্রাচীর দরকার পড়ে, কিন্তু কন্টেন্ট রাইটারের তো আর সে সুযোগ নেই! তাকে তার ডেস্কে বসে মাথা গুঁজে লিখে যেতেই হবে। এখানে ‘মুড’ আসার তেমন কোন বিষয় নেই। তবুও, মানুষ তো আর যন্ত্র না! শব্দখরা মাঝেমধ্যে পেয়ে বসতেই পারে। সেক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে? বইটিতে এ ব্যাপারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেয়া হয়েছে। যথা,

দ্যা আগলি ফার্স্ট ড্রাফট- লিখতে থাকুন যেভাবে ইচ্ছে, যেমন খুশি তেমন। ব্যকরণগত ভুল, বানান নিয়ে সন্দেহ, বাক্যগুলো সুন্দর হচ্ছে কি না এসব নিয়ে না ভেবে লিখে যান। শুধু খেয়াল রাখবেন বাক্যগুলি সম্পূর্ণ হচ্ছে কি না। এই লেখার একমাত্র পাঠক হচ্ছেন লেখক। আর কেউ তা দেখছে না(স্টিফেন কিং এ সম্পর্কে বলেছেন, writing the door closed)। লেখা হয়ে গেলে থামুন। একটু সময় নিন। ঘুরে আসুন কোথাও থেকে। মানে ঠিক বাইরে গিয়ে ঘুরে আ্সা নয়! মনটাকে নিয়ে যান অন্য কোথাও! ভাবুন। “থিঙ্ক বিফোর ইউ ইংক”। কোথায় কী যোগ করতে হবে, কী বাদ দিতে হবে এসব নিয়ে ভাবুন এবং টুকে রাখুন। এডিটিং শেষে শব্দগুলোকে সাজান ঠিকমত।

ডিয়ার মম- ধরুন আপনাকে বলা হয়েছে এলইডি বাল্ব নিয়ে দুইশ শব্দের একটা স্ক্রিপ্ট লিখতে। মাথায় কিছু আসছে না। লেখার আগ্রহ বা উৎসাহও পাচ্ছেন না। দ্যা আগলি ফার্স্ট ড্রাফট নিয়মটাও ব্যবহার করতে চাইছেন না। তাহলে কী করা যায়? মনে করুন, আপনি মা’র কাছে লিখছেন এলইডি বাল্ব নিয়ে। তার কাছে লিখতে হলে কীভাবে লিখতেন? মনে করুন, এই ইট-কংক্রিটের পাথুরে বানিজ্যিক শহর, ফরমায়েশি লেখা সবকিছু থেকে পালিয়ে ফিরে গেছেন শেকড়ে, সেই প্রিয়তম আশ্রয়ে “প্রিয় মা, কেমন আছো? জানো আজকে একটা দারুণ জিনিসের সন্ধান পেলাম। এলইডি বাল্বের নাম শুনেছো? মনে আছে তোমার নিশ্চয়ই ছোটবেলায় লাইট জ্বালিয়ে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্যে কত বকেছো আমাকে? বকবে নাই বা কেন! বিদ্যুতের যা বাড়বাড়ন্ত দাম! আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যে সেটা এক অমার্জনীয় বিলাসিতা ছিলো...”
এভাবে লিখতে থাকুন। লেখা শেষে ঘষে মেজে এটাকে একটি কমার্শিয়াল শেপ দিন। শুধু যে মায়ের কাছেই লিখতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। কার কাছে আপনি সবচেয়ে কম্ফোরটেবল? ভাই,বোন, প্রেমিকা? অথবা একদম অপরিচিত কারো কথা ভেবে লিখতে চাচ্ছেন? চেষ্টা করেই দেখুন না! এটি বেশ কার্যকর পদ্ধতি।

এ তো গেলো ব্লক কাটানোর উপায় নিয়ে কথা। এছাড়াও লেখাকে গুরুত্বপূর্ণ এবং দক্ষ করে তোলার জন্যে উপায় বাৎলে দেয়া হয়েছে।

শুরুটা কীভাবে করছেন সেটাই সবচেয়ে জরুরি ব্যাপার। শুরুতে মূল বিষয় বা ভাবনার উপস্থিতি থাকলে ভালো হবে। কী নিয়ে লিখছেন? কোন বিষয় বা চরিত্রটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? সেটি মাথায় রাখতে হবে। ধরুন আপনি প্রতি বছর বন্যায় পৃথিবীতে কত মানুষ মারা যায় সেটি নিয়ে লিখছেন। সেক্ষেত্রে যদি এভাবে লেখেন,
“বাংলাদেশ নদী গবেষণা পরিষদের ২০১৫ সালের বার্ষিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে প্রতিবছর আনুমানিক দুই হাজার মানুষ বন্যায় মারা যায়”
সেটি ঠিক হবে না। কারণ, আপনি লিখছেন বন্যায় মৃত মানুষদের নিয়ে। নদী গবেষকরা মূল বিষয় নয়। তাই এভাবে লিখলে ভালো হয়,
“প্রতিবছর আনুমানিক দুই হাজার মানুষ বন্যায় মারা যায়,বাংলাদেশ নদী গবেষণা পরিষদের ২০১৫ সালের বার্ষিক রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া গেছে”।

ভোক্তাদের সাথে কথা বলার ভঙ্গিতে লিখুন। মনে রাখতে হবে, তারা প্রডাক্টটি কিনবে না কি কিনবে না তার জন্যে আপনার ওপরেই নির্ভর করে আছে কাস্টমারেরা। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন, আর পাঠকদেরও প্রভাবিত করুন যেন তারা আপনার কাঁধে মাথা রাখতে পারে। মোদ্দা কথায়, ভরসার জায়গাটা যেন তৈরি হয়।

জনপ্রিয় গান, কবিতা বা শ্লোগান ব্যবহার করতে পারেন। পণ্যের বিপননের স্বার্থে লাইনগুলো বদলে নিতে পারেন। এটা বহুল চর্চিত একটি বিজ্ঞাপনাভ্যাস! মনে রাখতে হবে, “Art begins in imitation and ends in innovation.”

মাথার মধ্যে সবসময় গল্প চালু রাখুন। চারিপাশে খেয়াল রাখুন। রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টের গায়ে সাঁটানো বিজ্ঞাপনগুলো পড়ুন। বিলবোর্ড, সার্ভিসিং সেন্টারের দরজার বিজ্ঞাপন এবং ট্যাগলাইনগুলো পড়ুন। কীভাবে আরো ভালো করা যেতো সেগুলো, তা ভাবুন। এমন চর্চায় রাখলে প্রয়োজনীয় সময়ে মগজের ধুসর কোষগুলো থেকে সৃষ্টিশীল গল্পগুলো আসতে সময় নেবে না। এ প্রসঙ্গে এ্যান হ্যান্ডলে তার ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতার কথা বয়ান করেছেন। সেসময় তিনি ছোট্ট একটি নিউজ এজেন্সিতে কাজ করতেন। একবার তার নিউজরুমে যেতে দেরী হলো, এবং তিনি এই বলে উষ্মা প্রকাশ করলেন যে, লেখার মতো কোন ‘স্টোরি’ই নেই। তার ঊর্ধতন এ কথা শুনে বললেন,
“There’s always a story there, he said, even if it’s not the one you were expecting to write.”
এই পরামর্শটি পরবর্তীতে তার কর্মজীবনে অনেক কাজে এসেছিলো।

নিজস্বতা বজায় রাখুন। মনে রাখবেন আপনার চেয়ে ভালো অনেক লেখক আছেন, সবসময়ই থাকবেন। কিন্তু আপনি, আপনিই! আপনার কোন তুলনা নেই। “The more personal you are, the more universal you become,”
মানুষের আবেগকে স্পর্শ করুন। স্কাইপির একটি বিজ্ঞাপনে দুজন হাতবিহীন মেয়েকে কথা বলতে দেখা যায়। ওই বিজ্ঞাপনে ব্যান্ডউইথ, ভিওআইপি, ডাটা প্যাকেট এসব কঠিন কঠিন টেকনিক্যাল টার্মের কথা কিছুই লেখা নেই। কিন্তু বিজ্ঞাপনটি বেশ সফল হয়েছিলো তবুও। মানুষের কাছাকাছি আসুন।

“Assume that your customer doesn’t know anything. But don’t think he is a village idiot”

কাস্টমার আপনার ওপর নির্ভরশীল, তাই তাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আপনার নখদর্পনে রাখতে হবে। হ্যাঁ, তারা হয়তো বা আপনার প্রডাক্ট সম্পর্কে কিছুই জানে না, আপনার দায়িত্ব তাকে সব জানানো। তবে এই জানানোর মধ্যে যেন কোনরকম আত্মগরীমা বা তাচ্ছিল্য প্রকাশ না পায়।

উপমার ব্যবহার আপনার লেখাকে আরো সুন্দর এবং শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তাই যথাস্থানে উপমা ব্যবহার করুন। যেমন “তরমুজটি গোলাকার এবং প্রায় ছ ইঞ্চি ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট” এভাবে না লিখে লিখতে পারেন “তরমুজটি গোলাকার ,ফুটবলের মত”।

বইয়ের রিভিউ লিখতে গেলে ভালো ভালো কথা লেখার পাশাপাশি কিছু সমালোচনাও করাও দস্তুর! এত বিখ্যাত এবং টেকনিক্যাল বইয়ের সমালোচনা আমার মত আনাড়ীর জন্যে বিশেষ সাহসের ব্যাপার! তবে বইটির মাধ্যমেই সে সাহস অর্জন করেছি। যেহেতু পৃথিবীতে আমি একজনই, তাই আমার কথারও মূল্য আছে অবশ্যই। আমার পাঠ, আমার লদ্ধজ্ঞান, আমার সমালোচনা কারো সাথে মিলবে না, এ বিশ্বাস তৈরি হয়েছে।
প্রথমেই যেটা বলতে হচ্ছে তা হলো, বইটির ভাষা সহজ নয় খুব একটু। এই ধরণের বইয়ে সহজিয়া ভাবটা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজিভাষীদের কাছে এটা হয়তো বা কোন ব্যাপারই না, তবে আমি পড়তে গিয়ে হোঁচত খেয়েছি প্রায়শই। ডিকশনারিটা কাজে লেগেছে।
দ্বিতীয়ত, একই কথার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বেশ অনেক জায়গাতেই। বিশেষ করে লেখার ভাষা সহজ এবং সংক্ষিপ্ত করা, নিজেকে বারবার প্রশ্ন করা, অডিয়েন্সের সাথে কথা বলা, এসব বিষয় বেশ কয়েক জায়গাতে প্রায় একইভাবে উপস্থিত, যা অপ্রোয়জনীয় মনে হয়েছে।
আর যে বিষয়টির অভাব অনুভব করেছি তা হলো, উদাহরণ। বইটিতে বর্ণনার প্রাধান্য রয়েছে, সে তুলনায় সংলাপ, উদাহরণ এসব অপ্রতুল। এগুলো থাকলে বইটি প্রাঞ্জলতর হতে পারতো।
সবশেষে বলতে হয়, এই বই পড়েই যে রাতারাতি দক্ষ কন্টেন্ট রাইটার হয়ে উঠবেন, তা নয়। তবে বইটি আপনাকে সাহস যোগাবে নিঃসন্দেহে।
বইটি কিনে নিতে পারেন আমাজন ডট কম থেকে। আমি একজনের কাছ থেকে গিফট পেয়েছি।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০০
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×