খুব অল্প বয়স থেকেই দেখছি, বাংলাদেশের ভালো কিছু হলে সবথেকে বেশি গা জ্বালা ধরে একটি দেশের। সে দেশটির নাম পাকিস্তান। শুধু ভালো ব্যাপারগুলো নয়, বাংলাদেশের ভালো-মন্দ সবকিছুতেই পাকিস্তানের মন্তব্য করা চাই। বলাবাহূল্য, পাকিস্তানের প্রতিটি মন্তব্যই শরীর জ্বালিয়ে তোলে। শত শতাংশ ব্যর্থ একটি রাষ্ট্রের এমন উলঙ্গ আস্ফালন অসহ্য লাগে। একটি দেশের একেবারে অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার তারা কে?
প্রশ্ন হল, কেন পাকিস্তান এমনটি করে? কোথা থেকে তারা এত সাহস পায়?
আমার মতে, তাদের এই সাহসের যোগানদাতা আমরাই। বিনা কারনে আমরাই পাকিস্তানকে ক্ষেত্রবিশেষে এত বেশি প্রাধ্যান্য দিয়ে ফেলেছি যে তারা অনেকসময় হয়ত নিজেরাই অবাক হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যর্থতার ইতিহাস জ্বলজ্বল করে সর্বাঙ্গে। পারভেজ মুশাররফ বাংলাদেশে সফর করেছে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়েছে, কিন্তু কেউ তাকে ৭১’এর অপরাধকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেনি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনৈতিক নতজানুতাই পাকিস্তানকে দিনের পর দিন এত সাহস যোগাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কৃতকর্মের জন্য সম্প্রতি ক্ষমা চেয়েছে জার্মানি। ক্ষমাপ্রার্থনা মানুষকে মহৎ করে। কিন্তু এই মহত্ব অর্জনের যোগ্যতা পাকিস্তানের নেই।
ক্রিকেটে বাংলাদেশের পাকিস্তাননির্ভরতা আশংকাজনক হারে দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছে। এই বৃদ্ধিপ্রাপ্তিটা খুব নিরবে হচ্ছে, জনসাধারণের চক্ষুগোচর হচ্ছে না। পাকিস্তানে ক্রিকেট নিষিদ্ধ হবার পর এখন পর্য্ন্ত মাত্র দুটি দেশ পাকিস্তানে খেলতে গিয়েছে, একটি দেশ জিম্বাবুয়ে- যাদের পাকিস্তানে খেলতে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। যদিও এই সফরের বিনিময়ে জিম্বাবুয়ের প্রতিটি খেলোয়াড় মোটা অঙ্কের টাকা বা একরকম ঘুষ পেয়েছে বলে শোনা যায়। আর পাকিস্তানে খেলতে যাওয়া দ্বিতীয় দেশটির নাম বাংলাদেশ। আমাদের নারী ক্রিকেট দল সেখানে খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু পুরুষ বা নারী- যাই হোক না কেন, তাঁরা যখন খেলতে যায়, তখন তাঁরা দেশকেই প্রতিনিধিত্ব করে। এর আগেও আইসিসি’র সভাপতিত্ব পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের দরকার পড়েছিল পাকিস্তানের! তখন চক্রান্ত চলছিল বাংলাদেশ জাতীয় দলকে পাকিস্তানে পাঠানোর। শেষ পর্যন্ত যদিও সেটা সম্ভব হয় নি। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হবে বাংলাদেশে। এর জন্যও বাংলাদেশের দরকার পড়েছে পাকিস্তানকে। বিপিএল এ পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের মেলা, তাদের মধ্যে কারও কারও অর্থপ্রাপ্তি আমাদের সাকিবের চেয়েও বেশি। পৃথিবীর অন্য যেকোন ক্রিকেট টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা থাকলেই পুরো ব্যাপারটা সবার কাছে অস্বস্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বাংলাদেশ তাদেরকে সবথেকে বেশি টাকা-পয়সা দিয়ে ডেকে আনে।
এই ছোট ছোট ঘটনাগুলো আপাত গুরুত্বহীন মনে হলেও সম্মিলিতভাবে এগুলোই পাকিস্তানকে সাহস দেয় বাংলাদেশকে নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করতে। যে দেশ নিজেদের জনগনকেই নিরাপদে রাখতে পারে না, যে দেশ জন্মের অর্ধশত বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে সেরা ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোর তালিকায় অবস্থান করে নেয়, সেদেশের অন্য কারও বিষয়ে কথা বলা কতটা ‘ফফর দালালি’? ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, আমি নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, কিন্তু অন্য কেউ ছেড়া কাপড় পড়েছে বলে তাকে এলোমেলো বকছি। আমি কতটা নির্লজ্জ !
তবুও আমরা তাদের মঙ্গল কামনা করি। ৭১’এর পরাজিত শক্তি এবং পৃথিবীর অন্যতম ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তান যদি তাদের অভ্যন্তরীন বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামায়, সেটাই তাদের জন্য উত্তম।