গার্ডিয়ানঃ আমার কলিজাটা কোথায় ?
সন্তানঃ দুত্তরি এই সময়ে ডাকাডাকি, উফ কি জোউস একটা মোমেন্ট, দুত্তরি বাবা মা সময়ও বুঝেনা ,
এই যে আমি এখানে , আসছি ১ মিনিট !
গার্ডিয়ানঃ বলতো তোমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে ?
সন্তানঃ বাবা জানো আজ না লং ড্রাইভে গিয়েছিলাম,আমি আর সব বন্ধুরা মিলে ।
তারপর চায়নিসে জোউস এক পার্টি দিয়েছি । বাবা কত্ত সেলফি নিয়েছি, যা জোউস কেটেছে আজকের দিনটা ।
গার্ডিয়ানঃ তাই,তো খরচ কে দিয়েছে বাবা ।
সন্তানঃ এটা কথা বললা,আমি দিয়েছি,ওদের কাছে আমার একটা ব্যাক্তিত্বের ব্যাপার আছেনা ।আমার বাবার একটা সুনাম আছেনা,তার মধ্যে আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল এখানে ।
আর এই স্মার্ট যুগে মাঝে মধ্যে বন্ধুদের নিয়ে পার্টি টারটি না দিলে হয় না বাবা ।
গার্ডিয়ানঃ হুম,বুঝলাম, তো স্টাডির কি খবর,
সন্তানঃ ও বাবা আমার তো মনেই ছিল না, আগামী মাসের ১০ তারিখে আমরা স্টাডি ট্যুরে রাংগামাটি যাবো,বাবা আমাকে কিন্তু ৫০০০০/- টাকা দিতেই হবে । রাংগামাটি তো কোনদিন যাইনি ওখানে কিছু কেনাকাটা করবো কিছু ফ্যাসনেবল ,ভাল ড্রেস,জেল, ব্যাগ, জুতু,প্যান্ট,লেগিংস,কিনতে হবে ।
গার্ডিয়ানঃ ও ট্যুরে গেলেও ড্রেস কিনতে হবে ।
সন্তানঃ বাবা কি বল তুমি লাগবেনা,বন্ধুদের কাছে আমার একটা ব্যাপার আছে না ।
গার্ডিয়ানঃ দেখতো , ড্রেসটা কেমন লাগে ।
সন্তানঃ OMG বাবা এটা কি এনেছো ,পুরাই গেয়ো গেয়ো লাগে,আমি এটা পড়বো না। আমার বন্ধুরা কত্ত আধুনিক ড্রেস পরে।
গার্ডিয়ানঃ আর কি যেন বললি,জেল,আইলেনা,চুল স্টেইট,ব্রু ফ্লাগ,এগুলি কেন ।
সন্তানঃ কি OMG, এগুলি না হলে তো সবাই আমাকে ক্ষেত বলবে,বাবা এখন কি জেল,আইলেনা,চুল স্টেইট না করালে হয় নাকি, বুঝছো বাবা। আমরা স্মার্ট জেনারেশন। একদিন আদরের সন্তান বাসায় তার ক্লোজ ফ্রেন্ড বয়/গার্ল নিয়ে আসলো
গার্ডিয়ানঃ জিজ্ঞাস করলো এটা কে
সন্তানঃ বাবা ও আমার ক্লাসমিট ।
গার্ডিয়ানঃ তো বাসায় কেন ?
সন্তানঃ নোট নিয়ে আসছিল, আর বাবা ক্লাসমিট তো আসতেই পারে,এখন কি আর কে কি এগুলি বলে বাবা ।
এখন হচ্ছে স্মার্ট জেনারেশন,স্মার্ট যুগের ছেলে মেয়ে আমরা ।
একটু আলাদা মউজ মাস্তি করতেই হয়, মা এগুলি এখন কোন ব্যাপারেই না ।
গার্ডিয়ানঃ ছেলেকে বলছেন কোথায় বাবা,আজ শুক্রবার নামাজে যেতে হবে ,
আর মেয়েকে বলছেন মা ঘুম থেকে উঠো একটু তেলোয়াত কর।
সন্তানঃ ঘুমাচ্ছি তো,জাননা ঘুম না হলে শরীল মন ভাল লাগেনা।
গার্ডিয়ানঃ সারা রাত কি করছিস।
সন্তানঃ মা আমরা বন্ধুরা মিলে এক সাথে চ্যাটে ছিলাম তাই একটু লেইট হয়ে গেছে । প্লিজ অন্য দিন নামাজ পড়বনে ।
গার্ডিয়ানঃ এতো রাতে চ্যাট আবার কি ?
সন্তানঃ আমরা সবাই মিলে একটা এসাইমেন্ট নিয়ে কথা বলছিলাম ।
এই হচ্ছে আমাদের স্মার্ট জেনারেশন, যারা আজ তাদের মা বাবাকে স্মার্টনেস শিখাচ্ছে,শিখাচ্ছে কিভাবে আধুনিক হতে হয়।
শিখাচ্ছে কিভাবে ক্লাসের এসাইমেন্ট তৈরি করতে হয়।
সবশেষেঃ রেজাল্ট হল খারাপ,গার্ল ফ্রেন্ড দিল ছ্যাখা, হয়ে গেল একা, পেয়েছে নেশার দেখা, মনেতে বিষন কষ্ট,
আদরের ছেলের লাইফ হল পুরাটাই নষ্ট ।
মা বাবার উদাসীন ও অসতর্কতাঃ
পৃথিবীতে মা বাবার কাছে সন্তান সবচেয়ে নিরাপদ । কে ধনী কে গরীব তা বিষয় নয় । সন্তান পালনে সব মা বাবাই জীবনের সর্বস্ব দিয়েই চেষ্টা করেন । সন্তানের জন্য সব মা বাবাই জীবনের শ্রেষ্ট ত্যাগ করতে রাজি । সন্তান যখন যা চায় মা বাবা পুরন করতে চেষ্টা করেন। আজ মা বাবা এতোটাই উদাসীন আর অসতর্ক হয়ে যাচ্ছেন,তার একমাত্র সন্তানের খবর রাখার সময় পান না। আদরে আহ্লাদে আমরা সন্তানকে আজ বড় এক বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি । আমাদের ব্যস্ত সময়ের সুযোগের সদব্যবহার করে যাচ্ছে সঠিক শিক্ষা না পাওয়া আমাদের প্রিয় সন্তানটি । নিজের আরাম,নিজের লাভের কথা ভেবে সন্তানকে নিজের মত চলতে দিয়েছি ,যার পরিণাম একটি সন্তানের নষ্ট হয়ে যাওয়া জীবন ।আধুনিকতার নামে বিকৃত ফ্যশনের দিকে ঠেলে দিচ্ছি আমরা মা বাবারা।কিছু কিছু মা বাবা আছে যারা নিজেরাই স্মার্ট নামের মউজ মাস্তিতে হারিয়ে যাচ্ছে তো সন্তান তো মজে যাবেই । আমরা মা,বাবা,একবারো মেয়েকে বলিনি কখনো উড়না ছাড়া ড্রেস পরবেনা, কিন্তু নিজেরাই সন্তানকে আদুনিকতার নামে বাজে ড্রেস পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি বিভিন্ন জায়গাতে । জানবার চাইনি আজ কেন স্কুল,কলেজ থেকে আমাদের সন্তানটি এতো লেইট করে আসে, তার সাথে বন্ধু নামে আরও ১০ টি ছেলে মেয়ে তারা কতটুকু ভাল,কি করে তারা। বন্ধুদের আড্ডার নামে ভেসে যাচ্ছে নেশার জগতে তার খবর কত টুকু রাখি । মোবাইলে গেইম আর ফ্রেন্ডস আড্ডা নামে সারা রাত দেখে পর্ণ তা আমরা কত টুকু খেয়াল রাখি। সন্তানের সাথে থাকা বয় ফ্রেন্ড আর গার্ল ফ্রেন্ড তারা আধো কি করে কি সম্পর্ক তাদের সাথে তা কি খোজ খবর রাখি ।তারা এ বয়সেই মিলিত হচ্ছে এঞ্জয় আর আধুনিকতার নামে নিষিদ্ধ মিলনে তার খবর কত টুকু রাখি । না রাখি না ! ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে এখনো কি তাদের দেখভাল করতে হবে,ওরা এখন যতেষ্ট বুঝে, এই একটু অসাবধানতায় আমাদের ছেলে মেয়েকে ঠেলে দিচ্ছি ভয়ংকর এক জীবনের দিকে । যে জীবন হয়ে যেতে পারে আমাদের সবার সারাজীবনের কান্না । তাই এখনি আমাদের সচেতন ও সাবধান হওয়া দরকার । তাই সন্তানের সব দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার আগে দাবি গুলি যথার্থ কি না ভেবে দেখি, টাকা আছে দেখেই কি যা চাইবে,যা বলবে সব কিছুই করতে দিতে হবে ,আর দিলে এর রেজাল্ট কি হবে তা আমাদের সমাজের দিকে থাকালেই বুঝবেন । সো carefully সন্তানদের দেখ ভাল করা একজন গার্ডিয়ানের খুব জরুরী ।
ইমাম গাজালি (রহঃ)ঃ- বলেছেন: ‘সন্তান মাতা-পিতার কাছে আমানত। সন্তানের হৃদয় নকশা- ইমেইজমুক্ত এক সরল-স্বচ্ছ মুক্তা, যা যেকোনো নকশা- ইমেইজ ধারণ করতে প্রস্তুত। তাকে যে দিকেই হেলানো হবে সে সে দিকেই ঝুঁকে পড়বে। যা কিছু উত্তম ও ভালো তা যদি তাকে শেখানো হয়, তাকে যদি এগুলোর প্রতি অভ্যস্ত করে নেয়া হয় তবে সেভাবেই সে বড় হবে। ফলে তার মাতা-পিতা দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান হবে। তার উস্তাদ ও আদব-কায়দার শিক্ষকগণও তৃপ্তি অনুভব করবে। এর বিপরীতে তাকে যদি খারাপ বিষয়ে অভ্যস্ত করা হয়, জন্তু জানোয়ারের মতো তাকে লাগামহীন করে দেওয়া হয়, তাহলে সে ভাগ্যবিড়ম্বিত হবে, অতঃপর নিক্ষিপ্ত হবে ধ্বংসের গহ্বরে। আর এর দায়ভার বর্তাবে তাদের ঘারে যারা ছিল তার কর্ণধার, যাদের দায়িত্ব ছিল তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রতিটি শিশু ফেতরতের উপর জন্মগ্রহণ করে, আর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদি, মজুসি (অগ্নিপূজক) অথবা খৃষ্টান বানায়
[ বুখারি ও মুসলিম ]
যে ব্যক্তি তার সন্তানদেরকে ইমানে-আমলে, আখলাকে-চরিত্রে বলীয়ান্ করে সঠিক অর্থে মানুষ করতে ব্যর্থ হল সে তার জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিশনে ব্যর্থ হল। তাই প্রতিটি মাতা-মাতারই উচিত তাদের জীবনের এ গুরুত্বপূর্ণ মিশনে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে যাওয়া। প্রয়োজনে অন্যসব ব্যস্ততা সংকুচিত করে সন্তান লালনে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দেয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাউফিক দান করুন।
প্লিজ সব মা বাবার উচিৎ নিজের সন্তানের জন্য প্রচুর সময় দেয়া,ভাল কিছু শিখানো,আল্লাহর বিধান জানানো ও বুঝানো, কোরআন শিক্ষায় শিক্ষিত করা । এবং সমাজের রীতিনীতি সম্পর্কে জানানো ও বুঝানো । ভাল খারাপ সম্পর্কে সঠিক ধারনা সৃষ্টি করা ।
বিঃদ্রঃ একটু ভিন্ন কিছু লিখতে চাই,ভুল হলে ক্ষমা চাই,গঠনমুলক সমালোচনা চাই, ভাল লাগলে উৎসাহ চাই ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৪