রিফাত। বয়স ১৬ বছর। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ক্লাস টেনে পড়ে। তার সারাটা দিন কিভাবে কাটে? চলুন একটু দেখে নিই।
খুব ভোরে আযানের সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠে। নামায পড়ে একটু হাটাহাটি কিংবা একটু ফেইসবুকিং। কখনো বা শুয়ে থাকে। এরপরে পড়ালেখা। নাস্তা করার পর গোসল করে সোজা স্কুলে। যাওয়ার সময় আব্বুর দেওয়া বিশ টাকা যেন অনেক কিছু।
[ওর আব্বু ধান ব্যবসায়ী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। জমি জমা আগে যা অল্প স্বল্প ছিল, এখন তাও নেই। ব্যবসায় ক্রমাগত লসের কারণে ৭ সদস্যের পরিবার চালাতে গিয়ে জমি গুলো বিক্রি করে ফেলতে হয় রিফাতের আব্বুকে। লক্ষ টাকার ঋণের বোঝা নিয়ে ঘুরছেন তিনি। রিফাতের আম্মু গৃহিনী। যাইহোক, রিফাত কোনোদিন স্কুল মিস দেয়না। ক্লাস সেভেনে থাকাকালীন সময়ে হাত ভেঙে যাওয়ায় এবং অসুস্থ থাকায় এক মাস স্কুলে আসতে পারেনি। দ্যাটস অল। ঐ একমাস ছাড়া কোনো বছর আর একটা দিনও স্কুলে অনুপস্থিত থাকেনি সে। পড়ালেখার প্রতি বেশ আগ্রহী। প্রতিবছর ক্লাসের ১ম স্থানটা যেন তার ব্যক্তিগত সম্পদ। ক্লাস এইটে এ প্লাসও পেয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারী বৃত্তি কিংবা কুইজ কন্টেস্টে তার পারফর্ম চোখে পড়ার মত।
প্রেম টেমের প্রতি মোটেই আগ্রহী ছিলনা সে। কারণ, তার বাবা এগুলো একদম পছন্দ করতো না। তবে কে, কখন, কেন এবং কিভাবে যে প্রেমে পড়ে যায়, তা কেউ জানেনা। রিফাতের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। ক্লাস নাইনে থাকতে তার ক্লাসমেট হাসনাহেনার প্রেমে পড়ে যায় সে। হাসনার প্রতি রিফাতের দুর্বলতা আরো বাড়তে থাকে। কারণ হাসনা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, কুরআন তেলোয়াত করে, রক্ষণশীল, মোটকথা সে ইসলামি আদর্শে গঠিত। এইগুণ গুলো রিফাত তার নিজের জীবনে প্রতিফলিত করে। তবে কোনোদিনও রিফাত তার ভালোবাসার কথা হাসনাকে জানাতে পারেনি।]
যাইহোক! রিফাতের ডেইলি লাইফের যেখানে ছিলাম, রিফাত প্রতিদিন স্কুলে যেত। পড়ালেখার পাশাপাশি একটা এক্সটা চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খেতো। প্রতিদিনই প্ল্যান করে, আজকে হাসনাকে সে তার মনের কথা বলে দিবে। কিন্তু যখনই হাসনার সামনে যায় তখন সে এলোমেলো হয়ে যায়। বলে হওয়া উঠে না আর তার মনের কথা। এর আরো একটা কারণ আছে। ঐ যে বলেছিলাম তার বাবা প্রেম টেম ডোন্ট লাইক এট অল, সে কথা ভেবে তার দুঃশ্চিন্তা আরো বাড়ে। বাবা তার জন্য অনেক কষ্ট করে। তার পড়ালেখার জন্য বাবা সর্বস্ব ত্যাগ করতেও রাজি। এজন্য বাবার অবাধ্য হতে বিবেকে বাঁধে রিফাতের। আবার হাসনার প্রতিও তার দুর্বলতা বাড়তে থাকে ক্রমান্বয়ে। কি এক অচিন্তনীয় দোটানা! বিকেলে স্কুল থেকে বাড়িতে এসে খাওয়া দাওয়া করে আসরের নামায পড়ে ঘুমায় কিংবা পড়ে। কখনো বা লিটল এন্টারটেইনমেন্ট। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাযের পর আবার পড়তে বসে। রাত ১০ ডিনার এবং সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পড়া। তারপরে এশার নামায পড়ে ঘুমোতে যায়। কিন্তু ঘুম তো আসে না! পরিবারের নড়বড়ে আর্থিক অবস্থা, অপ্রত্যাশিত ভালোবাসার জ্বালা ইত্যাদি ভাবনা তার চোখের ঘুম কেঁড়ে নেয়। বাবার বড় ছেলে বলেই বোধয় এতো চিন্তা। রিফাতকে দিয়ে কোনো হার্ড ফিজিক্যাল এক্টিভিটি হবে না। একে তো হাত ভাঙা, তারপর আবার শ্বাসকষ্ট। এখন মেধাই হলো রিফাতের ভবিষ্যত্ জীবিকা। বাবার একমাত্র আশা ভরশা রিফাত। বাবার আশা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবে সে এসব ভাবতে ভাবতে দ্বিধাগ্রস্থ। হাসনাকেও সে ভুলতে পারছেনা আবার ভালোবাসার কথা বলতেও পারছেনা। এসব কিছু ভাবতে ভাবতে রাত দেড়টা দুইটা বেজে যায়। তারপর কখন যে রিফাত ঘুমিয়ে যায়, তা সে বুঝতে পারেনা। দ্যান, আরেকটা নতুন দিন, ব্যস্ততার শুরু, শুরু হয় দোটানা চিন্তা। মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হয় তাকে। মধ্যবিত্ত বলে আর্থিক ভাবে টানাপোড়নে থাকলেও কারো কাছে প্রকাশ করতে পারেনা। ওকে অনকেটা "উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট" নীতি মেনে চলতে হয়। ঐ যে তার আব্বু তাকে নাস্তার জন্য স্কুলে যাওয়ার সময় প্রতিদিন বিশ টাকা দিত, সেই টাকা গুলো না খরচ করে নিজের বই খাতা কিংবা টুকটাক প্রয়োজনীয় খরচের জন্য রেখে দিত। বন্ধুদের সাথে তেমন একটা আড্ডা টাড্ডা মারা হয়ে উঠেনা রিফাতের। কিশোর বয়সের দুরন্তপনা তার মাঝে নেই। অন্যরকম রিফাত। মিষ্টার কুল। ভাবুক প্রকৃতির। এভাবেই চলতে থাকে এক মধ্যবিত্ত কিশোর রিফাতের জীবনযাত্রা।
লেখাটা হয়তো আপনাদের কাছে তেমন একটা ক্লাসিক লাগেনি। কারণ এটা গল্প নয়, বাস্তবতা। এরকম দোটানাময় জীবনে অনেক রিফাতেরই অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আই অ্যাগেইন রিপিট দ্যাটস দ্যা রিয়ালিটি!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৮