somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হালের আলোচিত পার্বত্য বিচ্ছিন্নতাবাদ ও কিছু তথাকথিত ফ্যাক্টের ব্যবচ্ছেদ

২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পার্বত্য বিচ্ছিন্নতাবাদের আলোচনা উঠলেই কেউ কেউ কিছু বিষয়ের জন্য তার পুরো বিবেচনাকেই উপজাতীয়দের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করেন। বিবেচনা গুলো মানসিক ভাবে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারক। সেগুলো হল- 'উপজাতীদের সরলতা', 'উপজাতী নারী নির্যাতন', 'আদিবাসী'। অথচ পার্বত্য অঞ্চলের প্রকৃত চিত্র মোটেও, বহু দূরে থেকে বাঙালীর কল্পনার পটে আঁকা সাধারন চিত্রের মতন 'আপন' নয়! বরং পরিপূর্ণ বিপরীত!



ক- পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদ আলোচনায় উপজাতিদের যারা 'খুবই সরল' বলেন তারা, 'এক কথায়'- পাহাড়ের রাজনীতি জানেননা। এমনকি উপজাতীদের মাঝে ঘাটি গাড়া সন্ত্রাসীদের প্রক্রিয়া ও চেতনার ব্যাপারগুলো অয়াকিবহাল নন।

খ- তাছাড়া যারা 'নারী ঘটিত ব্যাপার গুলো' বলছেন তারাও তাদের নিদারুন অজ্ঞতার প্রকাশ ঘটাচ্ছেন মাত্র।

ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা যায়-
পাহাড় কে জানুন, তারপর বলুন 'স্বসস্ত্র উপজাতীয় আর্মি' যে অঞ্চলে ওপেন ঘুরে বেড়ায়। সাম্রাজ্যবাদীদের এজেন্টদের হই-রই এর কথা ভেবে সরকার যেটা দেখেও দেখতে পারেনা। নিয়মিত পারস্পরিক বন্দুক লড়াই করে উপজাতিদের বিভিন্ন গ্রুপ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করে রেখেছে সেটার ভেতরই 'তাদের গড়া মগের মুলুকে' কোন বাঙালি তো দুরের কথা আর্মিও তাদের এলাকায় (উপজাতিরা নিজেদের এলাকায় একত্রে বাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায়ই তারা গহীন পার্বত্য এরিয়ায় বাস করে, যেখান থেকে জঙ্গল কাছে। আর জঙ্গল গুলো তাদের সন্ত্রাসীদের ভয়ংকর ক্যান্টনমেন্ট কাম গোডাউন।) ঢুকে অপকর্ম করে আসতে পারবেনা। যাষ্ট যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে!

হ্যাঁ। উপজাতি মেয়েরাও ধর্ষনের শিকার হয়। তাদের উভয় গ্রুপই প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদের সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে খুব ঠান্ডা মাথায়ই এইসব কাজ করে থাকে। তারপর দালাল মিডিয়া দিয়ে প্রচার করা হয়, বাঙ্গালীরা এসব করেছে। দুইটা লাভ- স্থানীয় সহিংসতা জিইয়ে রাখা, সেনাবাহিনী খেদানোর চাপ বৃদ্ধি।
তাছাড়া উপজাতিদের মাঝে পুরুষেরা অলস ও কর্ম বিমুখ হওয়ায় এবং নারীদের ওপর কাজের ভার দেয়ার সামাজিক কানুন থাকায় উপজাতি শিক্ষিত উঠতি তরুনীরা প্রায়ই (শিক্ষাপ্রতীষ্ঠানে বাঙালি ছেলেদের সাথে পরিচিত হবার পর) ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে। সেক্ষেত্রে প্রেম ঘটিত কিছু বিষয় হয়। এবং অন্যদিকে ব্যাপক ভাবে যেটা হয়, সেটা হল- 'সম্মানজনক প্রতিশোধ' বা নিজেদের সমাজের মেয়েকে ধর্ষণ করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপনের নিষ্ঠুর চর্চা। যাতে তাদের মেয়েরা আর বাঙালি মুখী না হয়। চরম জাতীয়তাবাদে আক্রান্ত উপজাতিরা তাদের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে নিজেদের বিচার ব্যবস্থা ও আইনে চলে। ফলে তাদের ব্যবস্থার আলোকে যেটা সঠিক সেটা নিয়ে তারা রাষ্ট্রীয় আদালতে আসার সাহস করেনা।

(এমন সব সম্মানজনক প্রতিশোধের ঘটনার প্রমাণ হাজার হাজার রয়ে গেছে।)

কিছুদিন আগে প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক সৈকত ভদ্রের স্ত্রী রেন্টিনা চাকমা কে যাত্রাবাড়ী থেকে অপহরন করে পুনরায় সামাজিক নিলামে তুলে আরেকজন চাকমা যুবকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে! অথচ আইনগত ও রাষ্ট্রীয় ভাবে এর কোন বিহিত নেই! যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে সেসময় মুক্তমনাদের মাঝে। মুক্তমনা নামের এক শ্রেনীর দালালদের অবস্থান সেসময় স্পষ্ট হয়ে যায়। ফলে বহু মুক্তমনাই এই শ্রেনীর প্রতি ঘৃণা পোষণ করতে শুরু করেন।

পার্বত্য অঞ্চলের সাধারন উপজাতিরা এই বহুমূখী সমস্যায় জর্জরিত সন্দেহ নেই। তারা বাঙ্গালীদেরকে একেবারে উগ্র ও চরম জাতীয়তাবাদে ভিন্নজাতী বিবেচনায় এই রাষ্ট্রকে বিশ্বাস করেনা। করার 'সাহস' পায়না; নিষ্ঠুর ও অন্ধ জাতীয়তাবাদের চর্চা তাদের ওপর সামাজিক ভাবে চাপিয়ে দেয়ার কারনে। পরস্পর দ্বন্দময় নিজেদের সন্ত্রাসীদের; যাদের তারা নেতা মানে ; সিন্ডিকেট জাতীতাবাদের মাঝে থেকে তাদেরকে উপেক্ষা করা সাধারনের পক্ষে সম্ভব নয়।

তারা একটা মনোপলির মাঝে বাস করে। ঐ অঞ্চলে বাংলাদেশের সাধারন আইন কার্যকর নেই। উপরন্তু 'আদিবাসী(!) অধিকার' নামে ষড়যন্ত্রমূলক আন্দলনের ভয়ে, সরকারও নিরোপেক্ষতা বজায় রাখার দায়ে দায়ী হওয়ায়, সেটা অনেকটাই বার্মার মত বর্বর মানসিকতার সমাজে পরিনত হয়ে গেছে বার্মিজ বংশোদ্ভূতদেরই দ্বারা।

গ- যারা 'আদিবাসী' শব্দের ব্যবহার করেছেন তারা সাধারন ভাবে ইতিহাসগত আত্মপরিচয়হীন বাঙালি।
বার্মার সীমান্তের নাফ নদীর পর থেকে এই সমগ্র অঞ্চলে ঐতিহাসিক ভাবে বাঙ্গালীদের আদিনিবাসের প্রকট প্রমাণ থাকার পরেও, উপরন্তু উপজাতিদের আগমন ধারা স্পষ্টভাবে তৎকালীন ব্রিটিশদের লিখে যাওয়া ডকুমেন্ট হতে জানার পরেও যারা তাদের 'আদিবাসী' বলে তারা হয় আত্মপরিচয় হীন নয়তো দেশদ্রোহী দালাল। কারন তারা জাতীসংঘের ঘোষণাপত্রও জানেন!

'আদিবাসী' শব্দের মজেজা নিম্নরুপ-

জাতীসংঘের 'আদিবাসী' বিষয়ক ধারা অনুযায়ী, যেকোন দেশের আদিবাসীরা তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যাপার গুলোতে পরিপূর্ণ 'স্বাধীনতা' ভোগ করার অধিকারী।

আদিবাসীদের অধিকারের উপর জাতিসঙ্ঘের ঘোষণাপত্র : ধারা ৩ -- আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অংশে বলা হয়েছে-

"United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples: Article 3 -- Right to Self-determination

Article 3 -- Right to Self-determination
Indigenous peoples have the right of self determination. By virtue of that right they freely determine their political status and freely pursue their economic, social and cultural development."

ধারা ৩ -- আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার
আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আছে। এই অধিকারের বলে তারা স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে (অর্থাৎ তারা কি কোন দেশের মধ্যে থাকবে, না সেই দেশ থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশ গঠন করবে -- সেটা তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে, যেমন উপজাতিরা কি বাংলাদেশের মধ্যে থাকবে, না বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে পার্বত্য এলাকাকে নিয়ে কিংবা পরবর্তীতে সমগ্র বাংলাদেশের সমতলীয় উপজাতি এলাকা যুক্ত করে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠন করবে -- তা একান্তই উপজাতিদের রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে) এবং স্বাধীনভাবে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন অনুসরণ করবে।

-এই ধারার আলোকেই বিনা রক্তপাতে পশ্চিমা দেশগুলো ও জাতীসংঘের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সম্প্রতী সময়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে পূর্বতীমুর। যা অখন্ড ইন্দোনেশিয়ার অঞ্চল ছিলো। 'আদিবাসী' শব্দ চর্চার বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের অজ্ঞতাকে পুঁজি করেই এক শ্রেনীর মানুষ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের দক্ষীণ এশীয় এজেন্ট হিসেবে এদেশে সক্রিয় বলে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে।

আশা করি, বিতর্কে যুক্ত হবার আগেই একটু খোজ নিয়ে জানবেন। তাহলে সহজেই দালাল শ্রেণীটিকে চিহ্নিত করে বাঙালি হিসেবে আত্মমর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণে সফল হবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×