somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ কি কখনো বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠত্বের আসন অর্জন করতে সক্ষম হবে?

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের উর্বর অববাহিকায় অবস্থিত ক্ষুদ্রায়তন একটি দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম নদীমাতৃক এই দেশটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামীয় পৃথক একটি আধুনিক জাতিরাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাস্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশটি নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেল করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে প্রাণান্ত পরিশ্রম করছে। হাজারো সমস্যা থাকা সত্বেও বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি মধ্যমপন্থী, সহনশীল, ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী রাষ্ট্র এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বাংলাদেশ আজ ইতিহাসের একটি ক্রান্তিলগ্নে এসে পৌঁছেছে। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও আমরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সীমাহীন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল দুটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। একটি স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা, অন্যটি অর্থনৈতিক মুক্তি। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছি। এখনো গণতন্ত্রকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারিনি। যার প্রতিফলন ঘটেছে আমাদের রাজনীতির ক্ষেত্রে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে।
তবে সকল চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশকে বলা হয় অমিত সম্ভাবনার একটি দেশ। একে আগামী দিনের বাঘ বলা হয়। এমনকি ২০০৫ সালে গোল্ডম্যান স্যাক্সের অর্থনীতিবিদ জিম ও'নেইল (যিনি ব্রিকসের ধারণা দিয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন)সম্ভাবনাময় ১১টি দেশের কথা বলিছিলেন যাদের নাম দেয়া হয় 'নেক্সট ইলেভেন'। এর মধ্যে বাংলাদেশের নামও আছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ‘Top 5 Fastest Growing Key Emerging Economies in 2014’ শিরোনমে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বাংলাদেশ মধ্যে চতুর্থ স্থানে আছে।


আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি কেন এসব বলা হয়? কি এমন অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে এদেশের মাটি ও মানুষের মাঝে? অদুর/দূরতম ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কি সত্যিই বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ও উন্নত দেশের কাতারে নিজেকে শামিল করতে পারবে? বাংলাদেশ কি কখনো পারবে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরতে? মূলতঃ এই সকল প্রশ্ন নিয়েই আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
বাংলাদেশে মৌলিক অধিকারের বাস্তবরুপঃ আলোচনার স্বার্থে কিছু বিষয় সমন্ধে সম্যক ধারণা থাকা একান্ত জরুরী। একটি দেশের সত্যিকারের চিত্র জানতে হলে প্রথমেই জানা দরকার সে দেশের নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা কতুটুকু পূরণ হচ্ছে। আমরা জানি খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়গুলো মানুষের মৌলিক চাহিদা। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থাও অন্যতম একটি বিষয়। চলুন এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু তথ্যের দিকে আলোকপাত করি।
খাদ্যঃ সদ্যসমাপ্ত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের চাল উৎপাদন হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৬৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন যা প্রয়োজনের চেয়ে ৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন বেশী। যে বাংলাদেশ একসময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে খ্যাত ছিল, সেই বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে...এমন একটি অর্জন, যা আগে কেউ কখনো কল্পনাও করেনি।
বস্ত্রঃ টেক্সটাইল ও তৈরী পোশাক শিল্প এদেশের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। দেশের জিডিপির ১২% এখাত থেকে আসে। রপ্তানী আয়ের ৮০% বস্ত্র ও তৈরী পোশাক শিল্প খাত হতে আসে।
বাসস্থানঃ বাংলাদেশের প্রায় সিংহভাগ মানুষের অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই আছে। আবাসন শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে ২১ শতাংশ অবদান রাখছে। শিল্পখাতের ১৫ শতাংশ আয় হয় আবাসন খাত থেকে। যদিও অধিকাংশই প্রজেক্টই শহরাঞ্চল ভিত্তিক এবং অপরিকল্পিত ও যেনতেনভাবে করা দোষে দুস্ট।
শিক্ষাঃ শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। ২০১৩ সাল নাগাদ শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষার হার এবং মান উভয়টি নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ আছে। শিক্ষা এখন অনেকটা সার্টিফিকেটসর্বস্ব বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা যেন শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবক, চিন্তাবিদ বা সমস্যা সমাধানকারী হতে সক্ষম করে তোলে সে বিষয়ে জোর দিতে হবে।
চিকিৎসাঃ দারিদ্রপীড়িত বাংলাদেশের অন্যতম একটি সমস্যা। বিশ্বব্যাংকের জরীপে মোট জনগোষ্ঠীর ২৬% (বিশ্বে শীর্ষস্থান) অপুষ্টিতে ভুগছে। ৪৬% শিশু মাঝারী থেকে গভীরতর পর্যায়ে ওজনজনিত সমস্যায় ভুগছে। ৫ বছর বয়সের পূর্বেই ৪৩% শিশু মারা যায়। প্রতি পাঁচ শিশুর একজন ভিটামিন এ এবং প্রতি দু'জনের একজন রক্তস্বল্পতাজনিত রোগে ভুগছে। তবে গত দুই দশকে কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশে প্রায় ৮৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ নাব্য জলপথ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪০০ কিলোমিটার সারা বছর নৌচলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার শুধু বর্ষাকালে ব্যবহৃত হয়। ২০১০ সালের হিসেব অনু্যায়ী দেশের জাতীয় মহাসড়ক ৩৪৭৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪২২২ কিলোমিটার এবং ফিডার/জেলা রোড ১৩২৪৮ কিলোমিটার। ২০০৮-২০০৯ সালের হিসাবমতে, বাংলাদেশে রেলপথ রয়েছে ২৮৩৫ কিলোমিটার। এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে বাংলাদেশে আকাশপথে বা বিমানপথে যাতায়াতের ব্যবস্থাও রয়েছে।
এছাড়া বিদ্যুত ও গ্যাস সমস্যা, তথ্য ও প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়, ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোও এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সকল ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান।
আরো কিছু টুকিটাকি তথ্যঃ
বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম দেশ, পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম-অধ্যুষিত দেশ। মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশে বর্তমান জনসংখ্যা ১৫.৫৯ কোটির বেশী। জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জনগণের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ১,১৯০ মার্কিন ডলার, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৯২,৫১০ টাকা। বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ২৬.২০ শতাংশ, অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১১.৯০ শতাংশ, এবং বার্ষিক দারিদ্র হ্রাসের হার ১.৫ শতাংশ। এ দেশে পুরুষের গড় আয়ু ৭০ বছর। নারীর গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে এক বছর বেশি। অন্যদিকে, দেশে এখন মোট প্রজনন হার (টোটাল ফার্টিলিটি রেট) ২ দশমিক ২। প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ১৭০ জন মায়ের মৃত্যু হয়। ১৫-৪৯ বছর বয়সী ৬৩ শতাংশ নারী জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো না কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এই উন্নয়নশীল দেশটি প্রায় দুই দশক যাবৎ বার্ষিক ৫ থেকে ৬.২ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অর্জন করে এক চমতকার ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে।
বাংলাদেশের সম্ভাবনাসমূহঃ
কৃষিঃ বাংলাদেশের অর্থনীতি অদ্যাবধি কৃষিনির্ভর কারণ দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষিজীবী। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান- ১৮.৭০%। সামগ্রিকভাবে আমাদের জাতীয় আয়ের ৪৫ শতাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অধিক সুফল পাওয়া সম্ভব।
পোশাকশিল্পঃ আমাদের আছে একটি ব্যাপক আকারের পোশাকশিল্প, যা বিশ্বমানের শিল্পে রূপান্তরিত হতো যদি এর অগ্নি–নিরাপত্তাব্যবস্থ্যা, কারখানার কাঠামোগত দৃঢ়তা এবং শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়গুলো যথাযথ মানের হতো। মাত্র ১৩ মিলিয়ন ফ্রাতে যাত্রা করা পোশাকশিল্পের আজকের বার্ষিক রপ্তানি আয় ৪৫ বিলিয়ন ডলার যা ২০২০ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারে পেঁৗছবে।
রেমিট্যান্সঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, সদ্য শেষ হওয়া ২০১৪ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১,৪৯৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স যা জিডিপির মোট পরিমাণের ১১ শতাংশ। এ অর্থের পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্যের কমপক্ষে সাতগুণ আর বৈদেশিক বিনিয়োগের ১৩ গুণ বেশি।
চামড়াজাত পণ্যশিল্পঃ বিশালাকায় জুতা ও তৈরি চামড়াজাত পণ্যশিল্প, তা বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়বে, যখন সাভারের পরিবেশবান্ধব ট্যানারি পার্ক চালু হবে। আশা করা হচ্ছে, পোশাক শিল্পের পরে এটিই হবে আমাদের অন্যতম রপ্তানীবান্ধব শিল্প।
ঔষধ শিল্পঃ অন্যতম বিকাশমান আর একটি হচ্ছে ওষুধ শিল্প। ওষুধ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে বিশ্বে প্রায় ৮০টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়ে থাকে।
তথ্যপ্রযুক্তিঃ তথ্যপ্রযুক্তি, বিশেষত সফটওয়্যারের উন্নয়ন। দেশের শীর্ষ ১০টি রফতানি খাতের একটিতে স্থান করে নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। ২০১২-১৩ অর্থবছর এ খাতের রফতানি আয় প্রথমবারের মতো ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ডলার ছাড়ায়। অর্থবছরটিতে রফতানি আয় হয়েছে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ডলার। শিল্প বিপ্লবের পর নতুন পৃথিবীর পাথেয় নির্মাণ করছে তথ্যপ্রযুক্তি।
ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীঃ ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীর জনক বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সারা দেশে চালু হওয়া ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী। গ্রামীন ব্যাংক, আশা, ব্র্যাক, প্রশিকাসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এখানে কাজ করছে।
জনশক্তিঃ জনসংখ্যা আমাদের দেশে এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে এই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করলে তা সম্পদে পরিণত হবে। বিশ্বের ধনী কয়েকটি দেশে জন্মহার মাইনাস হয়ে যাওয়ায় সেখানে জনসম্পদের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমরা এই সুযোগ নিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারব।
সম্প্রতি প্রকাশিত ইউএনএফপি’র জনসংখ্যা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশই তরুণ। অর্থাত্ ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা হলো চার কোটি ৭৬ লাখ যা গোটা বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ। বিপুল সংখ্যক এ তরুণরা মানব কল্যাণ এবং জাতীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ উন্নয়নের গতিপথ নির্ধারণ করবে এবং নেতৃত্ব দেবে। এদের শিক্ষা ও সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা গেলে তা সমাজ ও রাষ্ট্রের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য বড় শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
এছাড়াও ছোট মালবাহী জাহাজ কারখানা, হিমায়িত চিংড়ি, সিরামিক, ফুল এবং পাট ও রেশমজাত পণ্য, ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি ওয়ালটন, ফার্নিচার কোম্পানি নাভানা, অটবি- ইত্যাদিও আমাদের সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনের শক্তিশালী দিক।
বাংলাদেশের সমস্যাসমূহঃ বাংলাদেশে সমস্যার অন্ত নেই। আমরা প্রধানতম যে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি তার মধ্যে রয়েছেঃ
জনসংখ্যা সমস্যাঃ বাংলাদেশের এক নম্বর জাতীয় সমস্যা। দেশের আয়তন যেহেতু বাড়ছে না, সেহেতু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতেই হবে। বাংলাদেশ জনসংখ্যা নামক একটি টাইম বোমার ওপর বসে আছে। এবং এই টাইম বোমার বিস্ফোরণের ধাক্কা কমিয়ে আনার সময়ও দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। জনসংখ্যা কমানোয় জন্মনিয়ন্ত্রণ ছাড়া তাই কোনো উপায় নেই ।
পরিব্যাপ্ত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতিঃ দুর্নীতিতে আমরা ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’। এর মাত্রা এতই প্রবল যে, গোটা দেশকেই গিলে খাবার উপক্রম করেছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতাঃ আমাদের প্রায় সকল অর্জন বিনস্ট হয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। ইদানিং একটি সর্বগ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থার রূপ নিয়ে নতুন ভাবে সামাজিক বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ কালবৈশাখী ঝড়, বন্যা, খড়া, সাইক্লোন, জলোচ্ছাস, ভূমিধস, নদীভাঙন-এই সবগুলো আমাদের বাতসরিক ‘কুটুম্ব। প্রায় প্রতি বছরই এদের কারো না কারো দেখা মেলে। আর আমাদের ‘উপহার’ দিয়ে ব্যাপক আর্থ-সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি।
যোগ্য নেতৃত্বের অভাবঃ আমরা অনেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রি বা নেতা-নেত্রী পেয়েছি। কিন্তু সত্যিকারের ‘স্টেটসম্যান’ আমরা আজ অবধি পাইনি। দুর্নীতিমুক্ত, সৎ আদর্শনিষ্ঠ ও ত্যাগী নেতৃত্বের বড় অভাব আছে। আমাদের দরকার মাহাথির মুহাম্মদের মত একজন ‘ভিশনারি লিডার’। শুধু একজন মাহাথির হলেই চলবে না। বরং একটা ‘টিম ভিশনারি’ প্র্য়োজন।
দেশপ্রেমের অভাবঃ আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের মারাত্বক ঘাটতি আছে। যা আছে তা অনেকটা ‘ভারসাম্যহীন’ দেশপ্রেম। এই দেশের জন্য কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন তো পরক্ষণেই দেশের জন্য ক্ষতিকর অসংখ্য কাজ অবলীলায় করে যাচ্ছেন। আপনি যদি সত্যি ‘মা’ কে ভালবাসেন তাহলে কখনো আপনি তার কস্টের কারণ হতে চাইবেন না। দেশ তো ‘মা’-ই নাকি।
বেকার সমস্যাঃ ইকোনমিস্ট (লন্ডন) পত্রিকার ‘ইকোনমিক ইনটেলিজেন্ট ইউনিট’ তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে ৪৭ ভাগ বেকার। একমাত্র আফগানিস্তান বাদে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারদের হার বেশি। এটা নিঃসন্দেহে একটা উদ্বেগজনক বিষয়। যেখানে প্রতি বছর ১৩ থেকে ১৬ লাখ জনশক্তি চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে, সেখানে বিভিন্ন কারণে (রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অন্যতম) এ দেশে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। বাড়ছে বেকারত্ব। এই বেকারত্বের মধ্যে আবার আছে কিছু ‘ছায়া বেকারত্ব’।
মুদ্রাপাচার সমস্যাঃ বিভিন্ন তথ্যসুত্রে জানা যায় যে, বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে, ১০ থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা ট্রান্সফার প্রাইসিং এবং বাকি অর্থঅন্যান্য উপায়ে পাচার হচ্ছে। ‘লাভের গুড় পিঁপড়ায় খায়’।
জাতিগত/মনস্তাত্বিকভাবে আমরা কিছুটা দুর্বল প্রকৃতিরঃ
নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর বাংলাদেশের মাটির মত মানুষের মনও অনেক নরম। এখানকার মানুষের শারীরিক কাঠামো ততটা সবল নয়। অল্প বয়সেই শরীর-মনে পরিবর্তন আসে। আবার তারাতারি চলেও যায়। ফলে ‘তেজ’ বা ‘দম’-র ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। ইতিবাচক ক্ষেত্রে ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার মনমানসিকতা আমাদের একেবারে কম। ‘কোন রকমে খেয়ে পড়ে জীবন পার’ করতে পারাই বেশীরভাগ মানুষের লক্ষ্য থাকে। যেমন, ২০১২ সালের Happy Planet Index এর জরিপে জানা যাচ্ছে যে, বিশ্বের সুখী রাষ্ট্রসমুহের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম!। এর ফলে ‘বিশ্বজয়ী বাংলাদেশী’ পেতে আমাদের বড় সমস্যা হয়। সেরা হতে দরকার সুশিক্ষা, অপরাজেয় মানসিকতা, কঠোর পরিশ্রম, তীব্র মানসিক, শারীরিক শক্তি ও সুনিপুণ দক্ষতা। অল্প কয়দিনে এসব গুণাবলী আয়ত্ত করা যায় না। যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে যায় এসব গূণাবলী আয়ত্ব করতে।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবঃ
আমাদের দেশে অনেক প্রতিভাবান মানুষ আছেন যাদের একটু সহযোগিতা করলে সব হিসেব পালটে যাবে। জিঞ্জিরার কথাই বলা যায়। হেন জিনিষ নেই তারা কপি করতে পারে না। জিঞ্জিরাকে নিয়ে যদি সরকার একটা ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হাতে নেয় আমার বিশ্বাস ‘বাংলাদেশী ব্র্যান্ড’ পেতে আমাদের বেশী সমসয় লাগবে না। আর একটা কথা। দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গগুলোতে যে বাজেট দেয়া হয় হয় তার মধ্যে শতকরা ৯০% যায় বেতন-ভাতা ও অবকাঠামো উন্নয়নে। গবেষণার জন্য বরাদ্দ নেই বললেই চলে। গবেষণা ছাড়া নতুন নতুন আইডিয়ার উন্মেষ ঘটবে কিভাবে?
এছাড়া সব শিশুর জন্য গুণগত শিক্ষার সমস্যা, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন (যেমন: রাস্তা, রেলপথ, বন্দর এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ) এবং সুশাসন, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার অভাব ইত্যাদি কারণেও আমাদের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
শেষ কথাঃ
সংক্ষিপ্তাকারে বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো। এখন আপনাদের সবার কাছে আমার জিজ্ঞাসা, বাংলাদেশ কি পারবে বিশ্বের বুকে ছরি ঘোরাতে? আমরা কি এমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সক্ষম হবো যেখানে থেকে প্রতিছর নোবেল লরিয়েট বের হবে? আমরা কি কোনদিন মহাকাশ অভিযানে স্পেসশীপ পাঠাতে সক্ষম হবো? আমরা কি অ্যাপল, মাইক্রোসফট, গুগল, কোকা-কোলা, আইবিএম, ম্যাকডোনাল্ডস, জেনারেল ইলেক্ট্রিক, টয়োটা, স্যামসাং, ফেসবুক, ইত্যাদির মত বিশ্বসেরা কোন ব্যান্ড উপহার দিতে পারব? আমরা কি… উদাহরণ বাড়িয়ে কোন ফায়দা নেই।
এ ব্যাপারে আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য বা মতামত একান্তভাবে কামনা করছি।
‘পঠিত’ নয় আমি চাই সবার ‘সক্রিয় অংশগ্রহণ’ চাই।
রেফারেন্সঃ
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৬
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×