somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঁচ মিশালীঃ পর্ব- ০৬

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘একের ভেতর দুই’, ‘একের ভিতর তিন’, ‘একের ভিতর সাত’, কিংবা ‘একের ভিতর সব’ ইত্যাদি চটকদার বিজ্ঞাপন হরহামেশা দেখতে পাওয়া যায়। অনেকেই সেগুলোর ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। ঠিক তেমনি করে আমিও কিছুদিন হলো ‘পাঁচ মিশালি’ টাইপের একটা পোস্ট নিয়মিত বিরতিতে দেই। এতে একই লেখায় ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের অবতারণা করা হয়। ইতিমধ্যে এ জাতীয় কয়েকটি পোস্ট দেয়া হয়েছে। এবং সে সব পোস্টে আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য বা মতামত পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছি।

আজ নতুন একটি পর্ব নিয়ে আপনাদের সমীপে হাজির হলাম।

১. অনুগল্প

এক যে ছিল এক ছেলে। সে ছিল খুবই উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত ও হাসিখুশি। তার মনে কোন দুঃখ ছিল না, কস্ট ছিল না। সারাক্ষণ তার মুখে হাসি লেগেই থাকত।
অতঃপর, সে বিয়ে করল!

২. সকল প্রকার অন্যায়কে ‘না’ বলুন।

লাঞ্চ করতে বাসায় যাচ্ছি। হঠাৎ রিকশারোহী এক মেয়েকে দেখলাম সে ধুমছে সিগারেট টানছে। বাস্তবে প্রথম কোন মেয়েকে প্রকাশ্যে ধুমপান করতে দেখে যুগপৎ বিস্মিত ও ব্যথিত হলাম। শুধু আমি না, রাস্তার প্রায় সকলেই মেয়েটি সম্মন্ধে আজেবাজে মন্তব্য করল।

মানুষ মেয়েটির সিগারেট খাওয়া নিয়ে এত বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালো কেন? এমন না যে, সিগারেট শুধু মেয়েদের জন্যই নিষিদ্ধ। এটা সবার জন্যই সমানভাবে নিষিদ্ধ। আসলে মানুষ মেয়েদের প্রকাশ্যে ধুমপান দেখতে অভ্যস্ত না। তাই হয়ত এমন হয়েছে।

মেয়েটিকে কটাক্ষ করে কিছু বলা আমার উদ্দেশ্য না। আমি বরং তার প্রতি জনসাধারণের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার চেস্টা করব। ধুমপান নিষিদ্ধ হলেও এটা বড় রকমের কোন অপরাধ নয়। তাই মেয়েটি প্রকাশ্যে ধুমপান করে ভুল করলেও সে সমাজদ্রোহী নয়। তবু অনভ্যস্ততার জন্য মানুষ তাকে ছিঃ ছিঃ করল। আমাদের সামাজিক কাঠামোটাই এমন যে, বিয়ের আগে যদি বরপক্ষের মানুষ জানতে পারে যে, হবু বউ ধুমপায়ী তাহলে নিশ্চিত সে বিয়েটা ভেঙ্গে যাবে। যদিও ছেলেদের বেলায় সেটা সচরাচর ঘটে না। এ ক্ষেত্রে ধুমপায়ী মেয়েটির অভিভাবকগণও মোটেই স্বস্তিতে থাকবে না। ধুমপায়ীদের প্রতি এই কঠোরতা আপাতদৃষ্টিতে আমাদের সমাজের মহত্তম দিক বলেই মনে হয়। কিন্তু আসলেই কি তাই?

আমাদের চারপাশে অসংখ্য ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, চরিত্রহীন, নেশাখোর, চোরাচালানকারী, মদ্যপায়ী, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারী, কারসাজি করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানো অসাধু ব্যবসায়ী... এরকম বড় বড় ‘অপরাধমূলক’ ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের প্রতি সমাজের কোন ছিঃ ছিঃ নেই, নেই ঘৃণার তীব্র বহিঃপ্রকাশ। শুধু তাই নয়, একজন বাবা তার মেয়েকে ঘুষের মধ্যে ডুবে থাকা নীতিহীন কোন মানুষের সাথে নিজের মেয়েকে বিয়ে দিতে মোটেও লজ্জাবোধ করে না। এটা কোনভাবেই সমাজের মহত্তম চরিত্র হতে পারে না।

আমাদের সমাজ যদি দুর্নীতিবাজসহ সকল অপরাধীকে ঐ ধুমপায়ী মেয়েটির মত করে ছিঃ ছিঃ করত, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করত তবেই আমরা একটা পরিচ্ছন্ন, সুখি ও সুন্দর দেশ পেতে পারতাম। কাজেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন অপরিহার্য।

৩. বিনিয়োগ

অন্যের প্রতি মানুষের আচরণ অনেকটা 'বিনিয়োগ' এর মত। আজ সে যা বিনিয়োগ করবে ভবিষ্যতে সে তেমনটা ফেরত পাবে।

৪. আমিত্ব প্রহার করুন

'আমি', 'আমার', 'আমিত্ব' বিষয়গুলো মানুষকে চরম স্বার্থপরতার দিকে ধাবিত করে। অন্যদিকে 'তুমি', 'তোমার', 'আমাদের' ইত্যাদি মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে করে তোলে।

'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা' কিংবা 'নিজে বাঁচলে বাপের নাম' ইত্যাদি সম্পর্ক বিনস্টকারী প্রবাদ-প্রবচনগুলো অতিসত্তর বর্জন করা উচিত। এরচেয়ে 'পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও' বা ''সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে' কথাগুলো আমাদের মাঝে বেশী বেশী করে শরীর চর্চা করা উচিত।

৫. জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই অমূল্য।

আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই এক একটি ছবির মত, যেটি আগে কখনও দেখা হয়নি। এবং আরো পরিতাপের বিষয় হল, এই মুহূর্তগুলো আর কখনো ফিরেও আসবে না।

জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই অমূল্য। তাই এর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে আমাদের জানপ্রাণ দিয়ে চেস্টা করতে হবে।

৬. সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য

সত্য হলো ডেবিট কার্ডের মত। প্রথমে এটি পরিশোধ করতে হয় এবং পরে উপভোগ করতে হয়। অন্যদিকে মিথ্যা হল ক্রেডিট কার্ড। প্রথমে ইচ্ছেমত উপভোগ/ব্যবহার করে এবং পরে সুদে-আসলে এর মূল্য চুকাতে হয়।

কোন কার্ড ব্যবহার করা উচিত সেই সিদ্ধান্ত আমাদের।

৭. আসল মানুষ চিনুন

যে আপনাকে আন্তরিকভাবে পছন্দ করে, যে আপনার সত্যিকারের শুভাকাংখী, যে আপনার সকল বিপদে-আপদে পাশে থাকার যথাসাধ্য চেস্টা করে তাকে কোনভাবেই অবহেলা করবেন না। কারণ এই নির্দয়, রূঢ় ও স্বার্থপর পৃথিবীতে এমন মানুষ খুব অল্প সংখ্যকই পাবেন।

৮. মানুষের প্রশংসা করুন



বেশীরভাগ মানুষ খুব অল্পতেই খুশি হয়ে যায়। যেমন, আপনি সাজগোজ করে অফিসে আসলেন। আপনার কোন কলিগ বেশ উচ্ছাস নিয়ে যদি বলে, ‘বাহ! খুব কিউট লাগছে তো’। আমি নিশ্চিত, আপনার সারাদিন খুব আনন্দে কাটবে। বিশেষ করে মেয়েরা এতে ভীষণ খুশি হয়।

অফিসে আপনি খুব ভাল কাজ করেন। অফিসের বস যদি মুখ ফসকেও বলে ওঠেন, ‘Good job. I appreciate you’. আমার বিশ্বাস আপনার মাথায় দুই মণ ভারী বোঝা উঠিয়েও যদি বলা হয়, ‘ওজন কি বেশী হয়ে গেছে”? আপনি কস্ট করে কেস্ট হাসি দিয়ে বলবেন, ‘না স্যার! এ আর এমন কি?”

কিংবা কেউ খুব কস্ট করে, সময় নিয়ে রান্না করল। লোকজন তৃপ্তি সহকারে খেতে খেতে যদি বলে, ‘বাহ! রান্না তো অসাধারণ হয়েছে”! আমি এবারও নিশ্চিত, ঐ রাঁধুনির সকল কস্ট মুহুর্তের মধ্যে উবে যাবে।

সত্যি প্রশংসা পেলে মানুষ খুবই আত্ববিশ্বাসী হয়ে ওঠে, আনন্দিত হয়। আত্ববিশ্বাস এবং আনন্দ যখন একই বিন্দুতে মিলিত হয় তখন মহত্তর কিছুই ঘটে থাকে। তাছাড়া এর ফলে পারস্পারিক সম্পর্ক ও শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়।

কিন্তু...কিন্তু অন্যের প্রশংসার বেলায় আমাদের কার্পণ্য সীমাহীন। মনে হয় প্রশংসা করতে কতই না টাকা লাগে বুঝি! কিংবা অন্যের প্রশংসা করলে নিজে ছোট হয়ে যাব; অন্যের প্রশংসা করার সময় শয়তান যেন আমাদের ঠোটজোড়া সুপার গ্লু দিয়ে আটকে রাখে।
যাইহোক, সুযোগ পেলেই আপনার পরিচিতজনের প্রশংসা করতে ভুলবেন না। মনে রাখবেন, ‘প্রশংসা করতে পয়সা লাগে না”।

৯. মানুষকে সঠিকভাবে বিচার করুন।

কোন মানুষের ১০টি কাজের মধ্যে যদি ৯টি ভাল আর ১টি ভুল কাজ হয় তবে সকল মানুষ ৯টি ভাল কাজ ভুলে ১টি ভুল কাজ নিয়েই সমালোচনামুখর হয়।

সত্যি মানুষ বড়ই অদ্ভুত প্রকৃতির!!

১০. মনের পবিত্রতা

দেহের পরিচ্ছন্নতা মূল্যহীন যদি মনের পবিত্রতা না থাকে।

১১. বিরতি নিন

মাথা মাঝে মাঝে ধর্মঘটে যায়। হাজার ডাকলেও সে জবাব দেয় না।

১২. ঘরের চোখ

এতদিন শুনতাম 'দেয়ালেরও কান আছে'।
আর এখন দেখছি 'ঘরেরও চোখ আছে'। 8-|



সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×