নুশেরা আপুর পোষ্ট টা কলেজের দিনগুলো দেখার পর থেকেই প্রচন্ডরকম নষ্টালজিয়ায় ভুগছি। নষ্টালজিয়া মানে সেরকম নষ্টালজিয়া, আজ ব্লগ খুলেই হাত নিশপিশ করছে চট্টগ্রাম কলেজ কে নিয়ে লেখার জন্য। প্রিয় সেই চট্টগ্রাম কলেজ....
১৯৯৯ থেকে ২০০১ জীবনের শ্রেষ্ঠ দুটি বছর কেটেছে চট্টগ্রাম কলেজে। কাল সারারাত স্মৃতির পাতা হাতড়েও ভর্তি পরীক্ষার দিনটার কথা মনে করতে পারলাম না
সব বারই মনে হয় রিটেনেই ভর্তি হয়ে যায় কিন্তু আমাদের সময় ভাইভাও ছিলো... ভাইভা বোর্ডে মজা হইছিলো... আমি তো ভাব মারতে একটা পুরো চেইন টানা টি-শার্ট পরে গেছি আর তাই নিয়ে ব্যাপক ঝাড়ি... কলেজে পা দিতে পারলানা এখনই এই অবস্থা, বিড়ি সিগারেট কি ধরা শেষ না সেটা এখনও বাকী আছে, ভদ্র ভাবে কাপড়চোপড় পরে আসতে পারো না কলেজে কি পড়বা... ভাইভা দিয়ে বেরিয়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেছিলো, চিটাগাং কলেজে যদি না হয় তাইলে মান ইজ্জতের যে কেরোসিন অবস্থা হবে তা ভেবে বিরাট ভয় পাইছিলাম
প্রথম ক্লাস ছিলো ফিজিক্সের ২১২ তে খুব সম্ভবত:। অনেক সিনিয়র এক ম্যাডামের ক্লাস ছিলো (নাম ভুলে গেছি, আমার লং টার্ম মেমোরির আবার বিচ্ছিরি হাল
চট্টগ্রাম কলেজ লাইফের সবচেয়ে মজার যেটা হয় সেটা হলো প্যারেড গ্রাউন্ড আর জিইসির মোড়ের আড্ডা। জিইসির মোড় মানে কলেজের যে গোল চত্তর ছিলো সেখানকার সিঁড়ি তে বসে যে আড্ডা
কলেজে ঢোকার পর কদিন পরেই শুনি নাটক মঞ্চস্থ হবে। আমি অবশ্য কোন কামেরই না তাও দেখা গেলো বন্ধু বান্ধবী রা নাটকের রিহার্সেল করে আর আমি কেমনে যানি ওদের সাথে ভীড়ে গেলাম। ওরা রিহার্সেল করে আর আমি আড্ডা উড্ডা দেই, চা-টা খাই এই আরকি... একটু পর পর জুওলজির হাইড্রা ম্যাডাম আসে আর জিগায় এই ছেলে তোমার কাম কি? ওদিকে বন্ধু রাইসুলের চরিত্র ছিলো সোবরাতি, চেয়ারম্যানের চামচা আর এক দৃশ্যে চেয়ারম্যানের ধমক খেয়ে ওর পায়জামা খুলে যাবার দৃশ্য ছিলো। সেই দৃশ্য নিয়ে সে কি হাসাহাসি.. মূল নাটক মন্চস্থ করার দিন ওর বাবা - মা নাটক দেখতে হাজির আর সবার সামনেই মন্চে বেচারা পায়জামা খুলে পড়ার দৃশ্য কল্পনা করলে এখনও হাসি পায়
প্রথম ইয়ারে ডিসি খাইছিলাম ক্লাস না করার অপরাধে... হেভি মজা হইছিলো ঐদিন... মনে হয় ৯ - ১০ জন বাদে সবাই ডিসি খাইয়া বাপ মা নিয়া উপস্থিত... এর মাঝে সজীব সাদা শার্ট পইড়া আসে নাই, এদিকে শুনা গেলো কাপড় চোপড় যাদের ঠিক নাই তাগোর ঝাড়ি নাকি ডবল... কি আর করা বাথরূমে গিয়া চান্জ কইরা আমি ওর টি-শার্ট আর ও আমার শার্ট পইড়া কাম চালায়া আইসা আবার রি-চেন্জ... তারপর ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে ক্ষেইপা মেইপা আমার আম্মায় তো টিচারগো সেরকম ঝাড়ি ঝাড়লো... আহা বন্ধু মহলে সেই ঘটনা তো ইতিহাস
ডিসি খাইয়া তেমন লাভ হয় নাই, বরং সেকেন্ড ইয়ারে ক্লাস না করার হার আরও বেড়ে গেলো
কলেজের পালা শেষ করে চলে আসার দিনগুলোর কথা অনেক মনে পড়ে.. অনেক দিন পর দুই বছর আগে কলেজে গিয়েছিলাম... সেই সিঁড়ি, সেই পথঘাট, সেই প্যারেড মাঠ... সবাই বলে বদলে গেছে, কই আমার কাছে তো সেই আমার নিজের চট্টগ্রাম কলেজ... আমার প্রিয় দুটো বছর... প্রিয় অনেক গুলো মুখ
স্কুল আর কলেজের সেসব মুখ গুলোকে অনেক মিস করি। ঢাকায় আসার পর আস্তে আস্তে যে দূরত্বের সূচনা, অফিস আর বউ বাচ্চার ডামাডোলে তা চলে গেছে অনেক দূর... তবু ইয়াহু গ্রুপ আর ফেসবুকের কল্যানে দূরত্ব কমেছে অনেক... হটাৎ হটাৎ ফেসবুকে অনেক পূরানো বন্ধুর ইনভাইটেশন পাই, অনেক গুলো স্মৃতি আবার চোখের সামনে ভেসে আসে, দৃষ্টি যাপসা হয়ে আসে... সুমনের গানটার কথা মনে পড়ে যায়...
হটাৎ রাস্তায়, অফিস প্রাঙ্গণে,
হারিয়ে যাওয়া মুখ চমকে দিয়ে বলে
বন্ধু কি খবর বল.....
কত দিন দেখা হয় নি .....................
ইস আবার যদি ফেরত যেতে পারতাম সেই দিনগুলোয়... আবার যদি আড্ডার শোরগোলে মাতিয়ে তুলতে পারতাম প্যারেড মাঠ, বাপ্পার গিটার আবার যদি বাজতো জিমনেশিয়ামের ভেতর, শিবিরের রক্তচক্ষুকে বুড্ডা আন্গুল দেখায় ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন, পিকনিক, ক্লাস ফাঁকি দেওয়া, হল রুম থেকে অ্যাটেন্ড্যান্স দিয়ে পালানো, প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা খাওয়া, স্যার ম্যাডামদের বকুনি .....
ইস এই যান্ত্রিক জীবনটাকেও যদি ওভাবে ফাঁকি দেওয়া যেত
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






