somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রাম কলেজের দিনগুলি -- একটি স্মৃতি তুমি বেদনা টাইপ পোষ্ট :(

১৬ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নুশেরা আপুর পোষ্ট টা কলেজের দিনগুলো দেখার পর থেকেই প্রচন্ডরকম নষ্টালজিয়ায় ভুগছি। নষ্টালজিয়া মানে সেরকম নষ্টালজিয়া, আজ ব্লগ খুলেই হাত নিশপিশ করছে চট্টগ্রাম কলেজ কে নিয়ে লেখার জন্য। প্রিয় সেই চট্টগ্রাম কলেজ....

১৯৯৯ থেকে ২০০১ জীবনের শ্রেষ্ঠ দুটি বছর কেটেছে চট্টগ্রাম কলেজে। কাল সারারাত স্মৃতির পাতা হাতড়েও ভর্তি পরীক্ষার দিনটার কথা মনে করতে পারলাম না :( তবে সেবার প্রশ্ন বেশ কঠিন এসেছিলো এটা মনে আছে... রেজাল্টের দিনটার কথাও অবশ্য মনে আছে, বিকেলে কলেজের নোটিশ বোর্ডের সামনে গিয়ে নিজের রোল খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়েছিলাম তার থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম খুব কাছের এক বন্ধুর চান্স না পাওয়ায়। অবশ্য কলেজিয়েটের মোটামুটি সবগুলা চেহারাকেই আশে পাশে দেখে অনেক ভালো লেগেছিলো। ঐবার খুব সম্ভবত ১৯০+ কলেজিয়েটের পোলাপাইন ভর্তি হয়েছিলো আর স্বাভাবিকভাবেই পরের দুইটা বছর আমাদের আর পায় কে ;)

সব বারই মনে হয় রিটেনেই ভর্তি হয়ে যায় কিন্তু আমাদের সময় ভাইভাও ছিলো... ভাইভা বোর্ডে মজা হইছিলো... আমি তো ভাব মারতে একটা পুরো চেইন টানা টি-শার্ট পরে গেছি আর তাই নিয়ে ব্যাপক ঝাড়ি... কলেজে পা দিতে পারলানা এখনই এই অবস্থা, বিড়ি সিগারেট কি ধরা শেষ না সেটা এখনও বাকী আছে, ভদ্র ভাবে কাপড়চোপড় পরে আসতে পারো না কলেজে কি পড়বা... ভাইভা দিয়ে বেরিয়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেছিলো, চিটাগাং কলেজে যদি না হয় তাইলে মান ইজ্জতের যে কেরোসিন অবস্থা হবে তা ভেবে বিরাট ভয় পাইছিলাম B-) তো সেইবার খালি ঝাড়ির উপরে দিয়াই গেছে, ভালোয় ভালোয় ভর্তি হইয়া গেলাম... ভর্তির দিন থেকেই সেই যে শিবিরের উৎপাত, শেষ দিন পর্যন্ত চলেছিলো... এসব কথা বরং না ই বলি...

প্রথম ক্লাস ছিলো ফিজিক্সের ২১২ তে খুব সম্ভবত:। অনেক সিনিয়র এক ম্যাডামের ক্লাস ছিলো (নাম ভুলে গেছি, আমার লং টার্ম মেমোরির আবার বিচ্ছিরি হাল :( )... ভাগ্যিস মোজাম্মেল স্যার আমাদের সি সেকশনে পড়েনি, এ সেকশনে তো ক্লাস নিতে গিয়া মোজাম্মেল স্যার যথারিতি পরথম ক্লাসে মারপিট শুরু করে দিলেন। পোলাপাইন প্রথম দিন ক্লাসে আসছে তার উপর অর্ধেক ক্লাস ভর্তি মেয়ে, জোস বাড়বেই না কেনো বলেন। তো বন্ধু মারুফ হল রূমের সিঁড়ি তে দাড়ায় ব্যাগ ছুঁড়ে দিচ্ছিলো মেয়েদের পিছের বেন্চে বসার জন্য, এমন সময় মোজাম্মেলের আগমন.. আর যায় কোথায়, চুল ধরে পটাপট থাপ্পর আর অকথ্য কমেন্ট ;) মারুফের প্রতি স্যারের কেনো যেনো আক্রোশ পুরা দুই বছর ধরেই ছিলো :| আহারে বেচারা... মাইর মনে হয় একাধিকবার খাইছিলো :D তবে প্রাইভেটে মোজাম্মেল স্যারের ছিলো পুরো ভিন্ন চেহারা। উনার কাছে প্রাইভেট পড়তে যেতেও নানা ফর্ম ফিলাপ করতে হতো। তবে উনার লেকচার সিট গুলা জোস ছিলো, স্বীকার করতেই হবে যদিও ওগুলা কখনোই খুব বেশী উল্টানো হয়ে উঠে নাই ;) ফিজিক্সের ক্লাসগুলায় মনে হয় ফাঁকি সবচেয়ে বেশী মারছি :) একবার হইলো কি তিন চার ফ্রেন্ডরে বইলা রাখছি প্রক্সি দেবার কথা, কারন আগের বার একজনরে বলছিলাম, পরে দেয় নাই... স্যার যথারিতি রোল কল করলো আর তিন জন একলগে কইলো ইয়েস স্যার.... হা হা হা হা... স্যারে জিগায় কোন জন রোহান... একজনে বুদ্ধি কইরা বললো স্যার ওর যে ফিগার আমাদের তিন জনরে মিলায় এক জন ধরতে পারেন ;) পরে কি হইছিলো খোঁজ নেইনি, ক্লাস ই করা হয় নাই আর :)

চট্টগ্রাম কলেজ লাইফের সবচেয়ে মজার যেটা হয় সেটা হলো প্যারেড গ্রাউন্ড আর জিইসির মোড়ের আড্ডা। জিইসির মোড় মানে কলেজের যে গোল চত্তর ছিলো সেখানকার সিঁড়ি তে বসে যে আড্ডা :) প্যারেড মাঠের পেছনের ভাঙা জিমের ভেতরে আমাদের গানের আড্ডা বসতো প্রায়ই... বাপ্পা ছিলো মধ্যমণি সাথে আমি, রোমেল, নাহিদ, ইফতেখার আরো কত মুখ। সেই দিনগুলো যে কি পরিমাণ মিস করি কিভাবে বোঝাবো? কলেজ ক্যান্টিনের ৬ টাকার তেহারি আর বার্গার... দুই টাকার চা, সিঙ্গারা আর হলের ১৩ টাকার দুপুরের খাবার... দশ-বারো টাকা দিয়ে জয়নগরে আরাম করে দুপুরের খাওয়া সেরে ফেলা যেতো, ইস কি দিনগুলোই না ছিলো তখন... অকেশন না হলে তো আর ফাষ্টফুড শপ গুলায় যাওয়া হতো না...থাক খাওয়া দাওয়ার কথা বাদ দেই...

কলেজে ঢোকার পর কদিন পরেই শুনি নাটক মঞ্চস্থ হবে। আমি অবশ্য কোন কামেরই না তাও দেখা গেলো বন্ধু বান্ধবী রা নাটকের রিহার্সেল করে আর আমি কেমনে যানি ওদের সাথে ভীড়ে গেলাম। ওরা রিহার্সেল করে আর আমি আড্ডা উড্ডা দেই, চা-টা খাই এই আরকি... একটু পর পর জুওলজির হাইড্রা ম্যাডাম আসে আর জিগায় এই ছেলে তোমার কাম কি? ওদিকে বন্ধু রাইসুলের চরিত্র ছিলো সোবরাতি, চেয়ারম্যানের চামচা আর এক দৃশ্যে চেয়ারম্যানের ধমক খেয়ে ওর পায়জামা খুলে যাবার দৃশ্য ছিলো। সেই দৃশ্য নিয়ে সে কি হাসাহাসি.. মূল নাটক মন্চস্থ করার দিন ওর বাবা - মা নাটক দেখতে হাজির আর সবার সামনেই মন্চে বেচারা পায়জামা খুলে পড়ার দৃশ্য কল্পনা করলে এখনও হাসি পায় :D

প্রথম ইয়ারে ডিসি খাইছিলাম ক্লাস না করার অপরাধে... হেভি মজা হইছিলো ঐদিন... মনে হয় ৯ - ১০ জন বাদে সবাই ডিসি খাইয়া বাপ মা নিয়া উপস্থিত... এর মাঝে সজীব সাদা শার্ট পইড়া আসে নাই, এদিকে শুনা গেলো কাপড় চোপড় যাদের ঠিক নাই তাগোর ঝাড়ি নাকি ডবল... কি আর করা বাথরূমে গিয়া চান্জ কইরা আমি ওর টি-শার্ট আর ও আমার শার্ট পইড়া কাম চালায়া আইসা আবার রি-চেন্জ... তারপর ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে ক্ষেইপা মেইপা আমার আম্মায় তো টিচারগো সেরকম ঝাড়ি ঝাড়লো... আহা বন্ধু মহলে সেই ঘটনা তো ইতিহাস :D পড়ে অবশ্য বাসায় আইসা আম্মা আমারেও ঝাড়ছে... তবে এটা আর বন্ধু দের সাথে শেয়ার করা হয় নাই ;)

ডিসি খাইয়া তেমন লাভ হয় নাই, বরং সেকেন্ড ইয়ারে ক্লাস না করার হার আরও বেড়ে গেলো B-) বাংলার তোতলা মেজবাহ স্যার এর বদ অভ্যাস ছিলো কথায় কথায় চোখ বুজে ফেলে, মনে হতো যেনো চোখ টিপ দিচ্ছে... তো আমি একদিন পেছনে বসে স্বাভাবিক ভাবেই উনার সাথে তাল দিয়ে উনারে কপি পেষ্ট করে যাচ্ছি মানে উনাকে চোখ টিপি দিয়ে যাচ্ছি হটাৎ আমারা দাঁড় করায় বলে ঐ ছেলে তোমার কি ক্লাস করার ইচ্ছা নাই? আমি বললাম নাই, উনি বললো তাইলে বের হও... ব্যাস সেই ক্লাস আর আগের দুই ক্লাস -- সর্বসাকুল্যে এই তিন ক্লাস হলো আমার সেকেন্ড ইয়ারের বাংলা ডিপার্টমেন্টে পদচারণা B-)

কলেজের পালা শেষ করে চলে আসার দিনগুলোর কথা অনেক মনে পড়ে.. অনেক দিন পর দুই বছর আগে কলেজে গিয়েছিলাম... সেই সিঁড়ি, সেই পথঘাট, সেই প্যারেড মাঠ... সবাই বলে বদলে গেছে, কই আমার কাছে তো সেই আমার নিজের চট্টগ্রাম কলেজ... আমার প্রিয় দুটো বছর... প্রিয় অনেক গুলো মুখ :)

স্কুল আর কলেজের সেসব মুখ গুলোকে অনেক মিস করি। ঢাকায় আসার পর আস্তে আস্তে যে দূরত্বের সূচনা, অফিস আর বউ বাচ্চার ডামাডোলে তা চলে গেছে অনেক দূর... তবু ইয়াহু গ্রুপ আর ফেসবুকের কল্যানে দূরত্ব কমেছে অনেক... হটাৎ হটাৎ ফেসবুকে অনেক পূরানো বন্ধুর ইনভাইটেশন পাই, অনেক গুলো স্মৃতি আবার চোখের সামনে ভেসে আসে, দৃষ্টি যাপসা হয়ে আসে... সুমনের গানটার কথা মনে পড়ে যায়...

হটাৎ রাস্তায়, অফিস প্রাঙ্গণে,
হারিয়ে যাওয়া মুখ চমকে দিয়ে বলে
বন্ধু কি খবর বল.....
কত দিন দেখা হয় নি .....................

ইস আবার যদি ফেরত যেতে পারতাম সেই দিনগুলোয়... আবার যদি আড্ডার শোরগোলে মাতিয়ে তুলতে পারতাম প্যারেড মাঠ, বাপ্পার গিটার আবার যদি বাজতো জিমনেশিয়ামের ভেতর, শিবিরের রক্তচক্ষুকে বুড্ডা আন্গুল দেখায় ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন, পিকনিক, ক্লাস ফাঁকি দেওয়া, হল রুম থেকে অ্যাটেন্ড্যান্স দিয়ে পালানো, প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা খাওয়া, স্যার ম্যাডামদের বকুনি .....

ইস এই যান্ত্রিক জীবনটাকেও যদি ওভাবে ফাঁকি দেওয়া যেত :(

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৫
৮১টি মন্তব্য ৬১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×