somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাঝে মাঝে অনেক আশাবাদী লাগে, আমরাই হয়তো বদলাতে পারি অনেক কিছু...

১৮ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিন আগের কথা। সেই নির্বাচনের আগের দিনটা। বাসায় ফিরছিলাম, টাউন হলের সামনে নেমে গেলাম টুকটাক বাজারের কাজে। বাজারে শুনি দুই তরুণের আলোচনা। অনেক গরীব দুজন, টুকটাক মালামাল টানাটানির কাজ করে ক্লান্ত হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। পাশে দাঁড়িয়ে ওদের হতাশাগুলো শুনলাম, যুদ্ধাপরাধ নিয়ে ওদের বোধগুলায় আঁড়ি পাতলাম আর অবাক হলাম কারণ সকাল বেলাতেই এক ইন্জিনিয়ার বন্ধুর এসব নিয়ে বিরুপ কমেন্ট শুনে মন খারাপ হয়ে ছিলো। আমাদের অনেক শিক্ষিত জনের চেয়ে ঐ দুই তরুণের বিবেক অনেক পরিস্কার মনে হলো। মনের মাঝে অবিরাম খচখচানি, মোবাইল বের করে লিখে ফেললাম একটা লম্বা এসএমএস... বিষয়বস্তু ছিলো এমন -- যে লোক গুলো একাত্তরে এতোটা নৃশংসতা দেখাতে পারে, যে লোকগুলো নিজের মাতৃভূমি আর নিজের মানুষগুলোর সাথে এতোটা বেঈমানি করতে পারে, তাদের আমরা ক্ষমা করে কিভাবে আমাদের সেই দেশটাকে চালানোর ক্ষমতা দিতে পারি? কাল ভোট দেবার আগে প্লীজ অন্তত আরেকবার আপনার বিবেকের কাছে পরিস্কার হন। চেষ্টা করেন আপনার চারপাশের বিবেক গুলোকে জাগিয়ে তুলতে... মজার কথা কি জানেন, এই এসএমএস পাঠিয়েছিলাম মোবাইলে থাকা বন্ধু - কলিগ মিলিয়ে দশ পনেরো জনের কাছে, রাত তিনটার দিকে এক ভেন্ডরের পরিচিতজনের থেকে এই এসএমএসটাই পাই.... অবাক হয়ে গিয়েছিলাম পরেরদিন যখন শুনি এই এসএমএস টাও অনেক কে নাড়া দিয়ে গেছে....

এই তো সেদিন ব্লগে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম আমাদের বিলাসিতার চাকচিক্য নিয়ে.... সেই পোষ্টটাও এমনই এক খচখচানি থেকেই। পরেরদিন সাত সমুদ্দুর পাড়ের এক বন্ধুর ফোন। ফেসবুকে পোষ্টের লিংক থেকে এসে পোষ্ট পড়ে ফোন দিয়েছে। বললো আমরা আসলেই তো এভাবে ভাবিনাই, দেশে থাকতে বসুন্ধরা সিটিতে কতো মজা করেছি, কতো পয়সা খরচ করলাম... আরও অনেকের কম্প্লিমেন্ট থেকে আবার নতুন খচখচানি থেকে এই পোষ্ট :)

মূল কথা হলো আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের পরিমাপ করা, বুঝতে চাওয়া আমরা নিজেরা কতটুকু পারি... কদিন আগে কৃষি মার্কেটে সামান্য পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার কারণে কোটি কোটি টাকার চাল ডাল নষ্ট হলো। ব্যবসায়ীরা কান্নাকাটি করে বললো সরকার, সিটি কর্পোরেশন সমসয়মতো পানি নিস্কাশন পথ ঠিক করলে এমনটি হতো না। আচ্ছা এই যে এরা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে, প্রত্যেকে এক লাখ কিংবা হাজার পন্চাশেক টাকা দিলে একটা আধুনিক পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা কি করা সম্ভব ছিলো না? আমাদের বাসার সামনে রাস্তায় একটা বিরাট গর্ত, অন্ধকারে কিংবা পাশাপাশি দুটো রিকশা গেলেই কাউকে না কাউকে গর্তে চাকা নামাতেই হয় আর তারপরেই মারাত্মক ঝাঁকুনি... গর্তের চারপাশে চারটা বাড়ি, চার বাড়িওলা পাঁচ হাজার করে দিলেই আরামে গর্ত বোঁজানো যায়। বলেছিলাম আমাদের বাড়িওলাকে, উনি হেসেই উড়িয়ে দিলেন, বললেন ওয়ার্ড কমিশনারকে জানানো হয়েছে, ঠিক করে দিবে... আরে ভাই গর্তটা তো আপনারাই কেউ খুঁড়েছিলেন নিজেদের বাড়ির কোনো কাজে, দিনে দিনে আজ এতো বড় হয়েছে, এখন সিটি কর্পোরেশনের মুখ চেয়ে কেনো?

এসব দেখলে খারাপ লাগে, মনে হয় কিছুই করবার নেই... সরকার ব্যবস্থাই তো একটা নিস্ক্রিয় সিস্টেম এই দেশে, তার মুখ চেয়ে আবার হাঁ করে তাকিয়ে থাকা... কদিন আগে বিআরটিএ গেলাম, স্রেফ একটা রেজিস্ট্রেশনের কাজে কি পরিমান দালাল আর দুর্ণীতি, শিক্ষা হয়ে গেছে এক বেলাতেই :( এদের কাছে চেয়ে বসে লাভ কি? ছোট কালে পড়েছিলাম কি সব কথা, দশের বোঁঝা একের লাঠি এরকম আরও কত কি... আজকাল দশ জনকে এক হতে দেখাই যায় না, এক অ্যাপার্টমেন্টে কত মানুষ, নিচের তলার লোকের নামটাও জানি না, দরকার হলে কমিটি আছে ব্যাস এতোটুকুই... ভালো চাকরি করি, বউ বাচ্চা খেয়ে পরে ভালো আছে -- ব্যাস আর কি চাই? সবাই ভাবে ভালো আছি, কিন্তু আসলে আমি ভালো নেই, এসব বিক্ষিপ্ত আক্ষেপ গুলো গলা চেঁপে ধরে বারবার, হাঁপ নিতে খোলা বাতাস খুঁজি, হায়রে এই শহরের বাতাসটাও যে বড্ড বিষাক্ত....

শেষ করি একটা প্রস্তাব দিয়ে... এই ব্লগের আমাদের নিজেদের মাঝে চমৎকার কিছু ভার্চুয়াল সম্পর্ক... সামনে রোজা - ঈদ, সবাই কমবেশী বোনাস, টাকা পয়সা পাবে... সবারই বাজেট হবে, সামর্থ্য মতো শপিং... আমরা এই ব্লগের পন্চাশ জন সহ ব্লগারও যদি বাজেট থেকে হাজার খানেক টাকা কিংবা পাঁচশো টাকা আলাদা করে রাখি তবে কি খুব সংযম করতে হবে? মনে হয় না... এই অল্প কয়টা টাকা যদি আমরা কোনো একটা অসহায় লোককে কোনো একটা কাজ করার মূলধন হিসেবে দিতে পারি, আর সেই টাকায় যদি কোনো একটা পরিবার সামনের একটা বছর একটু হলেও স্বাছন্দ্যে থাকতে পারে তবে ক্ষতি কি.... অন্তত আমাদের নিজেদের মাঝে একটু হলেও ভালোকিছু করার ইচ্ছাটা তো জাগ্রত হবে... সহ ব্লগারদের দু এক জনের সাড়া পেলেও অনেক ভালো লাগবে...

কে জানে এই ইচ্ছাটাই সামনে অনেক বড় কিছু হতে পারে... চেষ্টা করতে দোষ কি, আপনার সামনের ছোট কোনো সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামান না একটু সময়, দেখাই যাক না আমরা নিজেরাও পারি কিনা.... আপনি, আমি কিংবা আমরা একজনের বিবেককে যদি নাড়াতে পারি কিংবা একটা ছোট্ট মুখে আলোকিত হাসি আনতে পারি, সেটাই কি অনেক কিছু করে ফেলা নয়?

চমৎকার সেইসব দিনের প্রত্যাশায় আশাবাদী হয়ে আছি..........................
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:৫৭
২৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×