somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যমুনা ফিউচার পার্ক, আমাদের বিলাসীতা আর বিদেশী পণ্য বর্জনের স্বপ্ন :( :( :(

১০ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘটনার সূত্রপাত কয়েকদিন আগে। বসুন্ধরা এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলাম, সামনে পড়লো যমুনা ফিউচার পার্ক। গাড়ির ড্রাইভার পার্ক দেখায় বললো ঐখানে নাকি সাতটা সিনেমা হল হবে আর পোলাপাইন সিনেমা দেখতে যাবে... বয়স্ক ড্রাইভারের প্রশ্ন ছিলো স্যার এতো টাকা খরচ করে সিনেমা দেখার কি দরকার :|

গত কদিন ধরে আস্তিক-নাস্তিক, রাজাকার, জাফর ইকবাল -- এইসব সিন্ড্রোমে ব্লগ আক্রান্ত। টিপাইমুখের প্রতিবাদে এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিদেশী পণ্য বিশেষ করে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ব্লগীয় আন্দোলন। এরকম দু একটা পোষ্টে লম্বা কমেন্ট করতে গিয়ে চিন্তাগুলোর কচকচানি থেকে এই পোষ্ট।

আর্থিক স্বচ্ছলতা কিংবা প্রচলিত নাগরিক সুযোগ সুবিধার প্রশ্নে বাংলাদেশ কত পিছিয়ে সেটা আবার মনে করিয়ে দেবার নাই। সামান্য কয়টা বেসিক চাহিদা পূরণেও আমাদের কত নাগরিককে হা হুতাশ করতে হয় সেই উপাত্তও হয়তো খোঁজার দরকার নাই, সবাই জানে বুঝে। আমাদের এই নাগরিক জীবনে বিদেশী পণ্যের ব্যাপক আনাগোনা। আর সর্বাগ্রে ভারত আর চায়না। টিভি খুললে ভারতের চ্যানেল, সস্তায় গাড়ি কিনতে গেলে মারুতি আর টাটা, ইলেক্ট্রনিক্স এ চায়না আর চায়না। কাঁচা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ-আদা-রসুন, মাংসের দোকানে ইন্ডিয়ান বুড়া গরুকে দেশী বলে চালানোর প্রবনতা, এমনকি ডিমও বর্ডার থেকে নাকি পাচার হয়ে আসে। প্রশ্ন ছিলো আমরা এর কতটুকু বর্জন করতে পারি?

খাদ্য সহ বেসিক চাহিদাগুলোতে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জনে আমাদের ব্যার্থতার কথাও আশা করি বলে বোঝানোর দরকার নাই। হতাশার কথা হলো এই নিয়ে এতো বছরে কোনো সরকারের কোনো মাথাব্যাথাও দেখা যায় নি। সাধারণ পাবলিকের মুখে শোনা যায় বিদেশীরাই নাকি ভিক্ষা ক্ষেত্র বানানোর জন্যই আমাদের কিছু বিশেষ সেক্টরকে উঠতে দেয় নি। ভারতের পণ্য আসলেই অনেকেই আবার সরকারকে বিশেষ করে আওয়ামি লীগ সরকারকে নাকালের একান্ত করে ফেলেন। কিন্তু এভাবে কি দায় এড়ানো সম্ভব?

এক ঢাকার কথাই বলি। যে দেশে নুন্যতম চিকিৎসাসেবার অভাবে শত সহস্র মানুষ মারা যায় সেখানে এই ঢাকায় আছে তিনটা বিশাল বেসরকারী হাসপাতাল -- স্কয়ার, ইউনাইটেড আর অ্যাপোলো। ল্যাব এইড সহ অন্যদের তো টানলাম ই না। তো এই বড় হাসপাতাল গুলো কি দুএকটা সেক্টর বাদ দিলে চিকিৎসা সেবায় কোনো বড় দিনবদল আনতে পেরেছে? গরীব মানুষ সেই মেডিক্যালেই কাঁতরাচ্ছে আর বড় লোক গুলো সিঙ্গাপুর আর ব্যাংককেই যাচ্ছে। মাঝখান থেকে দেশে বিলাসখাতে কিছু অর্থ ব্যায় আর কিছু কি আছে?

বিলাসিতায় আমাদের জুড়ি মেলা আসলেই কঠিন। নুন্যতম চাহিদা মেটাতে না পারলেও এমপিথ্রি আর হাই রেজলিউশনের ক্যামেরা ফোন কেনার আকাংখার কমতি নাই। আর এই বিলাসীতাকে পুঁজি করে ব্যাবসার বৃহৎ উদাহরণ তো হালের বসুন্ধরা সিটি আর সামনের যমুনা ফিউচার পার্ক। যে দেশের ছেলে মেয়েরা এখনও অরিজিনাল সিডি না কিনে পাইরেটেড কিংবা ডাউনলোডেড মুভি, সং নিয়ে পড়ে থাকে তারাই সাতটা সিনেপ্লেক্সে পপকর্ন নিয়ে মুভি দেখতে যাবে। কি তামাশা। ফাস্ট ফুড, শপিং এসব তো বাদ ই দিলাম।

বিদেশের গাড়ি কেনা বাদ দিয়ে কিংবা ক্যাব-সিএনজি আমদানী বন্ধ করে অথবা চায়নার সস্তা ইলেক্ট্রনিক্স ফেলে দিয়ে তো নিজের পায়েই কুড়াল মারবেন। তার থেকে আমরা কি পারি না যমুনা ফিউচার পার্কে হাজার কোটি টাকা ব্যায় না করে বরং একটা মোটর কার ইন্ডাস্ট্রি দিতে? নিদেনপক্ষে একটা বাইসাইকেল কিংবা মোটর সাইকেল ফ্যাক্টরী? ইলেক্ট্রনিক্সে আমরা কি একটা ইন্ডাস্ট্রি তৈরী করতে এতোটাই অক্ষম? অবশ্যই না, আমাদের লোকাল ইনভেষ্টরদের হাতে পয়সা আছে সেটা তো প্রকাশ্য, তবে সমস্যা কোথায়?

যে দেশের মানুষ খেতে পারে না, সেই দেশে এশিয়ার বৃহত্তম শপিং মল আর বিশ্বের ১৩তম বৃহত্তম শপিং মল খুলে কার কি লাভ? মলের সামনে একদল ফকির হাত পেতে ভিক্ষা করবে, সামনের রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম লেগে থাকবে আর ভেতরে ফুড কোর্ট আর সিনেপ্লেক্স বাদে অন্য দোকানীরা মাছি মারবে... এই তো? এর জন্য এতো ফুটানির কোনো মানে হয়????? এই ফুটানিটা যদি কোনো উন্নয়নশীল খাত নিয়ে মারতে পারতাম.... ইস....

আকাশ সংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে বলার নেই। ভারতে আমাদের সংস্কৃতির বাজার তৈরী করতে না পারা আমাদেরই ব্যার্থতা... আমরা বিনিময় প্রথায় যেতে পারি না যে আমাদের চ্যানেলগুলো না দেখলে আমরাও ওদের গুলো দেখবো না... সহজ হিসাব কিন্তু বাস্তবায়ন কত কঠিন :(

এক টেলিকম খাতে বিদেশী কোম্পানী গুলা কত সহস্র কোটি টাকা নিয়ে যায় প্রতি বছর। অথচ এই খাতে লোকাল ইনভেস্টরদের প্রতি নীতিনির্ধারকদের কি বিমাতা সূলভ মনোভাব। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যারা নীতি নির্ধারণ করেন তাদের অধিকাংশের বুদ্ধি থাকে হাঁটুর নিচে আর সাদা চামড়া, ফরেন ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া এরা কিছুই বুঝে না। আর একমাত্র সরকারী টেলকোর কর্মকর্তাদের দুর্নীতির গল্প তো আমাদের সবারই জানা।

একটা কমেন্টে একটা কথা বলেছিলাম ঐটা দিয়েই শেষ করি। আমাদের দেশের পেঁয়াজ যতদিন আমরা নিজ চাহিদামতো উৎপাদন না করতে পারবো ততদিন বিদেশী পণ্য বর্জনের কথা বলে কি লাভ? আমরা সুশীল ভাব নিয়ে কীবোর্ডে বর্জনের স্লোগান তুলে বাজারে গিয়ে ঠিকই ভারতের পণ্য ব্যাগে ভরবো। তাই বর্জন করা উচিত আমাদের এই মানসিকতাগুলোকে, গলা টেপা উচিত আমাদের বিলাসী মনোভাবের আর মানসিকতার উন্নতি দরকার সরকারের নীতি নির্ধারক আর গামলার মতো বিদেশী টাকার দিকে হা করে চেয়ে থাকা সরকারী আমলাদের। তাহলে একটা সময় পরে হয়তো বর্জনের জন্য বিদেশী পণ্য পাওয়াই দায় হয়ে যাবে...

সুন্দর সেই দিনের অপেক্ষায়..................................................
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:১৭
৬৫টি মন্তব্য ৬৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×