বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার মূল কারণ হিসেবে আমি চিহ্নিত করব দেশের রাজনৈতিক অবস্থাকে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো চায় ক্ষমতায় থাকতে। এই “ক্ষমতা” শব্দটির ব্যবহারই বাংলাদেশের রাজনীতিকে দিন দিন খারাপ করে তুলেছে। রাজনীতিবিদগণ জনগণের সেবক কম এবং ব্যবসায়ী বেশি। তাঁদের মধ্যে দেশের উন্নয়নের চিন্তা কম, নিজেদের উন্নয়নের চিন্তা বেশি। বিরোধীদলের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবের ফলে তাঁরা বিরোধীদলের উপর দমন-পীড়ন চালান। ফলে “ক্ষমতা” থেকে সরে গেলে বিরোধীদলও তাঁদের উপর দমন-পীড়ন চালাবে এই ধারণা তাঁদের মধ্যে বদ্ধমূল। এই “ক্ষমতা” টিকিয়ে রাখতে এবং দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে দলগুলো নিজেদের কিছু উপসংগঠনের সৃষ্টি করেছে। মূলদলের পাশাপাশি এইসব যুব ও ছাত্র সংগঠণগুলো দেশের সর্বস্তরের জনগণকে নিজেদের দলের অন্তর্ভুক্ত করে। উদাহরণ স্বরূপ আমরা ধরি একটি দলের নাম জনশক্তি পার্টি। নিচের দিক থেকে বিন্যাস করলে শহর ও গ্রামাঞ্চল ভেদে দুই ধরণের ইউনিট থাকে। শহরে সবচেয়ে ছোট ইউনিট হল ওয়ার্ড, গ্রামে ইউনিয়ন। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড জনশক্তি পার্টি কমিটি এবং ইউনিয়নে ইউনিয়ন জনশক্তি কমিটি থাকে। ওয়ার্ডের উপরে থাকে থানা জনশক্তি কমিটি। ইউনিয়নের উপরে থাকে উপজেলা জনশক্তি কমিটি। থানার উপরে মহানগর, উপজেলার উপর জেলা। আর সবার উপরে জনশক্তি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি। এভাবে আছে জনশক্তি যুব পার্টি, জনশক্তি ছাত্র পার্টি। এভাবে দেশের প্রতিটি সকল স্তরের মানুষকে নিয়ে আসা হয় রাজনীতির মধ্যে। যেন রাজনীতিই সবকিছু। কেন নিয়ে আসা হয়? ভোটের জন্য। এই ভোট পাওয়ার জন্য কি করে এই দলগুলো? যে ব্যক্তিটি দলের সঙ্গে যুক্ত, স্বাভাবিকভাবেই তার পুরো পরিবার ওই দলের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশী মিলিয়ে একটি ভোটব্যাংক তৈরী হয়ে যায়। তবু যদি ভোট অপর্যাপ্ত বলে মনে হয় তাহলে শুরু হয় টাকার খেলা। সংসদের একটি আসনের জন্য একজন হবু সাংসদ প্রচুর টাকা খরচ করেন। এইসব টাকা কোথা থেকে আসে? বিভিন্ন ব্যবসায়ী যাদের ভদ্রভাবে “ডোনার” বলা হয়, তাঁরা দেন।
ভোটে জিতে হবু সাংসদ হয়ে গেলেন সাংসদ। এবার ঋণ শোধ করতে হবে। যেসকল ডোনারগণ টাকা দিয়েছিলেন তাঁরা সবাই ব্যবসায়ী। তাঁরা তাঁদের টাকা মুক্তহস্তে দান করেননি। তাঁরা তাঁদের টাকা তোলার জন্য অবৈধ ব্যবসা শুরু করেন। অবৈধ ব্যবসায় লাভ বেশি। বৈধ ব্যবসায় কম। অবৈধ ব্যবসা শুরু করার জন্য হবু সাংসদকে টাকা দিয়েছিলেন। অথবা ভোটের সময় টাকা দিয়েছিলেন তাই টাকা তুলতে অবৈধ ব্যবসা শুরু করেছেন। যেটাই হোক না কেন, অবৈধ কাজের শুরুটা তো হলই। আর সাংসদ সাহেব নিজের ঋণ শোধ করতে এসব ব্যবসায়ীদের কিছুই বলেন না। মদ, জুয়া, নেশাদ্রব্য, দেহ ব্যবসা, খাদ্যে ভেজাল, পণ্যে ভেজাল ইত্যাদি যেভাবেই হোক কোটি কোটি টাকার ব্যবসা শুরু হয়ে যায়। এসকল ব্যবসায়ী প্রচুর অর্থ যেহেতু আয় করছেন, হালাল করার জন্য তো কিছু টাকা সাংসদকে দিতেই হবে তাইনা? এদিকে পুলিশের কর্তাটি বড়ই বেরসিক। বারবার ব্যবসায়ীদের অবৈধ ব্যবসাসমূহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। সে যেন নজর না দেয় সেজন্য তার চোখে টাকার চশমা লাগানো হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও ডুবে যায় অনৈতিকতার সাগরে।
লেখকের কথাঃ "অপরাজনীতির ফলাফল" নাম দিয়ে আমি অনেকদিন থেকেই লিখছি। ল্যাপটপের হার্ডড্রাইভে পড়ে থাকা অনেককিছুর মধ্যে এটি অন্যতম। লেখাটিকে প্রবন্ধ বলব নাকি রচনা বলব বুঝতে পারছি না। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে আমি যেভাবে দেশের রাজনীতি ও সমাজ ব্যবস্থাকে পর্যবেক্ষণ করেছি তা-ই তুলে ধরলাম এখানে। অল্প অল্প করে পুরোটাই তুলে ধরব পাঠকের সামনে। তাই পর্ব আকারে উপস্থাপন করলাম। ভুল-ত্রুটি হলে দয়া করে ক্ষমা করবেন এবং ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন।