somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগার ''চাঁদগাজীর'' ''পৃথিবী কিভাবে ধ্বংস হবে'' পোস্টের ময়না তদন্ত

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ব্লগার চাঁদগাজীর পোস্টের লিংক: পৃথিবী কিভাবে ধ্বংস হবে, কে কিভাবে ইহা ব্যাখ্যা করছেন?

ব্লগার চাঁদগাজীর কথার সারমর্ম হলো পৃথিবী সৃষ্টির সময় কেউ দেখেনি এবং ধ্বংসের সময়ও কেউ দেখবেনা। কথাটার ১ম অংশ ঠিক থাকলেও ২য় অংশ সম্পূর্ণ ভূল। কেয়ামত হবে তখন যখন মানুষ আল্লাহর নাম ভুলে গিয়ে অন্যায় কাজে লিপ্ত হবে। মানুষ কেয়ামতের ঘটনা দেখবে। নিজ চোখে দেখবে। অবশ্যই দেখবে। তার প্রমান এবং দলিল পেশ করবো আজকের লেখায় ইনশাআল্লাহ:

পৃথিবী সৃষ্টি হলো কিভাবে?

এটা নিঃসন্দেহে একটি সামাজিক-দর্শন বিষয়ক বিতর্ক, এ বিশ্বের সৃষ্টি হলো কিভাবে? কারো কারো সোজা উত্তর, ”এ পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা তো আল্লাহ। তিনিই তো সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।” কেউবা বিশ্বাস করেন বিশ্ব ব্রম্মান্ডে। অর্থাৎ হিন্দুদের পুজারী ব্রম্মের অন্ড বা ডিম থেকে এই পৃথিবীর সৃষ্টি। ছোটকালে তো বিশ্বসৃষ্টি এবং ভুমিকম্প সম্পর্কে এভাবে শুনেছি যে সমস্ত পৃথিবীটা একটা বড় ষাঁড়ের এক শিং এ স্থাপিত । প্রতি বছর বা মাঝে মধ্যে যখন ষাঁড়ের শিং বদলের প্রয়োজন হয় তখন পৃথিবীটাকে ষাঁেড়র এক শিং থেকে অন্য শিং এ নেয়ার সময় প্রচন্ড ঝাঁকুনী হয় সেটাই ভুমিকম্প। এমন কুসংস্কার ও প্রচলিত রয়েছে যে যারা স্বর্গে বা বেহেশতে যাবে ঐ ষাঁড়ের কলিজা দিয়ে তাদেরকে নাস্তা করানো হবে। নিঃসন্দেহে এটা একটা কুসংস্কার।
পৃথিবী সৃষ্টি সম্পর্কে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন ”বিগ বেঙ” থিওরীতে। বিগ বেঙ হলো ইংরেজী শব্দ যার অর্থ হলো বিকট শব্দ। এই বিগ বেঙ থিউরীর মূল কথা হলো, আজ থেকে কোটি কোটি বছর আগে সেীরজগতে একদিন হঠাৎ নক্ষত্রে নক্ষত্রে সংঘর্ষ হয় এতে একটি বিকট শব্দ হয় এই বিকট শব্দের মাধ্যমে ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাওয়া গ্রহ নক্ষত্রের টুকরো থেকেই এই পৃথিবীর সৃষ্টি।
আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত প্রায় সকলেই বিশেষত বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত ব্যাক্তিরা বিগ বেঙ থিওরীতে বিশ্বাস করেন। এই বিগ বেঙ থিওরীকে যেীক্তিক এবং বৈজ্ঞানিক মনে করা হয় কারণ এই থিওরীর পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক যুক্তি তর্ক এবং ঐতিহাসিক উদাহরন। যদিও এই বিগ ব্যাঙ থিওরী বা অন্য কোন বৈজ্ঞানিক থিওরীই চিরন্তন নয়। সেীরজগৎ সম্পর্কে বা সূর্য ঘুরে না পৃথিবী ঘুরে এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বারবারই মতের পরিবর্তন এসেছে। তাছাড়া এনিয়ে একজন প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী কোপারনিকাসকে যথেষ্ট কষ্ট পেতে হয়েছে। আধুনিক যুগে পৃথিবী সৃষ্টি সম্পর্কে বিগ ব্যাঙ থিওরীটাই সবচে’ বেশী গ্রহনযোগ্য এবং সবচে’ বেশী বৈজ্ঞানিক। যদিও এই থিওরী নিয়েও বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে আজো পর্যন্ত্য মতানৈক্য রয়েছে। সম্প্রতি জন কেইরিন (John Kierein) নামে একজন লেখক ”কেন বিগ ব্যাঙ থিওরী ভুল” (Why the Big Bang is Wrong) শীর্ষক একটি নিবন্ধে এ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
এছাড়া গত বছর, ২০১৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর বৃটেনের বিশ্ববিখ্যাত ডেইলি মেইলের সাইন্স সেকশেন একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছিল যার শিরোনাম ছিল, (Black holes do NOT exist and the Big Bang Theory is wrong)
যার অর্থ হলো, (ব্ল্যাক হোল বলতে কিছু নেই, বিগ ব্যাঙ্গ থিওরী একটি ভুল থিউরি), সে নিবন্ধে দাবী করা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনির্ভাসিটি অফ নর্থ ক্যারলিনার (Professor Laura Mersini-Houghton) প্রফেসর লাউরা মেরসিনি হাফটন নামের একজন বিজ্ঞানী দাবী করেছেন যে, তাঁর কাছে গানিতিক প্রমাণ আছে যে ব্ল্যাক হোল বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব অসম্ভব।
সে যাক, আমরা ঐ সব অর্ন্তনিহিত বিতর্কে না গিয়ে শুধু কোরআনের সাথে বিজ্ঞানের বিশেষতঃ পৃথিবী সৃষ্টি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোকপাত করবো।

পবিত্র কোরআন সবসময়ই জ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়েছে। জ্ঞান ছাড়া ইসলামে কোন কিছুই গ্রহনযোগ্য নয়। আল্লাহর পক্ষ নবী করীম (সঃ) এর কাছে থেকে অবতীর্ণ প্রথম শব্দই হলো ইকরা বা পড় এবং জ্ঞানার্জন করো। বৈজ্ঞানিক ধারনা বা থিওরীর সাথে যুগে যুগে কোন কোন সময় ধর্মীয় বিশ্বাসের কিছু কিছু সংঘাত হয়েছে। এই সংঘাতগুলোর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে (১) বিষয় সম্পর্কে ধর্মের অস্পষ্ট বা ভুল ধারনা (২) ধর্মীয় থিওরীতে ধর্মানুসারীদের ধারনা স্পষ্ট না থাকা (৩) বৈজ্ঞানিক থিওরীতে ভুল থাকা।

সেীরবিজ্ঞান বা সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য মতানৈক্য গুলোর মধ্যে রয়েছে খৃষ্টধর্মের সাথে কোপারনিকাসের বিরোধ। সুর্য ঘুরে না পৃথিবী ঘুরে এই বিতর্ক সবচে বেশী পরিচিতি লাভ করে। এই বিতর্ক শুধু খৃষ্টানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি এ বিতর্কে মুসলমানরাও জড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানের থিওরী মতে পৃথিবী সুর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আমাদের এই সেীরজগতে সুর্য হলো কেন্দ্র। সুর্যকে কেন্দ্র করে সবক’টি গ্রহ ঘুরছে।
জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে মুসলমানদের কেউ কেউ বিশ্বাস করতে থাকে যে সেীর জগতে পৃথিবী নয় সুর্যই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এসব মুসলমানদের এই ধারনার পেছনে রয়েছে পবিত্র কোরানের একটি আয়াতকে ভুলভাবে বুঝা। পবিত্র কোরানের সুরা ইয়াসিনে আল্লাহ পাক বলছেন ”এবং সুর্য তার কক্ষপথে আবর্তন করছে।” (আল কোরআন ৩৬:৩৮) পবিত্র কোরানের এ আয়াতকে দিয়ে যারা বুঝতে চান যে পৃথিবী নয় সুর্যই ঘুরছে। তারা আসলে চরম এবং স্পষ্ট ভুল করছেন। কোরআনে বলা হয়েছে, "সুর্য তার কক্ষপথে আবর্তন করছে", কোরান হাদীসের কোথাও একথা বলেনি যে সুর্য্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। কোরআন বলছে সূর্য তার জন্য নির্দ্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরছে। আর কোরআনের কোথাও তো বলা হয়নি যে, পৃথিবীটা স্থির। বরং সুরা ইয়াসিনেই আল্লাহ পাক আবার বলছেন, ’কুললুন ফি ফালাকিন ইয়াসবাহুন’। অর্থাৎ ”সেীরজগতে প্রত্যেকটি গ্রহ নক্ষত্রই আবর্তন করছে”। (আলকোরআন ৩৬:৪০) এ আয়াতের প্রেক্ষিতে বলা যায় সুর্য এবং পৃথিবী উভয়ই ঘুরছে। সুর্য্য এবং পৃথিবী উভয়ই ঘুরছে এ ব্যাপারে কোরআন বা বৈজ্ঞানিক থিওরীতে কোন পার্থক্য নেই। এখানে শুধু পার্থক্য হলো কে কাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এ প্রসঙ্গে। কে কাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এ ব্যাপারে আমার পরবর্তী আলোচনা ”কোরআন বনাম বিজ্ঞান সুর্য্য ঘুরে না পৃথিবী ঘুরে” শীর্ষক অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

এবার আসা যাক পৃথিবী সৃষ্টি সম্পর্কে বিগ ব্যাঙ থিওরী এবং কোরআনের সাথে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায়। বিগ ব্যাঙ থিওরী মতে, আজ থেকে ১০-২০ বিলিয়ন বছর আগে সেীরজগতে একটি বিকট শব্দে এক মহাসংঘর্ষ (বা এক্সপ্লোজন) হয়েছিল। সে মহা সংঘর্ষে সেীরজগতের বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্র টুকরো টুকরো হয়ে যায় এবং সে টুকরো থেকেই আমাদের এই পৃথিবীর সৃষ্টি। এ প্রসঙ্গে কোরআনের বক্তব্য হলো, সুরা আম্বিয়ায় আল্লাহ পাক বলছেন, ”ঐ সমস্ত অসিশ্বাসীরা কি জানেনা যে, একসময় আকাশ এবং পাতাল তথা মহাবিশ্ব একত্রে জোড়া লেগে একত্রে ছিল আর আমি (আল্লাহ) এগুলোকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করেছি।” (আল কোরআন ২১ঃ৩০)। বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে বিজ্ঞানের আরো মত হলো এই বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে ইন্টারস্টেলার থিওরী (Interstellar Matter) মতে। ইন্টারস্টেলার মেটার থিওরী হলো, বিভিন্ন প্রকার গ্যাস, ধুলাবালি এর মাধ্যমে গ্রহ নক্ষত্রের সৃষ্টি। এই থিওরীর গ্যাস বলতে মূলত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম গ্যাসকে বুঝানো হয়। আর ইন্টারস্টেলার ধুলাবালি বা ডাস্ট বলতে বুঝানো হয়েছে, পানি, বরফ, সিলিকন, গ্রাফাইট তার সাথে যোগ হয়েছে কালো মেঘ, ধুলাবালি এবং গ্যাস। (ইন্টারস্টেলার থিওরী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য দেখুন Merrill, General Science, Moyer Bishop, p-320-321)
এবার দেখা যাক বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে কোরআনের সাথে এই ইন্টারস্টেলার থিওরীর সম্পর্ক কোথায়। ইন্টারস্টেলার থিওরীর উপরোক্ত কথাগুলোকে একত্রে করলে বুঝা যায় এই থিওরী মতে বিশ্ব সৃষ্টির মূল উপাদান মূলত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম গ্যাস। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীদের মতে আজো হাজার হাজার নক্ষত্র রয়েছে যেগুলোর উপাদান মূলঃ হাইড্রোজেন গ্যাস। তাছাড়া বিজ্ঞান অনুযায়ী হাইড্রোজেন গ্যাস নিজে জ্বলে। মহাশুণ্যের লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র মূলতঃ এই জ্বলন্ত হাইড্রোজেন গ্যাস। এদিকে কোরআনের দৃষ্টিতে পৃথিবী সৃষ্টির মূল উপাদান হলো পানি। পবিত্র কোরআনের সুরা হুদের ৭ নং আয়াতে বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলছেন, ”এবং তিনি আকাশ-পাতাল বিশ্বভুমন্ডল ৬ দিনে (পর্যায়ে) সৃষ্টি করেছেন এবং তখন তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে।” এ আয়াতে প্রেক্ষিতে বুঝা যায় বিশ্বসৃষ্টির সময় আল্লাহর আরশ পানির উপর ছিল অর্থাৎ বিশ্বের কোন কিছু সৃষ্টি করার আগে পানি সৃষ্টি করা হয়েছিল। অপরদিকে সুরা আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াতে সরাসরি বলা হচ্ছে যে মহাবিশ্বের সকল জীবনকে পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পানি থেকে সৃষ্টি প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী তাঁর বিশ্ববিখ্যাত কোরআনের ইংরেজী অনুবাদ (The Meaning of the Qur’an) এ বলেছেন যে, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকার করার মত যে, মহাবিশ্বের সকল জীবনের উৎস হলো পানি। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী যিনি একজন প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ এবং ব্যাখ্যাতা তিনি তাঁর রচিত বোখারী শরীফের তাফসীর ’ফাতহুল বারীতে’ একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন যে, ”এই মহাবিশ্বের সকল কিছু এমনকি আল্লাহ পাকের আরশ সৃষ্টির আগেই আল্লাহ পাক পানি সৃষ্টি করেছিলেন। (বিস্তারিত তথ্যের জন্য দয়া করে দেখুন, (ফাতহুল বারী, দার আল ফিকর আল আরাবী, বৈর“ত, লেবানন কতৃক প্রকাশিত, ১৯৯৩, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা।)
ফাতহুল বারীর উপরোক্ত খন্ডের ৪৩০ পৃষ্ঠায় আল্লামা ইবনে হাজার আসক্কালানী প্রসিদ্ধ সাহাবী মুজাহিদ থেকে আরো একটি হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন যে, ”আল্লাহ পাক তাঁর আরশ, পানি এবং গ্যাস দিয়ে সৃষ্টির কাজ শুর“ করেছেন। এবং পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল পানি দিয়ে”। (ফাতহুল বারী প্রাগুক্ত ৪৩০ পৃষ্ঠা)।
এবার দেখা যাক কোরআন এবং হাদীসের উপরোক্ত মতের সাথে বিজ্ঞানের সাথে মিল বা বেমিল কোথায়। কোরান এবং হাদীসের কথাগুলোর সারাংশ হলো পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে পানি থেকে বা পানি দ্বারা। কোরান এবং হাদীস কোথাও কোথাও গ্যাসের কথাও উল্লেখ করেছে। অপরদিকে বিজ্ঞানের কথাগুলোর সারাংশ হলো পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে গ্যাস থেকে বিশেষতঃ হাইড্রোজেন গ্যাস বা হিলিয়াম গ্যাস থেকে।
বৈজ্ঞানিকভাবে পানি এবং হাইড্রোজেন গ্যাস সম্পর্ক হলো পানি এবং হাইড্রোজেন গ্যাস মূলতঃ একই উপাদানের দুটি ভিন্ন রুপ। পদার্থ বিজ্ঞানের মতে যে কোন পদার্থে মুলতঃ তিনটি রুপ থাকে (১)সলিড বা কঠিন (২)তরল এবং (৩) বায়বীয়। পানির কঠিন রুপ হলো বরফ, তরল রুপ হলো পানি আর বায়বীয় রুপ হলো হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন। সুতরাং প্রমাণিত হচ্ছে এক্ষেত্রে কোরানের বক্তব্য এবং বিজ্ঞানের মতের মধ্যে কোন পার্থক্যই নাই।


পৃথিবী ধ্বংস হবে কিভাবে? পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার সময় কি মানুষ জীবিত থাকবে?

পৃথিবীতে মহান আল্লাহর বিভিন্ন নির্দেশ পালিত করতে লক্ষ কোটি ফেরেস্তা নিয়োজিত হলেও প্রধান ফেরেস্তা মাত্র চারজন। এই ফেরেস্তা ও তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ জানা যায় নিম্নরূপ-
জিব্রাইল- আল্লাহর দূত হিসেবে বার্তা পৌঁছানোর কাজে,
মিকাইল-তাঁর নির্দেশে মেঘ, বৃষ্টি, চন্দ্র, সূর্য্য পরিচালনাকারী
আজরাইল- আল্লাহর নির্দেশে প্রাণ সংহারকারী হিসেবে ও
ইস্রাফিল- শিঙ্গা মুখে পৃথিবী এবং সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংসের জন্যে তাঁর নির্দেশের অপেক্ষায়।
যেদিন ইস্রাফিল আল্লাহর নির্দেশে শিঙ্গাতে ফুঁক দেবে, সেদিন আসমান জমিন এবং তার মধ্যেকার সবকিছু এমন কি সকল ফেরেস্তা পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যাবে। একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
এই নির্দেশ সে ঐ সময় পাবে যে সময়ে দুনিয়াতে আল্লাহকে স্মরণ করার মত কোন মানুষ থাকবে না, বর্বরতা ও গোমরাহী সমস্ত দুনিয়াকে আচ্ছাদিত করে ফেলবে, মানুষের চরিত্র জীব-জন্তুর ন্যায় হবে, তারা ব্যাভিচারে লিপ্ত হবে, আমোদ-প্রমোদে ডুবে থাকবে, তাদের মধ্যে পাপ-পূণ্যের বিভেদ থাকবে না, হারাম-হালালের পার্থক্য থাকবে না।
এসময় প্রযুক্তি জ্ঞানের বিকাশের ফলে মানুষের অভাব-অনটন থাকবে না, তাছাড়া বৃষ্টি-বাদলও বেশী হবে, খাদ্যদ্রব্য সহ সকল সামগ্রী বিশেষ সস্তায় পাওয়া যাবে। মানুষ পরিতৃপ্ত হবে এবং সামগ্রীকভাবে খোশহাল ও বিনোদনমুখী হবে। কোন কিছুর অভাব-অনটন না থাকায় আল্লাহকে স্মরণ এবং স্বীকার করার মত কেউ থাকবে না। অবশ্য কেয়ামতের (Qiyamah) কিছু আলামত বা পূর্ব লক্ষণ ইতিমধ্যে প্রকাশ পাবে।
ধরণীতে ঈসার পূনরাগমণ হবে। তার এই আগমন হবে এমন একটা সময়ে যখন এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প দেখা দেবে। অধর্মের বৃদ্ধি হওয়াতে মানুষের মধ্যে দয়া-মায়া থাকবে না। সামান্য কারণে তারা একে অন্যেকে হত্যা করবে। ঈসা বলেন, 'নবী দানিয়েলের মধ্যে দিয়ে যে সর্বনাশা ঘৃণার জিনিষের কথা বলা হয়েছিল, তা তোমরা পবিত্র স্থানে রাখা হয়েছে দেখতে পাবে। তখন যে ইহুদাতে থাকে সে পাহাড়ে পলায়ন করুক, যে ছাদে থাকবে সে জিনিষপত্র নেবার জন্যে নীচে না নামুক; আর যে ক্ষেতে থাকবে সে নিজের বস্ত্র নেবার জন্যে পশ্চাতে ফিরে না আসুক। তখন যারা গর্ভবতী আর যারা সন্তানকে বুকের দুধ দেয় তাদের অবস্থা কি ভীষণই না হবে! প্রার্থনা কর যেন তোমাদের পলায়ন কাল শীতকালে বা বিশ্রামবারে না ঘটে। সেই সময়ে এমন মহা কষ্ট হবে যা দুনিয়ার আরম্ভ হতে এসময় পর্যন্ত কখনও হয়নি এবং ঐ মহাদিনের পূর্বপর্যন্ত হবেও না।
তখন অনেক ভন্ড খ্রীষ্ট ও ভন্ড নবী আসবে এবং বড় বড় আশ্চর্য কাজ করবে, আর তারা মুমিনদেরকেও প্রতারিত করতে চাইবে। সেদিন যদি কেউ তোমাদেরকে বলে- ‘দেখ তিনি প্রান্তরে,’ -তোমরা বাইরে যাবে না; যদি বলে ‘দেখ, তিনি অন্তরাগারে,’-তোমরা বিশ্বাস কোরও না। কারণ বজ্র যেমন পূর্ব দিক হতে নির্গত হয়ে পশ্চিম দিক পর্যন্ত প্রকাশ পায়, তেমনি আমার আগমন হবে। যেখানে মড়া থাকে, সেখানেই শকুন জুটবে।'
ঈসা আরও বলেছিলেন, ‘ডুমুর গাছ থেকে দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নাও; যখন তার শাখা কোমল হয়ে পত্র বের করে, তখন তোমরা জানতে পার গ্রীষ্মকাল সন্নিকটে; সেইরূপ তোমরা ঐ সকল ঘটনা দেখলেই জানবে, তিনি সন্নিকট, এমনকি দ্বারে উপস্থিত। প্রকৃতপক্ষে সেইদিন সেই সময়ের কথা কেউ জানে না, বেহেস্তের ফেরেস্তারাও না, আমিও না, কেবল খোদা জানেন। নূহের সময় যে অবস্থা হয়েছিল, আমার আসার সময় ঠিক সেই অবস্থাই হবে। বন্যার আগের দিনগুলিতে নূহ নৌকায় না ঢোকা পর্যন্ত লোকেরা খাওয়া দাওয়া করেছে, বিবাহ করেছে এবং বিবাহ দিয়েছে; কিন্তু যে পর্যন্ত না বন্যা এসে তাদের সকলকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল, সে পর্যন্ত তারা কিছুই বুঝতে পারল না। আমার আসাও ঠিক সেরকমই হবে। গৃহকর্তা যদি জানতেন কোন সময়ে চোর আসবে, তবে তিনি জেগে থাকতেন, ঘরে তিনি চোর ঢুকতে দিতেন না। সেজন্যে তোমরা প্রস্তুত থেক, কারণ যে সময়ের কথা তোমরা চিন্তাও করবে না, সেই সময়েই আমি আসব।’
ঈসা আরও উদাহরণ দিয়েছেন-‘সেই সময়ে মানুষের (পাপিষ্ঠ ও মুমিনদের) অবস্থা হবে এমন দু‘দল মেয়ের ঘটনার মত, যারা বান্ধবীর বরকে এগিয়ে আনার জন্যে বাতি নিয়ে বাইরে গেল। তাদের একদল ছিল বুদ্ধিমতী যারা তাদের বাতির সঙ্গে পাত্রে করে তেলও নিল। অন্যদল বুদ্ধিহীনারা তাদের সাথে বাতি নিল বটে, কিন্তু সঙ্গে করে তেল নিল না। বর আসতে দেরী হওয়াতে দু‘দলই ঢুলতে ঢুলতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।
মধ্য রাতে চীৎকার শোনা গেল, ‘ঐ দেখ, বর আসছে! বরকে এগিয়ে আনতে বের হও।’
তখন মেয়েরা উঠে তাদের বাতি ঠিক করল। বুদ্ধিহীনারা বুদ্ধিমতীদের বলল, ‘তোমাদের তেল থেকে আমাদের কিছু দাও, কারণ আমাদের বাতি নিভে যাচ্ছে।’
বুদ্ধিমতী মেয়েরা বলল, ‘না, তেল যা আছে তাতে হয়তঃ আমাদের ও তোমাদের কুলাবে না। তোমরা বরং দোকানে গিয়ে নিজেদের জন্যে তেল কিনে নাও।’
সেই বুদ্ধিহীনা মেয়েরা যখন তেল কিনতে গেল, তখন বর এসে পড়লেন। যে মেয়েরা প্রস্তুত ছিল তারা বরের সঙ্গে বিবাহ বাড়ীতে গেল। সকলে ভিতরে প্রবেশ করলে দরজা বন্ধ করে দেয়া হল।
সেই বুদ্ধিহীনা মেয়েরা ফিরে এসে দেখল দ্বার বন্ধ। তখন তারা দ্বারে করাঘাত করতে লাগল, আর চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘জনাব, দরজাটা খুলে দিন।’
বর উত্তর করলেন, ‘নিশ্চয় আমি সত্য বলছি, আমি তোমাদেরকে চিনিনে।’
‘এজন্যে সদা প্রস্তুত থেক।’
'মহাপ্রলয় কখন হবে'- এ সম্পর্কে আরব দেশে একটা কাহিনী প্রচলিত আছে। কাহিনীটা ইন্টরেস্টিং। সৈয়দ আলী বয়ান করেছেন এভাবে-
"আল্লাহ একদিন ফেরেস্তা জিব্রাইলকে ডেকে বলবেন, 'হে জিব্রাইল, মর্ত্ত্যে গিয়ে মনুষ্য জাতির কাউকে এই প্রশ্ন শুধোও- 'জিব্রাইল এই মুহূর্তে কোথায় আছেন?'
তো জিব্রাইল পৃথিবীতে নেমে এল একজন মানুষের বেশে। কিন্তু কাকে জিগায়, সবাই যে মহাব্যস্ত। যাইহোক, একজনকে সে একাকী পেল। তখন সে তাকে গিয়ে জিগাইল- 'আচ্ছা ভাই, জিব্রাইল এই মুহূর্তে কোথায় আছেন?'
লোকটা কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বলল, 'এরকম বেফায়দা প্রশ্ন করে তোমার লাভটা কি? আমার এসবে কোন কৌতুহল নেই, তবে নিতান্তই যখন শুধোলে..-দাঁড়াও বলছি।'
লোকটি দু'এক লহমা চিন্তা করে বলল- 'হু, এই মুহূর্তে সে কোথায় আছে ঠিক বলতে পারছিনে -তবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, সে এখন পৃথিবীতে, স্বর্গে নয়।'
জিব্রাইল তখন ফিরে গিয়ে আল্লাহকে উত্তরটা জানাল। তিনি বললেন, 'ঠিক আছে।'
এরপর কেটে যাবে আরও বহু সহস্র বৎসর। তারপর আবারও আল্লাহ- ঐ একই প্রশ্ন, একই ভাবে শুধোবার জন্যে জিব্রাইলকে পৃথিবীতে পাঠাবেন। এবারে যে মর্ত্যবাসীকে জিব্রাইল শুধোল, সে বিরক্ত হল আরও বেশী, বলল, 'কি আশ্চর্য! এখনও মানুষ এরকম অসার আর ফালতু প্রশ্ন নিয়ে আছে! তবে হিসেব কষলে যে এরকম প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না তা নয়, আচ্ছা....'-এক সেকেন্ড চিন্তা করে- 'স্বর্গে তো নয়, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে..,'-ফের দু'সেকেন্ড চিন্তা- 'পৃথিবীতেই!.. দাঁড়াও, হ্যাঁ, কাছে পিঠেই কোথাও আছে।'
লোকটি চলে গেল।
এবারও জিব্রাইল ফিরে গিয়ে আল্লাহকে সব কিছু বয়ান করলেন। আল্লাহ বললেন, 'ঠিক আছে।'
তারপর কেটে যাবে আরও কয়েক হাজার কিম্বা লক্ষ বৎসর। অত:পর জিব্রাইল সেই একই প্রশ্ন নিয়ে মর্ত্ত্যে আসবেন। এবার যাকে শুধান হল, সে তো রীতিমত চটে গেল - 'এই যুগে এমন প্রশ্ন! ওই মিয়া! তুমি কি বেওকুফ?'
লোকটার কথা শুনে জিব্রাইল বেচারা বেশ লজ্জিত হয়ে গেল। তা দেখে লোকটা নরম হয়ে বলল, 'আচ্ছা দেখি! হুঁ:, স্বর্গে নয়, পৃথিবীতে।..........কাছে-পিঠে কোথাও....' -দু' এক সেকেন্ড পর- 'কী আশ্চর্য !....ওই, তুমিই তো জিব্রাইল।'
লোকটি বিরক্তি নিয়ে চলে গেল।
এবার জিব্রাইল সব খবর দিলে আল্লাহ ফেরেস্তা ইস্রাফিলকে বলবেন-'শিঙ্গায় ফুঁক দাও।'
এতে ইস্রাফিল শিঙ্গাতে ফুঁক দেবে, আর তাতেই মহাপ্রলয় শুরু হয়ে যাবে।
এ কাহিনীর তাৎপর্য কি?
প্রথমতঃ মানুষ তখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে করে এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে যে স্বর্গের খবর পর্যন্ত তার অজানা থাকবে না।
দ্বিতীয়তঃ মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান বিদ্যাচর্চার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে সাংসারিক, বৈষয়িক, প্র্যাকটিক্যাল জিনিস নিয়ে। ইহলোক ভিন্ন পরলোক, পাপ-পুণ্যের বিচার, সে স্বর্গে যাবে, না নরকে-এ সম্বন্ধে তার কোন কৌতুহল কিম্বা মাথাব্যাথা থাকবে না, কারণ আমরা দেখলাম স্বয়ং জিব্রাইলকে হাতের কাছে পেয়েও লোকটি এসবের কোন অনুসন্ধান করেনি। এমন কি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতিও সে চরম উদাসীন।
তৃতীয়তঃ যেহেতু মানুষ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন, অতএব কল্পনা করা কঠিন নয় যে, তারা তখন বিশ্বভুবনকে তাদের খেয়ালখুশী, মর্জি-মাফিক নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টায় লেগে থাকবে।"
কেয়ামতের অবশ্য আরও কিছু পূর্ব আলামত প্রচলিত আছে। প্রথম আলামত হিসেবে দজ্জালের আগমন হবে। সে বয়সের দিক দিয়ে যুবক হবে। তার মাথার কেশরাজি কোঁকড়ান আর চেহারা হবে কুৎসিত। তার একটি চক্ষু এমন হবে যেন তা উপরে উঠান একটি মাংসের টুকরো এবং অপর চক্ষুটি হবে কানা। সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে কোন রাস্তায় সে আত্মপ্রকাশ করবে। রাস্তার উভয় পার্শ্বে সে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে। এভাবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে সে সামনের দিকে অগ্রসর হবে। তার ফেতনা সৃষ্টির প্রথম দিনটি এক বৎসরের ন্যায়, দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের ন্যায়, তৃতীয় দিনটি এক সপ্তাহের ন্যায় এবং অন্যান্য দিনগুলি সাধারণ দিনের মত হবে। দজ্জালের গতির দ্রুততা এমন হবে যেন তার পিছনে বায়ু ধাবমান বলে মনে হবে। সে সমগ্র ভূ-খন্ডে বিচরণ করবে কিন্তু চারটি উপাসনালয়ের ত্রিসীমানায় পৌঁছুতে পারবে না। এগুলি হল-মসজিদে নব্বী-মদিনা, কাবা শরীফ-মক্কা, মসজিদে আকসা-জেরুজালেম ও মসজিদে তূর-মদিয়ান।
দজ্জাল কোন এক সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে তাদেরকে তার মতাদর্শের প্রতি আহবান জানাবে। তারা তার প্রতি ঈমান আনবে। সে তখন আসমানের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দেবে। আর তাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। আর সাথে সাথে জমিন হতে গাছপালা উদ্গত হবে। ঐ সম্প্রদায়ের পালিত পশুরা নব উদগত গাছপালা ভক্ষণ করে মোটা তাজা হবে আর তাদের স্তনসমূহ দুধে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
এরপর সে অন্য এক সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে এবং তাদেরকে তাকে খোদা বলে স্বীকার করতে আহবান জানাবে। কিন্তু ঐ সম্প্রদায়ের লোকেরা তার প্রতি ঈমান আনবে না এবং তাকে খোদা বলে স্বীকার করবে না। দজ্জাল তাদের থেকে ফিরে যাবে। সম্প্রদায়ের লোকেরা পরদিন ঘুম থেকে উঠে তাদের ঘরে কোন রকম মাল-সম্পদ দেখতে পাবে না। আর তাদের এলাকাও সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যাবে। দজ্জাল তখন পুনঃরায় তাদের কাছে আগমণ করবে। সে উজাড় জমিনের দিকে চেয়ে বলবে, ‘হে জমিন! তোমার নীচে যে সম্পদ গচ্ছিত আছে তা বের করে দাও।’
তার নির্দেশের সাথে সাথে জমিনের নীচে গচ্ছিত সম্পদ বের হয়ে আসবে। চারিদিকে গাছপালা উদ্গত হয়ে সবুজ শ্যামল হয়ে যাবে। নানারকম ফলমূল গাছে গাছে শোভা পাবে। এইসব দেখে উক্ত সম্প্রদায়ের এক যুবক তাকে বলবে, ‘তুমি নিশ্চয়ই সেই দজ্জাল।’
একথা শুনে সে উপস্থিত লোকদেরকে বলবে, ‘লোক সকল! যদি আমি এই ব্যক্তিকে হত্যা করে পুনঃরায় জীবিত করে দেই তবে, আমি যে সৃষ্টিকর্তা খোদা এ ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ পোষণ করবে কি?’
সকলে উত্তরে বলবে, ‘না।’
তখন সে যুবকটিকে তরবারীর এক আঘাতে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে এবং কোন স্থান হতে তীর নিক্ষেপ করলে সাধারণত তীর যতটুকু পথ অতিক্রম করে দজ্জাল উক্ত যুবকের খন্ডিত দেহের টুকরোও ততদূর নিক্ষেপ করবে। এরপর সে যুবককে ডাক দেবে। খন্ডিত টুকরোদ্বয় একত্রে মিলিত হবে, আর যুবক জীবন লাভ করে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসবে। তারপর দজ্জালকে লক্ষ্য করে বলবে, ‘আমি এখন নিশ্চিত যে তুমিই দজ্জাল।’
এতে সে তাকে পুনঃরায় হত্যা করতে চাইবে কিন্তু তাকে বা আর কাউকে অতঃপর সে হত্যা করতে সমর্থ হবে না।
লোকে বলে আল্লাহ নাকি এসময়ই ঈসাকে প্রেরণ করবেন। কথিত আছে আসমানে তার চিহ্ন দেখা দেবে। মানুষ তাকে শক্তি ও মহিমার সাথে মেঘে করে আসতে দেখবে। জোরে জোরে তুরী বেজে উঠবে আর তিনি দামেস্কের মসজিদের পূর্ব প্রান্তের সাদা মিনারের কাছে অবতরণ করবেন। তার পরণে থাকবে জাফরান রঙের পোষাক আর দু‘জন ফেরেস্তার ডানায় ভর দিয়ে তিনি নেমে আসবেন। তিনি যখন শির নীচু করবেন তখন ঘর্মাক্ত হয়ে পড়বেন। আবার যখন শির উপরের দিকে উত্তোলন করবেন তখন মনিমুক্তার ন্যায় ঘর্ম তার মুখমন্ডল থেকে ঝরে পড়বে। তিনি আবির্ভূত হয়েই দজ্জালকে খুঁজতে থাকবেন। অবশেষে সিরিয়ার লুদ পাহাড়ের নিকটবর্তী এক স্থানে তাকে পাবেন এবং সেখানেই তাকে হত্যা করবেন।
যবুরে আছে-
‘তোমার দক্ষিণে স্থিত প্রভু আপন ক্রোধের দিনে রাজগণকে চূর্ণ করবেন।
তিনি জাতিদের মধ্যে বিচার করবেন, তিনি শবে দেশ পূর্ণ করবেন;
তিনি বিস্তীর্ণ দেশে মস্তক চূর্ণ করবেন;
তিনি পথিমধ্যে স্রোতের জল পান করবেন;
এই জন্যে মস্তক তুলবেন।’ -----(যবুর ১১০:৫-৭)
এসময় সম্প্রদায়ের লোকজন ঈসার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাকে খুঁজে ফিরবেন। অবশেষে একদল তার সাক্ষাত পাবেন। এরপর ঈসার প্রতি ওহী নাযিল হবে, ‘হে ঈসা! আমার এমন কতকগুলি বান্দা বের হয়ে আসছে যাদের মোকাবেলায় তোমরা সমর্থ নও।’
তখন ফেরেস্তারা দুনিয়ার একদিক হতে অন্যদিক পর্যন্ত চারিদিক থেকে মুমিন ব্যক্তিদেরকে একত্রিত করবেন। তখন যারা দু‘জন ক্ষেতে থাকবে, একজনকে নিয়ে যাবে এবং অন্যজনকে ছেড়ে যাবে; দু‘জন স্ত্রীলোক যাতা পিষবে, একজনকে নেয়া হবে এবং একজনকে ছেড়ে যাবে। এই পরিত্যক্ত লোকগুলো কারা? যারা সতর্ক থাকবে না। যারা এইরকম চরিত্রের হবে-‘মনিব আসতে দেরী আছে, এই অবসরে একটু আমোদ প্রমোদ করেনি।’
অবশেষে ঈসা ফেরেস্তাদের সংগৃহীত মুমিনদেরকে নিয়ে সিয়োন পর্বতে আশ্রয় নেবেন।
নবী জোয়েল এই দিনগুলি সম্পর্কে বলেছেন-
‘আর আমি আকাশে ও পৃথিবীতে অদ্ভুত লক্ষণ দেখাব, -রক্ত, অগ্নি ও ধূম স্তম্ভ ।
খোদার ঐ মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের আগমনের পূর্বে, সূর্য্য অন্ধকার ও চন্দ্র রক্তিম হয়ে যাবে,
আর যে কেহ খোদার নামে ডাকবে, সেই রক্ষা পাবে; কারণ,
খোদার বাণী অনুসারে সিয়োন পর্বতে ও জেরুজালেমে রক্ষাপ্রাপ্ত দল থাকবে,
এবং পলাতক সকলের মধ্যে এমন লোক থাকবে, যাদেরকে খোদা ডাকবেন।’-----(জোয়েল ২:৩০-৩২)
আল্লাহ ইয়াজুজ মাজুজের সম্মুখ থেকে প্রতিবন্ধকতা দূর করে দেবেন। তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দলে দলে দৌঁড়িয়ে বের হয়ে আসবে। তাদের প্রথম দলটি এতবড় হবে যে তারা তাবরিয়া নামক একটি উপসাগরের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করার সময় পিপাসা দূর করতে পানি পান করে সাগরের সমস্ত পানি নিঃশেষ করে ফেলবে। ফলে সাগরটি সম্পূর্ণ শুস্ক হয়ে যাবে। অপর দলটি সেখানে উপস্থিত হয়ে পরস্পর পরস্পরকে বলতে থাকবে, ‘হয়তোবা এখানে কোনদিন পানি ছিল।’
ইয়াজুজ মাজুজ সম্মুখ পানে ছুটে চলবে। অবশেষে জেরুজালেমের কাছে ‘জাবালুল খমর’ নামক এক পাহাড়ের কাছে এসে পৌঁছিবে। পথিমধ্যে তারা যাকে পাবে হত্যা করতে থাকবে। এই পাহাড়ের কাছে এসে তারা বলবে-‘ভূ-পৃষ্ঠের উপর বসবাসকারী সমস্ত মানুষকে আমরা হত্যা করে ফেলেছি। এখন রয়েছে আসমানবাসীরা।’
এরপর তারা আসমানবাসীদের হত্যার উদ্দেশ্যে উর্ধ্বপানে দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। তাদের তীর রক্ত রঞ্জিত হয়ে ফেরৎ আসবে। তখন তারা ধারণা করবে আসমানবাসীদেরকেও তারা হত্যা করতে সমর্থ হয়েছে।
ইয়াজুজ ও মাজুজ এর কাহিনী কোরআনে বর্ণিত আছে। কাহিনীটা এমন- ইয়াজুজ ও মাজুজ পাহাড়ের গুহায় নিরাপদে বসবাস করত এবং লোকালয়ে বেরিয়ে এসে সর্বদা অশান্তি সৃষ্টি করত; সাবার বাদশা জুলকারনান দিক ভ্রমণে পৃথিবীর এক প্রান্তে পৌঁছিলে সেখানকার অধিবাসীগণ তার নিকট অনুরোধ করে যেন তিনি তাদের ও ওদের মধ্যে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেন। তারা তাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করবে এই শর্তে জুলকারনাইন ঐ প্রাচীর নির্মাণ করে দিতে সম্মত হন।
জুলকারনাইন গলিত লোহা ও তামার সাহায্যে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে তুলেছিলেন। ফলে ইয়াজুজ ও মাজুজ তা পার হতে পারল না বা ভেদ করতেও পারল না। তারা ঐভাবেই আটক রয়ে গেল। প্রাচীর নির্মাণের পর জুলকারনাইন বলেছিলেন, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পুর্ণ হবে তখন তিনি ওকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্যি।’
জবাবে আল্লাহ জানিয়েছিলেন, ‘সেদিন (কেয়ামতের দিন) আমি ওদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব, আর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তারপর আমি ওদের সকলকেই একত্রিত করব।’
কথিত আছে ইয়াজুজ-মাজুজ প্রতিদিনই প্রাচীর ভেদ করার জন্যে খোঁড়া খুড়ি করে। খুঁড়তে খুঁড়তে তারা যখন তারা প্রাচীর ছিদ্র করার শেষ সীমায় পৌঁছে, তখন তারা এই বলে ফিরে যায় যে ‘বাকীটুকু আমরা আগামীকাল খুঁড়ব।’ কিন্তু তারা সর্বদা নিজেদের আত্মবিশ্বাসের উপর নির্ভর করে, তাই বলে না ইনশাল্লাহ বা আল্লাহ চাইলে। এ কারণে আল্লাহ প্রাচীরটি পুনঃরায় পূর্ববৎ মজবুত অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। পরের দিন ইয়াজুজ-মাজুজ প্রাচীর খননে নুতন ভাবে আত্মনিয়োগ করে। এ ধারা ততদিন চলবে যতদিন আল্লাহর ইচ্ছে। অতঃপর সেইদিন আসবে যেদিন তারা কাজ শেষে বলবে, ‘ইনশাল্লাহ বাকীটুকু আমরা আগামীকাল শেষ করব।’
আর পরদিন তারা প্রাচীরগাত্র ঐ অবস্থায় পাবে যে অবস্থায় বিগতদিন তারা তা রেখে গিয়েছিল। তারা অল্প সময়ের মধ্যে একটা ছিদ্র তৈরী করে ফেলবে এবং ঐ ছিদ্রপথ দিয়ে তারা স্রোতের মত বেরিয়ে আসতে থাকবে।
এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ ‘সে (জুলকারনাইন) বলল, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পুর্ণ হবে তখন তিনি ওকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্যি।’
সেদিন আমি ওদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব, আর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তারপর আমি ওদের সকলকেই একত্রিত করব।(১৮:৯৭--৯৯)
যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ-মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।(২১:৯৬)
এদিকে ঈসা ও তার অনুসারীরা তূরপাহাড়ে আবদ্ধ হয়ে রয়েছেন। পাহাড়ের উপর তাদের দীর্ঘ অবস্থানের ফলে তাদের কাছে মজুদ খাদ্য-সম্ভার সব ফুরিয়ে যাবে একসময়। মানুষ ক্ষুধায় হাহাকার করতে থাকবে। উপায়ন্তর না দেখে ঈসা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করবেন এবং ইয়াজুজ মাজুজের প্রতি শাস্তি নেমে আসবে। তাদের গর্দানে এক প্রকার পোঁকা দেখা দেবে। পোঁকার কামড়ে তারা সব একরাত্রে মরে যাবে।
এরপর ঈসা ও তার অনুগামীরা পাহাড় থেকে নেমে আসবেন। তারা দেখবেন যে জমিনের সর্বত্র ইয়াজুজ-মাজুজের শবদেহে পরিপূর্ণ, কোথাও পা ফেলার স্থানটুকু নেই। তাদের শবদেহ পচে গলে যাওয়ায় চারিদিকে শুধু অসহ্য দুর্গন্ধ। আর এই দূর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে ঈসা ও অন্যান্য মুসলমান আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করবেন। তখন আল্লাহ উটের মত বড় বড় পাখী প্রেরণ করবেন। পাখীগুলি এসে ঠোঁট এবং পায়ের চংগলের মাধ্যমে শবদেহগুলি উঠিয়ে নিয়ে নাবহল নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। লাশ দূরীভূত হওয়ার পর লোকেরা শুধু ইয়াজুজ মাজুজদের তীর ধনুক মাটিতে পড়ে থাকতে দেখতে পাবে।
এরপর আল্লাহ বৃষ্টি প্রেরণ করবেন। বৃষ্টির পানিতে সবকিছু ধৌত হয়ে পরিস্কার হয়ে যাবে। আর দুনিয়াও দূর্গন্ধ মুক্ত হবে। এসময় আল্লাহ জমিনকে সম্বোধন করে বলবেন, ‘হে জমিন! তুমি ফল উদ্গত কর, পুনঃরায় তোমার বরকত প্রদর্শণ কর।’
তখন শস্যকনা ও ফল ফুলে এত বরকত হবে যে, একদল লোক একটি ডালিম খেয়ে তৃপ্তি লাভ করবে। আর সেই ডালিমের নিক্ষিপ্ত বাকলের নীচের ছায়াতে একজন লোক বসে আরাম করতে পারবে। তখনকার গৃহপালিত পশুর দুধে এত বরকত হবে যে, মাত্র একটি গরুর দুধ এক সম্প্রদায়ের লোক পান করে তৃপ্তি লাভ করবে।
এভাবে ঈসার সাহায্যে সকল মুসলমান সমস্ত রকম ফেতনা ফ্যাসাদ থেকে নিরাপদ থাকবে। তিনি সাত বৎসর মুসলমানদের নেতৃত্ব দেবেন এবং মুসলিম সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনা করবেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি বিবাহ করবেন। তার রাজত্বকালে পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য কায়েম হবে।
চল্লিশ বৎসর বয়সে (পূ্র্বের ৩৩ + পরবর্তী ৭) ঈসা মৃতুবরণ করবেন এবং মুহম্মদের সমাধির পাশে তাকে সমাহিত করা হবে ঐ স্থানটি ঐ সময় পর্যন্ত তার দাফনের জন্যে খালি পড়ে থাকবে।
ঈসার ২য় আগমনকালীন জীবনাচার সম্পর্কে যবুরে আছে-
সে ধার্মিকতায় তোমার প্রজাগণের, ন্যায়ে তোমার দুঃখীদের বিচার করবে।
পর্বত ও উপপর্বতগণ ধার্মিকতা দ্বারা প্রজাদের জন্যে শান্তিরূপ ফলে ফলবান হবে।
সে দুঃখীদের বিচার করবে, দরিদ্রকে ত্রাণ করবে, উপদ্রবীকে চূর্ণ করবে।
যতদিন সূর্য্য থাকবে, লোকে তোমাকে ভয় করবে, যতদিন চন্দ্র থাকবে, পুরুষানুক্রমেই করবে।
ছিন্নতৃণ মাঠে বৃষ্টির ন্যায়, ভূমি সিঞ্চনকারী জলধারার ন্যায় সে নেমে আসবে।
তার সময়ে ধার্মিক প্রফুল্ল হবে, চন্দ্রের স্থিতিকাল পর্য্যন্ত প্রচুর শান্তি হবে।
সে এক সমুদ্র অবধি অপর সমুদ্র পর্য্যন্ত, ঐ নদী অবধি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত কর্ত্তৃত্ব করবে।
তার সম্মুখে মরুনিবাসীরা নত হবে, তার শত্রুগণ ধূলা চাটবে।
তার্শীশ ও দ্বীপসমূহের, সাবা ও সবার রাজগণ নৈবদ্য আনবে।
হ্যাঁ, সকল রাজা তার কাছে প্রাণিপাত করবে; সকল জাতি তার দাস হবে।
কেননা, সে আর্ত্তনাদকারী দরিদ্রকে, দুঃখী ও নিঃসহায়কে উদ্ধার করবে।
সে দীনহীন ও দরিদ্রের প্রতি দয়া করবে,
চাতুরী ও দৌরাত্ম্য হতে তাদের প্রাণ নিস্তার করবে,
তার দৃষ্টিতে তাদের রক্ত বহুমূল্য হবে; আর সে জীবিত থাকবে ও
তাকে সাবা‘র সুবর্ণ দান করা যাবে,
লোকে তার নিমিত্ত নিরন্তর প্রার্থনা করবে, সমস্ত দিন তার ধন্যবাদ করবে।
দেশ মধ্যে, পর্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হবে,
তার ফল লেবাননের এরস বৃক্ষের ন্যায় বাতাসে দোলায়মান হবে;
এবং নগরবাসীরা ভূমির তৃণের ন্যায় প্রফুল্ল হবে।
তার নাম অনন্তকাল, সূর্য্যের স্থিতি পর্য্যন্ত সতেজ থাকবে;
মনুষ্যেরা তাতে আশীর্বাদ পাবে, সমুদয় জাতি তাকে ধন্য ধন্য বলবে।------(যবুর ৭২:২-১৭)
তারপর রোগ-ব্যাধি, অভাব-অনাটন না থাকায় মানুষ আস্তে আস্তে খোদাকে ভুলে যাবে। অত:পর আসবে কেয়ামত। এসময়ই আলামত হিসেবে ভূ-গর্ভ থেকে একটি কিম্ভূতকিমাকার জীব বের হয়ে আসবে। এই অদ্ভুত আকৃতি বিশিষ্ট জীবটি সাধারণ জন্তুদের প্রজনন প্রক্রিয়া মোতাবেক জন্মগ্রহন করবে না, বরং অকষ্মাৎ ভূ-গর্ভ থেকে রেরিয়ে আসবে। সম্ভবতঃ এটি মক্কার সাফা পর্বত থেকে বের হয়ে। তারপর মাথার ধুলি ঝাড়তে ঝাড়তে কা’বাগৃহের কৃষ্ণপ্রস্তর ও মকামে ইব্রাহিমের মাঝখানে পৌঁছে যাবে। মানুষ একে দেখে পালাতে থাকবে, কিন্তু কেউই তার নাগালের বাইরে থাকতে পারবে না। এক সময় সে ভূ-পৃষ্টে বিচরণ করতে শুরু করবে এবং সমগ্র বিশ্ব পরিভ্রমণ করবে। সে মুমিন ও অবিশ্বাসীদেরকে চিনবে এবং তাদের সকলের সাথে কথা বলবে এবং প্রত্যেক অবিশ্বাসীর কপালে একটি বিশেষ চিহ্ন একে দেবে। সে অনেক নিদর্শণ দেখাবে, এটা এ কারণে যে, মানুষ খোদায়ী নিদর্শণে বিশ্বাস করত না।
এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ-যখন প্রতিশ্রুত কেয়ামত সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শণ সমূহে বিশ্বাস করত না।(২৭:৮২) বরং তা (কেয়ামত) আসবে তাদের উপর অতর্কিতভাবে, অতঃপর তাদেরকে তা হতবুদ্ধি করে দেবে, তখন তারা তা রোধ করতেও পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।(২১:৪০)
তোমাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দাও, এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও জমীনের জন্যে সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের উপর আসবে, অজান্তেই এসে যাবে। তোমাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন তুমি তার অনুসন্ধানে লেগে আছ। বলে দাও, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না।(৭:১৮৭)
অবশেষে সেইদিন আসবে যেদিন ইস্রাফিল প্রভুর পক্ষ থেকে এই ভয়ানক আদেশ প্রাপ্ত হবে।
কথিত আছে, সেই অনাগত ভয়ানক দিনটি হবে কোন এক মহরম মাসের দশ তারিখে, শুক্রবার খুব ভোরে সূর্যোদয়ের নিকটবর্তী সময়ে, যখন মানুষ নিজ নিজ বিছানা হতে গাত্রত্থান করে নিজ নিজ কাজে যাবার প্রস্তুতি নেবে বা কাজে লিপ্ত হবে। সূর্যের কিরণ চমকাতে থাকবে, ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ দোকান বা কারখানা খোলার প্রস্তুতি নেবে। চাষী, হাল চাষের কাজ শুরু করবে। গৃহিনীদের কেউ গৃহ পরিচ্ছন্নের বা কেউ খাবার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকবে। আর ঐ সময়ই হঠাৎ করে বাঁশীর মিহীন সূর তাদের কানে ভেসে আসবে। যার কানে এ সূর প্রবেশ করবে, সে তার কাজ বন্ধ করে কান লাগিয়ে তা শুনতে থাকবে। আর মনে মনে বলতে থাকবে, ‘কি অপুর্ব, মধুর সূর! আজ পর্যন্ত তো এরূপ সুমধুর সূর তো আমি কখনও শুনিনি।’
মানুষের অন্তরস্পর্শী ঐ সুমধুর সূর বিরতিহীন ভাবে বাজতেই থাকবে।
নিম্নগ্রামে এ সূর শুরু হলেও আস্তে আস্তে তা উচ্চগ্রামের দিকে ধাবিত হবে। ফলে একসময় সকলের কানেই আকর্ষণীয় এ আওয়াজ প্রবেশ করবে। নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে সকলেই ঐ আওয়াজের প্রতি আকর্ষিত হবে। সকলেই তখন নিজ নিজ কাজ-কারবার ফেলে কায়মনে ঐ আওয়াজের দিকে মনোযোগী হবে। শহর, গ্রাম, শহরতলী বা পাহাড়ী- মানুষ যে এলাকারই হোক না কেন, তারা এ ধারণা করতে থাকবে যে, এ আকর্ষণীয় সূর তার এলাকার অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে। সুতরাং আর তারা ঐ মন মাতান সূরের উৎস সন্ধানে বেরিয়ে পড়বে।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একসময় সূরের উৎস খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে, কিন্তু কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারবে না যে, এ আওয়াজ কোথা থেকে বা কোনদিক থেকে আসছে। বরং চতুর্দিকেই এই আওয়াজ সমভাবে ধ্বনিত হবে। আস্তে আস্তে সূরের তীব্রতা বাড়তে থাকবে। এই আওয়াজ যতই বাড়তে থাকবে ততই তা মানুষকে এবং সকল পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ, এমনকি সামুদ্রিক প্রাণীকেও বিভোর করে ফেলবে। পশুরা ঐ সূরে ব্যাকূল হয়ে পাগলের মত ছুটাছুটি করতে থাকবে, জঙ্গল ছেড়ে মানুষের ভীড়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।
প্রথমদিকে ঐ আওয়াজ বাঁশীর মিহিন সূরের ন্যায় মানুষের হৃদয়গ্রাহী হলেও একসময় তা পরিবর্তিত হবে। অবশ্য পরিবর্তসটা হবে খুবই ধীরে। আর যখন তা পরিবর্তিত হতে হতে কর্কশ ও ভীতিপূর্ণ হয়ে যাবে। ঐসময় শ্রোতারা মনে মনে ভাবতে থাকবে, ‘এমন মধুর সূর, এমন বিভৎস্ আওয়াজে পরিবর্তিত হল কেন? এ তো ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হল?’
একসময় আওয়াজের কাঠিণ্যতা মূহুর্তের পর মূহুর্তে বদলাতে থাকবে এবং তা বিভৎসতর হতে থাকবে। ঐ সময় আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যেতে থাকবে। একসময় এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে যেমন বৃষ্টির সময় মেঘের গর্জন হতে থাকে। অনবরত আওযাজ বজ্রপাতের ন্যায় গর্জিতে থাকলে একসময় মানুষ ভীষণ ভয় পেয়ে যাবে। তখন তারা ছুটোছুটি করে বিভিন্নদিকে পালাতে থাকবে। কোন মূল্যবান সম্পদই তাদেরকে তখন আকর্ষণ করবে না।
শিঙ্গার আওয়াজ আরও পরিবর্তিত হলে আকাশে বিজলী গর্জিত হতে থাকবে। মানুষ পালাতে শুরু করবে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু পালাবে কোথায়? যেখানেই যাবে সেখানেই এই আওয়াজ শুনতে পাবে।
অবশেষে ঐগর্জণরূপী আওয়াজ আরও বেড়ে যাবে এবং হাজার হাজার বজ্রপাত জমিনের উপর এসে পড়তে থাকবে। তখন সকলের অবস্থা এমন হবে যে তারা সবাই নিজের শক্তি হারিয়ে ফেলবে। তারা তখন কেবল বার বার উর্দ্ধে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে থাকবে। তারা নিশ্চিত হয়ে যাবে এটা মহাপ্রলয়-পৃথিবীর ধ্বংসের দিন। তারা কেবলই বলতে থাকবে, ‘হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, এ তো কেয়ামত দিবস! আমরা এ বিষয়ে বেখবর ছিলাম; বরং আমরা গোনাহগারই ছিলাম।’
এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ- কেয়ামত দিবস কবে? যখন দৃষ্টি চমকে যাবে, চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে এবং সূর্য্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে। সেদিন মানুষ বলবে, পলায়নের জায়গা কোথায়? না কোথাও আশ্রয়স্থল নেই।(৭৫:৬-১১) তোমার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? (৮৮:১) যেদিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, অতঃপর আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছে করবেন, তারা ব্যতিত নভঃমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যারা আছে, তারা সবাই ভীত-বিহব্বল হয়ে পড়বে।(২৭:৮৭) এটা হবে ভয় প্রদর্শণের দিন। (৫০:২০) শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, এটা তো হবে কেবল এক মহানাদ।(৩৭:১৯)
যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে-একটি মাত্র ফুৎকার এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া হবে, সেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে।(৬৯:১৩-১৪) অমোঘ প্রতিশ্রুত সময় নিকটবর্তী হলে কাফেরদের চক্ষু উচ্চে স্থির হয়ে যাবে; হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এ বিষয়ে বেখবর ছিলাম; বরং আমরা গোনাহগারই ছিলাম।’(২১:৯৭)
নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী তার দুধের শিশুকে বিষ্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয়, বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব সুকঠিন।(২২:১-২) যখন কেয়ামতের ঘটনা ঘটবে, যার বাস্তবতায় কোন সংশয় নেই। এটা নীচু করে দেবে, সমুন্নত করে দেবে। যখন প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। অতঃপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা।(৫৬:১-৬)
ছাড়া হবে তোমাদের প্রতি অগ্নি স্ফূলিঙ্গ ও ধুম্রকুঞ্জ তখন তোমরা সেসব প্রতিহত করতে পারবে না।(৫৫:৩৫) যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে তখন সেটি রক্তবর্ণে রঞ্জিত চামড়ার মত হয়ে যাবে।(৫৫:৩৭) সেদির মানুষ না তার অপরাধ সম্সর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, না জ্বীন।(৫৫:৩৯) সেদিন আকাশ হবে গলিত তামার মত এবং পর্বতসমূহ হবে রঙ্গীন পশমের মত। বন্ধু বন্ধুর খোঁজ নেবে না। যদিও একে অপরকে দেখতে পাবে। সেদিন গোনাহগার ব্যক্তি পণস্বরূপ দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্তুতিকে, তার স্ত্রীকে, তার ভ্রাতাকে, তার গোষ্ঠীকে, যারা তাকে আশ্রয় দিত এবং পৃথিবীর সবকিছুকে, অতঃপর নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে।(৭০:৮-১৪)
যখন আকাশ ধূয়ায় ছেয়ে যাবে, যা মানুষকে ঘিরে ফেলবে। (৪৪:১০-১১) অতঃপর যেদিন কর্ণবিদারক নাদ আসবে, সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে।(৮০:৩৩-৩৬) সূর্য্য আলোহীন হয়ে যাবে, যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে, যখন পর্বতমালা অপসারিত হবে; যখন দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীসমূহ উপেক্ষিত হবে, যখন বন্যপশুরা একত্রিত হয়ে যাবে, যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে।(৮১:১-৬)
তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে, যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাক-বিতন্ডাকালে। তখন তারা ওসিয়্যত করতেও সক্ষম হবে না এবং তাদের পরিবার পরিজনের কাছে ফিরেও যেতে পারবে না।(৩৬:৪৯-৫০) শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে ফলে আসমান ও জমীনে যারা আছে সবাই বেঁহুস হয়ে যাবে।(৩৯:৬৮) করাঘাতকারী সম্পর্কে তুমি কি জান? যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত।(১০১:৩-৪) এটা এমন দিন যেদিন কেউ কোন কথা বলবে না এবং কাউকে তওবা করার অনুমতি দেয়া হবে না।(৭৭:৩৫-৩৬) কেয়ামত ঘোরতর বিপদ ও তিক্ততর।(৫৪:৪৬)
লোকেরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে নিজ নিজ স্থানে বেহুশ হয়ে পড়বে। কম্পন আর আওয়াজের প্রচন্ডতায় মানুষের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে নামতে থাকবে। যে যেখানে ছিল সেখানেই তার মৃত্যু হবে ।
এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াবসমূহ- ‘লোকেরা আর কিছুই দেখতে পাবে না বরং একটি কঠিন আওয়াজ যা তাদেরকে ধ্বংস করে দেবে। তখন তারা না কেউ কাউকে কোন ওসিয়্যত করতে পারবে, না তারা ফিরে এসে স্বীয় সন্তান-সন্তুতির কাছে আসতে পারবে। বরং সেদিন সেই কঠিন বিভৎস আওয়াজের কারণে তারা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে।(৩৬:৪৯-৫০)
এই আওয়াজ আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকবে। অবশেষে তা এত বেশী কঠিনতর হবে যে, নির্জীব পদার্থ যেমন গাছপালা, তরুলতা, পাহাড়-পর্বত সবকিছুই তুলার ন্যায় উড়তে থাকবে। তীব্র তাপের সৃষ্টি হবে, আর নদ-নদী, সাগর-মহাসাগরের পানি বাষ্পীভূত হয়ে যাবে। সমগ্র জগত ধুঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।
এই আওয়াজ আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হবে, সকল ফেরেস্তারাও তা শুনতে পাবে। তারাও তখন ব্যকুল হয়ে পড়বে। আওয়াজের এই কাঠিণ্যতা সহ্য করার শক্তি তারাও হারিয়ে ফেলবে।
কেয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ, ‘হে মানবগোষ্ঠী! তোমাদের শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে একটু চিন্তা কর। তোমাদের অস্তিত্ব, তোমাদের স্থায়িত্ব। তোমাদের ক্ষমতা এটা তো সামান্য কারণে ধ্বংস প্রাপ্ত। তোমরা তো সামান্য কারণে ভয় পেয়ে থাক অথচ কেয়ামত দিবসের কম্পন খুবই ভয়াবহ ও কঠিন হবে। পাহাড়-পর্বত যা কিছু আছে সবই কম্পনের ফলে ধূয়ার ন্যায় উড়ে যাবে। হে মানব সম্প্রদায়! ঐদিন তোমরা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। সেদিন ‘সকল জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’
তুমি বল, ‘আমার পালনকর্তা পাহাড়সমূহকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন। অতঃপর পৃথিবীকে মসৃণ সমতলভূমি করে ছাড়বেন। তুমি তাতে মোড় ও টিলা দেখবে না।(২০:১০৫-১০৬) এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মত।(১০১:৫) আমি পৃথিবীস্থ সবকিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি....এবং তার উপর যা কিছু রয়েছে, অবশ্যই তা আমি উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।(১৮:৭-৮)
যখন আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতিত সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন এই শিঙ্গার আওয়াজ থেমে যাবে। কিন্তু ইতিমধ্যে দুনিয়ার হিসেবে ছয় মাস অতিক্রান্ত হবে। এ সংক্রান্ত আয়াতসমূহ- আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতিত সবকিছুই ধ্বংস হবে।(২৮:৮৮) তোমাদের কি জানা আছে এ আওয়াজ কতক্ষণ স্থায়ী হবে? এ শিঙ্গার আওয়াজ প্রথম যেদিন প্রাতঃকালে আরম্ভ হবে, সেদিন থেকে সবকিছু এক এক করে ধ্বংস হবার পর পূর্ণ ছয় মাস পর্যন্ত এ আওয়াজ স্থায়ী হবে।’
তবে কেয়ামত দিবসের পূর্বের অবস্থা তথা শেষ পনের দিনের সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছেন হযরত ঈসা-
অতঃপর মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম ইস্রফিলকে সৃষ্টি করবেন। তারপর তিনি তাকে ২য়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেবার জন্যে আদেশ করবেন। এই উভয়বার শিঙ্গা ফুঁকবার মাঝখানে চল্লিশ বৎসর ব্যবধান হবে। এই চল্লিশ বৎসর অবিরাম বৃষ্টিপাত হতে থাকবে। এসময়ের মধ্যেই প্রতিটি মৃত মানুষ ও জীব-জন্তুর দেহের অংশ একত্রিত হয়ে পূর্ণ কাঠামো তৈরী হবে। ইস্রফিল ২য় বার শিঙ্গায় ফুঁক দিলে ঐসকল দেহে আত্মা এসে যাবে। সকল মখলুকাতই পুনরুজ্জীবন লাভ করবে। মানুষ কবর থেকে মাথার মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়াবে। এসময় তারা সকলে ভয়ে প্রকম্পতিত হয়ে বলতে থাকবে ‘ইয়া নফসি, ইয়া নফসি’। এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ- সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গুটান হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত।(২১:১০৪)

তথ্যসূত্র:

১) Stanley, Steven M. (২০০৫)। Earth system history (2nd সংস্করণ)। New York: Freeman। আইএসবিএন 978-0-7167-3907-4।
২) Gradstein, F. M.; Ogg, James George; Smith, Alan Gilbert, সম্পাদকগণ (২০০৪)। A Geological Time Scale 2004। Reprinted with corrections 2006। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-78673-7।
৩) Dr. Abu Shadi Al-Roubi (1982), "Ibn Al-Nafis as a philosopher", Symposium on Ibn al-Nafis, Second International Conference on Islamic Medicine: Islamic Medical Organization, Kuwait
৪) Jon R. Stone। Expecting Armageddon: Essential Readings in Failed Prophecy
Yahya, Harun (১ জানুয়ারি ২০০৮)। Clarity Amidst Confusion: Imam Mahdi and the End of Time। Global Publishing. Kindle Edition.। পৃষ্ঠা 64।
৫) "Hadith – Book of Tribulations – Sunan Ibn Majah – Sunnah.com – Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"

এ সম্পর্কিত কয়েকটি লেখা:

(১) পৃথিবী কিভাবে সৃষ্টি
(২)পৃথিবী কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ?(বেদ ও বিজ্ঞান)
(৩) পৃথিবী সৃষ্টির সঠিক তথ্য
(৪) আল-কোরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি- ( ১ম পর্ব)
(৫) ইসলামের দৃষ্টিতে কেয়ামতের আলামত
(৬) ইস্রাফিল কর্তৃক প্রথমবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া।
(৭) কিয়ামতের যে ১০টি আলামত
(৮) কেয়ামতের আলামত বা লক্ষণসমূহ
(৯) ছয় দিনে পৃথিবীর সৃষ্টি

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৯
২৬টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×