somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী............ (সাজেক)

৩০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেমিস্টার ব্রেকের ছুটি, সেপ্টেম্বরের শেষে, এখানে যাব, সেখানে যাব, কে যাবে? কে যাবেনা? এইসব হিসেব মেলাতে, মেলাতে মেজাজ নষ্ট হয়ে গেল, শেষমেশ দুই সহকর্মী মিলে শুরু করলাম অন্য আর এক সহকর্মীর বাড়ি খাগড়াছড়ির দিকে যাত্রা, কারণ থাকাটা তো ফ্রি পাওয়া যাবে, খাওয়া না হয় নিজেরাই করলাম। টিকেট আগেই কাঁটা ছিল, তাই সে নিয়ে তেমন চিন্তা ছিলনা। বাসে উঠেই মনটা খারাপ হয়ে গেল, কারণ অনেক নোংরা ছিল, ভ্রমনে এটা আমার একটা মানসিক সমস্যা, অর্থ, পথ, দুরত্ত, সময়, শরীর যেমনই হোক, বাহনটা যদি পছন্দ হয় বা পরিচ্ছন্ন হয়, অনেক কিছুই স্বাভাবিক হয়ে যায় আর সেটা না হলেই মনটা বিস্বাদ ও সাময়িক বিষণ্ণতায় ভরে যায়।

যাইহোক, একসময় ঘুমের শেষে ঘুম ভাঙলো, তখন সবে খাগড়াছড়ির পথ শুরু হয়েছে, সূর্য সবে উঠি, উঠি করছে, রাতের বৃষ্টি আর ভোরের হালকা মেঘে সে তার আগমনের জানান দিতে পারছেনা, তাকিয়েই ছিলাম, কখন মেঘ সরে, গাছের পাতার ফাঁকে দুরে সূর্যের স্বপ্নিল রঙ চোখে পড়ে...... কিছুদূর যেতেই, গাছের সারির মাঝে, ছোট্ট টিলাদের পেরিয়ে আর বেহায়া মেঘকে সরিয়ে, সে উঁকি দিল, দেখা দিল, শত রঙের বর্ণিলতা বুকে বেঁধে, এই প্রথম মনটা বেশ প্রফুল্ল হল, মেঘ, পাতা, লতা আর টিলাদের সাথে সূর্যকে নিয়ে লুকোচুরি খেলাতে, যেন শিশু হলাম খানিকক্ষণের জন্য! শেষ হল সেই রেশ, সূর্যের দীপ্ততায়, দৃষ্টির অপারগতায় আর মনে হল এই প্রথম, নাহ, বোধয় ভালো কিছুই পাবো, ছুটছি সামনের সেই সম্ভাবনায়.............

সেদিন, রিছাং, আলুটিলা গুহা আর খাগড়াছড়ি শহরে ঘুরেই কাটিয়ে দিলাম, রাতে প্ল্যান হল, আগামীকাল ভোঁর, ভোঁর সাজেক দেখে আর কিছু বাগান, ঝর্ণা, পুকুর আর পাহাড় দেখবো, সেভাবেই শুরু করলাম।

পরদিন সকাল... সাজেকের উদ্দেশ্যে সিএনজিতে যাত্রা শুরু, আকাশটা আজ বেশ মেঘলা, মেঘলা, যে কারনে মনেও মেঘের মেলা, দুরের পাহাড় আর আকাশের নীলিমারা দৃষ্টির সাধ্য সীমায় ধরা দেবেনা বলে। দীঘিনালা যেতে, যেতেই প্রকৃতি তার খেয়ালের পরিবর্তন ঘটালো, মেঘগুলো মুছে গেল, আকাশরা নীলে, নীলে নিচে নেমে এলো! যেন, ওই পাহাড়টা ডিঙোলেই ছুঁয়ে দেবে আমি ও আমাকে! বলবে হারাতে তার নীল, নীলিমাতে! ঘাসগুলো সবুজ হল আরও সবুজ! গাছগুলো যেন তার পাতাদের নাচ দিয়ে আমাকে স্বাগত জানাল! দুপাশের বড়, বড় ঘাসের সারি যেন, সারাটা পথ জুড়ে সবুজ গালিচা! পাখিদের উদ্বেগহীন কিচিরমিচির যেন, সম্মোহিত সঙ্গীতের মূর্ছনা! আর কাছে-দুরের ছোট মাঝারি পাহাড় গুলো এক-একটা, এক-একজনের সাথে রেশা-রেশিতে মত্ত, কার কাছে আগে যাব আর কাকে আগে ছোঁব! কার কোলে মাথা দেব! কার আঁচল ছায়ায় শরীর জুড়িয়ে শীতল হব! আর ওই পথ, যা পাঁচ কিলো দুরেও যেমন! আর তার পরের পাঁচ কিলো দুরেও তেমন, দূর থেকেই দেখা যায়, যতদূর চোখ যায়! যেন গ্রামের মেঠো পথ, যে পথে কোন খাঁদ নেই, ভয়ানক বাঁক নেই, পাহাড়ের খাঁদে পড়ার ভয় নেই, সামনে থেকে অন্য যানবাহন চলে আশার দুশ্চিন্তা নেই, পিছন থেকে ধাক্কা খাবার আশংকা নেই, মেঘ, আকাশ, কুয়াশার আর শিশিরের মত মসৃণ...... একরাশ স্নিগ্ধতা মেখে দেবে, আপনার, সারা শরীর, মন আর মনন জুড়ে...............

ওই যে সাঁজেক! ওই পাহাড়ের চুড়ায়, এখানে একটু দাড়াই? আকাশ এতো নীল কেন? এমন মেঘহীন স্বচ্ছ নীল আকাশ এর আগে কোনোদিনই চোখে পড়েনি! কখনই না, কত ছবি যে তুলেছি, তার হিসেব নেই, শুধুই আকাশের আর আকাশের সাথে নিজের সেলফি! নীল আকাশ, লাল গেঞ্জি, সবুজ প্রকৃতি আর কলো আমি! অদ্ভুত সংমিশ্রণ!

চলেন, এখানে আর কতক্ষণ? “সুন্দর তো সামনে পইরা রইছে!” ড্রাইভারের ডাক, সাথে সহযাত্রীদেরও...

“আমি আর সিএনজি তে যাবনা! তোমরা যাও” এই পথটুকু আমি হেটেই যেতে চাই, এই পথের আর এক বিন্দু সুখও আমি হারাতে চাইনা! আমি হেটে, হেটে, দেখে, দেখে, মন ভরাতে, ভরাতে যেতে চাই, এই নীল-সবুজের সম্মোহন আর অদ্ভুত পথের সবটুকু সুখ আমি শুষে নিতে চাই, সাধ্যের সবটুকু দিয়ে!

এভাবে হেটে-হেটে, গান গেয়ে, সুখে আহ্লাদিত হতে, হতে পৌঁছে গেলাম সেই “স্বপ্নপুরী” সাঁজেকে! এটা আসলেই “স্বপ্নপুরী” অন্তত আমার কাছে, সাঁজেকে যেতে, যেতেই শুধু এই নামটাই আমার মনে পড়েছে, এটাই! যদিও অনেক পুরনো একটি নাম, তবুও এই নাম ছাড়া আর কোন নামই আমার মন ভরাতে পারেনি, তাই সেই পুরনো নামই নতুন করে “আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী” সাঁজেক এর চূড়াতে উঠে এর চেয়ে ভাল আর কোন উপলব্ধি আমার হয়নি, বারবার মনে হয়েছে, আসলেই “আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী”

যখন পা রাখলাম, সাঁজেকের হৃদয়ে হাহাকার তোলা হেলিপ্যাডে...... এই মেঘে মিশে যাই! তো এই নীলে হারাই! এই সবুজে জড়াই! তো এই হাওয়ায় ভেসে যাই! বুঝতে পারছিলাম না আমি কি করবো? বসে থাকব, না দাড়িয়ে থাকব! চোখ খুলে দেখবো না চোখ বুজে অনুভব করবো! কোথায় দৃষ্টি দেব, সামনে না পিছনে? ডানে না বায়ে! আসলে এটাই তো বুঝতে পারিনি, কোনটা সামনে? কোনটা পিছনে? কোনটা ডান? আর কোনটা বাম; সুখে, আনন্দে, আবিলুপ্ততায় অবরুদ্ধ হলে যা হয় আর কি? বসে, শুয়ে, গড়িয়ে, লাফিয়ে, ঝাঁপিয়ে, হারিয়ে গয়েছিলাম, উন্মাদ আর উম্মত্ত হয়ে গিয়েছিলাম আবেগে, আকুলতায়, সুখের যন্ত্রণায়.....

আরও কি করতাম কে জানে?
যদি না থাকতো ঘর আর ঘরণী!
ছানা আর ছানার দুষ্টমি!
আমি আর আমার আগামীর.........!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×