আচ্ছা শুধু হাতের মেহেদী দেখে বা চোখের চাহুনিতেই কারো প্রেমে পড়া যায়! অথবা কপালের ছোট্ট একটি টিপ দেখে! বা অগোছালো, এলোমেলো চুল দেখে! কি জানি? এভাবেতো ভাবিনি কখনো।
চেনা জানা তো সেই কবে থেকেই! কখনও প্রেমে পড়ার মত মনে হয়নি, বা সেভাবে আকর্ষণ করেনি, তবে হ্যাঁ তার ভদ্রতা, মিষ্টতা, কণ্ঠের মিহিতা ছিল চোখে পড়ার মত, তারপরও প্রেমে পড়ার মত নয়, আদৌ নয়।
চেনা জানাও তো বেশী দিনের নয়, এই চার বা ছয় মাসের, কথা বার্তাও তেমন নয়, দুই-একটা টুকটাক, একেবারেই প্রয়োজন না হলেই নয়, সেও সপ্তাহে দুই বা একদিন। তার আর আমার ব্যাক্তিগত স্ট্যাটাসও একই রকম, সুতরাং প্রেম বা অন্যকিছুর প্রশ্নও কখনো উদিত হয়নি, তার চেয়েও গুরুত্তপূর্ণ হল, শেষ মেশ সেও বহু দূরে আর আমিও, যোগাযোগ আর কথোপকথন এই আজকালকার প্রচলিত ফেসবুকে, সেও কদাচিৎ এবং খুবই ক্ষীণ বা নগন্য। সে যাই হোক, প্রেমে পড়াতে ফিরে আসি!
শুধু মাত্র চোখের চাহুনিতেও যে মনের মাঝে এমন ঝড় উঠতে পারে, হৃদয়ে বয়ে যেতে পারে মাতাল হাওয়া, চোখ হয়ে যেতে পারে ছানাবড়া বা চোখের পলক ঘোরানো হয়ে পারে এতো দুঃসহ! কখনই ভাবিনি! মনে হল পৃথিবীতে আর কিছু না দেখলেও চলবে, শুধু ওই চোখের চাহুনিতে চোখ রেখেই মিটে যাবে সব তৃষ্ণা, ঘুচে যাবে সব হাহাকার, মুছে যাবে সব কষ্ট, মিটে যাবে সব আকুলতা, কেটে যাবে এই জীবন, আর কিছু না থাকলেও চলবে, শুধু থাকুক ওই চোখের ওই চাহুনি, আমার দিকে তাকিয়ে, এভাবেই, অনন্তকাল ধরে......
আর কপালের মাঝে ছোট্ট লাল টিপ, সে যেন আমার রক্ত বিন্দু দিয়ে আঁকা তার সাঁজ ও সুন্দরের অনুষঙ্গ! যেন তার চাওয়া একফোঁটা রক্ত বিন্দু, আমার হৃদয়ে আঁচড় দিয়ে তুলে নেয়া তার অনিন্দ সুন্দর নখের আঁচড়ে! সেও এক সুখ! ভিন্ন আবেশ, আঁচড় না যেন আলতো ছোঁয়া, রক্ত না যেন, তার জন্য জমে থাকা ব্যাকুলতা! যা শুধু তার আঁচড়ের অপেক্ষাতেই ছিল, বহু কাল ধরে, অধীর অপেক্ষায়, তার আঁচড় আর আদর মাখা ছোঁয়ার! হোক, তাই হোক, সে সাজুক, খুশি হোক, উচ্ছ্বসিত হয়ে সুখের ডানা মেলুক, সেজে আমার রক্ত বিন্দু দিয়ে! এ সুখ একান্তই আমার, কেউ বুঝবেনা...! বোঝাবার নয়ই যে!! এ এক অপার্থিবতা, আমার পার্থিবতায়!
তার ঝলমলে অগোছালো চুলে যেন, আমার আবাস! বুক ভরে নেয়া নিঃশ্বাস! নিজেকে খুঁজে ফেরা, তার দীঘর কালো চুলের অরণ্যে! গন্ধে মাতাল হওয়া! ইচ্ছে করেই হারিয়ে যাওয়া! হাত দিয়ে গালে ছোঁয়াই, মুখে ছোঁয়াই, চোখে ছোঁয়াই! চুল তো নয় যেন রেশম পালক! শুধু ছুঁয়ে আর গন্ধ নিয়েই নিঃশেষ হয়ে যাই! হারিয়ে যাই অনিঃশেষিত সুখের আরন্যে!
তার মেহেদী রাঙা হাত আজ সেজেছে আমার আনন্দ হয়ে, প্রাপ্তি আর পূর্ণতা হয়ে, মেহেদীর প্রতিটি আঁচড় যেন আমার কথা বলে, আমায় কাছে টানে, আমার মাঝে বিলিন হবার একান্ত বাসনার কথা বলে! মেহেদীর এক-একটি বাঁক যেন আমার ভালোবাসার এক-একটি ক্ষণ-মুহূর্ত-দিন-সপ্তাহ-মাস! এক একটি ফুল যেন আমার ঠোঁটের আলতো ছোঁয়ার শতসহস্র মুহূর্ত! তার হাতে সে যেন এঁকে রেখেছে আমায়! মেহেদীর রঙে রাঙিয়ে! যখন খুশি তখন দেখবে বলে! আর ছোঁয়াবে তার গালে, আলতো করে, আমার ছোঁয়া পেতে!
সে গান শোনাবে কণ্ঠে নয় হাতের চুড়িতে, যেন বিলুপ্ত না হই, কণ্ঠে যে তার এতই মায়া, আদর আর আকুলতা মাখা, সুর যেন নয়, বিলীন হবার বিষ! তাই তো কণ্ঠে নয়, দু হাত ভরা কাঁচের রেশমি চুড়িতে! থাকি যেথায়, যখনই, ছুটে আসি তার চুড়ির ছন্দে, মোহময় আনন্দে, উম্মত্ত আর উন্মাদ হয়ে.........
সবই তো ঠিক ছিল, ছিল স্বাভাবিক, যথাযথ, নিয়মিত আর আমিষ-নিরামিষের মিলমিশ, হঠাৎ একি হল? কোথায় গেল মন আমার, চুরি হল প্রান আমার, বোধ হল নির্বোধ, আমি হলাম উন্মাদ!
শুধুই তোমার চুড়ির ছন্দে? চুলের গন্ধে? টিপের আকর্ষণে আর চোখের চাহুনিতে! এ দায় কার? আমার, আমার চোখের? মনের নাকি তার...! তার সাঁজের, চোখের, টিপের, মেহেদী আর চুড়ির......?
উল্লেখ্যঃ এই লেখাটির কারনেই আমার লেখালেখিতে বাঁধা পাওয়া শুরু দিতে হয়েছে আবেগে বাঁধ, ভাবনায় তুলতে হয়েছে দেয়াল আর চিন্তায় আনতে হয়েছে সতর্কতা......!
এই লেখাটি আগেও দিয়েছিলাম একটি ভিন্ন প্রেক্ষিতে, আজ আবার একেবারে অরিজিনাল লেখাটাই দিতে মন চাইলো তাই।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০৯