somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ওগো লজ্জাবতী, আমি শিশির হব......!"

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিছাং ঝর্ণাতে যেতে যেতে, উৎরাইয়ের ঠিক আছে একটু থামা হল। এই সুযোগে আমি সারা রাতের জার্নির কাপড় পরিবর্তন করে ফ্রেস কাপড় পড়তে একটু নির্জনে গেলাম। নির্মল পাহাড়। স্বভাবতই সবুজ। পাহাড়ে বোধয় শীত একটু আগেভাগেই আসে। তাই চারিদিকে একটু শীত শীত আবেশ। গাছের পাতা-ঘাস-লতা-পাতায় শিশির জমেছে রাতভর। বেশ জংলার মধ্যে দাড়িয়ে আছি আর আমার কাজ করে যাচ্ছি।

একটু নিচু হতেই চোখ আটকে গেল মিহি আর একই সাইজের সবুজ ঘাসের দিকে। কুঁচি কুঁচি পাতা আর তার খয়েরি চিকন ডালের দিকে। পুরো গাছ আর গাছের ডাল জুড়ে সেই অতি সবুজ, ঘন, কুঁচি কুঁচি পাতার আচ্ছাদন। মাটির দেখা মিলছেনা। গাছটাকে বেশ পরিচিত মনে হল। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিনা। কেন মনে করতে পারছিনা? খুব পরিচিত গাছ? কি যেন নাম? কি যেন? ধুর, মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। কেন মনে করতে পারছিনা এই গাছের নামটা?

মাথা চুলকে ফিরে আসতে যাচ্ছি, ঠিক এমন সময়... সেই গাছের চেয়ে আর একটু বড় গাছের একটি পাতায় চোখ আটকে গেল। রোদের আলো পড়ে ঝলমল করছে এক বিন্দু শিশির। তাকালাম। পাতার উপর থেকে আরও বিন্দু বিন্দু জমে থাকা শিশির জড় হচ্ছে। ক্যামেরা নেই, তাই মোবাইলের ক্যামেরা বের করতে করতেই শিশির ঝরে পড়ার উপক্রম হল সেই পাতা থেকে। আমি ছবি তোলার আশা বাদ দিয়ে তাকিয়ে রইলাম......

ভাগ্যিস, ভাগ্যিস, ভাগ্যিস তাকিয়ে ছিলাম! নইলে এমন অপার্থিব মুহূর্ত পেতাম না। আর ভুলে যাওয়া গাছের গাছের নামটাও জানতে পারতাম না! কারণ? আমি সেই শিশিরের দিকে তাকিয়ে ওর ঝরে পড়াটা দেখছিলাম। আর সেই শিশির বিন্দুটি ঝরে পড়লো ঠিক আমার নাম ভুলে যাওয়া সেই গাছের কুঁচি কুঁচি সবুজ পাতার উপরে।

আর সাথে সাথে, যে ডালের উপরে পড়লো শিশির। সেই ডালের সব গুলো পাতা যেন লাজে মুখ লুকালো, ঘোমটার আড়ালে! আর নিজের অজান্তেই হেসে ফেলে বলে ফেললাম।

“আরে এযে লজ্জাবতী!”

ধুর, কখন থেকে নাম মনে করার চেষ্টা করছি? ছোট বেলায় কত খেলেছি। লজ্জাবতীর সাথে, একা একাই। দারুণ ছিল সেই সময় গুলো। লজ্জাবতীর পাতায় পানি ছিটিয়ে, কখনো হাতের আঙুলের আলতো ছোঁয়ায়, ছুঁয়ে দিয়ে লজ্জা দিতাম! পাতাগুলো যেন শরমে মরি মরি করে চোখ বুজে মিইয়ে যেত। শত ডাকেও আর জেগে উঠতো না।

অন্যদের হাঁকডাকে ফিরে যেতে হল। লজ্জাবতীর মায়া ছেড়ে। কিন্তু লজ্জাবতী মাথাতে রয়েই গেল।

এরপর... দুপুরে পৌঁছালাম, হাজরা ছড়া ঝর্ণায় যাবার প্রবেশ মুখে। বেশ সমতলের জঙ্গলময় পথ পেরিয়ে যেতে হবে হাজরা ছড়ায়। চারদিকে বেশ জঙ্গল জঙ্গল পরিবেশ। সামান্য উঁচু-নিচু পথ আর চারপাশে ঘন সবুজ গাছ-পালার ছায়া ঘেরা আচ্ছাদন। যাচ্ছিলাম বেশ, কিন্তু একটু নিচে একটা ছোট্ট খালের মত ঝর্ণার বয়ে চলা স্রোত দেখতে গিয়েই আবারো চোখে পড়লো বিসৃত লজ্জাবতীর সারি! এবার আর যাবে কোথায়?

ঝর্ণাতো অনেক দেখেছি। ভিজেছি কত শত বার। তাই আজ আর ঝর্ণা তেমন আকর্ষণ করেনি। আজ আমার প্রধান আকর্ষণ সারি সারি লজ্জাবতী আর ওদের লাজুকতায়! আঁচল টেনে মুখ লুকানো ঘোমটার আড়ালে, পেয়ে শিশিরের ছোঁয়া! ওগো লজ্জাবতী, আজ আমি শিশির হব! ছুঁয়ে তোমায়। রাঙাতে লাজে।

তাই সেদিন ওখানকার বাকী সময় টুকু ঝর্ণাকে আর দেইনি সময়। পুরো সময়টুকু শুধু লজ্জাবতী, ওর রাঙা হওয়া লাজ, পানি ছিটিয়ে ছুঁয়ে দিয়ে আর ওদের সাথে মেতে উঠেছিলাম খেলায়। হয়ে অবোধ ও অবুঝ। ফিরে গিয়েছিলাম ফেলে আসা একেবারেই গ্রামের সৃতিতে।

আমরা পাহাড়ে যাই। ঝর্ণা দেখি, নদী দেখি, আকাশ দেখি, দেখি মেঘ-বৃষ্টি-কুয়াশা। হারাই আর অভিভূত হই আরও কত শত বর্ণিলতায়।

কখনো কি দেখেছি অবহেলিত, দলিত-মথিত লজ্জাবতীকে? ওর গায়ে বা পাতায় ঝরে পড়া শিশিরের ছোঁয়াকে? দেখেছি কি ওকে লাজে মরি মরি অপরূপ রূপে?

আমি দেখেছি। আমি উপভোগ করেছি। আমি অনুভব করেছি।

আর ওকে বলে এসেছি বা কথা দিয়েছি.........

“ওগো লজ্জাবতী, আমি শিশির হব!”
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×