বাবা আজকে না অমুক মিস আর তমুক মিস শাড়ি পরে এসেছিল স্কুলে......
সন্ধায় অফিস থেকে বাসায় ফেরার পরেই গলা ধরে আর দুখানা আদর দিয়ে ছেলে সেদিন তার স্কুলের বিশেষ আপডেট দিল!
ছেলের কথা শুনে তার মা আড় চোখে তাকালো বাবা আর ছেলের দিকে, আর কান দুটোকে খাড়া করে রাখলো আর কি কি কথা হয় দুজনের মধ্যে সেটা শোনার জন্য।
বাবা- আচ্ছা, কোন অনুষ্ঠান ছিল নাকি তোদের স্কুলে আজ?
ছেলে- হ্যাঁ ছিল তো, আজকে স্কুলে ফটো সেশন ছিল, তাই মিসরা সবাই শাড়ি পরে এসেছিল...!
বাবা- আচ্ছা তো কি কালারের শাড়ি পরেছিল মিসরা?
ছেলে- একজন ব্লু শাড়ি আর একজন গ্রে...!
বাবা- ছেলের কানে কানে, তোর মিসরা টিপ পরেনি?
ছেলে- উচ্চস্বরে, হ্যাঁ বাবা পরেছে তো, টিপও পরেছিল, একজন লাল আর একজন কালো!
এবার ছেলের মা সরব হল, আর তার সহ্যসীমায় রইলো না বাপ-ছেলের কথোপকথন......
মা- বাহ কি দারুণ, একেই বলে বাপকা বেটা!
বাবা- কি রকম?
মা- বাপ তো তবুও মেয়েদের শাড়ি আর টিপের দিকে নজর দেবার আগে, কলেজ পেরিয়েছিল। ছেলেতো দেখছি প্রাইমারী তো দূরের কথা, নার্সারিও শেষ করতে পারেনি। আমার কপাল দুই দিকেই পুড়লো দেখছি!
বাবা- কি যা তা বলছো এখানে উল্টা-পাল্টা কি দেখলে?
মা- কি আবার, স্কুলের মিস পর্যন্ত রেহাই পেলনা, বাপ-বেটা যা শুরু করেছো।
বাবা- কি এমন করলাম?
মা- কি-ই-বা বাকি রেখেছ বল, এখনই মিসদের শাড়ি-চুড়ি আর টিপ নিয়ে লেগেগেলে, আর কিছুদিন পরতো আরও কত কি নিয়ে কত কি শুরু করবে কে জানে? আমি শঙ্কিত! যতটা না বাপের জন্য তার ছেয়ে বেশী এখন ছেলেকে নিয়ে। বাপ তো গেছেই প্রায় হাত ছাড়া হয়ে! এখন ছেলেটাই আছে আমার। তারও যা অবস্থা দেখছি............
বাবা- আচ্ছা তোর মিস’রা নাহয় শাড়ি পরে এসেছে বুঝলাম, তোর বান্ধবীদের কি খবর? কয়জন বান্ধবী এখন তোর?
ছেলে- নাহ, এখন কোন বান্ধবী নাই আমার, শুধু বন্ধু।
বাবা- কেন কেন, তোর যে বান্ধবী ছিল কয়েকটা?
ছেলে- না বাবা, ওরা শুধু আমাকে নিয়ে টানাটানি করে আর ঝগড়া করে! আমি খেলতেই পারিনা ওদের জন্য। তাই এখন আর ওদের সাথে মিশিনা! এখন শুধু বন্ধুদের সাথে খেলা করি।
বাবা- বান্ধবীরা ডাকেনা তোকে?
ছেলে- হ্যাঁ ডাকে তো, অনেক ডাকে, জোরে জোরে ডাকে নাম ধরে, আমি যাইনা।
মা- ছেলেকে উদ্দেশ্য করে, তোর বাবার কি ক্ষতিটাই না করলি রে তুই।
বাবা- আমার ক্ষতি! কিভাবে?
মা- এই যে ছেলে তার বান্ধবীদের সাথে এখন আর মেশেনা, যে কারণে বান্ধবীদের মায়েদের আর কাছে আসার সুযোগ নাই! তোমার ক্ষতি হলনা বল? স্কুলের মিস, বান্ধবীদের সুন্দরী মায়েদের শাড়ি-চুড়ি-টিপ নিয়ে গবেষণা... আর যদি থেকে থাকে সেইসব সুন্দরীদের কারো সঙ্গী বিদেশে বা দূরে, তবে তো কথাই নেই.... ভুভুক্ষ হৃদয় নিয়ে তোমাদের মত অল্প বয়সী ছেলেদের আকুলতা! আর যে কত কি?
বাবা- কি সব বলছো উল্টা-পাল্টা, তোমারও কি তবে হয় নাকি এমন, কোন ছেলের স্মার্ট-সুদর্শন আর গাড়িওয়ালা বাবাদের দেখে!! বল... বল...?
মা- ফালতু বোকনা, আমার তো তুমি আছই, অন্য কাউকে আর কি দরকার? আমি তো আমিই, আমি তো আর তুমি নই।
বাবা- হুম, আমিও আমিই আছি। এই যে বললে অন্যের শাড়ি-চুড়ি আর টিপের কথা, এগুলো কোত্থেকে পেয়েছি? তোমার কাছ থেকে। তোমার গুলো দেখে আর তোমার কাছ থেকেই তো শিখেছি নাকি? আর তোমার শাড়ি-চুড়ি-টিপের সাথেই না হয় মিলিয়ে দেখি অন্যদের গুলো ঠিকঠাক আছে কিনা, বা হল কিনা?
মা- কেন, তোমাকে কেন অন্যদেরটা দেখতে হবে, আমাকে দিয়ে কি আর হচ্ছেনা?
বাবা- হ্যাঁ তোমাকে দিয়েই তো ভরপুর আমি। অন্যদেরটা দেখেই তো বুঝতে পারি, তুমি কতটা পারফেক্ট আমার জন্য। কি পেয়েছি আমি আর ভেবে ভেবে বিস্মিত হই, কিভাবে তোমায় পেলাম আমি! আর আমি কতটাই না অযোগ্য তোমার! আর কাউকে খুঁজে পেলেনা, আমার জালেই ধরা দিলে? ইস কত সাধ্য আর সাধনাই না করেছি। অবশেষে সার্থক!
মা- থাক থাক আর ন্যাকামো করতে হবেনা... আমি সব জানি আর সব বুঝি। তুমি আর আগের মত নেই, ভালোবাসনা আর আগের মত। বদলে গেছ অনেক অনেক।
বাবা- হ্যাঁ সেতো গেছিই বদলে অনেক অনেক, নেই আগের মত আর। অফিস যাই, ছেলেকে নিয়ে সময় কাটাই, একা একা পাহাড়ে যাই, তোমাদের নিয়ে সমুদ্রে যাই।
আগে ছাত্র ছিলাম। ছিল অখণ্ড অবসর। ক্লাস করতাম না। পরীক্ষা দিতাম না। সারাদিন তোমার ক্লাসের পাশে দাড়িয়ে থাকতাম হ্যাংলার মত করে। সেটা ছিল অপরিপক্কতা আর ভালোবাসার পাগলামি। রিক্সায় করে ঘুরতাম, মাঠে-ঘাটে আর গাছের তলায় বসে সময় কাটাতাম। অন্য রকম সময় ছিল।
আজকাল, সময়-চাওয়া-পাওয়া আর কঠোরতায় বদলে গেছে অনেক অনেক কিছু। কিন্তু ভালোবাসাটা আগের মতই আছে। শুধু মানসিকতা আর বোঝার ক্ষমতাটা কমে গেছে নির্মম আর সত্যিকারের বাস্তবতায়, বুঝলে? তোমার-আমার দুজনেরই।
মা- নাহ, আমার আগের মতই চাই। সব সময়, সর্বক্ষণ, পুরনো আর পাগলাটে তোমাকে!
বাবা- হুম, তাই? চল তবে ক্যাম্পাসে যাই! চল যাবে তুমি এক্ষুনি! যাই পাহাড়ে বা সমুদ্রে। শুধু তুমি বল আর ব্যাগ গোছাও। কি যাবে?
এবার ছেলে, এতক্ষণ পরে... আর আমি? আমিও যাবো তোমাদের সাথে। স্কানিয়াতে করে কক্সসবাজার, বান্দরবান, দার্জিলিং আর মানালি.........!!!
এবার মা-বাবা আর ছেলে ধরে জড়িয়ে একে অন্যকে আর হেসে গড়িয়ে পরে......
হ্যাঁ নিশ্চয়ই তবে তোর পরীক্ষা আর আমাদের অফিস ছুটি হোক, তবেই...... ঠিক আছে?
ছেলে- ঠিক আছে।
বাবা- তবে তো ভালোবাসাটা ঠিকই আছে কি বল?
মা- জানিনা......
বাবা- থাক, তোমাকে জানতে হবেনা। শুধু বুঝলেই হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৯