somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধুই অবিশ্বাসের অন্ধকার : ১ম পর্ব (গল্প)

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুধুই অবিশ্বাসের অন্ধকার : ২য় পর্ব (গল্প)
শুধুই অবিশ্বাসের অন্ধকার : শেষ পর্ব (গল্প)

অনিক, মারুফ, শুভ, ইমরান— চার মাস হল ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে ।
প্রতিদিন ক্লাস ফাঁকি ওদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে । মারুফ এর জন্য বেশ চিন্তিত । যদি ভালো রেজাল্ট না করতে পারে; তবে তার ফিউচারের কী হবে । বাবা-মা কত কষ্ট করে খরচ যোগায় । এদিকে বন্ধুদের এড়িয়ে যেতেও তার মন সায় দেয় না ।
বাকী ৩ জনের অবশ্য কোন মাথাব্যথা নেই । আরে ফার্স্ট ইয়ার হল ইনজয় করার সময় । রেজাল্ট-ফেজাল্ট নিয়ে এখন ভাবতে গেলে লাইফের মজাটাই মাটি হয়ে যাবে ।

আজ আলতাফ স্যারের প্রাইভেটটা শেষ করেই ওরা চারজন মিরাজ আঙ্কেলের কনফিকশনারিতে ঢুকে পড়ে । মারুফ হাত ঘড়িটা দেখে নিয়ে বলে উঠে, ‘কীরে ১০টার উপরে বেজে গেছে । বাংলা ক্লাসটা করবি না ?’
‘ধুর বেটা ! তুই বাংলা ক্লাসের চিন্তায় মরছ— ওটা শুধু পরীক্ষার আগের রাত পড়লেই ৭০% মার্ক পাওয়া যায় । বস এখানে । কোনটা খাইবে সেটা ক । চা নাকি ঠাণ্ডা ?’ ইমরান কিছুটা ধমকের সুরে মারুফকে বলে ।
মারুফ কিছু না বলে বসে পড়ে ।
শুভ অনিকের দিকে চোখ বাঁকিয়ে বলে, ‘কী দোস্ত ! তোমার মায়ার কী খবর ? কেমন চলতাসে ?’
অনিক প্রথমে মুখটা নিচু করে একটু হাসে । তারপর বলে, ‘ভালোই । তবে মাঝে মাঝে কেমন গম্ভীর গম্ভীর ভাব দেখাবে । অতটা ফ্রি না ।’
‘আরে ফ্রি হয়ে যাবে । ওটা নিয়ে এত চিন্তার কারণ নাই । সব মেয়েরাই প্রথমে একটু ভাব ধরে । আর যদি দেখো ভাব কমছে না; তার ঔষুধও আছে ।’ ইমরান বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথাগুলো বলে ।
‘তো মাম্মা, ঔষধটা কী তাও একটু বলে দাও না ।’ শুভর চোখে মুখে বেশ কৌতূহল ।
‘তা তোকে বলব কেন? প্রবলেমটা তো আর তোর না । ওটা অনিককে বলে দিব, সময় আসুক ।’
অনিকের কিছুটা অস্বস্তি লেগে উঠে । ‘আচ্ছা, তোরা থাম তো । ব্যাপারটা এখন বাদ দে । কে কী খাবি সেটা বল ।’
‘খাওনের জিনিস তো ভাই তোমার আছে । আমাগো ভাগ্যে তো আর জুটল না বন্ধু । ওই মায়ারে তো প্রথমে আমিই চাইছিলাম...’
কথাটা শেষ করতে পারে না শুভ । এতক্ষণ চুপ করে থাকা মারুফ রাগান্বিত হয়ে বলে, ‘এইসব ফালতু আলোচনা করতে তোগো ক্যামন লাগে বল তো দেখি । এবার একটু থামবি ।’
‘এই আঙ্কেল, আমাদের এখানে চারটা চা আর তিনটা গোল্ড লিফ দাও তো ।’ ইমরান মিরাজ আঙ্কেলকে অর্ডার করে ।
চা এসে গেছে । সবাই এক এক করে কাপ তুলে নেয় । প্রথমেই শুভ চুমুক দিয়ে বলে উঠে, ‘হেব্বি হইছি মাম্মা । এক্কেবারি পরানটা জুড়াই গেল ।’
ইমরান প্রথমে সিগারেট জ্বালিয়ে তারপর তার চায়ের কাপে চুমুক দেয় । মারুফ একটু দূরে সরে গেছে । সিগারেটের ধোঁয়া তার সহ্য হয় না । অনিকের কিছুটা মনমরা মনমরা ভাব । সে এখনো চায়ের কাপ স্পর্শ করে নি ।
‘কীরে অনিক ! তোর আবার কী হইল ? ওই গাধাটার কথাই মাইন্ড করছোস নাকি । বাদ দে, আমরা আমরাই তো ।’ ইমরান অনিকের ঘাড় চাপড়ে দেয় ।
শুভ মুচকে মুচকে হাসছে । ‘ না ইমরান, আমার কথায় অনিক রাগ করে নাই রে । মনে হয়, আজ ক্লাসে না যেতে পেরে মায়াকে খুব মিস্‌ করছে ।’
এবার অনিক হেসে উঠে । কাপ তুলে নিয়ে চায়ে চুমুক দেয় ।
‘এক কাজ কর অনিক । ইমরানের মোবাইল থেকে কিছু সেক্স ভিডিও নিয়ে যা । দেখলেই দেখবি মনের সব অশান্তি পানি হয়ে গেছে । আমি তো কালকে রাতে একটা দেখে পুরাই হট হইয়া গেছি । কী যে সেক্সি মাম্মা— পুরা রাত একটুও ঘুমাইতে পারি নাই । ও মাম্মা ! এখনো চোখের সামনে ভাসতাছে ।’ শুভ কথাগুলো শেষ করে সিগারেট জ্বালায় ।
অনিকের হাসির পরিমাণ আরো বেড়ে যায় । ‘তাই তো বলি, ইদানিং তোর অবস্থা এত বেগতিক কেন; তোর লজ্জা-শরম জিরোতে নেমে গেছে কেমনে— এখন তো ব্যাপারটা বুঝতে পারছি ।’
‘লজ্জা শরমের মায়রে বাপ ! এখন থেকে ভাবতাছি খালি সেক্সের সাগরে হাবুডুবু খাব । কী কছ ইমরান ?’ শুভ ইমরানের দিকে চোখ তোলে ।
‘আইডিয়াটা খারাপ না । তোর পক্ষে সম্ভবও । বাপ-মামুর বস্তাভরা টাকা আছে । তোর আর চিন্তা কীসের ।’
‘আচ্ছা এবার ওঠা যাক । যেমনে হোক বাকী ক্লাসগুলো করতে হবে । ওঠ ওঠ । ’ মারুফ সবাইকে তাগাদা দেয় ।
‘এই এমন ক্লাস ক্লাস করস ক্যা । হাই স্কুলের ভাবটা তোর এখনো গেল না । টয়লেটে ধরলেও তো মানুষ এমন করে না । তোর ইমার্জেন্সি হলে তুই যা । আমরা আজ যাব না, কী কছ তোরা ।’ বেশ বিরক্তির ভঙ্গিতে ইমরান বলে । শুভ আর অনিকও ইমরানের সাথে সুর মেলায় । আর টু শব্দ না করে কাঁধে ব্যাগ ফেলে বেরিয়ে পড়ে মারুফ । একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে কলেজের দিকে হাঁটা ধরে ।

ছুটির ঘন্টা বেজে উঠল । ক্লাস থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় মায়া । তার ফর্সা মুখখানি বেশ লাল হয়ে আছে । কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম রোদে চিকচিক করছে । তবে মুখের কোথাও স্বস্তির চিহ্ন নেই । চোখগুলোও কেমন লাল হয়ে আছে । মারুফকে দেখতেই তাকে হাত নেড়ে ডাক দেয় মায়া । এই ডাকের মানে আন্দাজ করে নেয় মারুফ; অনিকের কথা ছাড়া আর কী বলব । আস্তে আস্তে মায়ার কাছে এসে দাঁড়ায় মারুফ ।
‘তোমার ফ্রেন্ডের খবর কী ? আজ যে একদমও এল না !’ বারান্দা থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে মারুফকে জিজ্ঞেস করে মায়া ।
‘আমি তাকে আসতে বলেছিলাম । কিন্তু এলো না । শুভ আর ইমরানের সঙ্গটাই এখন ওর কাছে ক্লাস থেকে বশি ইমপোর্টেন্ট । নিত্য নতুন ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছে ।’
‘তুমি একটু বুঝাতে পার না ? প্লিজ ওকে একটু বুঝিও । এভাবে ক্লাস ফাঁকি দিলে ওর সর্বনাশ হয়ে যাবে । ও হয়ত এখন বুঝতে চাইছে না । আমি ওকে কত্ত ভাবে বুঝাতে চাই । কিন্তু...’
‘দেখো মায়া, যে জেগেও ঘুমিয়ে থাকে— তার ঘুম কখনো ভাঙানো যায় না । তোমার আর আমার থেকে বুঝ নেওয়ার মত মানুসিকতা অনিকের নেই । ওর গুরু হল ইমরান আর শুভ ।’ কথাটা শেষ করে প্যাডেলে চাপ দিয়ে সাইকেলে উঠে পড়ে মারুফ । ‘যাই মায়া । টেনশোন করো না । সব ঠিক হয়ে যাবে ।’
‘ওকে বাই । তুমি একটু বিকেলে দেখা হল ওকে বুঝিয়ে বোলো ।’
প্রখর রোদে উত্তপ্ত পিচঢালা পথে পা ফেলে শান্ত গতিতে আপন নীড়ের দিকে ছুটে যাচ্ছে মায়া । কিন্তু তার মনের আঙিনাজুড়ে শুধু একটা কিশোর-মূর্তি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । তাকে নিয়ে মায়ার ভাবনার অন্ত নেই ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৮
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×