শুধুই অবিশ্বাসের অন্ধকার : ১ম পর্ব
শুধুই অবিশ্বাসের অন্ধকার : শেষ পর্ব (গল্প)
ভোর সাতটা । দিনের আলো এখনো পরিষ্কার হয় নি । মিরাজ আঙ্কলের কনফেকশনারি এইমাত্র খুলল । অনিক সেখানে এসে হাজির । স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে চোখ মুখ থেকে ঘুমের রেশ এখনো কাটে নি । আজ সে একা । মারুফ, শুভ, ইমরান— কাউকেই ডাকে নি । যদিও সে জানে, ডাকলে কাউকে না কাউকে পেয়ে যেত । একটা ভীষণ চিন্তা তাকে এক সপ্তাহ যাবৎ গ্রাস করছে । মায়া নিয়মত ফোন করছে; সকাল সন্ধ্যা আলাপ হচ্ছে— তবুও কেন জানি সমস্ত মনে খালি শূন্যতা । কোথায় জানি একটা মহা অতৃপ্তির জায়গা কেবলই প্রসারিত হচ্ছে । তার দেহ-মন ক্রমশই কাতর থেকে আরো কাতর হয়ে উঠছে । একটু তৃপ্ত হতে চায় অনিক । কিন্তু কীভাবে ? মায়া যে এক্কেবারি অন্য রকম । যদি তার মনের কথা বলতে গেলে বিগড়ে যায় মায়া; যদি তাকে লম্পট ভেবে দূরে সরে যায়— তখন কী উপায় হবে অনিকের ? সে তো মায়াকে ভালোবাসে । মায়াকে ছাড়া নিজের অস্তিত্বের কথা কল্পনাও করতে পারে না অনিক । মায়াকে সে তার সব কিছু উজাড় করে দিতে চাইছে, অথচ মায়া তার কিছুই নিতে চাচ্ছে না । এমন কি অনিকের ভিতরে যে বিপুল তৃষ্ণা জেগে উঠেছে তার একটুও কি মায়া অনুভব করে না ? এমন সময় ইমরানের কথা মনে পড়ে অনিকের । সেদিন আড্ডায় তো ইমরান বলেছিল... । তাহলে ইমরানকে এখন ফোন করা যাক । তাকে সব খুলে বলে দেখা যাক কোন সলুয়েশন পাওয়া যায় কিনা ।
১৫ মিনিট পর শুভকে সঙ্গে নিয়ে মিরাজ আঙ্কলের দোকানে হাজির হয় ইমরান । ‘কীরে, এত সকালে যে আজ, ব্যাপার কী ?’ চোখ কচলাতে কচলাতে জিজ্ঞেস করে ইমরান ।
‘বোস তোরা । ব্যাপারটা খুবি সেনসিটিভ । একটু ভেবে বলছি । চল ওই জায়গাটাই বসি ।’ ওরা তিনজন মিরাজ অঙ্কলের দোকান থেকে বেরিয়ে পড়ে ।
‘বলে ফেল, বলে ফেল । আমরা আমরাই তো । এত ভাববার কী আছে ।’ শুভ অনিককে তাগাদা দেয় ।
‘আচ্ছা বলছি । তবে...’
‘তাহলে এখন থাক । তোর মনে যে এত চুদুর-বদুর ।’ ইমরান বিরক্তি প্রকাশ করে । মুখে তাকালে স্পষ্টই বুঝা যায় আজ রাতে তার ভালো ঘুম হয় নি ।
‘আচ্ছা যা বলছি । ব্যাপারটা হল... কীভাবে যে বলি । ধর আমি মায়াকে একটা প্রস্তাব দিতে চাই । এখন সে এটাকে কীভাবে নিবে— এ ব্যাপারে আমি খুবি চিন্তাগ্রস্থ । প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ আমি চট-পটাচ্ছি; কিন্তু কী করব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না ।’
‘ওকে বুঝেছি । প্রস্তাবটা কী সেটা বল ।’ ইমরান অনিকের মুখের দিকে চোখ তোলে ।
‘আমি ওর সাথে পিজিক্যাল রিলেশন করতে চাই । যেভাবেই হোক, আমি আর সহ্য করতে পারছি না । ব্যাপারটা আসলে মুখে বলে বুঝার মত নয় । প্লিজ এ ব্যাপারে আমাকে একটু হেল্প কর ।’
ইমরান ও শুভ বেশ উচ্চস্বরে হেসে উঠে । ‘দূর বেটা, এটা কোন ব্যাপার হল । তুই আসলেই একটা মহা আহম্মক । কী করে যে প্রেম-ভালোবাসার শখ জাগে তোগো মনে । আজকাল সব স্মার্ট প্রেমিক-প্রেমিকারাই তো এ ব্যাপারে... । আমি শুনে খুবি অবাক— তোদের মধ্যে এখনো ব্যাপারটা ঘটে নি । সত্যিই আমি খুবি ...’ কথাটা শেষ না হতেই শুভকে থামিয়ে দেয় ইমরান ।
‘শুন শুভ, তোর কথার সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই । কিন্তু অনিকের ব্যাপারটাকে এভাবে দেখলে হবে না । কারণ অনিক তার গার্লফ্রেন্ডের প্রতি কনফিডেন্ট না । তবে অনিককে কনফিডেন্ট হতে হবে ।’
‘কিন্তু কীভাবে দোস্ত ? তুই জানিস না, মায়া একেবারি অন্যরকম । তোকে কীভাবে যে বুঝাই ।’ অনিকের শ্যামবর্ণ মুখখানি রক্তবর্ণ হয়ে উঠে ।
‘এই বেটা, অন্যরকম মানে ! তুই কী জানিস— তোর দেহে এখন যে ক্ষুধা, সেটা ওর দেহে তিনগুন বেশি ।’ শুভ চেঁচিয়ে উঠে ।
‘আচ্ছা, এত কথা বাড়িয়ে লাভ নেই । অনিককে বলি, শুন । তুই যদি সত্যিই মায়াকে চাস, তবে আগে ওসব প্রস্তাব-টস্তাব না দিয়ে সরাসরি কাজ সেরে নিবি । একবার স্বাদ পেয়ে গেলে পরে তুই আর ওকে ডাকা লাগবে না, দেখবি তোকেই সে ডাকছে । তখন আর আমাগোরে লাগবে না তোমার । চুপে চুপেই একা সব... ।’ ইমরান বিজ্ঞের মত অনিককে বলে যায় ।
‘কিন্তু কীভাবে ?’ অনিকের চোখে মুখে ভয়ানক কৌতূহল । ........(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫