somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ স্পর্শের অধিকার

০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোনাপুর চৌরাস্তার বাসস্ট্যান্ডে রেশমাকে আজ আবার দেখলাম । হ্যাঁ, রেশমাই । চিনতে আমার কষ্ট হয় না, যদিও রেশমার অবয়ব আজ অনেকটাই পাল্টে গেছে । হাইট আগের মত থাকলেও বেশ মোটা হয়ে গেছে রেশমা ! কমতো না— আড়াই বছর ! হ্যাঁ, ঠিক এইখানটাতেই আড়াই বছর আগে আমরা একে অপরকে শেষবারের মতো দেখেছিলাম ।
আজ আবার । না, রেশমারও আমাকে চিনতে কষ্ট হয় নি । এক পলকে আমাকেও সে চিনে গেছে !
না, সাথে কেউ নেই । আজো রেশমা একা দাঁড়িয়ে । সেদিনও আমাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে রেশমা এখানে একাকী দাঁড়িয়েছিল, ঠিক এভাবেই । ডান কাঁধে ঝুলন্ত ভ্যানটি ব্যাগ, পাথরের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রেশমা আমার চলে যাওয়া দেখছিল ! যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায়, আমিও চলন্ত বাসের জানলা দিয়ে ক্রমশ ছোট হয়ে আসা রেশমাকে দেখছিলাম !
তবে রেশমাকে সেদিন ছেড়ে চলে আসার পর চলন্ত বাসেই আমার ভিতরে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটে গেছিল ! পরিবর্তন বলতে প্রবল ক্ষোভ-অতৃপ্তি-প্রত্যাখ্যান-পরাজয় আমাকে দুমড়ে মুছড়ে দিচ্ছিল যেন ! মনে মনে ঠিক করলাম, আর না, আর চলে না, এই প্রেম থাকা আর না থাকাই তফাত কী ! যেখানে একটা স্পর্শেরও অধিকার নেই সেটা কীসের প্রেম ! আমি মানি না, প্লেটোনিক ভালোবাসা আমাকে শুধু বঞ্চিতই করল দু’বছর, কিছুই দিল না । সিমকার্ডটা মোবাইল থেকে খুলে আমি সেই চলন্ত বাস থেকে ছুঁড়ে মারি বাইরের পৃথিবীতে ! ব্যস, আমাকে আর পায় কে !

বেশি কিছু তো না— আমি তো শুধু রেশমার হাতের স্পর্শটুকু নিয়ে আমার আগামী জীবনের পথে পা বাড়াতে চেয়েছিলাম ! কিন্তু না, তখনো রেশমা দিল না ! বলল— ‘এখন না, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি-বাকরি জুটিয়ে বিয়ে— তারপর...’
প্রেমের দু’বছরে রেশমা কখনো আমার হাতে হাত রেখে হৃদয়ের একটা কম্পনও অনুভব করতে চায় নি ।
আমি চেয়েছিলাম, এক-দুবার না, বহুবার ! কিন্তু কখনো খপ করে হাত ধরে জোর করে অধিকার ফলাতে যায় নি । ইচ্ছের বিরুদ্ধে প্রেমিকার শরীরের একটা লোম ছোঁয়াও আমার কাছে ছিল জঘন্যতম পাপকর্ম ! তবে আমি অনুনয় বিনয় করতাম ! রেশমা শুধু বলত— সবুর ধরো... আর আমি তো তোমারই আছি... হৃদয়ের ভালোবাসাটুকুই তো আসল, এটাও চলুক । আর স্পর্শের ভালোবাসাটুকু তোলা থাক্, আগামী জীবনের জন্য !
হ্যাঁ, রেশমা তুলে রেখেছিল, আর আমি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি, সেদিনই, চলন্ত বাস থেকে বাইরের পৃথিবীতে । কিন্তু ছুঁড়ে ফেলে দিলেই তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না— কোথাও না কোথাও রয়ে যায় ।
এইতো । আমি দেখতে পাচ্ছি, রেশমার হাতের প্রতিটা শিরা-উপশিরায় আমি সেই তুলে রাখা স্পর্শের ভালোবাসাটুকু আমি এই মুহূর্তে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ... কিন্তু...
কিন্তু রেশমা কি আমাকে ক্ষমা করবে ? মাঝখানের সব ধুয়েমুছে সেদিনটাকে নতুন আঙ্গিকে ফিরিয়ে আনবে ? হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলবে— ধরো, আজ আর কোনো শর্ত নেই !
আমি রেশমার দিকে একপা দুপা করে এগিয়ে যাই । রেশমা অনড়, নিঃশব্দ । আমার আর রেশমার দুরত্ব এখন দুই কদমের বেশি না ! তবুও কী আশ্চর্য, আমাদের কারোর মুখেই টু শব্দ নেই ! পরস্পর পরস্পরের দিকে কেমন অপলক চেয়ে আছি, তবুও আমরা পাথর হয়ে আছি— নিশ্চল নিস্পন্দ !
হঠাৎ রেশমার চোখ থেকে বাম হাতের তর্জনী-মধ্যমা-অনামিকায় জড়িয়ে থাকা তিনটা সোনার আংটির দিকে দৃষ্টি আটকা পড়ে আমার ! না, সেদিন তো এগুলি ছিল না... তার মানে ?

বাস স্টার্ট নেয়ার যান্ত্রিক শব্দটা বেজে উঠতেই যখন একজন গোঁফওয়ালা মধ্যবয়সী লোক ছট করে কোত্থেকে উধাও হয়ে রেশমার বাম হাতটা হাতে চেপে বলে উঠে— ‘চল, চল... বাস ছেড়ে দিচ্ছে... রসমলাই পায় নি, রসগোল্লা নিলাম পাঁচ কেজি... চল, দ্রুত ওঠে পড়া যাক’— তখন আমার কাছে সবকিছুই পরিস্কার ! বিয়ের পরের জন্য তুলে রাখা রেশমার স্পর্শের ভালোবাসাটুকু আর তোলা নেই !
রেশমা দ্রুত ওঠে পড়ে । স্ট্যান্ড ছেড়ে রেশমাকে নিয়ে বাস চলে যাচ্ছে । আমি দুই কদম এগিয়ে ঠিক রেশমার জায়গাটাতে পাথরের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি । না, বাসের জানলা দিয়ে রেশমা আমার দিকে একবারও তাকায় না !

©️ সালমান মাহফুজ

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×