ছেলেটির দিকে তাকাতেই ইচ্ছে করছেনা মনিকার, যতবার ওর দিকে তাকাচ্ছে ততবারই ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, বার বার চেষ্টা করছে ভাল লাগুক! এই ছেলেটা ওর নেট থেকে পরিচিত, প্রবাসি, একে বন্ধু ভাবত মনিকা, নেট এ এর অনেক ছবি দেখেছে, কমেন্ট করেছে, ছবি দেখে মনে হত কত ভদ্র একটা ছেলে! কত বড় বড় কথা তার!! কত বড় বড় সচেতনতা মুলক স্ট্যাটাস!! ছেলেটি এরি মাঝে একদিন জানায় যে সে দেশে এসেছে, মনিকাকে অনুরোধ করে দেখা করতে, এভাবে বেশ অনেকদিন অনুরোধ এর পর মনিকা অবশেষে রাজি হল মিট করতে, এবং আজ সেই দিন, লন্ডন থেকে আগত ছেলেটির সাথে দেখা করার দিন! কিন্তু শুরুটাই বেশ খারাপ! ওরা ঠিক করেছিল রমনার দিকে যাবে ঘুরতে, তাই সি,এন,জি নিয়েছিল, মনিকা লক্ষ করলো সি,এন,জি তে বসে ছেলেটা কথা বলতে বলতে বার বার ঝুকে পড়ছে ওর দিকে! আর কিছুক্ষন পর পর জিভ বের করে চাঁটা দিচ্ছে! কি কুৎসিত দৃশ্য! একটা কিছু অন্তত ভাল লাগুক!! কিন্তু না ভাললাগা তো দূরে থাক বিরক্তিটা চরম আকার ধারন করেছে মনিকার, যখন দেখল ২০ টাকা বেশি নেয়ার জন্য সি,এন,জি ওয়ালাকে ছেলেটি থাপ্পর দিলো, শুধু তাই না দরজা ধরে বানরের মত ঝোলাঝুলি করতে লাগলো আর পাগলা ভিক্ষুকদের মত বলতে লাগলো - দে, বিশ টাকা দে, আমার বিশ টাকা দে। আমার বিশ টাকা দিবিনা?!
ওকে তখন দেখতে ভণ্ড ভিক্ষুকদের মতই লাগছিল, মনিকা ঝট করে ছেলেটির মনে মনে নাম দিয়ে দিল, ‘বানর ভিক্ষুক’! মনিকার কাছে ২ টা ১হাজার টাকার চকচকে নোট ছাড়াও বেশ কিছু ১০ টাকা ২০ টাকার নোট ছিল, ওর খুব ইচ্ছে করছিল, বিশ টাকার কিছু নোট বানর ভিক্ষুকটার মুখে ছুড়ে মারতে, অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে চুপ করে সরে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রাস্তার মানুষজন ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে একবার মনিকার দিকে একবার লন্ডন থেকে আগত বানর ভিক্ষুকটার দিকে। টানা আধা ঘণ্টা ঝোলাঝুলি করে সি,এন,জি ওয়ালার কাছ থেকে ২০ টাকা আদায় করে তারপর ছাড়ল, হেটে এলো মনিকার দিকে,
- ওহ তোমাদের দেশটা যে কিনা!! ব্লাডি সীট! লোকটা কি বাস্টার্ড দেখেছো তো!!? আমিও ছাড়বার পাত্র নই। আমাদের লন্ডনে হলে…………(প্রসংশা) তারপর বাংলাদেশ নিয়ে (গালি! গালি! গালি!)
- হুম
- যাই হোক তোমাকে না বেশ সুন্দর লাগছে।
- তাই (বানর নায়ক এর পার্টে চলে এসেছে)
- বাই দ্যা ওয়ে তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?
- না
- না কেন?
- জানিনা, (বানরের সাথে কথা বলার ভারসাম্য রাখার জন্য দায় সারা জবাব)
- কাউকে কি ভাললাগে?
- না
- তোমাকে কেউ পছন্দ করে?
- নাতো!
- কি বল তোমার মত ভারসোলাইস মেয়েকে কে না পছন্দ করবে!!
- ওহ!!
- আমি একটা স্বপ্ন দেখি জানো , স্বপ্নে তোমার মত একটা মেয়ে সন্ধ্যায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিচ্ছে, রাতে আমার জন্য ডিনার বানিয়ে অপেক্ষা করছে, আমার পাশে বসে তাল পাখা দিয়ে আমাকে বাতাশ করছে, একেবারে গ্রাম্য পটভূমি বুঝলে!?
- ওঃ
- গ্রাম কিন্তু আমার অনেক ভাললাগে! কিন্তু এই যে এত ডাস্ট!!! এত নোংরা!! এসব আমার একদম সহ্য হয়না! ( বলতে বলতেই বানর লাফিয়ে সামনে সরে গেল, কেননা সে মাটিতে কারো থুথুর অংশ বিশেষ দেখতে পেয়েছে,) ও,এম,জি!! হলি সীট!! ব্লাডি কান্ট্রি ম্যান!!(গালি! গালি! গালি!) উফফ!! এর ভেতর মানুষ বসবাস করে কি করে!! আমাদের লন্ডনে......... (প্রসংশা) বাংলাদেশ তুলে আবার (গালি! গালি! গালি!) এই সব ব্লাডি কুকুরদের জন্য বাংলাদেশটা ধংস হয়ে গেছে, বাংলাদেশ আছে কি বল এই সব নোংরা রাবিশ ছাড়া এই দেশে কিছু আছে!! আমাদের লন্ডনে......... (প্রসংশা) (আবার শুরু)
ভিক্ষুক বানরটাকে নিয়ে রমনার লেক ধরে হাঁটছিল মনিকা, সেখানে ১০/১২ বছরের কিছু ছেলে ডুবোডুবি করছিল কিনারে পানি কম তাই ওদের হুটোপুটিতে পানি একটু বেশিইঘোলা হয়ে ছিল,
ভিক্ষুক বানর আবার শুরু করলো
-ইয়াক কি রাবিস দেখেছো! আমাদের লন্ডনে এই রকম কল্পনাই করা যাবে না!
- তুমি লন্ডন গেছ কত বছর?
- উ! এইতো ৮ বছর হল।
- এই ৮ বছরে লন্ডন তোমার দেশ, আর বাংলাদেশ রাবিস দেশ হয়ে গেল?
- অবশ্যই লন্ডন আমার দেশ। আমার গ্রিন কার্ড আছে।
এর সাথে কথা বলে লাভ নেই! ন্যূনতম বিবেক বুদ্ধি এর কাজ করছেনা, ভাবল মনিকা, ভাবতে ভাবতেই চমৎকার এক বুদ্ধি খেলে গেল মাথায়, হাঁটতে হাঁটতে যতটা সম্ভব লেক এর কিনারে চলে গেল ভিক্ষুক বানরকে নিয়ে, ইশারায় যা বলবার বলে দিল ছেলে গুলোকে, মনিকার আবার এই গুনটা আছে, ইশারায় যে কাউকে ও কি বলতে চায় বুঝিয়ে দিতে পারে! প্রথমে একটা পরে দুইটা এইভাবে সব কয়টা ছেলেই একে একে পানি থেকে উঠে এসে বানরের অলক্ষে ওর আশপাশে চমৎকার অবস্থান নিলো! এবং পলকের মধ্যে ভিক্ষুক বানরকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধাক্কা দিয়ে একদম কাঁদা পানিতে ফেলে দিল, বানর ভয় পেয়ে বিকট চিৎকার দিতে না দিতেই, ছেলে গুলো কাঁধের উপর চেপে বসে চুবাতে শুরু করলো ওকে, পুরো দৃশ্যটি মনিকা দূর থেকে উপভোগ করলো পরিতৃপ্তির সাথে। অনেকক্ষণ পর যখন ওরা বানরটা কে ছেরে দিল, তখন ওটার মুখের দিকে আর তাকানোর অবস্থা রইল না, ছাড়া পেয়েই বানর পুরো দমে অশ্লীল সব বাঙ্গাল গালি দেয়া শুরু করেছে।
বাহ!! এতক্ষনে ফিরে পেয়েছে বানরটি তার আসল সত্তা! তৃপ্তির সাথে মনিকা ফিরতি পথ ধরল, পেছন থেকে বানরের মনিকা মনিকা চিৎকার শুনতে শুনতেই মনিকা জলদি জলদি হেটে গেট পেরিয়ে সি,এন,জি ঠিক করে তাতে উঠে পড়লো! সি,এন,জি স্টার্ট দিয়ে ছাড়ার পর পরই বানর সেখানে পৌঁছে গেল। মনিকা ভেতরে বসে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।
সি,এন,জি ওয়ালা ব্যাপার টা লক্ষ করে জিজ্ঞেস করে বসলো কি হইছে মামা?
মনিকা হাসতে হাসতে বলল কিছু হয়নাই মামা এক ভিক্ষুক বানর হাল্কার উপর একটু শাস্তি পাইছে। হাহ হাহ হা…