somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পথে ঘাটে পর্ব(১৪)

০৫ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গতকাল বাসায় যাওয়ার পথে বি,আর,টি,সি দোতলা বাসে উঠলাম, পেছনের দরজা দিয়ে যে দিকটায় উপরে ওঠার সিঁড়ি থাকে সেদিক দিয়ে উঠলাম, ওই সাইট দিয়ে তিনটি করে দুই সাইটে ৬ টি সিটের যে সারি ওগুলো নাকি মহিলা সিট, আমার জানা ছিলনা, কিংবা ওই রুলস কাউকে কখনো মানতে দেখিনি।

দেখলাম পুরো বাসের মানুষ ঠেসাঠেসি করে দাঁড়িয়ে, আর ওই দুই সারির সিটে ও মানুষ ঠাসাঠাসি করে বসা। সবাই পুরুষ, আমি দৈনন্দিন অভ্যাস বশত দাঁড়িয়ে রইলাম, আমি খেয়াল করেছি বাসে উঠে প্রায় ৩০% ক্ষেত্রে বসার সিট পাওয়া যায়, ৪০% কিছুক্ষন দাঁড়ানোর পর কেউ নেমে গেলে সিট পাওয়া যায়, ২০% কেউ উঠে দাঁড়িয়ে বসতে দেয়। ৫% দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, (এক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় পুরো বাসের মানুষ বসে আছে শুধু আমি একাই দাঁড়িয়ে তখন কি যে পিকুলিয়ার লাগে সব কিছু, সবাই ভাবলেশহীন মাছের দৃষ্টিতে আমায় দেখতে থাকে) আর শেষ ৫% ঝগড়া করে/ এটা মহিলা সিট বলে/অনুরোধ করে বসা যায়, আমার মনে আছে একবার আমি জ্বর নিয়ে বাসা থেকে বের হইছি অফিসে যাব করে, (কর্পোরেট লাইফে জ্বর কোন অসুখের ভেতর পড়েনা) বাইরে বের হয়ে দেখি পা টলমল করছে, চোখে ঝাপসা দেখছি, কানের কাছে কেমন শো শো আওয়াজ হচ্ছে, শরিল অচল হই হই অবস্থায় মনের জোরে বাসে উঠলাম, বাড়ি থেকে অফিসে ১ ঘণ্টার পথ কিন্তু জ্যামের জন্য অধিকাংশ সময় দেড় ঘণ্টা লেগে যায়, যাই হোক বাসে উঠি দেখি সিট খালি দূরে থাক দাঁড়াবার অবস্থা নেই, গায়ে জ্বর জানান দিচ্ছিল এই দাঁড়িয়ে থাকা বেশিক্ষন আমি নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারবোনা, আমার কাধে রাখা হ্যান্ড ব্যাগটা মনে হচ্ছে পাথর!! পড়ে যাচ্ছিলো বার বার, আমি রড ধরে মহিলা সিট বরাবর ঝুলে আছি, ওখানে ইঞ্জিনের উপর একটু টুলের মত জায়গায় গাদাগাদি করে ৪/৫জন লোক বসা।

নিজের সর্বস্ব এনার্জি হারাতে বসেছি সে সময় ঠিক আমার সামনে একজন খুবই গরিব ময়লা শার্ট লুঙ্গি পরা লোক হাতে একটা টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে বসা তাকে বললাম ভাই একটু বসতে দেন না প্লিজ আমি খুব ক্লান্ত জ্বর এসেছে, সে কয়েক মুহূর্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে উঠে দাঁড়ালো অল্প একটু জায়গা ঠেসাঠেসি করে বসলাম, সে টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে পড়েছে বিপাকে, দাঁড়িয়ে থেকে কিছুতেই ওটা সামাল দিতে পারছেনা,
বললাম আমাকে দিন, আপনি কি অসুস্থ?
ঘামছে সে, বলল হু গতকাইল থেইক্কা জ্বর,
কিছু খান নাই?
না খাই নাই, খাইলে তো দেরী হয়ে যাইব, কয়টা ভাত আর একটা আলু সেদ্ধ কইরা নিছি, দুপুরে খাবো, কারখানায় ঢুকতে দেরী হইলে বইক্কা আর রাখবেনা, আমি তার দিকে চেয়ে আছি, রুগ্ন কালো গরিব চেহারায় আমার প্রতিচ্ছবি!!! তার সাথে আমার কিই বা এমন পার্থক্য আছে!!! সে যেমন না খেয়ে জর নিয়ে বের হয়েছে তার বসের ভয়ে আমি ও তো তাই, আমার মাথার উপর ডিপার্টমেন্ট বস, সহ কর্মী আর এইচ,আর ডিপার্টমেন্ট। একি তো।
যাই হোক বি আর টি সির ঘটনা প্রশঙ্গে আসি, সেখানে আমি কেবল কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়েছিলাম এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন বেশ কয়বার ধরে বলেছে এটা মহিলা সিট উনাকে বসতে দিন, আমি চুপ মন খারাপ তাই বসার গরজ কম, মন খারাপ হলে কিচ্ছু ভাললাগেনা কিচ্ছু না।

দেখতে দেখতে সবাই সবার সাথে ঝগড়া বাধিয়ে দিলো আমাকে বসতে দেয়া নিয়ে (এরকমটা অনেক বার দেখেছি এই মহিলা সিট ছাড়েন বলে তুমুল ঝগড়া হয় কিন্তু সিট কেউ ছাড়েনা)এই দৃশ্য নতুন কিছুনা, তাদের ঝগড়া হচ্ছে আমি দাঁড়িয়ে এই রকম এক পর্যায়ে লম্বা শুকনা ফর্সা এক ছেলে বলে উঠলো কেউ মেয়েটিকে বসতে না দিলে আমিই বসতে দিব।
আমার দিকে ফিরে বলল আপনি বসেন এখানে, খুবই উত্তেজিত ধমকের সাথে বলা, আমি থ্যাংক ইউ বলে বসলাম, আমার কি আমি তো বলিনাই আমাকে সিট খালি করে দাও আমাকে নিয়া ঝগড়া কর, বসে দেখলাম বাসে অনেক মহিলাই দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু তাদের বসা নিয়া কেউ ব্যস্ত হচ্ছে না, এর মানে এই সাইটটা আগে থেকেই কোন কারনে খেপা হয়ে আছে, হতে পারে এরা ঝগড়া করার ইস্যু খুঁজছে শুধু,

আমার পাশে বসা লোকটি অনুনয়ের সাথে বলল যে তার হাতে প্লাস্টিকের টুল এটা নিয়া দাঁড়ানই টাফ তাই বসতে দিতে পারেনি, আমি সমস্যা নেই টাইপ হাসি দিয়ে চুপ করে রইলাম, লম্বা শুকনা ছেলেটি ঠিক আমার সামনে দাঁড়িয়ে যে আমাকে তার সিট ছেড়ে বসতে দিয়েছিলো, এরকম এক মুহূর্তে বাসের কন্টাক্টর এলো বাস ভাড়া নিতে ১৫/১৬ বছর বয়স হবে ছেলেটার,

এমন সময় আমাকে বসতে দেয়া ছেলেটি কন্টাক্টর ছেলেটিকে বলল ওই তুই আমার কাছে তখন আই ডি কার্ড চাইলি ক্যান ভাড়া তো ৪০ টাকাই নিছস স্টুডেন্ট ভাড়া তো নিস নাই তাইলে শুধু শুধু আই ডি দেখতে চাইলি ক্যান,
ছেলে কিছু একটা জবাব দিতেই শুরু হল মারামারি, ছেলেটি ২ টা মারলে কন্টাক্টর ১ টা ফিরিয়ে দিতে পারছে, কন্টাক্টর বেচারার বয়স কম শরিলে অত শক্তি ও এখনো হয়নাই ওই ছেলের সাথে মারামারি করার তার উপর এক হাতে এতক্ষন যে ভাড়া তুলেছে সেগুলো ধরা তাই মার শেষের দিকে শুধু খাচ্ছেই, ওদের দুই পাশে কত মানুষ দাঁড়িয়ে কেউ থামাচ্ছে না, এক পর্যায়ে দেখলাম কন্টাক্টর ছেলেটির কান চেপে ধরেছে এমন ভাবে যে আমার ভয় হচ্ছিল এই বুঝি ছিরে ওটা ছেলেটির হাতে চলে আসবে,

আমি এবার অনেক জোরেই বললাম ওদের থামান প্লিজ। এবার বেশ কজন এগিয়ে গেলো অনেকক্ষণ দস্তাদস্তি করে তবেই থামানো গেলো, জিদ্দে যাত্রি ছেলেটি কেঁপে কেঁপে উঠছিল মোবাইল হাতে নিয়ে কাকে কাকে ফোন দিতে শুরু করলো, কন্টাক্টর ছেলেটিকে মাইর দেয়ার প্ল্যানিং আর কি, বাসের সবাই ওকে শান্ত ট্রাই করছে ছেলেটি কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না, ওর মুখে এক কথা তুই আই ডি কার্ড দেখতে চাইলি ক্যান।

বেশ অনেকক্ষণ পর ছেলেটির রাগ পড়ে যেতে লাগলো, কারন ওর বন্ধুদের ফোন করে কাউকেই আসেপাশে পাচ্ছে না, এতক্ষনে আমার কথা তার মাথায় আসতে লাগলো হয়তো, (মেয়েটি নিশ্চয়ই পুরো ব্যাপারটা দেখছে!!)লজ্জিত চোখে বার বার সে আমাকে দেখতে লাগলো।

এই রকম এক সময় কন্টাক্টর ফিরে এলো ওর কাছে হয়তো বাসের যাত্রীরা ওকে বুঝিয়েছে ও হয়তো সরি বলতেই এসেছিলো কিন্তু কাছে আসতেই ওর কলার চেপে ধরে ছেলেটি বলে উঠলো তুই আই ডি কার্ড চাইলি ক্যান , জবাবে কন্টাক্টর ছেলেটা ঠাস করে ছেলেটির গালে এক চর বসিয়ে দৌড় দিয়ে ওর নাগালের বাইরে!!! হাহাহা। আমি কি কষ্টে যে হাসি চেপে রেখেছি, (আফটার অল সে আমায় বসতে দিয়েছিলো, তার কষ্টে আমার হাসা উচিত না,) এর ভেতর ছেলেটি আমার দিকে বার কয়েক চেয়ে বুঝে ফেলেছে আমার প্রতিক্রিয়া, সে আমার মনোভাব বুঝে হতাশাগ্রস্থ, আহত!!

নেমে যেতে যেতে মনে মনে বললাম, হে মাথা গরম যুবক, মাথা ঠাণ্ডা রেখে রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করবে, হেল্পারের চর খাওয়া কোন কাজের কথা না।

বিঃ দ্রঃ এটা কোন গল্প নয় আমার জীবনে পথে ঘাটে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×