somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যর্থ বাসনার দাহ

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুব তাড়াহুড়া করে বের হয় তন্দ্রা, আজ স্কুলে যাবেনা, কোন টিউশনি করাবেনা, ফোন করে সব স্টুডেন্টকে মানা করে দিয়েছে। এগারোটার আগে ওকে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে, নাবিল আসছে, নাবিল আসছে, দুইবার আনমনে বলে ওঠে ও, আজ চার বছর ২ মাস পর দেখা হবে ওদের, একা একাই হিসেব করে তন্দ্রা, চার বছর!কত লম্বা সময়! অথচ মনে হয় এই তো সেদিন, নাবিল ইউ’কে যাওয়ার আগের দিন তন্দ্রার সাথে দেখা করেছিলো, সেদিন মেয়েদের মত করে সেকি কেঁদেছিল ছেলেটা। এখনও নাবিলের কান্নার মুহূর্ত, ওর চোখের জলে ভিজে ওঠা মুখ, চোখ,গাল, এলোমেলো না আঁচড়ানো চুল, পার্কের বেঞ্চ, হাতে ধরে রাখা মোবাইল, হাতা গুটানো শার্ট, ওর চোখে ভাসছে! এই তো সেদিন!
দিনগুলো কত দ্রুত যে চলে যায়, সেদিন নাবিল ওকে কত অনুরোধ অনুনয় যে করেছিলো তুমিও চলো তন্দ্রা, কিন্তু ইউ’কে যেয়ে লেখাপড়া করার মত সামর্থ্য যে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে তন্দ্রার নেই, কিংবা বাড়ি থেকেও যে অনুমতি মিলবেনা সেটা তো নাবিলের অজানা নয়। তবে কেন এরকম অবুঝের মত কথা বলেছিল!!

নাবিলের ইউ’কে পড়াশুনার ব্যাপারটা ওর বাবার হঠাৎ সিদ্ধান্তেই, আর বেশ ঝটপট সব রেডি হয়ে গেলো, দেশের পড়াশুনার থেকে বাইরের দেশে পড়াশুনা করলে নাবিলের জন্য বেটার ফিউচার তাই ওর বাবার এই সিদ্ধান্ত। অবশ্য নাবিলের যে কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক তা ওদের পরিবারের কেউ জানেনা।
এয়ারপোর্ট পৌঁছে ফ্লাইট ল্যান্ডিং টাইম জেনে নিয়ে একটা পত্রিকা কিনে লাগোয়া রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়তে লাগলো তন্দ্রা, এভাবে অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে আসেপাশে, তারপরও সবাই তন্দ্রাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে!
একটা নীল সাদা শাড়ি পড়েছে ও, হ্যান্ডব্যাগের পাশেই রাখা এক গুচ্ছ গ্লাডিওলাস , রজনীগন্ধা আর গোলাপ দিয়ে বানানো ফুলের তোড়া। এখনও অনেক সময় বাকী, অনেক আগেই চলে এসেছে তন্দ্রা।
সারাটা রাত নাবিলের কথা ভেবে ভেবে নির্ঘুম কেটেছে বলে বসে বসে অপেক্ষা করে করে ঝিমুতে লাগলো এবং এক সময় খেয়াল করলো অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে, আর মাত্র মিনিট ত্রিশেক দেড়ি। তারপরই নাবিল ওর সামনে থাকবে। আচ্ছা নাবিল কি এতদিন পর তন্দ্রাকে দেখে জড়িয়ে ধরবে? ওর রিলেটিভদের কেউ সাথে থাকলে! ও অবশ্য মেইলে লিখেছিল অসুবিধা নেই তুমি এয়ারপোর্ট এসো, তারমানে হয়ত তেমন কেউ থাকবেনা। হয়ত কেবল ওদের বাসার ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিয়েছে ওকে রিসিভ করতে, কিংবা নাবিলই হয়ত মানা করেছে কাউকে আসতে, যেই এক রোখা ছেলে।
ইউ’কে যাওয়ার পর নাবিল প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো পড়াশুনা নিয়ে, এফ,বিতে তো নাম মাত্র একটা প্রোফাইল আছে ওর, তবু মাসে অন্তত একবার তন্দ্রার সাথে সময় বের করে কথা বলতো নাবিল, বেচারা!! এত্ত ভালো কেন যে বাসে ছেলেটা ওকে! আনমনে ভাবতে থাকে তন্দ্রা।
প্রচণ্ড রোদ উঠেছে আজ, হঠাৎ হঠাৎ গাড়ি হুসহাস করে সাইড দিয়ে চলে যাচ্ছে, একটু দূরে একটা কাঠবাদাম গাছ ভর্তি পাখি কিচিরমিচির করছে, মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে থাকে সেদিকে।

সকালে কিছুই খেয়ে না আসায় হঠাৎ খুব ক্লান্তি বোধ করে ও, হেঁটে হেঁটে একটা দোকানে এসে এক কাপ চা নিতে নিতে খেয়াল করে, এগারোটা বেজে গেছে! এর মধ্যে নাবিল চলে এলো নাতো!!
চায়ের কাপ রেখেই দৌড় দেয় ও। যেখান দিয়ে যাত্রীরা বের হচ্ছে ওখানে গিয়ে দেখে অনেকেই ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেছে, এক লোক লাল গেঞ্জি আর সানগ্লাস পড়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে একটা মাইক্রো এগিয়ে যেতেই তাতে উঠে পড়লো, এক বিদেশিনী কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো, এরপর সেও চলে গেলো, এরকম আরও আরও যাত্রীরা বের হলো চলেও গেলো কিন্তু নাবিলকে কোথাও দেখা গেলনা। নাবিলের কি তবে ফ্লাইট লেট! কি ব্যাপার! কি হলো! চিন্তার সাথে সাথে মনটা ও ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে যাচ্ছে তন্দ্রার।

ঠিক তক্ষুনি অফ হোয়াইট লং স্কার্ট পড়া একটা মেয়ের হাত ধরে বেরিয়ে এলো নাবিল।
তাদের কথা বলার ধরন মুখমণ্ডলের বহিঃপ্রকাশ দেখে যে কেউ বুঝবে তাদের ভেতর সম্পর্ক কি! মেয়েটি প্রায় লেপটে আছে নাবিলের শরীরের সাথে! কি যেন কি মনে আসতেই নাবিলের কানের কাছে মুখ নিয়ে কথা বলতে বলতে হেসেই খুন! নাবিল আলতো করে নাক টেনে দেয় মেয়েটির! সেকি মুগ্ধতার ঝিলিক দুজন দুজনের প্রতি। সেদিকে চেয়ে থাকতে থাকতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে থাকে তন্দ্রার। দৃশ্যটি অবিশ্বাস্য!
দৃশ্যটি বাস্তব কিছুতেই হতে পারেনা, যা কিছু হচ্ছে সব ভুল সব মিথ্যা এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়! ঘুম ভাঙলেই দুঃস্বপ্ন কেটে যাবে।

এক মহিলার বড্ড আনন্দময় কথা কানে আসে, আমাদের নাবিলটা দেখি বিদেশ থেকে পুতুল বিয়ে করে নিয়ে এসেছে গো একদম পুতুল একটা।
পিছিয়ে আসে তন্দ্রা!
যে সত্যি একটি মানুষের জীবন ধংস করে দেয় যে সত্যির ভেতরে লুকিয়ে থাকে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা সেই সত্যির মুখোমুখি না হওয়াই ভালো!
দ্রুত পায়ে হাঁটতে শুরু করে ও, দুরের ওই আকাশটার শেষ সীমানা পর্যন্ত এক্ষুনি পৌঁছানো ভীষণ জরুরী যেন।!
এক্ষুনি হেঁটে হেঁটে পুরো পৃথিবীটা ঘুরে ঘুরে না দেখলেই নয়! ওকে ভালোবাসা নামের নিষ্ঠুরতা থেকে ছুটে পালাতে হবে; যত তাড়াতাড়ি সম্ভব! বুকটা ভেঙ্গে যাচ্ছে কেন! দুচোখ অন্ধকার হয়ে আসছে।
থামলে চলবে না, একবার থেমে গেলেই পরাজিত! ওকে যে করেই হোক সমস্ত বেদনাকে, সমস্ত পরাজয়কে, সমস্ত মিথ্যাকে, সমস্ত উপেক্ষাকে, সমস্ত বৈষম্যকে, সমস্ত ঘৃণাকে, সমস্ত প্রতিশোধকে সমস্ত ক্লান্তিকে, সমস্ত চোখের জলকে দু পায়ে মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই হবে।।

''শুনি ক্ষণে ক্ষণে মনে মনে
অতল জলের আহ্বান।
মন রয় না, রয় না, রয় না ঘরে,
চঞ্চল প্রাণ।
ভাসায়ে দিব আপনারে,
সকল ভাবনা-ডুবানো ধারায়
করিব স্নান।
ব্যর্থ বাসনার দাহ
হবে নির্বাণ।''
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×