প্রতিদিনের মত ভোর রাতে সূর্য বাবু স্নান করতে গেলো পদ্মা নদীতে, নদীর পাড়ে যেখানটায় সে রোজ ঘটি বাটি সাবান কেস, গামছা এবং লুঙ্গি খানা রাখে সেখানেই সেগুলো রাখলো, এবং সামনে যেখানটায় বেলে মাটি পায়ের তলায় নরম হতে থাকে সেই বরাবর কিছুদূর এগিয়ে গেলেই কোমর সমান জল। নদীর এই দিকটায় তেমন জনবহুল না হওয়ায় পাকা ঘাট তো দূরে থাক একটা গাছের গুড়িও নেই, তবু সূর্য বাবু এভাবেই স্নান সেরে নেয় রোজ।
আজ জলে নামার পর নদীর জল আরও কোমল আরও আরামদায়ক ঠেকলো আহা ভগবান!! বেঁচে থাকায় যে এত সুখ!! মুখে খানিক জল নিয়ে কুলকুচি করে খানিকটা খায় এভাবেই তার স্নান শেষ করে সেইখানে চলে আসে সে যেখানে তার সাবান কেস গামছা লুঙ্গি রাখা, এবং ঠিক যখন ঝুঁকে সে গামছা তুলতে গেলো নাকে প্রচণ্ড অসহ্য গন্ধে পেটের নাড়ীভুঁড়ি বেরিয়ে আসার যোগাড় হলে উঠে ঘুরে দাঁড়াতেই সেখানটায় চোখ পড়লো।
একটা পঁচা গলা লাশ! হরহর করে বমি করে দেয় সূর্য বাবু। তারপর অজ্ঞান। ঠিক কতক্ষন পর জ্ঞান ফিরেছে মনে করতে পারেনা। সকালের সূর্যের ঝকঝকে রোদ যেন চিত হয়ে অর্ধচেতন অবচেতনে পরে থাকা সূর্য বাবুর চোখ গেলে দেবে সূর্যের তাপ। সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই আবারো দেখল মেয়েটিকে, নাহ চেহারা কিছু বোঝা যাচ্ছে না, মুখ শরীর বেশির ভাগ অংশই পোড়া, একটা ব্যাপারে সূর্য বাবু চমৎকৃত হল সেটি হচ্ছে মেয়েটির শরীর ভর্তি গহনা!
একে একে নাকমুখ কুঁচকে পঁচা গন্ধ সহ্য করে সব খুলে নিয়ে বাড়ির দিকে দৌড় দিলো সূর্য বাবু, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরে সেগুলো আলমিরায় রেখে রীতিমত হাঁপাতে লাগলো!
কিছুটা অসুস্থবোধ করতেই চাঁদর মুরি দিয়ে শুয়ে পড়লো সে।
চোখ মেলে তাকালো যখন, তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে, প্রথমে কিছুই মনে করতে পারলো না, বুঝলো খাটে শুয়ে আছে সে, কিন্তু তার চারপাশে সবাই ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কেন! কি হয়েছে! প্রত্যেকে কেমন উদ্বিগ্ন। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে, তবু বউয়ের হাতে হাত পাখা, মেয়ে পায়ের তলায় তেল মালিস করছে। ব্যাপার কি!
আর তখনি দেখলো সেই মেয়েটিকে।চোখে চোখ পড়তেই মেঝের সাথে গা ঘষে ঘষে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো সূর্য বাবুর দিকে।
আতঙ্কে বিস্ফোরিত চোখে সেদিকে চেয়ে কাঁপতে লাগলো সূর্য বাবু, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে আসতে বললো ওকে আলমারির ড্রয়ার থেকে সোনার গয়না গুলো দিয়ে তোরা, সূর্য বাবুর সেসব অস্পষ্ট কথার অর্থ কেউ বুঝতে পারলোনা।
শুধু বুঝলো সূর্য বাবু ভীষণ অসুস্থ আজ সারাদিন! তার অসুস্থতা এখন আরো বেড়ে গেছে, জলদি ডাক্তার ডাকা দরকার।
তারপর সূর্য বাবু শেষ নিঃশ্বাস নেয়ার তাড়নায় বুক দ্রুত ওঠানামা করতে করতে ফ্যাস ফ্যাসে গলায় আরো কিছু বললো!
কেউ একজন জল আনতে দৌড়ে গেলো পাশের ঘরে।
বাইরে কিছু কালো কাক কা কা করে ডেকেই যাচ্ছে তাড়'স্বরে সেই সাথে অদ্ভুতভাবে এসবের সাথে যুক্ত হয়েছে এক পাল কুকুর।
ডাক্তার যখন বাড়ি এসে পৌঁছালো ততোক্ষণে প্রান বেরিয়ে গেছে সূর্য বাবুর।
কারন হিসেবে ডাক্তার বাবু বলল হার্ট ফেইল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৩২