somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ ক্রাইম ইলুশন

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রশিদ সাহেব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছেন, সত্যি বলতে কি রাতে একদম ঘুমাতে পারেনি কি সব দুঃস্বপ্ন দেখেছেন, ঠিক মত মনেও করতে পারছেন না, অথচ রাতে কি ভীষণ ভয়ঙ্কর লেগেছে সেগুলো, পানি পিপাশায় বুকটা একদম ফেটে যায় যায় অবস্থা। হাত মুখ না ধুয়েই বাসি মুখেই ঢক ঢক করে এক মগ পানি গিলে সে।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেফ করতে করতে দেখে চেহারাটা একদম খটখটে দেখাচ্ছে, চোয়ালটা ঝুলে পড়েছে, চোখ দুটো লাল টকটকে অনেকটা গর্তে ঢুকে গেছে। কি অদ্ভুত যে লাগছে নিজেকে।

রশিদ সাহেব তৈরি হয়ে নেয়, কলেজে যেতে হবে, ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের সাথে ক্লাস আছে তার। বিয়ে শাদী করি করি করে করা হয়ে ওঠেনি। বয়স চল্লিশ বিয়াল্লিশ হবে, ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে একাই থাকেন। এক মহিলা এসে রোজ বিকেলে রান্না করে দিয়ে যায়। সেই খাবারই চলে পর দিন পর্যন্ত।।

ক্লাসে ঢুকেই রশিদ সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে, প্রতিটা ছেলে মেয়ে বক বক বক বক হাউকাউ চিৎকার চেঁচামেচি করে ক্লাসটাকে মাথায় তুলেছে। ডাস্টার টেবিলে পিটিয়ে তবেই কিছুটা শান্ত হয়েছে তারা, প্রথম বর্ষের ছেলেপেলে গুলো এমনি হয়, ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে না জানি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছে।
পেছনের এক ছেলেকে ধমক দিয়ে দাঁড় করালো, চোখ দিয়ে ঝলসে দেয়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে জানতে চাইলো নাম কি?
- আপেল?
- কি নাম?
- স্যার আপেল স্যার
- বাবার নাম কি?
- লিচু স্যার?
- ওহ, মায়ের নাম কি কমলা?
- না স্যার তবে আমার ভাই এর নাম স্যার বেদানা
- বাহ বেশ নাম, তোমরা সবাই দেখছি ফল,
- জি স্যার আমার আব্বার ফল পছন্দ।
আচ্ছা বলো অমাবস্যার জোয়ার পূর্ণিমার জোয়ারের তুলনায় অনেক তেজী হয় কেন? এই প্রশ্ন খুব সোজা, ক্লাস টেনে পড়ে এসেছ। বলো বলো---
স্যার অমাবস্যা তিথিতে সূর্য ও চন্দ্র পৃথিবীর একই দিকে একই সরল রেখায় থাকে বলে পৃথিবীর একই স্থানে একই সঙ্গে চন্দ্র ও সূর্যের যৌথ আকর্ষণ কার্যকারী হয় । চন্দ্র ও সূর্যের এই মিলিত আকর্ষণে একই সঙ্গে মুখ্য চান্দ্র জোয়ার এবং মুখ্য সৌর জোয়ার হয় এবং তার বিপরীত বা প্রতিপাদ স্থানে একই সঙ্গে গৌণ চান্দ্র জোয়ার এবং গৌণ সৌর জোয়ার হয় । চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে সৃষ্টি হওয়ার জন্য অমাবস্যার জোয়ার পূর্ণিমার জোয়ারের চেয়ে অনেক বেশি জোরদার হয় এবং সমুদ্রতলে অত্যধিক জলস্ফীতি ঘটে । এই জন্য অমাবস্যার জোয়ার পূর্ণিমার জোয়ারের চেয়ে অনেক বেশি তেজী হয়।

ছেলেটা এত সুন্দর করে উত্তর দেয়ায় রশিদ সাহেবের মেজাজ কিছুটা ঠাণ্ডা হয়, বসতে বলে ধীরে ফিরে আসে তার জায়গায়, পুরো ক্লাসের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়, নাহ এবারের ব্যাচটা যত খারাপ ভেবেছিলেন তত খারাপ নাহ।।

বাসায় ফেরার পথে, দুটা পেঁপে, লাউ শাক আর কুমড়া কিনে বাসায় ফেরে। অন্যদিনের তুলনায় আজ ক্লান্ত লাগছে বেশ, শরীরটা বিছানায় ছেড়ে দিতে পারলেই যেন বাঁচে, অনেক সময় নিয়ে তালা খুলে ভেতরে ঢোকে রশিদ সাহেব। ঢুকেই চক্ষু ছানা ভরা, সারা ঘরময় উলটপালট, যেন চোর ঢুকেছে ঘরে, তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢোকে সে, অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা খোঁজাখুঁজি করে স্থির হয় উনি, নাহ ঘরের প্রতিটি জিনিষ ঠিক আছে। তাহলে ঘড় উলটপালট করলো কে? কেন? প্রশ্নের কোন কূল কিনারা করতে না পেরে হাত মুখ ধুয়ে কোনরকম শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে, কিসের একটা অস্বস্তি তাকে ঘিরে থাকে যেন।

এভাবে কতক্ষন ঘুমিয়েছে বলতে পারেনা, যখন ঘুম ভাঙ্গে জানালার ওপাশে তখন গাঢ় কালো অন্ধকার আকাশময়, আজ অমাবস্যা নাকি!! এত অন্ধকার কেন!?

ধীরে উঠে বসে, কাজের বুয়া আসেনি, কিংবা বন্ধ দরজা ধাক্কাধাক্কি করে চলে গেছে, গভীর ঘুমে থাকার কারনেই হয়তো শুনতে পায়নি। ঘড়িতে রাত দশটা।
সারা ঘরে বেশ কিছু মাছি উড়ে বেড়াচ্ছে। ভন ভন শব্দ ছড়াচ্ছে, হাত দিয়ে জোরে জোরে মাছি তাড়াবার চেষ্টা করেন রশিদ সাহেব, কিন্তু কাজ হয় না, একটা মাছি ও সরে না, আরও যেন বেড়ে যায়।

ভেতরের ঘরে খুট করে একটা শব্দ হয়! তারপর আবার! আবার! ঐ তো আবারো, নিশ্চিত চোর ঢুকেছে ঘরে, হাতের কাছে একটু খুঁজতেই একটা হাতুড়ি পেয়ে যায় সে, ওটা দিয়ে গতকালই পেরেক ঠুকেছিল দেয়ালে, ধীরে; নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ায়, আজ চোরকে দেখে নেবে।


এই মুহূর্তে রশিদ সাহেব তার স্টাডি রুমে বসে আছেন, তার ফ্লাটে অনেকগুলো রুম, একা বলেই নিজের মত করে ভালো ভাবে থাকতে পারছেন, নিজের মত করেই বেড রুম, স্টাডি রুম, ডাইনিং রুম, গেস্ট রুম সাজিয়ে নিয়েছেন।
কলেজের প্রথম বর্ষের ছেলেমেয়েদের নবীন বরন অনুষ্ঠান উপলক্ষে রশিদ সাহেবকে স্পীচ দিতে হবে সেটাই গুছিয়ে লিখছেন, আগেভাগে স্পীচ লিখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার প্র্যাকটিস করতেই হবে, তাহলে মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্পীচ দেয়ার সময় অস্বস্তিটুকু আর থাকেনা। বাণিজ্য মন্ত্রী আসবেন নাকি কাজেই একটু প্রিপারেশন না নিলেই না।

কিন্তু সেই তখন থেকে বসে আছেন অথচ প্রথম কয়েকটি লাইন লিখে আর এগোতেই পারছেন না। লিখেছেন সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রী সাহেব, সম্মানিত বিশেষ অতিথি, কলেজের গভর্নিং বডির সম্মানিত সদস্যসহ আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও শিক্ষিকাবৃন্দ, কলেজের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মচারীবৃন্দ, শ্রদ্ধেয় অভিভাবকমণ্ডলী ও অনুষ্ঠানে আসা সম্মানিত সুধীবৃন্দ, আপনাদের সবাইকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শুরু করছি।


এই, ঠিক এই মুহূর্তে কে যেন তার হাত থেকে কলমটা কেড়ে নিলো! লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে, কলম ছিটকে পড়লো মেঝেতে,
মেঝে থেকে কলম তুলতে যেই ঝুকেছে
নীচে কার যেন দুটি পা! অথচ ঘরে কেউ নেই! মাথা তুলে চেয়ে দেখে কিছু নেই। পাগল হয়ে যাচ্ছি নাকি ভাবে রশিদ সাহেব।
তখনি ভেতরের ঘরে খুট করে শব্দ হয়, হাতুড়িটা হাতের কাছেই ছিল।

বসে বসে অনেকখানি লিখে ফেলেছে সে সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রী সাহেব, সম্মানিত বিশেষ অতিথি, কলেজের গভর্নিং বডির সম্মানিত সদস্যসহ আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও শিক্ষিকাবৃন্দ, কলেজের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মচারীবৃন্দ, শ্রদ্ধেয় অভিভাবকমণ্ডলী ওঅনুষ্ঠানে আসা সম্মানিত সুধীবৃন্দ।
আবার খুট করে শব্দ
হাতুড়িটা হাতের কাছেই ছিল,
ঝন ঝন করে ফোন বেজে ওঠে।
ঘড় ভর্তি মাছি ভন ভন ভন ভন করছে।
কাজের বুয়া আজ ও এলোনা,

অনেকখানি লিখে ফেলেছে সে, সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রী সাহেব, সম্মানিত বিশেষ অতিথি,
কলমটা ছিটকে পড়ে হাত থেকে, যেন কেউ ছুঁড়ে ফেলে দিলো,
খুট করে শব্দ হয় ভেতরে,
হাতুড়িটা হাতের কাছেই ছিল,
জোরে জোরে সাইরেন বাজতে বাজতে দ্রুত এগিয়ে আসে শব্দটা,
দরজায় কলিংবেল সঙ্গে লাথি
খুট করে শব্দ হয় ভেতরের ঘরে
হাতুড়িটা..........

দরজা ভেঙ্গে পুলিশ ঘরে ঢুকেছে, ভেতরে একটি ষোল সতেরো বছরের ছেলের পঁচা গলা লাশ, হাতুড়ি দিয়ে মাথা ভাঙ্গা, ভন ভন করে মাছি উড়ছে, সম্ভবত ছেলেটি নেশাখোর অথবা চুরি করতে ঢুকেছিল, খুন হয়েছে বেশ কদিন আগে। ছড়িয়ে পড়েছে গন্ধ।
সোসাইটির লোকজন পুলিশ ডেকেছে। ২৪১-ক ধারায় হত্যাকাণ্ডের অপরাধে রশিদ সাহেবকে গ্রেফতার করা হলো।।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:১৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×