somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু গল্পঃ বৃদ্ধ বাবা

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ Raqeebul Ketan এর ফ্লিকার থেকে

আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয় না চোখ; যেন চোখের পাপড়িগুলো খসে পড়েছে, জীবন কতটা দীর্ঘ আর খারাপ হতে পারে কে বুঝবে!একটা সময় পর আর কোন স্বপ্ন থাকে না, থাকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা, যা কিছু চোখ দিয়ে দেখে, দেখতেই হবে বলেই দেখে যেন।
রহমান সাহেব লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, মাথার উপরে আকাশটা প্রায় ঢেকে আছে বড় বড় উঁচু ভবনের আড়ালে, একটু দুরেই একটা সাদা প্রাইভেট কার, ভেতরে ড্রাইভারের সীটে; খালি গায়ে লুঙ্গি পড়া একলোক পা তুলে কথা বলছে ফোনে, অকথ্য কথন, রহমান সাহেব আজকাল বধীরও হয়েছে হয়তো, অথচ কান দুটি আছে জায়গা মত, শ্রবন শক্তিতে তেমন একটা তারতম্য নেই, দূর থেকে ভেসে আশা রুক্ষ শব্দগুলো ঠিকই আঘাত করে অনায়াসে তবু সেই শব্দগুলো বোবার মতন।

এইসব কিছুর জন্য হৃদপিণ্ড দায়ী। এটা এত ধুকপুক করে যে মনে হয় যন্ত্র, মেশিন চলছে বুকের ভেতর। ভালো ভালো বিজ্ঞানীরা এসবের কি কোন সল্যুশন আবিস্কার করেনি!
কোন কোন মানুষের হৃৎপিণ্ড কতটা যন্ত্র হয়ে গেছে সেটার টেস্টও তো দরকার, তার মতন হতভাগার দল যারা বুকের ভেতর যান্ত্রিক হৃদপিণ্ড নিয়ে বসে আছেন তাদের জন্য কি একটা দুটো ইনজেকশন আবিস্কার করা সম্ভব নয় মহামান্য বিজ্ঞানী?

২ টাকা ভাংতি দেন। ধমকে ওঠে বিল কাউণ্টারের লোকটি, পেছনের লাইনে দাঁড়ানো লোকজনের কাছ থেকে প্রেসার আসে; বিল দেন নয়ত সরেন, আরও মানুষ আছে বিল দেয়ার।
দুই টাকা ভাংতির জন্য লাইন থেকে একবার বেরিয়ে গেলে আবার সিরিয়াল পেতে কয়েক ঘণ্টা। এমনিতেই ক্লান্ত লাগছে, পানির পিপাসাও পেয়েছে, হাত কিছুটা কাঁপছে। এই বছর সৌদি আরবের আবহাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে তাপমাত্রা বাড়ছে দেশে, কিছুতেই শান্তি নেই।
উপায় না দেখে লোকটিকে বলে রহমান সাহেব, বাবা আপনি বাড়তি ১০/২০ টাকা যা হয় রাখেন, লোকটি চোখ মুখ শক্ত হয়ে ওঠে, অত্তাধিক রুক্ষ গলায় বলে, কেন বাড়তি টাকা রাখবো? এগুলা কি ধরনের কথা!
কি বিপদ! বাড়তি টাকা নেবে না! তার দুই টাকাই চাই! দুর থেকে এগিয়ে এসে এক মেয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার করে তাকে, ব্যাগ থেকে ভাংতি ২ টাকার একটা কয়েন বের করে দেয়।

রহমান সাহেব অস্ফুট শব্দে বলে মাগো কৃতজ্ঞতা; মেয়েটি শুনতে পায়না, অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে, কানে হেডফোন, এই এক অভ্যাস হয়েছে এই যুগের ছেলেমেয়ের, মোবাইল আর হেডফোন ছাড়া এদের অস্তিত্ব ভাবাই যায় না।

বাসায় ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে যায়, রহমান সাহেব ভাবেন বাসায় ঢুকেই আগে গোছল সেরে নেবেন; নাকি পানি খেয়ে নেবেন, দুইটাই জরুরী, কোনটা আগে করবেন সিদ্ধান্ত নিতে নিতে কলিংবেল চাপেন, রহমান সাহেবের ছেলে গেট খুলে দাড়িয়ে, এতক্ষন লাগলো বিল দিতে? বাজার করবে কে শুনি? দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে খাওয়া লাগবে না? এই নেন টাকা রাখেন এক্ষুনি কিছু কাঁচা বাজার করে নিয়ে আসেন, তাড়াতাড়ি নেন, কি গরম পড়ছে বাবা এসির বাতাস ছাড়া এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকা যায় নাহ।
হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে গেট বন্ধ করে দেয় ছেলে, রহমান সাহেব বাজারের দিকে হাঁটে, এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে দ্রুত ফিরে আসার পাঁয়তারা। মানস চোখে ভেসে থাকে টলমলে সুশীতল কাজল কালো জল ঠিক তার মৃত স্ত্রীর চোখের মত।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:১৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×