বর্তমানে বাংলাদেশের যে সামগ্রিক সামাজিক বিপর্যয় লক্ষ্য করা যায় তার প্রধান কারণ আমাদের দূর্বল শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষাব্যবস্থার এ দূর্বলতাকে ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে মোট ৪টি শিক্ষা কমিশন ও ৩টি শিক্ষানীতি কমিটি গঠিত হয়েছে এবং তাদের নিকট হতে সুপারিশ নেয়া হয়েছে, যদিও তা গ্রহণ করা হয়নি অথবা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ৪র্থ শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটিটি গঠিত হয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে প্রধান করে এবং এ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ীই আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন সাধনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
যদিও এ কমিটিটি 'ড: কুদরাত-ই-খুদা' কমিশনের সুপারিশকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যেই গঠিত এবং সে লক্ষ্যেই সরকারের কিছু পদক্ষেপ প্রশংসার দাবী রাখে তবুও সময়ের প্রেক্ষাপটে কিছু কথা থেকেই যায়।
ডঃ কুদরাত-ই-খুদা কমিশন অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত ধর্মশিক্ষাকে বাতিল করে নীতিশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করলেও বর্তমানে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক রয়েছে। ধর্মশিক্ষার সাথে নীতিশিক্ষার মিশ্রন ঘটিয়ে যে 'ককটেল' ধর্ম বই ছাপা হয়েছে তা 'সাপ ও না মরে আর লাঠিও না ভাঙে'র মত একটি মধ্যপন্থি বই।
এদিকে আমার মত নাস্তিক বাবারা পড়েছে বিপদে (বিপদ আগেও ছিল)। আমি ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলেকে শিখিয়েছি যে ঈশ্বর বলতে কিছু নেই, মানুষের কল্পনাপ্রসূত সৃষ্টি হচ্ছে ঈশ্বর। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক বই কিনে দিয়ে আমার বক্তব্যকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া আমার পরিবারে আমার বাবা ছাড়া আর সকলেই আমার দলের। বিশেষ করে আমার ছোটভাই সবসময়ই ওকে সেক্যুলার মানসিকতায় গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
আমার ছেলে এ বছর তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। ক্লাশে যথারীতি তাকে ধর্মশিক্ষাও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তার অনেক প্রশ্নের কাছেই এখন আমি হার মানছি। যদি ঈশ্বর বলতে কেউ না-ই থেকে থাকে তবে আমাদের কেন এগুলো পড়ানো হয়? তার যুক্তি সে একটা মিথ্যা বিষয় পড়তে চায় না। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে ধর্ম একটি দর্শন এবং এটি সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা। এটা পড়ানো হয় যাতে আমরা নিজেদের একটা তুলনামূলক অবস্থান নির্ণয় করতে পারি। কিন্তু সেক্ষেত্রেও তার প্রশ্ন তাহলে তোমরা আমাকে যা শিখিয়েছ সেগুলো কোথায়? সেগুলো তো কোথাও লেখেনি। আমার উত্তর মেলে না। আর দর্শন যদি আমি আট বছরের ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করি তাহলে তার অবস্থা কী হয় সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ধর্মকে যারা বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে প্রণয়ন করেছে তারা ধর্মকে কখনো দর্শন হিসেবে দেখেনি, শিশু মনে কিছু যুক্তিহীন উদ্ভটতা প্রবেশ করে দেয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। দর্শনের মত একটা জটিল বিষয়কে তৃতীয় শ্রেণীর আবশ্যিক বিষয় করাটাকে পাগলামী বৈ কিছু বলা যায় না।
আমি জানি আমার মত এরকম পরিস্থিতি অনেক বাবা-মারই রয়েছে। যারা এ অবস্থাটা পার করে এসেছেন তাদের কাছে সাহায্য আশা করছি। যারা আমার অবস্থায় ভবিষ্যতে পড়বেন তাদের পরিকল্পনাটাও আমার জানতে ইচ্ছে করছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:২২