somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘সকলেই কবিতার পাঠক নয়, কেউ কেউ পাঠক’।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনানন্দ দাশ বলেছেন – ‘সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি’। আমরা যারা কবিতা পড়ি তাদের অধিকাংশই কবির এ বাণীকে সত্যি বলে মেনে নেই এবং অনেক ক্ষেত্রে উদাহরণ দেই। যদি তাই হয় তাহলে কবির এ বাণীকে বদলে বলা যায় – ‘সকলেই কবিতার পাঠক নয়, কেউ কেউ পাঠক’। এই যে না বোঝার দায় এককভাবে কবিকে দেওয়া হয়, এর দায় কি পাঠকের হতে পারে না? পাঠক কি মনে করেন না কবিতা পাঠের জন্য তার প্রস্তুতি দরকার? কবিতায় যে নন্দনতত্ত্ব,শিল্প, অলঙ্কারের কথা বলা হয় তা কি তার পাঠের বিষয়ব্স্তু নয়? সাধারণত কবিতার বিশেষত্ব এই যে তাকে দণ্ডায়মান স্কুল শিক্ষকের সামনে মুখস্তপাঠের মতো শব্দুগলো পড়ে গেলে হবে না। তাকে অনুভব করে পড়তে হবে, কিছু সময় তার জন্য বরাদ্ধ রেখে। পাঠকের সে সময়টুকু কি তার আছে? সাধারণত ব্লগে, নেটে যে কবিতা পাঠ করা হয় তাকে আমি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কবিতার সত্যিকারের পাঠ বলবো না। কারণ নেটে একান্ত মনোযোগ দিয়ে অথবা একাগ্রতার সাথে কবিতা পাঠ করা হয় না। একজন পাঠক নেটে এসে অনেকগুলো লেখা একসাথে পাঠ করেন, মতামত দেন। আর এ করতে যেয়ে তার মনোযোগ ভাগ হোয়ে যায় অথচ কবিত তো পাঠকের একান্ত পাঠ দাবী করে। যে কবিতাটি অন্য দশটি লেখার সাথে পাঠ করে গেলেন তা একান্ত নির্জনে, খানিকটা সময় দিয়ে তাকে পাঠ করুন, দেখবেন কিছু ভিন্ন অনুভব হলেও হতে পারে।

সাহিত্যিক ডেভিড ফস্টার বলেছেন- ‘সাহিত্য শুধু মগজের বস্তু নয়, হৃদয়েরও এবং অনুপাতে হৃদয়ের ভাগটাতেই বেশি পড়া উচিত’। তাঁর এ উক্তিটি আমাদের কারও না বোঝার কথা নয়। তাঁর সাথে তাল মিলিয়ে আমিও বলতে চাই ‘কবিতা কেবল চোখ দিয়ে পাঠ করার বিষয় না, হৃদয় দিয়েও তাকে পাঠ করতে হয়’। তবে সব কবিতা বোঝা যাবে তা নয়, তাই বলে একজন পাঠকের ভালো লাগা বা না লাগা সামগ্রিকভাবে ভালো লাগা বা না লাগাকে নির্দেশ করতে পারে না। যে পাঠক সবসময় মনে করেন কবিতার ভাষা সহজ-সরল সহজে বোধগম্য হবে সে পাঠকের চিন্তা ও বোধ শক্তি প্রখর নয়, তারা ভাবনার অতলে ডুব দিয়ে মুক্তো তুলে আনতে পারেন না কেবল জলের ওপর ভাসমান কিছু দেখেই অভিভূত হতে পারেন। তবে অস্বীকার করবো না যে কোনো কোনো কবির কবিতার চিত্রকল্প উদ্ভ্রান্ত-এলোমেলো, কিছু শব্দের কারসাজি থাকলেও তা কোনো বার্তা প্রদান করে না। যে কবি বাস্তবের হাতি আকাশে ওড়ান তার ভাষা পাঠক কেন কবিই বোঝেন কিনা তা বলা মুশকিল।



সাহিত্যের যতগুলো শাখা রয়েছে তার মধ্যে কবিতা প্রাচীন এবং উৎকৃষ্টতম শাখা। কবিতা এমন এক শাখা যা বুঝতে হলে অনুভব করতে হবে, আর অনুভবের জন্য দরকার সাধনা যেমনটা লালনসঙ্গীত বুঝতে সাধনার প্রয়োজন। আর্ট ফিল্ম (Art Film) বলে যে ফিল্ম (Film) তৈরি হয় তার সবশ্রেণীর দর্শক হয় না, ঠিক তেমনি সাহিত্যের অন্যান্য শাখার সাধারণ-অসাধারণ সব শ্রেণীর পাঠক থাকলেও কবিতার পাঠক নির্দিষ্ট শ্রেণীর। আধুনিক কবিতা প্রসঙ্গে জীবনানন্দ দাশ বলেছেন –‘মানুষের মনের চিরপদার্থ কবিতায় বা সাহিত্যে মহৎ লেখকদের হাতে যে বিশিষ্ট্তায় প্রকাশিত হয়ে ওঠে তাকেই আধুনিক সাহিত্য বা আধুনিক কবিতা বলা যেতে পারে’ (কবিতার কথা)। আধুনিক কবিতার এ ধারাটি নিরীক্ষাধর্মী এবং এর মধ্যে মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত। যুগে যুগে কবির সাতন্ত্রই তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে সময়ের বিচারে তাই আধুনিককালে কবিতার এই নিরীক্ষাকে না বোঝার দায় খুব সহসাই দেওয়াটা বুদ্ধিমান পাঠকের কাজ হবে না।



জীবনানন্দ দাশে’র উক্তিটি আবার দিয়ে শেষ করবো। ‘সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি’। সুতরাং সব লেখাকে কবিতা এবং সব লেখককে কবি ভাবার হয়তো গুরুতর কোনো আবশ্যকতা নেই (কবিতা ও কবির ক্ষেত্রে) । যিনি সত্যিকারের কবি তাঁর কবিতার কতটুকু সমঝদার পাঠক আমি- এ-ভাবনাই আমাকে বরং ভাবাক। সত্য তো এই যে, প্রকৃত কবি সমকালের বিচারে খুব একটা সমাদৃত হয় না, মহাকাল তাঁকে ঠিক একদিন গ্রন্থিত করে ইতিহাসে পাতায় আর আমরা হয়তো এই বলে আফসোস করতে থাকি, হায়! তিনি সত্যিকারের কবি ছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১৪
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×