somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

পরিণতি (নবম পর্ব) একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস

০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।) ( গল্পের ধারা বজায় রাখায় জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক কিছু সংলাপ ও মুহূর্ত উঠে এসেছে । সকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । )

নবম পর্ব


কিছু সময়ের মধ্যেই চোখে অন্ধকার অনেকটাই সয়ে আসতে লাগলো। সবকিছু আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মনুষ্য আকৃতির কাউকে দেখতে না পেয়ে মনের ভুল ভেবে আবার হাটতে লাগলাম ।

কয়েক কদম হাটার পরেই আবারো পেছন থেকে পায়ের শব্দ ভেসে এলো। এবার আর কোন ভুল হবার কোন সম্ভাবনা নেই। স্পষ্ট বুঝতে পারছি কেউ একজন আমার পেছন পেছন এগিয়ে আসছে৷ চট করে আবারো পেছন ফিরে তাকালাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে । মনে হচ্ছে, যতদ্রুত সম্ভব স্থানটা ত্যাগ করা উচিত । হাটার গতি বাড়িয়ে দিলাম । মনে হলো পেছন থেকে আসা পায়ের শব্দের গতিটাও যেনো বেড়ে গেলো।

যে আমায় অনুসরণ করে আসছিলো সে যেন বুঝতে পেরেছে আমি তার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছি। তাই সেও দ্রুত এগিয়ে এসে আমার ঘাড় মটকে দিতে চাইছে ৷ রাতির নির্জনতায় নিজেকে এতোটা অসহায় মনে হলো যে তা বলে কয়ে বোঝানো যাবে না । ।কোনদিকে খেয়াল না করে বড় বড় কদম ফেলে এগুতে লাগলাম৷ পেছন থেকে অদৃশ্য মানব বা মানবী যাই হোক না কেন সেটাও একই ভাবে পাল্লা দিয়ে পেছন পেছন আসতে লাগলো । যখন অনর্থক কিছু ঘটার প্রতিখ্যায় দেহ মন কুন্চিত হয়ে আসছিলো ঠিক তখন মনে হলো পায়ের শব্দটা দ্রুত এগিয়ে এসে আমার পাশাপাশি চলতে লাগলো। টের পেলাম ঠাণ্ডা, শীতল কনকন কারো অস্তিত্ব। অদৃশ্য কেউ আমার গায়ের সঙ্গে গা ঘষে পায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটছে । অতিকার অদৃশ্য কোন কায়ার অস্তিত্ব টের পাচ্ছি কিন্তু দেখতে পারছি না৷ ভয়ে আতংকে অজানা শন্কায় দাড়িয়ে পড়লাম । আর ঠিক সে মুর্হুতে মনে হলো সে ও যেন দাড়িয়ে পড়লো ।

প্রতিদিনের অতি চেনা,অতি পরিচিত পথটা যেন আজ হঠাৎ করেই অচেনা,অপরিচিত মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে প্রকট হয়েছে। একটা কদম ফেলতেও ভয় হচ্ছে ৷ অজানা এক আতংকে পেয়ে বসছে আমায় । ভয়ে হাত,পা জমে যাবার যোগার হলো । বুকের ভেতর হৃদপিণ্ডটা মনে হচ্ছে, মুখ দিয়ে বের হয়ে যাবে । এমন ভয় কোনদিন পাইনি ৷

মেইন রোড থেকে  গলির ভেতর কয়েক মিটার হাটার পর শরীরের সবটুকু শক্তি এক করে ঊর্ধ্বশ্বাসে গলির বাকি পথটুকু দৌড়ে পেরিয়ে এসে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলাম।

ভেতরে তখন টাইগার ঘেউ ঘেউ করে এক টানা ডেকে চলেছে। গলিতে ঢোকার আগ থেকেই তার ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। টাইগারের ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখি প্রাণীটা অস্থির হয়ে পায়চারি করছে আর গেটের দিকে তাকিয়ে ভয়ানক ভাবে গরগর শব্দ করছে । এ'কদিনে আমার সাথে কুকুরটার একটু আধটু ভাব হয়ে গেছে । তাই আমাকে দেখে তার চেনার কথা৷ চিৎকার করার কথা নয়৷ দিনের বেলায় আমি তার সামনে গেলে তো দিব্যি পরিচিতের মতো লেজ নাড়ে । তাই এখন আমাকে দেখে তার এভাবে ডাকার কথা নয়। নিশ্চয়ই অন্যকোন ব্যাপার আছেন ।

তবে টাইগার'কে দেখে  আমার একটু আগে পাওয়া ভয়টা কেটে গেলো । বুকে সাহস ফিরে পেলাম। কুকুরটাকে শান্ত করার জন্য আমি  প্রায় চিৎকার করে উঠলাম, এই টাইগার;  এই টাইগার , আমি এসেছি , আমি এসেছি । আমাকে চিনতে পারছিস না?  শান্ত হও, শান্ত হও ..... এই টাইগার , এই টাইগার ...... আহ আহ,  চুকচুক চুক  করে শব্দ করতে লাগলাম ।

কিন্তু আমার কথায় টাইগার মোটেও শান্ত হলো না । সে আরো জোরে জোরে ঘেউ ঘেউ করে ডাকতে লাগলো ।

টাইগারের ঘেউ ঘেউ আর আমার চিৎকার দুয়ে মিলেমিশে এমন শোরগোল সৃষ্টি করলো যে, তাতে মোতালেব ছুটে এলো বাহিরে । দোতলা থেকে বাড়িওয়ালী বারান্দায় এসে আমাকে দেখতে পেয়ে বলে উঠলো এতরাতে কোথা থেকে এলে ? এলে তো এলে, এতো চিৎকার চেঁচামেচি করছো কেন ?

আমি বললাম, অফিস থেকে এলাম আপা । টাইগার বোধ হয় আমাকে চিনতে না পেয়ে গেউগেউ করছে । তাই ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলাম ।

আমার প্রতি উত্তরে ভদ্র মহিলা আর কিছু না বলে, মোতালেবের উদ্দেশ্যে বললেন , আরে এ্যই মোতালেব, দেখ না গিয়ে। টাইগারের কি হয়েছে ? কথাটা বলেই তিনি ভেতরে চলে গেলেন ।

মোতালেব এবার আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞাসা করলো, কি হয়েছে, ভাই ?

আমি বললাম, তোমার কুকুরটা মনে হয় আমাকে আসতে দেখে ভয় পেয়েছে ।দেখছো না ক্যামন গেউ গেউ করছে ?

আমার কথা শুনে মোতালেব একটু চিন্তিত কণ্ঠে বলল, টাইগারের তো ভয় পাবার কথা নয় । তারপর সে তাকালো রাস্তার দিকে। কিছু দেখতে না পেয়ে এগিয়ে গেলো টাইগারের দিকে । আমি দাঁড়িয়ে রইলাম মোতালেব কি করে প্রাণীটাকে শান্ত করে সেটা দেখার জন্য। মোতালেব কুকুরটার কাছে যাবার সাথে সাথে সেটা আরো জোড়ে জোড়ে গেউ গেউ করতে লাগলো। বাড়ির সামনের বিল্ডিং এর তৃতীয় তলার একটা জানালা খুলে গেলো। ভেতর থেকে উকি দিলো সেই নারী অবয়ব ।

মোতালেব এবার গ্রিল এ ভেতরে হাত ঢুকিয়ে কুকুরটার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মুখ দিয়ে চুকচুক করে শব্দ করে প্রাণীটাকে শান্ত করতে লাগলো । তারপর আচানক মোচড় দিয়ে তালাটা খুলে দিলো দেখেই ভয়ে আমার আত্মা খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবার যোগার হলো । কুকুরটা না আমার উপর এসে ঝাপিয়ে পরে । আমি আঁতকে উঠে বললাম, এই করো কি , করো কি ?

মোতালেব আমার দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত হেসে বলল, ভয় পাবেন না ভাই । টাইগার আপনাকে চেনে। আপনাকে কিছু বলবে না । মোতালেবে'র কথাটা শেষ হওয়া মাত্র কুকুরটা বিদ্যুৎ গতিতে আমার পাশ দিয়ে গেটের দিকে ছুটে গেলো । রাতপর রাস্তার দিকে মুখ করে দু'পা গেটের উপর তুলে, প্রচন্ড জোড়ে গেউ গেউ করে চিৎকার করতে লাগলো ।    
মোতালেব আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বলল, দেখলেন তো আপনাকে কিছু বলল না । বলেছিলাম না ও আপনাকে চিনে গেছে ।

আমি বললাম , কিন্তু এমন চিৎকার করছে কেন ?

মোতালেব আগের মতো হাই তুলতে তুলতে বললো, বেড়াল টেড়াল দেখেছে হয়তো । কুকুর এমনিতে খুব শান্ত প্রাণী কিন্তু বেড়াল দেখলে রেগে কাই হয়ে যায়।

কাই শব্দের অর্থ কি জানি না। এ নিয়ে আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না। সারাদিন যা দখল গেলো তাতে প্রচন্ড ক্লান্তি লাগছে। আমি তাই, ও বলে ফ্লাটের দিকে পা বাড়ালাম । সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চলে এলো ।

দরজায় নক করা মাত্র অনুরাধা ঘুম জড়ানো চোখে দরজা খুলে দিয়ে বলল, "কেউ এতো রাত করে বাড়িতে ফেরে ?"

ঘরে ঢুকে জামা খুলতে খুলতে আমি বললাম, "আর বলো না । ক দিন অফিসে না যাওয়ার ফলে একগাদা কাজ জমে গেছে । শেষ করে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো । তার উপড়ে গাড়িঘোড়া সব বন্ধ । তাই দেরি হয়ে গেলো ।"

অনুরাধা হাই আমার পেছন পেছন বাথরুমের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে বলল, "নিচে এতো শোরগোল কিসের ? সেই কখন থেকে শুনছি কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করছে। "

আমি গলির ঘটনাটা চেপে গিয়ে বললাম, "প্রথমে মনে করেছিলাম আমাকে অপরিচিত মনে করে টাইগার এমন করছে । পরে দেখলাম না  , আমাকে সে আমাকে ঠিকই চিনতে পেরেছে । মোতালেব বলল, বেড়াল দেখলে নাকি এমন করে ।"

অনুরাধা বলল, "তুমি গোছল করে এসো আমি খাবার গরম করছি । আমি বললাম, তুমি খেয়েছ ?"

অনুরাধা এক মূর্হুত আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর বলল, তুমি বাসায় নেই আর আমি খেয়ে বসে থাকবো , এমন বউ মনে করেছো আমায় ?"

আমি বললাম, "এতক্ষণ কেউ না খেয়ে থাকে ? যাও যাও তাড়াতাড়ি খাবার রেডি করো আমি আসছি ।" কথাটা বলেই বাথরুমের দরজা বন্ধ করে প্যান্ট খুলে সেটা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রেখে ঝরনার ছেড়ে তার নিচে চোখ বন্ধ দাঁড়ালাম । আহ! ঠাণ্ডা জল শরীরে পরতেই পুরো শরীরের ক্লান্তি যেন এক মুহূর্তেই দূর হয়ে গেলো । চোখ বন্ধ করে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম ঝরনার নিচে । ঠান্ডা জলের ছোয়ায় সমস্ত ক্লান্তি একটু একটু করে দূর হয়ে যেতে লাগলো।

চলবে .............

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×