somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: বেয়ারা (৩য় পর্ব)

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিজয় দিবস কয়েক দিন পরেই । প্রতিবারের মত এবারও বিজয় দিবস উদযাপনের তোড়জোড় চলছে । বিকেলে খেলা বন্ধ রেখে সবাই মাঠে গোল হয়ে বসেছে । হাদি মধ্যমণি । ফখরুল সহকারী । হাদি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বলে, সবাই চুপ করো । কিন্তু কিশোরদের গুঞ্জন থামে না । এবার ফখরুল গলা চড়ায়, এই পোলাপাইন, চুপ । হাদি তুমি শুরু কর ।
হাদি ওঠে দাঁড়িয়ে বলে, আমরা এ কয়দিনে প্রায় সব বাসায় গিয়েছি চাঁদার জন্য । অনেকেই দিয়েছে, কেউ কেউ পরে আসতে বলেছে । যারা দেয়নি তাদের বাসায় আবার যাওয়ার দায়িত্ব কে নিবে ?
‘আমি’ বলে হাত তুলে নিজাম ।
হাদি হাসে । যারা দেয়নি তাদের থেকে আদায় করতে হলে দুষ্টু বালকই দরকার ।
‘ঠিক আছে, নিজামের সাথে আরো দুজন যাবে । কে কে ?’
এবার হাদির ভাই টিপু হাত তোলে । ওরা সমবয়সী । শেষ গেটের নিজামের সাথে টিপুর গলায় গলায় ভাব ।
হাদির ভাই ফয়েজও হাত তুলে ।
হাদি বলে, তোর মাথা গরম । ভদ্র, ঠান্ডা মাথার একজন লাগবে । বাপ্পি, তুই যাবি ওদের সাথে ।
বাপ্পি ওর ভাই ফখরুলের দিকে তাকায় সম্মতি জন্য । ফখরুল মাথে নাড়ে ।
বাপ্পি বলে, ঠিক আছে হাদি ভাই ।
হাদি আবার শুরু করে, টাকা যা ওঠেছে, তাতে আশা করি আমাদের বিজয় দিবসের কাজ হয়ে যাবে । মাঠ সাজানোর জন্য ছোট কাগজের পতাকা, বাঁশ, দড়ি, আঠা, চুন কিনতে হবে । আমি আর ফখরুল যাব ওগুলো কিনতে । কেউ কিছু বলবে ?
নিজাম বলে, আমার একটা কথা আছে ।
সবাই বলে ওঠে, বলো, বলো ।
‘অন্যান্য বিল্ডিংয়ের ছাদে বিজয় দিবসে পতাকা ওড়ে, এবার আমরাও ওড়াতে চাই’
হাদি বলে, ভাল প্রস্তাব । কিন্তু পতাকা প্রতিদিন সকালে ওঠানো এবং সন্ধ্যায় নামানোর দায়িত্ব কে নেবে ?
নিজাম বলে, আমি কাজটা করতে চাই ।
‘ঠিক আছে’ বলে হাদি সম্মতি দেয় ।
ফখরুল বলে, এই, সবাই হাততালি দাও ।
হাততালি দিয়ে সবাই নিজামকে উৎসাহ দেয় ।
দূরের মসজিদ থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসে । হাদি বলে, ১৫ তারিখ সন্ধ্যায় সবাই চলে এসো, আমরা মাঠ সাজানোর কাজ করব ।
আগামীকাল ১৬ই ডিসেম্বর । আজ ব্যাডমিন্টন খেলা বন্ধ আছে । গেটের বৈদ্যুতিক লাইন থেকে নেওয়া ব্যাডমিন্টন খেলার লাইনটা দিয়ে মাঠে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে । মাঠে শিশির পড়ে ভিজে গেছে । ছোটরা গেটে বসে দড়িতে আঠা দিয়ে দড়িতে কাগজের পতাকা লাগাচ্ছে । বড়রা মাঠে গর্ত করে বাঁশ পুঁতছে । বাঁশের আগায় পতাকটা পত পত করে ওড়বে । তার চারপাশে ছোট ছোট কয়েকটা বৃত্ত আঁকা হবে সাদা চুন দিয়ে । সেই বৃ্ত্তগুলোয় কিছুদূর পর পর ছোট ছোট বাঁশের কঞ্চি পুঁতে দেওয়া হবে । মধ্যখানের বড় বাঁশটা থেকে চারিদিকে দড়ি ঝুলতে থাকবে, দড়ির অন্যপ্রান্ত বাঁধা থাকবে কঞ্চিগুলোর মাথায়, ঝুলন্ত দড়ির গায়ে কিছুদূর পর পর আঠা দিয়ে লাগানো থাকবে কাগজের পতাকা ।
কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে । কেমন উৎসব উৎসব একটা ভাব । সবার গায়ে শীতের কাপড় । নিজামের পেটটা চোঁ চোঁ করছে । হাদি ভাইকে লক্ষ্য করে বলে, হাদি ভাই, পেটে ইঁদুর দৌড়াইতেছে ।
হাদি ওর কথা শুনে হেসে বলে, এত রাতে হোটেলে কিছু পাওয়া যাবে ?
রাত-বিরাতে একটু এদিক-সেদিক ঘুরার সুযোগ নিজাম বুদ্ধি খাটিয়ে প্রায়ই করে নেয় । সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলে, কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের হেলেনা হোটেল খোলা থাকে রাত ১২টা পর্যন্ত ।
হাদি ঘড়ি দেখে । ১০টা ৫ ।
‘নিজাম, তুই সবাইকে জড়ো কর ।’
‘আচ্ছা ।’
১৫ জনের একটা কিশোরদল- কেউ হ্যাফ প্যান্টের, কেউ ফুল প্যান্টের পকেটে হাত ঢুঁকিয়ে হাঁটতে থাকে শীতকে বশ মানিয়ে । রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে খান খান করে দেয় দু-একটা ট্রাক । লাইটপোস্টের ম্লান আলোয় পীচঢালা রাজপথ শিশিরে ধুয়ে যায় । কিশোরদের নানাবিধ কথার ফুলঝুরিতে রাতের নীরবতা হারিয়ে যায় । একটা আনন্দ মিছিল এগিয়ে যায় মিরপুর রোড ধরে উত্তর দিকে, হেলেনার দিকে ।
হেলেনা প্রায় ফাঁকা । কিছু বয়স্ক লোক আছে । কিশোরদলের আগমনে হেলেনা সরগরম হয়ে ওঠে । সবার জন্য চা-সমুচা অর্ডার দিল হাদি । হেলেনার মামুদের (হোটেল বয়) সাথে নিজামের বেজায় খাতির । এক মামুর থেকে খবর পায়, ভিতরে গরম গরম রসগোল্লা তৈরি হচ্ছে । নিজাম বায়না ধরল রসগোল্লা খাবে । ছেলেপেলেরা অনেক খেটেছে । হাদি সবাইকে একটা করে রসগোল্লাও দিতে বললো হোটেল বয়কে ।
খাওয়া শেষে হাদি বললো, সবাই খুশি তো ?
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ ’ বলে সবাই চিৎকার করতে থাকে । স্বাধীনতার এক ধরণের আনন্দ আছে । কিশোরদল সেই আনন্দে বিভোর।
হাদি হাত তুলে সবাইকে থামার ইংগিত করে ।
‘কাল কিন্তু সকাল সকাল সবাইকে মাঠে থাকতে হবে, রাজী ।’
‘রাজী’ বলে আবার একটা সমস্বরে চিৎকার ।
হাদি আবার হাত তুলে সবাইকে থামায় ।
‘এবার আমরা যে যার বাসায় ফিরব, ঠিক আছে ।’
নিজাম দুষ্টুমি ভরা হাসিতে মুখ উদ্ভাসিত করে বলে, ‘না, না ।’ বাকীরাও ওর সাথে তাল মেলায় । কিশোরদলটা হাসতে হাসতে চিৎকার করতে করতে হেলেনা থেকে বেরিয়ে আসে। হাদি-ফখরুল বিলটা কাউন্টারে দিয়ে ওদের পিছু নেয় ।


ভোরের আলোয় পূর্বাকাশ লাল হয়ে আছে । সূর্য ওঠি ওঠি করছে । শিশির ভেজা দুর্বা ঘাসের ওপর দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে হাদি ও তার কিশোরদল মাঠের মাঝখানে এসে পূর্বদিকে মুখ করে দাঁড়ায় । শীতের মৃদু বাতাসে ছোট পতাকাগুলো বড় পতাকাটাকে কেন্দ্র করে ওড়ছে । সবাই গলা মেলায়,
-আমার সোনার বাংলা,
........
হাদির হৃদয়টা কানায় কানায় ভরে যায় । গর্বে বুকটা ভরে ওঠে ।
‘ভাইয়া, ভাইয়া’ ডাকে হাদির ঘোর কাটে, বাঁয়ে কলোনীর দিকে তাকায় । মুন্নী দৌড়াতে দৌড়াতে এদিকেই আসছে । একটা অজানা আশঙ্কায় হাদির মনটা কেঁপে ওঠে ।

চলবে..

০৪/০৪/২০১৭ ই

১ম ও ২য় পর্বের লিংক:
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৪৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×