somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: বেয়ারা (২য় পর্ব)

০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শীতের রাত, আটটা বাজতে না বাজতেই ঢাকা শহরের রাস্তা-ঘাট নীরব হয়ে যায় । আবার কোথাও কোথাও তখনও সবে সন্ধ্যা । ধানমন্ডি ক্লাব থেকে মাইকে ভারতীয় বাংলাগান বাজতে থাকে – বাঁশি শুনে আর কাজ নেই, সে তো ... । তারই মাঝে হাউজির ঘোষকের ভরাট কন্ঠে শোনা যায়, মাথা খারাপ , ফোর এন্ড নাইন ফরটিনাইন । মাথা খারাপ করে দেওয়ার মতই ব্যাপার ! একটু রাত হতেই এলাকার ছেলেপেলেরা সেখানে ভিড় করে, বিভিন্ন এলাকা থেকেও প্রচুর লোক আসে হাউজি খেলতে । হাদি কখনো ওদিকে যায়নি । ও কলোনীর মসজিদে নামাজ পড়ে সোজা বাসায় যায় কিংবা আলো জ্বালিয়ে মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলে বন্ধুদের সাথে । হাদির মা জানালার ধারে বসে অপেক্ষা করেন স্বামীর জন্য । ছেলেমেয়েরা সব খেয়ে-দেয়ে শুয়ে পড়ে, হাদি ছাড়া । ও পড়ে । ভাত ঠান্ডা হয়ে যায় । ১১টা কখনো ১২টার দিকে হাদির বাবা আসেন । তখন আর মানুষটাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে আতিয়ার মন সায় দেয় না । কিন্তু কলোনীতে কিছু গোপন থাকে না । পাড়াপড়শীদের কাছ থেকে খবর পান, হাদির বাবা হাউজি খেলে বিভিন্ন ক্লাবে । তবে ধানমন্ডি ক্লাবে খেলেন না । ঠান্ডা ভাত, তরকারি গরম করে দুজনে খান । তোহা সাহেব সিগারেট ধরান, আতিয়া হাই তুলতে থাকে । খুক খুক করে কাশেন, আতিয়া নিষেধ করে সিগারেট খেতে । উনি নির্বিকার ।
হাদির মার আর ভালোলাগে না । তোহার সাথে সরাসরি কথা বলা দরকার । কিন্তু সময় বের করতে পারেন না । ছুটির দিনেও মানুষটা কি-সব কাগজ-পত্র নিয়ে বসেন । আগে ওদের নিয়ে কত জায়গায় বেড়াতে যেতো, আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যেতো । হাউজি মানুষটাকে ফরটিনাইন করেছে – কি যে বাজে জুয়ার নেশা !
মানুষ যন্ত্র না । দিনের পর দিন রাত জেগে হাদির মার শরীরে আর কুলায় না । তাছাড়া এই শীতে ফাহাদের প্রায়ই ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে । ঘুমের মধ্যেই কেঁদে ওঠছে । কাঁদতে কাঁদতে জোরে জোরে শ্বাস নেয় – চোখ উল্টে যায় । একদিন আতিয়া ছেলের পাশে শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়লেন । তখন হাদি ওর বাবা আসলে দরজা খুলে দিল ।
উনি ঘরে ঢুঁকে গম্ভীর গলায় বললেন, তোর মা কই ?
‘ফাহাদের শরীর ভাল না । মা ওকে নিয়ে ঘুমিয়েছে ।’
‘হুম ।’
হাদি মাকে ডাকতে যায় । ঘর অন্ধকার । লাইটের সুইচ টিপে আলো জ্বালে । দেখে মার একটা হাত ফাহাদের পিঠে আর ফাহাদের ছোট্ট হাতটা মার গালে – বড় সুন্দর দৃশ্য । হাদি সুইচ অফ করে দেয় । রান্নাঘরে যেয়ে কেরোসিনের চুলা জ্বালিয়ে বাবার খাবার গরম করে ।
টেবিলে খেতে বসে তোহা সাহেব চোখ তুলে ছেলের দিকে তাকাতে পারেন না । নিজেকে অপরাধী মনে হয় । নরম গলায় ডাকেন, হাদি ।
‘জ্বি বাবা ।’
‘আমি তোদের খুব কষ্ট দেই, না ?’
হাদি বানিয়ে কথা বলতে পারে না । তাই চুপ থাকে ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উনি আবার খাওয়ায় মন দেন ।
দুজনেই কম কথা বলে । তাই কথা আর এগোয় না ।
উনি খাওয়া শেষ করে ওঠে একটা সিগারেট ধরান আয়েশ করে । কিন্তু কাশিটা উনাকে মোটেই আরাম দিচ্ছে না । খুক খুক কাশিটা ক্রমেই জোরালো হয়ে উনার প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তোলে । কিছুক্ষণ পর পর কফ ফেলতে ফেলতে হাঁপিয়ে ওঠেন । বেশ ঠান্ডা । তাও উনার গেঞ্জিটা ঘামে ভিজে যায় । পিঠে একটা নরম হাতের স্পর্শে বুঝতে পারেন আতিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেছে । প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় ও বললো, এত কাশছো কেন ?
মুখে জোর করে একটু হাসির ভাব আনার চেষ্টা করে তোহা সাহেব । তারপর বলে, ও কিছু না ।একটু পানি খাওয়াও তো ।
হাদি পাশেই দাঁড়িয়েছিল । ও বললো, মা, আমি আনছি ।
কাশির দমকে পানিটাও ঠিকমত খেতে পারছেন না । অনেকক্ষণ সময় নিয়ে খেলেন ।
একটু সুস্থির হলে আতিয়া স্বামীকে বললো, তোমার গেঞ্জিটা বদলে দিই ?
উনার এখন আর কথা বলার শক্তি নেই । মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেন ।
আতিয়া ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হাদি, আলনা থেকে বাবার একটা গেঞ্জি নিয়ে আয় তো । স্বামীর গেঞ্জিটা খুলে উনার মন খারাপ হয়ে যায় । হাড্ডিসার রুগ্ন দেহ । উনি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে স্বামীকে জড়িয়ে ধরেন । তোহা সাহেব তাঁর লম্বা সরু সরু আঙুল দিয়ে স্ত্রীর চুলে বিলি কেটে দেন । একটু লজ্জ্বা লাগছে । ছেলে কখন ফিরে আসে । আবার ভালোও লাগছে ।
নিস্তব্ধ রাতে সামান্য শব্দও কানে আসে । হাদির পায়ের আওয়াজ পেয়ে আতিয়া সরে যায় । খুব স্বাভাবিক গলায় স্বামীকে শুধায়, তোমার বুকে তেল মালিশ করে দেই ।
‘দাও ।’
‘হাদি, রান্নাঘর থেকে সরষের তেলের বোতলটা নিয়ে আয় তো ।’
হাদি বোতলটা নিয়ে আসে । আতিয়া বলেন, বাবা, অনেক রাত হয়েছে, তুমি শুয়ে পড়ো ।
তেল মালিশটায় তোহা সাহেবের খুব আরাম লাগে । ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে । আতিয়া নরম সুরে বলে, তুমি কালকে অবশ্যই ডাক্তার দেখাব । ওষুধ না খেলে এই কাশি যাবে না ।
‘হু ।’
আতিয়া আরো অনেক কথা বলে, তোহা সাহেব ঘুমের ঘোরে শুধু ‘হু’, ‘হা’ করে যান ।
গেঞ্জিটা আর পরানো হয় না । আতিয়া পরম মমতায় লেপটা স্বামীর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেন । রাজ্যের ঘুম চোখে নেমে আসে ।

চলবে..

১ম পর্বের লিংক:

০৪/০২/২০১৭ ইং

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৫৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×