somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: বেয়ারা

৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডিসেম্বর মাস, বিজয়ের মাস । শীতের সকালে নরম রোদ জানালা গলে তোহা সাহেবের পিঠে হালকা পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে । খাটের ওপর বসে উনি খবরের কাগজ পড়ছেন । সকালের নাস্তা হয়ে গেছে । পান চিবুতে চিবুতে বড় ছেলেকে ডাকলেন, হাদি ।
হাদি ক্রিকেট খেলতে মাঠে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল পাশের ঘরে । জ্বি, বাবা – বলে সাড়া দিয়ে বাবার সামনে এসে হাজির হলো ।
ছেলেকে ফুলপ্যান্ট পরা দেখে উনি বুঝতে পারলেন মাঠে খেলার সাথীরা অপেক্ষা করছে । ছুটির দিন ছাড়া উনি সময় করতে পারেন না । তাই দরকারী কথা ছুটির দিনেই সারতে হয় ।
‘হাদি, মাঠে খেলতে যাচ্ছিস ?’
‘জ্বি, বাবা ।’
‘পড়ালেখা কেমন চলছে ?’
‘ভাল ।’
‘ভাল হলেই ভাল। এবার পরীক্ষার রেজাল্ট কী ?’
হাদির মধ্যে একটা লাজুক ভাব এসে যায় । মুখ নিচু করে আস্তে করে বলে, ফার্স্ট হয়েছি ।
তোহা সাহেবের শুকনো ছোট মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, খাড়া নাকের উপর চেপে বসা চশমাটা বাম হাত দিয়ে উপরে ঠেলে দিয়ে ছেলের দিকে তাকান।
কিছু একটা বলে ছেলেটাকে উৎসাহিত করা দরকার । প্রতিবছর এই রকম ভাল রেজাল্ট করে আজ ছেলেটা নবম শ্রেণিতে । বাবা হিসাবে গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। কিন্তু চুপচাপ স্বভাবের তোহা সাহেবের কিছু বলা হয়ে ওঠে না । সারা বছর উনি ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার কোন খোঁজ নেন না । কিন্তু বছর শেষে একদিন সবার রিপোর্ট কার্ড দেখেন ।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাদিকে বলেন, সবাইকে এখানে আসতে বল, রিপোর্ট কার্ড সহ ।
হাদি প্রথমেই রান্নাঘরে ওর মার কাছে যায় । উনি স্বামী ও নিজের জন্য চা তৈরি করছেন । হাদি মার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলে, মা, বাবা সবার রেজাল্ট দেখতে চাইছে ।
আতিয়া বেগম ছেলের কথা শুনে দ্রুত চায়ে চিনি মিশিয়ে নাড়তে থাকেন – ছেলে-মেয়েরা ওদের বাবার মুখোমুখি হওয়ার আগেই চা নিয়ে স্বামীর কাছে পৌছাতে হবে । বড় ও মেজ ছেলে ছাড়া সবার রেজাল্ট খারাপ । দেখলেই তোহা রাগ করবে, প্রতিবছর যেমন করে । আর রাগ ওঠলে ওর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না ।
দীর্ঘদেহী পাতলা গড়নের তোহা সাহেব কিছুটা কুঁজো হয়ে খবরের কাগজের ওপর ঝুকে আছেন । আতিয়া চায়ের কাপটা স্বামীর দিকে এগিয়ে দিয়ে মৃদু হাসতে হাসতে বলে, নাও, চা খাও ।
তোহা সাহেব চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বলেন, কই, তোমার রাজপুত্ররা ?
আতিয়া খাটের একপ্রান্তে বসেন । দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাদি, টিপু, ফয়েজ ও জামাল গুটি গুটি পায়ে ঘরে ঢোকে । হাদি রিপোর্ট কার্ডগুলো বাবার সামনে বিছানায় রাখে – সবার ওপরে হাদিরটা, সবার নীচে মুন্নীরটা । মুন্নী ওদের একমাত্র বোন, জানুয়ারীতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ।
তোহা সাহেব বড় ও মেজো ছেলের কার্ড দুটা উনার বাম পাশে আর অন্যগুলো ডান পাশে রাখলেন । মুখ গম্ভীর । দাঁড়িয়ে থাকা ফয়েজ ও জামালের দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকালেন – ওরা মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকালো । এবার বৌয়ের দিকে ফিরলেন, মুন্নী কই ?
আতিয়া হড়বড়িয়ে বলে ওঠেন, এই তো পাশের ঘরে । ফাহাদ ঘুমাচ্ছে । ওর পাশে আছে । তুমি ওকে কিছু বলো না ।
ছোট ছেলের কথায় তোহা সাহেবের মনটা নরম হয়ে যায় । তুলতুলে ছোট্ট দুটো হাত । দাঁত শুন্য মাড়ির খিল খিল হাসি । সারা ঘরটা ভরিয়ে রাখে ।
কার্ডগুলো আতিয়ার দিকে ঠেলে দিয়ে উনি বললেন, এগুলো নিয়ে যাও । আর সবাই আমার সামনে থেকে দূর হও ।
সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচল । ধীর পায়ে চার ভাই ঘর পেরিয়ে বাইরের দরজার কাছে গেল । তারপর সিঁড়িঘর থেকে ধুপ-ধাপ আওয়াজ পাওয়া গেল । দে ছুট । মাঠের দিকে । সেখানে সবাই জড়ো হয়েছে ব্যাট আর টেনিসবল নিয়ে ।
মুন্নী পাশের ঘর থেকে কান পেতে সব শুনছিল । বিপদ কেটে গেছে বুঝতে পেরে মুন্নী ঘুমন্ত ফাহাদের কপালে একটা আদর দিয়ে দেয় । ওর খেলার সাথীরা ওকে প্রায়ই ডাকে । ও যায় না । ওর সব খেলা এখন এই ছোট্ট জীবন্ত খেলনাটার সাথে ।

চলবে..

শামছুল ইসলাম
৩১-০৩-২০১৭
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:১৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×