আপনি বা তুমিই বাংলাদেশ
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকের কথা। ল্যাবে বসে লাঞ্চ করছিলাম। আমাদের ল্যাবে সাধারণত সবাই একত্রে লাঞ্চ করতাম। সেই ২০১৩ সাল থেকে একটি বিষয় নিয়ে ভাবতাম, আর তা হল জাপানের রেল ষ্টেশনে কিছু মানুষের ছবি এবং প্রত্যেকের নামের পাশে একটি বড় অঙ্কের টাকা দেয়া। বুঝতে অসুবিধা হয় নি ধরিয়ে দিন টাইপের বিজ্ঞাপন। আমার মনে প্রশ্ন ছিল এমন একটি দেশে এই মানের খারাপ লোক আসলেই কি আছে?
জাপানিজরা খুবই আবেগি মানুষ, অল্পতেই মাইন্ড করে বসতে পারে কিন্তু আপনি বুঝতেও পারবেন না। তাই সাহস করে কাউকে জিজ্ঞেস করি নি। ওইদিন খাবার মাঝে হঠাৎ করে এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম "আচ্ছা বল তো এই যে এত টাকার অফার দেয়া এগুলো কেন, এরা কি করেছে" ও আমাকে বলল এই লোক গুলো হয় মাফিয়া নয়ত কাউকে খুন করেছে। সে আমাকে আরও বলল এমন কাউকে দেখলেই আমি পুলিশে কল দিব। আমি বললাম তাহলে তো তুমি একবারেই মিলিওনিয়ার, নাকি বল? বলে হাসলাম। উত্তরে আমার ছাত্রি বলল, নাহ হয়ত টাকাও নিব না কিন্তু একজন অপরাধীকে আইনের হাতে তুলে দেয়ার শান্তিটা মিস করতে চাইব না।
আমি বুঝলাম, কেন ওরা উন্নত আর আমরা অবনত জাতি। সে যাই হোক, মজা করার জন্য বললাম মনে কর এমন একটি পোষ্টারে আমার ছবি তখন কি করবে। ছাত্রী বলল, এমন কোন কাজ তুমি করবেই না। আর যদিও কর আমি তোমাকে চাইব পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে! আমি বললাম উল্টা হয়ে গেল না তোমার বক্তব্য? ও আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, "মাহাতাব তোমাকে ৩ বছরের বেশী সময় ধরে দেখছি, তুমিই আমার কাছে বাংলাদেশ এবং আমি বিশ্বাস করি তোমরা অকারনে কারো সাথে খারাপ ব্যবহারও করবে না। সুতরাং তুমি যদি কাউকে খুনও কর তা অত্যান্ত যৌক্তিক খুন হবে কিংবা তুমি খুন করতে বাধ্য হয়েছিলে বলেই আমি বিশ্বাস করব। এটা আমি তোমাকে খুশি করতে বলি নি মন থেকেই বলছি এবং আমার এই তিন বছরের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি"!
আমি চাইলে ক্রেডিট নিয়ে চলে আসতে পারতাম কিন্তু আমি পারিনি, কারন ও আমাকে দিয়ে বাংলাদেশকে মূল্যায়ন করছে যদিও আমার দেশের চালাকেরা কখনো এই মেয়েকে পেলে তার সর্বনাশের অন্ত রাখবে না, তাই বললাম আমাকে দিয়ে আমাকে মূল্যয়ণ কর সারা দেশে ১৭ কোটি মানুষ তাদের অন্তত আমাকে দিয়ে বিচার করিও না, তবে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই তুমি যে ধারনা রাখ ঐ রকম কিন্তু গুটিকয়েক এত খারাপ যে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। সুতরাং কখনো অন্ধ বিশ্বাসের আগে নিজে তাকে মূল্যায়ন করে নিবে। মাহতাবের দেশের তাই সে ভালো এমন কিছু ভাবার কারন নেই।
আমি লজ্জিত বোধ করতেছিলাম শেষের কথা গুলো ওকে বলতে, কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না। কারন দিন শেষে আমি তো আমার দেশের মানুষকে জানি। তবে আমাদের নিজ নিজ পরিবর্তনের বা ব্যাবহারের মাধ্যমেই আমরা ঐ ছাত্রীর মনের মত করে বাংলাদেশকে সাজাতে পারি। আর এ জন্য দরকার সদিচ্ছা এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের অবসান। এই দুটোর সমন্বয় হলে আসলেই এমন দেশটি কোঁথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি সকল দেশের রানি হবে যে আমার জন্মভুমি। আমরাই হলাম আমাদের দেশের প্রকৃত এ্যাম্বাসেডর।
#নিজে_বদলাই দেশ এমনিতেই বদলে যাবে ইনশা আল্লাহ্।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০৯