somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেনো ইন্ট্রোভার্টদের জন্য বাইরের পৃথিবীর সাথে মেশা কষ্টকর ?

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাধারণত যারা একটু নিরব স্বভাবের মনোবিজ্ঞানের ভাষায় তাদের ইন্ট্রোভার্ট বলা হয় । ইন্ট্রোভার্টদের নিয়ে এটি আমার দ্বিতীয় লেখা । প্রথম লেখাটি Click This Link এখানে পড়তে পারেন ।
-------------------
ইন্ট্রোভার্টদের জন্য বাইরের পৃথিবীটা একটা রণক্ষেত্র । গ্যঞ্জাম, হৈচৈ, চিল্লাচিল্লি সব মিলিয়ে আমাদের বাইরে যাওয়া আর যুদ্ধে যাওয়া সমান । কিন্তু একাকীত্ব ও নীরবতা উপভোগ করলেও সামাজিক জীব হিসেবে এক সময় না এক সময় আমরা সকলেই অন্য মানুষের অনুষঙ্গের চাহিদা অনুভব করি । কিন্তু বাইরে যাওয়া, মানুষের সাথে মেশা, কথা বলা ইন্ট্রোভার্টদের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভীতিকর পরিস্থিতি । আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে এই পরিস্থিতি গুলোর সাথে আমি খুবই পরিচিত । কিন্তু কেনো ইন্ট্রোভার্টদের জন্য বাইরের পৃথিবীর সাথে মেশা এতোটা কষ্টকর তার কারণ গুলোকে তালিকা করলে হাতের আঙ্গুল গুনে দশটা কারণ পাওয়া যায় ।
(১) প্রথম সমস্যাটা হয়তো সকলেই বুঝে গেছেন, সেটা হলো লাজুক । ইন্ট্রোভার্টরা অত্যধিক লাজুক হয় ।
(২) লাজুক হওয়ার সাথে আরেকটা সমস্যা জড়িত আছে । বুঝিয়ে বললে অধিকাংশ মানুষই আসলে ইন্ট্রোভার্টদের লাজুক স্বভাব বুঝতে পারে কিন্তু আপনি লাজুক প্রকৃতির এবং শান্ত স্বভাবের এটা সবাইকে বোঝানো বা সবার সাথে আলোচনা করা সম্ভব হয় না । ফলশ্রুতিতে অধিকাংশ মানুষ আমাদের মুডি অথবা অহংকারী ভেবে বসে এবং কিউট ও নিরীহ হওয়ার বদলে আমরা আজব এবং অদ্ভুত হয়ে যায় ।
(৩) ইন্ট্রোভার্টদের কথা বলার আগে চিন্তা করার এবং অতিরিক্ত চিন্তা করার একটা প্রবণতা আছে । কোন কথা বলার আগে আমরা বহু চিন্তা, ফিল্টার, ছাটাই বাছাই করে কথা বলি । কোথাও আলোচনা করার আগে কিছু ভুল বলছি নাতো? এই দুশ্চিন্তা অধিকাংশ সময় ঘিরে রাখে । এই দুশ্চিন্তার অবশ্য কারণও আছে । ইন্ট্রোভার্টরা খুবই ইমোশনাল এবং যেকোনো রকমের খারাপ বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তাদের অন্যদের থেকে বেশী কষ্ট দেয় । ফলে দেখা যায় কথা বলার সময় আমরা মানসিক ভাবে অত্যধিক চাপ অনুভব করি । দেখা যায় আমরা আলোচনা উপভোগ করার চাইতে চাপটাই বেশী অনুভব করি । এজন্য সাধারণত ইন্ট্রোভার্টরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে বা কথা বলায় অন্যদের চাইতে বেশী সময় নেয় । ইন্ট্রোভার্টরা সাধারণত ধীরে ধীরে কথা বলে এবং অন্যদের কথা পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজের কথা শুরু করে না ।
(৪) ইন্ট্রোভার্টরা ইমোশন সেনসিটিভ । ছোট কোন ঘটনা অপমানজনক, লজ্জাজনক বা অস্বস্তিকর কোন কথা বা কাজ খুব সহজেই আমাদের মাথায় ধরে যায় । অনেক ক্ষেত্রে সামনের জন বা অন্যেরা হয়তো সেটা কিছু মনেও করে না এমনকি ঘটনাটির পরের সেকেন্ডেই তারা ভুলে যায় কিন্তু ইন্ট্রোভার্টদের মাথায় সেটা থেকেই যায় এবং সারাদিন তাড়া করে বেড়ায় এমনকি কয়েক বছর পরেও সেটা নাড়া দিতে পারে । নেগেটিভ এবং খারাপ ইমশোন গুলো ভোলা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর এবং এগুলো আমরা সহজে খুঁজে নিতেও এক্সপার্ট । এক্সট্রোভার্টরা সাধারণত কোন কিছু এতো বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখে না । কিন্তু ইন্ট্রোভার্টদের এই সহজে আঘাত পাওয়ার প্রবণতা তাদের মানুষের ভিতর যাওয়ার ব্যাপারে ভীত করে রাখে ।
(৫) সামাজিক পরিবেশে অনেকেই অনেক কিছু করে । কিন্তু সবকিছু কে গুরুত্ব দিতে গেলে হয় না । কিন্তু ইন্ট্রোভার্টদের তার আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে অতিরিক্ত চিন্তা করা এবং সবকিছু তে কারণ খোজার প্রবণতা আছে । ইন্ট্রোভার্টদের জন্য তার আশেপাশের ঘটনা গুলো এড়িয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর । রফিক এমন কেনো করলো ? তমা এভাবে আছে কেনো ? সুজন আমার সাথে এভাবে কথা বললো কেনো ? আমার কি কোথাও ভুল হলো ? সোশ্যাল সিটুয়েশনে এগুলো ইন্ট্রোভার্টদের সব সময় চিন্তার ভিতর রাখে । ফলে সবকিছুর মানে খুঁজতে গিয়ে আমরা ব্যাপক চাপে থাকি । ফলে অধিকাংশ সময় আমরা সামাজিক পরিবেশ থেকে দূরে থাকাটাই পছন্দ করি । অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইন্ট্রোভার্টরা নিজে কথা বলা বা কোন পরিস্থিতিতে জড়িত হওয়ার চাইতে অন্যদের কথা এবং কাজ অবজার্ভ করতে বেশী পছন্দ করে । পারফর্মারের চাইতে দর্শকের ভূমিকাটা আমাদের বেশী পছন্দ ।
(৬) ইন্ট্রোভার্টদের অধিকাংশ কাজের আগে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হয় । ইন্ট্রোভার্টরা সাধারণত হুট করে কিছু করতে পারে না । মানুষের সাথে মেশার ক্ষেত্রেও এটা খাটে । সামাজিক পরিস্থিতিতে যাওয়ার আগে আমাদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত হতে হয় । শুধু এটাই নয় আমাদের জীবনের অধিকাংশ কাজেই আমাদের আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে ।
(৭) সামাজিক পরিবেশে মেশার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার চাইতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টাই করি না । কারণ ব্যর্থ হলে সেটাই আমাদের জন্য অত্যধিক কষ্টকর । ফলে সামাজিকতার ক্ষেত্রে “দূরে থাকো, সুরক্ষিত থাকো” এই মন্ত্রটা আমাদের অনেক প্রিয় ।
(৮) প্রতিটা দিন আমাদের জন্য সমান হয় না । আমরা প্রতিদিন বা সব সময় সোশ্যালাইজিং এর মুডে থাকি না । কিছু দিন আমরা সবকিছু থেকে দূরে থাকতে বা একা সময় কাটাতে পছন্দ করি । হ্যাঁ... এটা সকলের সাথেই হয় এমনকি এক্সট্রোভার্টদের ক্ষেত্রেও হয় তবে ইন্ট্রোভার্টদের ক্ষেত্রে এটা খুব বেশী হয় । ইন্ট্রোভার্টদের মুড খুব দ্রুত চেঞ্জ হয় এবং খুব ছোট ছোট কারণেও মুড বদলে যায় ।
(৯) একটা খারাপ দিনে বা খারাপ মুডে আমাদের জন্য বাইরে বেরোনো খুবই কষ্টকর । সেই সময় আমরা বাইরে বেরোতে চাই না । তখন আমরা কিছুটা সময় নেই নিজের সাথে আলোচনা করে বা চিন্তা করে সবকিছু আবার রিসেট করার জন্য । অনেকে আবার এই সময় নিজস্ব কোন কাজ করে যেমন ক্রিয়েটিভ কোন কাজ । এগুলো আমাদের মেন্টাল ফোকাস ঠিক করতে এবং সবকিছু আবার স্বাভাবিকে আনতে সাহায্য করে ।
(১০) ইন্ট্রোভার্টদের উপর অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক একটা চাপ থাকে অন্যদের মতো আচরণ করার জন্য । বাকি সবার মতো কথা বলা আচরণ করার জন্য চাপ নিজের থেকে এবং বাইরে থেকে, দুই দিক থেকেই আসে । কিন্তু এতকিছু পেরিয়ে ইন্ট্রোভার্টদের জন্য বাকিদের মতো আচরণ করা আমাদের জন্য আসলেই কষ্টকর । ফলে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দূরে থাকতেই পছন্দ করি ।
-----
শেষকথা, মানুষ একটি আবেগপূর্ণ প্রাণী। আমরা আমাদের ইমশোন গুলো শুধু অনুভবই করিনা বরং আমরা আমাদের চেহারায় ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনের মাধ্যমে সেগুলো প্রকাশও করতে পারি । মানুষের চেহারায় কিছু স্পেশাল তন্তু থাকে যেগুলো দ্বারা আমরা রাগ, দুঃখ, হাসির মতো ২০ টিরো বেশী ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন দ্বারা আমাদের মনের অনুভূতি গুলো শুধু কথায় নয় চেহারায়ও প্রকাশ করতে পারি । এতো রকমের অনুভূতি শক্তি পৃথিবীর আর অন্য কোন প্রাণীর ভিতর নেই । সুতরাং মানুষ তৈরিই হয়েছে আবেগ অনুভব করার জন্য । কিন্তু সকল মানুষ সমান ভাবে সবকিছু অনুভব করে না । কেউ একটু বেশী ইমোশনাল আবার কেউ কম । ইন্ট্রোভার্টরা অন্যদের চাইতে একটু বেশী ইমোশনাল । এমন না যে ইন্ট্রোভার্টরা বাইরে যেতে পারে না । কিন্তু তারা বাইরের খারাপ অনুভূতি গুলো চাই না তাই দূরে থাকতে পছন্দ করে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫
১১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×