somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিচিত্র যত বিল্ডিং (পর্ব – ২খ)

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিচিত্র যত বিল্ডিং (পর্ব – ১), বিচিত্র যত বিল্ডিং (পর্ব – ২ক)

আগের পর্বে নিয়েমায়ারের স্থাপত্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবারে নরম্যান ফস্টারের পালা।

30 St Mary Axe aka The Gherkin



অনেকেই লন্ডনে থাকেন। অনেকে জীবিকা, শিক্ষা, চিকিৎসা, ভ্রমণ, আরও বারো ভাজা কাজে লন্ডনে যাওয়া আসা করেন। তাদের সবার চোখেই এটা অনেক আগেই পড়েছে। কোন কোন সময় বুলেট বিল্ডিং বলা হলেও এর জনপ্রিয় নাম The Gherkin (ছোট শশা)। যাদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা বড় দোকানে ঢু মারা অভ্যেস আছে, তারা অনেকেই হয়তো Gherkin (ছোট শশা) এর আচার কিনে খেয়েছেন। যদিও টেক্সচারে একটা শশা-শশা ভাব আছে, তাহলেও মূলত: প্ল্যান ভিউতে এটা কাটা শশার মত।



ওখানে আগে ছিলো বাল্টিক এক্সচেঞ্জ আর চেম্বার অফ শিপিং এর ভবন। ১৯৯২ এর ১০ এপ্রিল আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি এক বোম ফাটালে দু'টো ভবনের সাংঘাতি ক্ষতি হয়। এরপর টাকার অভাবে বাল্টিক এক্সচেঞ্জ আর নতুন করে কাজে হাত দিতে পারেনি। এক পর্যায়ে বাল্টিক এক্সচেঞ্জ আর চেম্বার অফ শিপিং এর মিলিত সিদ্ধান্তে জমিগুলো ১৯৯৫’তে ট্রাফালগার হাউজের কাছে বিক্রী করে দেয়া হয়।

রাস্তার মাথায় এক শশা। ক্ষুধার্ত গাড়ীচালকের কাছে এটার আকর্ষণ তখন কেমন?

১৯৯৬ সালে ট্রাফালগার হাউজ, মিলেনিয়াম টাওয়ার নামে ৩৮৬ মি. (৯২ তলা) উঁচু এক বিল্ডিংয়ের নক্সা জমা দেয়। তাতে বাগান, রেস্তোরা, অফিস, অ্যাপার্টমেন্ট সবই ছিলো। কিন্তু হিথরো বিমানবন্দরের ফ্লাইট পাথে পরে যাওয়ায়, আর আরও বেশ কিছু কারণে এই প্রকল্প বাতিল হয়। সুবিধা করতে না পেরে ট্রাফালগার হাউস ১৯৯৮’তে ৮১ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে এটা Swiss Re’র কাছে বিক্রী করে দেয়। Swiss Reinsurance Company Ltd. বা সংক্ষেপে Swill Re, এরপর ১৮০ মি. উঁচু, ৪১ তলার এই বিল্ডিংয়ের প্ল্যান করে। এরপর এটা IVG Immobilien AG আর Evans Randall মিলে Swiss Re’র কাছ থেকে সর্বমোট ৬৩০ মিলিয়ন পাউন্ডে কিনে এক বিশাল ধরা খায়। এ দু’টি প্রতিষ্ঠান কিছুতেই তাদের ঋণ শোধ করতে পারছিলো না। অবশেষে ২০১৪’র এপ্রিল মাসে এটা বিক্রীর কথা বলা হয় ৫৫০ মিলিয়ন পাউন্ডে। শেষমেষ ২০১৪’র নভেম্বরে ব্রাজিলিয়ান ব্যাংকিং বিলিয়নীয়ার Joseph Safra’র প্রতিষ্ঠান Safra Group এটা ৭০০ মিলিয়ন পাউন্ডে কিনে নেয়। Swiss Re ভাড়াটিয়া হিসেবে মোটামুটিভাবে ২০৩১ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক ফ্লোর স্পেস নিয়ে থাকবে।



Swiss Re’র এক কর্মকর্তা ছিলেন Sara Fox। তাকে বলা হোত Iron Lady; তিনি তখন নতুন বিল্ডিং ডিরেক্টর। অনেকটা তার উদ্যোগে এই প্রজেক্ট সফল হয়। যদিও ১৯৯৮’তে Swiss Re’র কাছে মালিকানা হস্তান্তর হয়, তবুও ১৯৯৭ সালেই Norman Foster এ প্রজেক্ট ডিজাইনের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এর স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করেছে Arup Group। এত জটিল প্রজেক্টের কোয়ান্টিটি সার্ভে করা চাট্টিখানি কথা নয়। আমাদের দেশে কোয়ান্টিটি সার্ভে মানেই, কম বেতনের দু’একজন ডিপ্লোমা সিভিল ইঞ্জিনীয়ার, বসে বসে বিল অফ কোয়ান্টিটি বার করছে, এ রকম একটা চিত্র ভেসে ওঠে। কিন্তু যাদেরই আন্তর্জাতিক মানের প্রজেক্টে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তারাই জানেন যে এটা কত ক্রুশিয়াল একটা কাজ। Gardiner & Theobold নামের প্রতিষ্ঠান এই জটিল কাজটি করে দেয়। এছাড়াও ছিলো Hilson Moran Partnership, এরা M&E, লাইটিং ইঞ্জিনীয়ার হিসেবে Speirs & Major, আর ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট হিসেবে Derek Lovejoy Partnership। নির্মাণে Skanska AB।

কনসেপ্ট নিয়ে কাজ হচ্ছে

টেকনিকাল কেরিকেচি





স্কেল ডাউন মডেলে নানা রকম স্টাডি

নির্মাণ



মালদার পার্টির জন্য ডিনারের ব্যবস্থা

নয়নাভিরাম দৃশ্য

সর্বোচ্চ স্থানে মিটিং স্পেস

রিসেপশান লবী

এটা কাল্পনিক ছবি। এক সময় অবশ্য সামনের বিল্ডিংটিও হবে।

২০০৪ এর ডিসেম্বরে এটার উদ্ধোধন হয়। এরপর এ প্রজেক্টের জন্য নরম্যান ফস্টার আর তার সহযোগীবৃন্দ বহু পুরস্কার জিতেছেন। ২০০৪ সালের অক্টোবরে RIBA Stirling Prize অর্জন করেন তারা। একমাত্র এটার ক্ষেত্রেই বিচারকবৃন্দ unanimous সিদ্ধান্তে পৌছে ছিলেন। আধুনিক লন্ডনের ল্যান্ডমার্ক তালিকায়, এই বিল্ডিং অনন্য হিসেবই হয়তো থাকবে আরও বহুকাল।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:১১
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×