somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা........অথচ

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেটাকে দেখলাম অনেক কষ্ট পেয়ে একটা স্ট্যাটাস লিখেছে মায়ের মৃত্যুর এক বছর উপলক্ষে। কি র্বোড চোখের জলে ভেসেছে তার লেখাটা লিখতে গিয়ে। লেখাটা ছূঁয়ে গেলো হৃদয় সাথে দুঃখ হলো এবং কিছু প্রশ্ন জাগল মনে।
মহিলাকে আমি চিনতাম। খুব সাধারন চিরন্তন আবহমান বাংলার ধারক একজন মা, একজন বধু। একজন প্রেমিকা একজন সুগৃহিনী।
যার হৃদয় ভরা ভালোবাসা। সুন্দর একটি গৃহের জন্য সুন্দর একটি সংসারের জন্য। যেখানে সারাক্ষন অভাব হুটোপুটি করে সেখাসে সাজিয়ে রাখতে চায় সুখ মনের জোড়ে।
প্রেম করে বিয়ে হয় মহিলাটির বছর ত্রিশেক আগে। অভাবের সংসারে, স্বামীকে প্রায় সময় বাইরে থাকতে হয় চাকরির প্রয়োজনে। বিরান মাঠের মাঝে বেড়ার ঘরে একা দুটি শিশু সন্তানকে নিয়ে কাটিয়েছে রাতের পর রাত টিমটিম প্রদিপের আলোয়। বন্যায় ডুবে যাওয়া চারপাশে একা জেগে কাটিয়েছে শিশু সন্তানের পাশে রাত। কখন কি অঘটন ঘটে যায় সাপ, জোঁক ঢুকে যায় ঘরে।
মুখ ভর্তি হাসি ছিল, আনন্দ আর ফূর্তি ছিল সুখের সংসারে। জোড়া তালি দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরানো ঘরে কোন অভিযোগ ছিল না।
সুন্দর রান্না করত। সাজানো নিপাট উঠান. সবজীর বাগান। সন্তানের দেখভাল তাদের সুন্দর ভবিষ্যত্যের জন্য স্কুলে পাঠানো। আর স্বামী ঘরে এলে সুখের উপচানো হাসিতে জীবনটা চলছিল মন্দ না।
অপেক্ষা আর দারিদ্রতার সাথে পাল্লা দিয়ে সুখের দুধের বাটি যখন মুখের কাছে ঠিক তখনই কালো হুলো উল্টে দিল দুধের বাটি। দারিদ্র ক্লিষ্ট অভাবের শরীরে বাসা বাঁধল দূরারোগ্য ক্যনসার।
সন্তান যখন পড়ালেখা শেষ করে কাজ পেয়েছে। ভালো আয় করছে সে সময় বছর কয় বিছানার সাথে লেপটে থেকে পারি দিল অন্য লোকে।
ছেলেটির কষ্ট মন ছূঁয়ে গেলো সেই সাথে মনে হলো এমন ভালো মানুষদের ভাগ্য এত কষ্টের কেন হয়? কেন সুখ নামের পাখিটা তাদের কাছে ধরা দেয় না কখনও।
অথবা প্রকৃতির বিচারে এই হয়ত সঠিক সিদ্ধান্ত। হয়ত বা ছেলে আজ যেমন কষ্ট পাচ্ছে তার এই কষ্ট পাওয়াটা জটিল হয়ে যেত মা বেঁচে থাকলে বউয়ের সংসারে।
মার জন্য ছেলে যতটা করতে চায় অনেক সময় তা করতে পারে না বউএর কারণে। বিশেষ করে আমাদের দেশের মহিলা যারা চাকরী করে না গৃহবধু হয়ে সারাটা জীবন ব্যয় করে স্বামী, সন্তান,আত্মিয় পরিজনের দেখ ভালে। নিজেদের জীবন নিয়ে ভাবে না কখনও। ভাবেনা কি ভাবে চলবে শেষ জীবন। অথবা চাকরি বা নিজস্ব আয় থাকলেও পরিজনের ভালোবাসায় যার সবটাই তুলে দেয় প্রিয়জনের হাতে। আর শেষ বয়সে নিঃস্বতার সাথে অর্জন করে, ভালোবাসহীন জীবন।
কিছুদিন ধরে একটা ছবি ঘুরে ঘুরে চোখের সামনে চলে আসছে।
বৃদ্ধা মা যে কুঁজো হয়ে গেছে দেহ ভারে সে ছেলেকে অনুনয় করে বলছে। ”তোদের তো রান্না করার লোক লাগবে। আমি নাহয় রান্না করব তোদের জন্য। তুই তো আবার সব খাবার খেতে পারিস না তবু আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাস না বাবা।” ছবিটা কুঁজো বৃদ্ধা মা রান্না করছে।
ছেলে রান্নার লোক হিসাবে মা কে রেখেছে। এমন অনেক উদাহরণ ঘরে ঘরে। সভ্যতার মুখোশ এঁটে অনেকে ঘরে এক রকম, বাইরে আরেক রকম চেহারার, জীবন যাপন করে। এক সময় ভাবা হতো বিষয়টা শুধু অর্থনৈতিক দূরবস্থার সাথে জড়িত। কিন্ত তা নয় অনেক অর্থবানের ঘরেও অনাচারের এমন দৃশ্য দেখা যায়।
বিষয়টা মূল্যবোদের, শিক্ষার, বিবেকের, মনুষ্যত্বের।
এই ঘটনার সাথে আরো একটি বিষয় জড়িত যা আমাকে প্রচণ্ড ভাবে আহত করেছে। প্রেমিকা যার হাত ধরে প্রেম করে, বউ করে ঘরে নিয়ে আসল স্বামী। যার ত্যাগের মহিমায় সুন্দর জীবন যাপন করল অনেক বছর। যে স্ত্রীটি সুখের আশায় থেকে, তিল তিল করে ত্যাগ করে গেল তার জীবন। রোগে ভোগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরল। সেই প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর কয়েক মাসের মধ্যে স্বামী প্রবর, ছেলের বয়সি একটি মেয়েকে বিয়ে করে ফেলল। প্রেমিকা বা স্ত্রীর কোন স্মৃতিই তার বিয়ে করতে বাধার কারণ হলো না।
একটি বউ ছাড়া তার সংসার চলে না। সে একা কি ভাবে জীবন যাপন করবে? অতি উৎসাহি হয়ে মহিলারাই তাকে বিয়ে করতে উৎসাহ যুগিয়েছে। মহিলারাই মহিলাদের চরম শত্রু এই বিষয়টা ভীষণ ভাবে উপলব্ধি করলাম, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে। একটি মহিলার সাজানো সংসারে অন্য একটি বাচ্চা মেয়েকে এনে তুলে দিতে তাদের একটুও বাঁধল না।
পঞ্চাশ উর্ধো লোকটা বছর দশ বারো বয়সের বাচ্চা রেখে হুট করে মরে গেলে। এই দ্বিতীয় বউটির জীবন কেমন হবে? কার ছায়ায় সে জীবন যাপন করবে তখন? যার বয়স হয়ত তখন ত্রিশ বা পঁয়ত্রিশ হবে। ভরপুর যৌবনের একজন বিধবা নারী। যে কেবল স্বামীর সেবায় দিনাতিপাত করছে।
খুব জানতে ইচ্ছে করে। সন্তানরা পিতার বিয়ে মেনে নিল। ঠিক উল্টো ভাবে যদি তাদের বাবা মারা যেতো তবে কি তারা মায়ের বিয়েতে রাজী হতো?
সমাজে মনে হয় কিছু নিয়ম পাল্টানোর সময় এসেছে।



সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×