somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

আটপৌড়ে সময় আর খেয়ানৌকার গল্প

২০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দু হাজার পনেরয় এই সময়ে দেশে গিয়েছিলাম বাড়ি ছিলাম অনেক দিন। ঘরে শুয়ে বসে মনে হয় আমার শরীরে জঙ্ ধরে যাচ্ছিল তাই প্রতিদিন হাঁটতে বেরুতাম। শহর জুড়ে হেঁটে এসেও ক্লান্তি লাগত না। অথচ এক সময এই হাঁটায় কী দারুণ ভয় ছিল। শরীর ঠিক রাখা মন ভালো রাখা আর দেখার জন্য প্রতিদিনের কাজ ছিল হেঁটে বেরানো। প্রায় সময় নদী পারে চলে যেতাম। মেয়র সুন্দর ফুটপাত আর নদীর পাড়ের দৃশ্য অবলোকনের জন্য বসার জায়গা সহ পার্কের মতন করেছিলেন। রাতের বেলা আলো জ্বলত। দেয়াল জুড়ে মোরাল। বেশ আধুনিক ব্যবস্থায় সাজিয়েছিলেন খেয়াঘাটের পাড়। ভালো কাজ করা শহরের মানুষের পছন্দের মেয়র ভদ্রলোক হঠাৎ করে গত মাসে অল্প বয়সেই ইন্তেকাল করছেন।
নদীর পড়ে প্রাচীন অশ্বত্থ গাছ বড় বড় শাখা মেলে ছাতা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাঁধানো সিমেন্টের বেদী। আধুনিক ক্যাফে টাইপের রেস্তুোরা। উঠতি বয়সের পোলাপানের আকর্ষনের কেন্দ্র স্থল। চা কফি কোক বিস্কিট, স্যান্ডউইচ মিষ্টি, সিঙ্গারা পান কি নাই। সাথে কাঁচের জানালার ভিতর বসে নদীর সৌন্দর্য দেখার ব্যবস্থা গল্প আড্ডায় মেতে।




শহরে অনেক অপরিচিত মুখ। তারপর নিজের শহর বলে কথা র্নিদ্বিধায় ঘুরতাম সাথে বাড়ির বাচ্চাদের নিয়ে। অনেক সময় পরিচিতদের সাথে দেখা হয়ে যেত ভালোলাগত অনেকদিন পরে দেখা হয়ে।
নদী পারে খেয়া ঘাট নৌকা, এপাড় ওপাড় করছে সারাক্ষণ। প্রায় সময় খেয়া নৌকায় চড়ে অনেক দূরে চলে যাওয়ার মজা ছিল। গ্রামের মানুষ হাট বাজার সেরে ঘরে ফিরছে। পরন্ত বিকালের সোনা রঙে নদীর জল চকচক করছে। অথবা ঝা ঝা রোদ কিছুই খারাপ লাগত না।
ছাতা মাথায় দাড়িওলা মুরব্বী বা সারা দিনের কর্ম ক্লান্ত শ্রমিক রমণী। সাথে কিছু কাঁচা বাজার শাক সবজী। থলেতে জামা কাপড় বা তেলের শিশি। মাছের ঝাঁকা বা সাইকেল হাতে মানুষ। বোরখার আড়াল থেকে অবাক দৃষ্টি নারী অথবা মায়ের হাত জড়িয়ে থাকা শিশু। এমন অনেকের সাথে নিতান্ত গ্রাম বাংলার সাদামাঠা মানুষ। তাদের সাথে কখনো ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে কখনো নৌকার ছইয়ের উপর বসে আমরা চলে যেতাম দূরে দূরে।




একদিন নেমে গেলাম এক গ্রামে। সেখানে বাজার বসেছে নদীর মাছ শাক সবজী ঝুড়ি টুকরিতে নিয়ে খোলা একটা যায়গায়। দর দাম কেনা কাটা চলছে। পাশে সারি সারি দোকান। মুড়ি মুড়কি, মিঠাই শাক সবজী, জুতা মিষ্টি, কাপড়, চা কত কিছু বিক্রি হচ্ছে।
মোটর সাইকেল সাজানো। কিছু লোক জানতে চাইল আমরা ভাড়া করব নাকি। মোটর সাইকেলে চড়ে মেঠো পথ পেরিয়ে আরো দূরের গ্রামে চলে যাওয়া যায় বিষয়টা বেশ লাগল। আগে গ্রামের মানুষের হাঁটা ছাড়া কোন গতি ছিল না বাড়ি যাওয়ার। অনেক মহিলাকে দেখলাম মোটর সাইকেলের পিছনে বাচ্চা পোটলাপুটলি নিয়ে বসে চলে যেতে ভাড়ায়। একদিন দেখা পেলাম এক সাজানো বিয়ে বাড়ির তোরণ। আর পেলাম রাঙা শিমুল ফুলের গাছের দেখা।



নদীর কাছে সবুজ ধানের ক্ষেত মনোহরণ রূপ। শহরের বাইরে শান্ত শান্ত রূপ। তবে কুঁড়ে ঘর নেই তেমন। বেশ উন্নত দালান বাজার এবং বাড়ি। মহিলাদের শাড়ি পরা দেখলাম না। বেশীর ভাগ সেলোয়ার কামিজ এবং লম্বা ম্যাক্সি পরে ঘরের আসে পাশে কাজ করছে।
শুধু অপার বিশুদ্ধ প্রকৃতি নয় মাঝে মাঝে দেখতে হতো কালো ধূয়াও। সবুজ আছে তবে আগের মতন বিস্তৃত মাঠ নেই।
বাড়ি ঘর প্রচুর মাঝে মাঝে।


আরো ছিল চলতি পথের মানুষদের খাওয়া শেষে পানির বোতল থেকে চিপসের প্যাকেট নদীর জলে ছূঁড়ে ফেলা। প্রতিবার আমার মনে হয়েছে এই কাজটা কি ভাবে বন্ধ করা যায়। মানুষগুলো পরম আনন্দে ফেলে দিচ্ছে বর্জ্য প্লাস্টিক নদীর জলে। যা বিপর্যয় আনছে পরিবেশের। ওদের কেউ এ বিষয়ে সচেতন করছে না। অথবা জানলে তারা বুঝতে পারছে না ক্ষতিে পরিমান।



কখনো নৌকায় গিয়ে যে কোন এক ঘাটে নেমে রিক্সা করে ফিরে আসতাম। কখনো ফিরতি খেয়ায়। রিকসায় বসে কোন মজা পাইনি। সিটগুলো এতই ছোট করেছে। মনে হয় যে কোন সময় উল্টে পরে যাবো। একদিন তো পরেই গেলাম প্রায়। নদীর পার ধরে উঁচু নীচু রাস্তায় মাঠ দিয়ে রিকসায় যাচ্ছি। আমরা দেখতে চাই আর রিকসাওলার মহা উৎসাহ আমাদের ঘোরানোর জন্য। এদিক যাও ওদিক যাও করে সারা শহর ঘুরে দেখলাম অনেক বদল। ছোট ছোট রাস্তা আর বাড়িঘরের সারি অনেক অচেনা। সব পেরিয়ে নদীর পাড় ধরে রাস্তা শেষ। রিকসাওয়ালা মাঠের মাঝ দিয়েই চলছে। বললাম উঁচু নিচু গর্ত যে কোন সময় রিকসা উল্টে যাবে। নামতে দাও। আমরা হেঁটে যাই। মাঠ পার হয়ে রাস্তায় গিয়ে আবার চড়ব। না সে কিছুতেই আমাদের নামতে দিবে না।
আর এক সময় গর্তে চাকা পরে, রিকসা উল্টাতে শুরু করল। আগে থেকে তৈরী ছিলাম তাই ধরনীতলে পৌঁছানোর আগেই মাটিতে দাঁড়িয়ে গেলাম। বাকি পথ হেঁটে গেলাম।
এমন হুটহাট ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে একদিন ছোট ভাই আয়োজন করে আমাদের নৌকা ভ্রমণে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরো একটা নৌকা ভাড়া করল। আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য আসল শহরের নাম করা উঠতি শিল্পী। গান হবে আনন্দ হবে অনেক দূরে হারানো যাবে।
বাসার কুকুর "টরি" আমাদের সাথে যাবার জন্য পিছে পিছে এসে নৌকায় চড়ে বসল। ছোট ভাই তাকে ঠেলে নদীতে নামিয়ে দিল সাঁতার কাটার জন্য। তীরে ফিরে টরি আর নৌকায় আসল না। ছোট ভাই কাজ আছে বলে আমাদের সাথে আসল না। বটতলার দোকানে চা সেরে বাড়ি গেলো। টরিও ওর সাথে গেলো। আর আমরা নৌকায় কখনো ভিতরে কখনো বাইরে কখনো ছইয়ে কখনো গুলুয়ে বসে আনন্দে মতোয়ারা। কোন পাশ থেকে ছবি তুললে কোন কিছুই মিস হবে না তা নিয়ে ব্যস্ত।শিল্পীরা গান শুরু করেছে মনের আনন্দে আমরাও তান ধরেছি।
কিন্তু হঠাৎ দেখি বেশী দূরে না গিয়েই নৌকা তীরে ভীড়ছে। কি হলো মাঝি এখানে থামাও কেনো?
ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে।
ওরা ইঞ্জিন ঠিক করছে। আমরা নৌকায় বসে অপেক্ষা করছি। তারপর তীরে নেমে হাঁটা চলা, গান গাওয়া সব সারা হওয়ার পর অপেক্ষার পারা বিরক্ততে ঠেকেছে, সন্ধ্যা হলো প্রায় কখন নৌকা ঠিক হবে?
না নৌকা আর ঠিক হলো না। মোবাইলে ডেকে আরেকটি নৌকা আনা হলো। ফিরতি নৌকার চেহারাটা বেশ ময়ূরপঙ্খী ছিল। আমাদের সবার এই নৌকাটা পছন্দ হলো। আগের জীর্ণ নৌকার চেয়ে। সন্ধ্যা হয়ে আসছিল তাই দূরে না গিয়ে ফিরে আসা হলো। আমরা ময়ূরপঙ্খী চড়ে ফিরে এলাম। আয়োজনের তুলনায় আনন্দটা তেমন জমল না সেদিন। খেয়া নৌকার আয়োজনহীন দশ টাকা খরচ আর ভাড়া নৌকায় আয়োজন করে পাঁচশ টাকা খরচ। এটাই শুধু পার্থক্য ছিল। তবে নৌকা নষ্ট হওয়ার বৈচিত্র অভিজ্ঞতা মন্দ না। নদীপাড়ে শান্ত সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখা হলো।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:২১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×