মঙ্গল শোভা যাত্রা নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে। বাঙালিদের স্বভাব যেন সব কিছু নিয়ে তর্ক করা । আজকাল হারাম আর হালালের সাথে যোগ হয়ে যাচ্ছে সংস্কৃতি। প্রতিটি ভৌগলিক অবস্থানে অবস্থানরত মানুষ নিজেদের মতন কিছু আচার আচরন করে এর সাথে ধর্মের কোন যোগ নেই।
অথচ নতুন জ্ঞানীরা সব কিছুতেই ভাগ করতে চায় ধর্মের ভিত্তিতে। যারা মনে প্রাণী ধার্মিক তারা থাকুক না ধর্ম নিয়ে অন্যদের ব্যাপারে তাদের এত নাক গলাতে হবে কেন?
ছোটবেলায় কফ কাশি হলে তুলসিপাতার রস খেতে দিতেন মা। । হাম, বসন্ত রোগ গরমে ঘামাচি হলে বা ধোয়া মোছার জন্য ব্যবহার করা হতো নিম পাতা। দাঁতের মাজন হিসাবেও ব্যবহার হয় নিমের ডাল। হিন্দু বাড়িতে তুলসি গা থাকে বলে কি এখন এড়িয়ে যেতে হবে গাছ? এসবের সাথে ধর্মের কোন শখ্যতা বা বিরোধীতা নেই। অথচ এখন দেখছি আদিকালের সব সংস্কৃতি মুছে ফেলে হালাল হারাম দিয়ে গাছ ফুল মাছ সবজি আচার আরচণ যাচাই করা হচ্ছে।
ধর্ম এতো ঠুনকো নাকি যে প্রকৃতির বিষয় ব্যবহারে শেষ হয়ে যাবে।
বিদেশে আলখাল্লা টুপি পরিহিত মানুষ দেখি সমুদ্র পাড়ে, যেখানে বিকিনি পরে ঘুরছে নারী। তাতে তাদের ধর্ম যায় না? অথচ দেশে কিছু মুখোশ বানিয়ে মঙ্গল শোভা করলে তা অপসংস্কৃতি কবে কার ইতিহাস অনেক প্রশ্ন বিদ্ধ করা হচ্ছে। কে কতটা ধর্ম কর্ম করে স্বর্গে যাবে না নরকে যাবে তা তার আর তার ঈশ্বরের বোঝা পড়ায় ঠিক হবে। মানুষ হয়ে আরেকজনের স্বর্গ নরকের হিসাব কি ভাবে নির্ধারিত করে ফেলছে মানুষ।
বাঙালিদের মুখ ভাড় করে থাকতে হবে। হাসা যাবে না আনন্দ করা যাবে না। করুণ গীত, কাব্য, গল্প লিখতে হবে শুধু।
কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় আনন্দ করে। তাতে এর বিরুদ্ধে সোর তুলতে হবে কেন, এত গাত্রদাহ হয় কেন বুঝতে পারি না।
আনন্দ করার তেমন কিছুই বাঙালিদের নাই। নববর্ষ উপলক্ষে তারা যদি মঙ্গল শোভার মিছিল করে, রমনার বটমূলে গান শুনে। কেউ ট্রাকে ঘুরে গান করে সতেরো কোটি মানুষের কজনা সে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে। কত লাখ মানুষ ঘুরতে যেতে পারে মঙ্গল শোভায় বা রমনায়। প্রত্যেকে আলাদা কিছু আনন্দ উৎসবের আয়োজন করে কিছু মানুষ একদিন ঘর থেকে বেড়িয়ে ঘুরতে যায় তাতে কাদের এত গা জ্বালা করে কেন করে ?
আমাদের ছোটবেলায় আমরা বৈশাখি মেলায় মাটির পুতুল চুড়ি, দুল, চুলের ফিতা, বেলুন বাঁশি, কত রকমের খেলনা কিনেছি। নাগর দোলা চড়েছি। হালখাতার অনুষ্ঠান হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান সবাই করেছে। দোকানে ঘুরে যেমন মিষ্টি খেয়েছি। বাড়ি বাড়ি গেলেও ভালো খাবারের আয়োজন থেকেছে। আমরা যেমন ছোটবেলায় পেয়েছি বাবা মার কাছেও শুনেছি তাদের এমনই আনন্দ উৎসবের গল্প।
পুতুল নাচ, পালা গান, যাত্রা, ঘোর দৌড়, নৌকা বাইচ, মল্লযুদ্ধ, বলি খেলা, মাছধরা, ঘুড়ি উড়ানো এসব কিছুই বাঙলার উৎসব সংস্কৃতির অনুষ্ঠান । বান্নী স্নান, রাস উৎসব, চরকমেলা, সিন্নি, উরুস, ঈদ পূজা কোন উৎসবই কেবল কোন একক ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না কখনো। মহরমের মেলা থেকে কি অন্য ধর্মের মানুষ কিছু কিনে না?
সব সময়ই অন্যরা নিজের মতন অংশ গ্রহন করে আসছে আনন্দ উৎসবে। প্রকৃতির মতন বাংলা সংস্কৃতির ধারা হিসাবে মানুষ বালোলাগা নিয়ে অংশ গ্রহণ করে আসছে। এখন যারা করতে চায় না তারা ঘরে ঢুকে থাকলেই হয় এত্ত কথা বলা কেন আনন্দ উৎসব নিয়ে।
যারা উৎসব নিয়ে এত কথা বলে তারা অন্য অনেক কিছু থেকে নিজেদের বিরত রাখে কিনা জানতে ইচ্ছা করে। ছবি তোলা ছবি দেখা গান বাজনা টিভে সিনেমা দেখা। অন লাইনে ভিডিও ব্যবহার। ফেসবুক এ সবই তো নতুন সংযোজন তারা এসব থেকে বিরত থাকে কি?। অন লাইনে ঢুকলে কত্ত কিছু দেখতে হয় ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তা নিয়ে কি তাদের অভিযোগ কেমন জানতে ইচ্ছা করে? কি ভাবে এড়িয়ে চলে অনাকাঙ্খিত বিষয়গুলো। যা ধর্মের পরিপন্থি তাদের জন্য।
ইহুদি ধর্মের যারা সত্যিকারে ধর্ম পালন করে কোন অভিযোগ ছাড়া তারা এখনও যান্ত্রিক অনেক বিষয় এড়িয়ে চলে নিষিদ্ধ দিনগুলোতে। যেমন না খেয়ে রোজা রাখে মুসলিমরা এক মাস ধরে। একাদশির দিন উপোস করে হিন্দুরা সব কিছুর মধ্যে থেকে নিজের ভালোলাগার বিষয়গুলো মানুষ পালন করে নিজের মনে সানন্দে। এর জন্য কোন জোড়ের প্রয়োজন হয় না।
তবে যা ধর্ম নয় আনন্দ সংস্কৃতি তা নিয়ে কেন এত চিন্তা হৈ চৈ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১০